চারদিকে গাড়ির হর্ন, অসঙ্খ্য মানুষের ভাবলেশহীন ছুটে চলা, এরই মাঝে দাড়িয়ে মাঝে মাঝে থমকে যাই। সবকিছু থেকেও বুকের ভেতর কোথায় যেন হাহাকার করছে বিশাল এক শূন্যতা।
চৈত্রের আকাশে কোন নি:সঙ্গ চিল যেমন পাক খায় তেমনি ইট পাথরের শহরে র অলি গলিতে অগুনিত মানুষের মাঝে আমিও যেন পাক খাচ্ছি একাকি। সেই চিল যেমন শিকারের আশায় ঘুরছে আমিও তেমনি কোন এক অজানা সুখের পিছে ছুটছি অবিরাম।
ক্লান্তিতে যখন চোখবুজে আসে তখন প্রতিদিনই ফিরে যাই সেই শৈশব কৈশরের ফেলে আসা ধুসর দিন গুলিতে। ছুটে বেড়াতে ইচ্ছে করে সুতো কাটা ঘুড়ির পিছে, শরীর ডুবিয়ে বসে থাকতে
ইচ্ছে করে শান্ত কোন দিঘির জলে বা নতুন পানিতে ভরে ওঠা বিলে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দিন, সপ্তাহ, মাস বা বছর কেটে যায়। ফিরে পাওয়ার আশাগুলো ও কেমন ফিকে হতে হতে মিলিয়ে যেতে বসেছে। এর মাঝেই হঠাৎ সেদিন কোন এক কাজের জন্য যেতে হল এমন এক স্মৃতি ঘেরা যায়গায়।
সোনাতলা পিটি আই। প্রাথমিক শিক্ষক দের প্রশিক্ষণের ইন্সটিটিউট। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিলের উপর ছায়া ঘেরা একটি শান্ত ক্যাম্পাস। এর সাথেই আমার বাড়ি হওয়ায় শৈশব কৈশর সবই কেটেছে এর মাঠে। এর বড় বড় শতবর্ষী গাছ গুলোতে লুকিয়ে ছিল সেসময়ে র ভয়, অনুভূতি আর রহস্য।
সেদিন যখন এর গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম তখনই কোথা থেকে যেন এক
দমক জমে থাকা ঘ্রাণ আমার নাকে এসে লাগল। চোখ বুজে ফেলেছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। অনুভব করছিলাম হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি দিয়ে। চোখ মেলে দেখছিলাম বসন্তের প্রথম হাওয়ায় ঝরে পরা শুকনো পাতা গুলো ঠিক আগের মতই আছে। আর সেই পুরনো ঘ্রাণ।
যে ঘ্রাণের সাথে মিশে আছে ফেলে আসা সোনালী শৈশব। ইচ্ছে করেছিল সেই ঘাসের মাঠে শরীর এলিয়ে দিয়ে চেয়ে থাকি আকাশের দিকে। সমস্ত অস্ত্বিত্ব দিয়ে আমি অনুভব করতে চেয়েছি আমার শিকর কে। পুরোন দালানের কোনায় কোনায় জমে থাকা পুরোন ঘ্রাণ যেন স্মৃতি হয়ে জমে আছে প্রতিটি ধুলোর পরতে পরতে।
সুখ কি তাহলে এই? বুক ভরে স্মৃতির
ঘ্রাণ নেয়া?