সেদিন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ মন্ত্রানালয় থেকে কাজ সেরে বের হয়ে বাইতুল মোকাররম মসজিদ পার হয়ে প্রেস ক্লাবের কিছু আগে, সচিবালয় দেয়াল এর ঠিক সাথে ফুটপাথের একটি ম্যানহোলে চোখ আটকে গেলো। দুজন মানুষ খোলা ম্যানহোল দিয়ে নিচে তাকিয়ে আছে। পাশে সদ্য বের করা ময়লার স্তুপ। দুজনের গায়ে ময়লা লেগে আছে।
তারা দুজন একটি দড়ি সেই ম্যানহোলের মাঝে ফেলে, লুঙ্গির কাঁছা আরো ভালোকরে বেধে সেই দড়ি ধরে দুজন বেশ শক্ত হয়ে দাড়ালো। আর সেই ফেলে দেয়া দড়ি ধরে হাঁচড়ে পাচরে উঠে এল এক সদ্য কৈশর পেরোনো যুবক। লিকলিকে স্বাস্থ্য। উঠেই খুব শ্বাস নিতে থাকল সে। মনে হয় অনেকক্ষন ঠিকমত শ্বাস নিতে পারেনি। তার উঠে আসার পর আশেপাশের অনেকেই নাকে হাত দিয়ে পাশে সরে গেলেন। তা দেখে সেই জীবন্ত স্ট্যাচু র মুখে খরখরে হাসি ফুটে ওঠে।
ঠিক একই ঘটনা দেখলাম আজ পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার এর সামনে।
সবাই কত অবলিলায় এদের দেখে চলে যাচ্ছি। দু একজন মরেও যাচ্ছে বোধহয় কখনো কখনো। মৃত দের ভাগ্য খুব ভাল হলে কোন দৈনিক পত্রিকার ভেতরের পাতার একটা খবর হয় আর তা না হলে ম্যানহোলের ঢাকনার মাঝেই শেষ সব কিছু।
যারা এ কাজটা করেন তারা অচ্ছুত সম্প্রদায়ের। তারা যে গ্লাসে পানি খায় আমরা ভদ্র সমাজ সেই গ্লাস স্পর্শ ও করি না। তারা আর কতটুকুই চাইতে পারে এ সমাজের কাছে!
এটা গেল সামাজিক কথা, কিন্তু এ বিষয়ে ন্যুনতম কোন সেফটি ব্যাবস্থা যদি আমাদের সিস্টেম না করতে পারে তাইলে আমাদের দেশ এগিয়ে যাওয়ার সস্তা বুলি আউরে লাভ কি?
ফ্লাই ওভার নির্মান করছে এমন শ্রমিক দের পায়ে স্যান্ডেল আর করছে ভারি কাজ, হাতে নেই কোন প্রটেক্টিভ গ্লাভস, মাথার হেলমেট ত নাইই।
একটা মানুষ জানছে ই না সে একটা মৃত্যু কূপে প্রবেশ করছে, সেখানে বিষাক্ত গ্যাস থাকতে পারে যা সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যাবে, থাকতে পারে বিষ্ফোরক কোন গ্যাসের মিশ্রণ যা তার ব্যাবহৃত ল্যাম্প এর কাছাকাছি আসলেই ভয়ঙ্কর ভাবে বিষ্ফোরিত হবে।
সচেতন সমাজ খুব সচেতন ভাবে সস্তা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছি। আর একটি জীবন যখন এখানে শেষ হচ্ছে সেখানে থাকছে তাদের অভিশাপের দীর্ঘশ্বাস। সেই অভিশপ্ত নগরীতে আমাদের বসবাস।
খুনি শুধু প্রত্যক্ষ ভাবে খুনে অংশ নিলে হয় না। যারা এসব দেখার দ্বায়িত্বে আছেন অথচ এসব না দেখে টেবিলে বসে আয়েস করে কানের ভিতর কাঠি দিয়া কান চুলকাইতেছেন, আপনারা এক একটা সিরিয়াল কিলার। মনে রাইখেন।