সাদা মেঘ গুলো উড়ে যাচ্ছে শব্দহীন। জানালার গ্রীল এর ফাক দিয়ে তাকিয়ে আছি আনমনে। মাঝে মাঝে ঝড়ে পরা পাতার শব্দ বা চালের নিচের বাশের তৈরি ছাদ বেয়ে দৌড়ে যাওয়া কোন প্রানীর খচমচ আওয়াজ। মেঘ গুলো কোথায় যাচ্ছে তা দেখার শাধ জাগছে না। যাচ্ছে হয়তবা কোথাও অন্যকারো জানালার ফাকদিয়ে দেখা আকাশে। দুটো বড় করাই গাছ ছিল জানালা থেকে একটু দূরে ডান দিকে একটি পুরোন দেয়াল ঘেঁষে। এত বড় ছিল যে তার মগডাল কে মনে হত আকাশ ফুরে বেড়িয়ে যাবে। ডাল পালায় বেয়ারা ভাবে বেড়ে উঠেছিল শতবর্ষ ধরে।
নেই আর গাছ দুটো । জানালার ফাকের আকাশ তাই আজ অনেক বড় লাগছে। জায়গাটিও কেমন ন্যাড়া হয়ে গেছে। দুটো শালিক কেমন যেন ঝগড়া করতে করতে জানালার পাশ দিয়ে উড়ে গেল। মানুষের মত ওরাও যেন আজ ঝগড়া ছাড়া থাকতে পারে না। ও হ্যাঁ সেই গাছ দুটো তে অনেক গুলো পাখির বাসা ছিল। দুটো পেঁচা ছিল। রাতে ওদের ডানা ঝাপটানি আর চিৎকারে রাত গুলো কেমন রহস্য ঘেরা হয়ে উঠত। বিকালের দিকে ওরা দুটো ডালে পাশাপাশি বসে থাকত। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকাত। অনেক দিন ওদের চোখে চোখ পরেছে আমার। কি নিস্পলক ভাবলেশহীন চাহুনী। এমনি ভয় এর এক রেশ চলে আসত মনের মাঝে। ওদুটোকে ত ঝগড়া করতে দেখিনি। শীতের পরপরই গাছ দুটির কোন এক গহীন ডালে বসে কোকিল ডাকত। তন্য তন্য করে খুঁজেও ওদের যখন দেখা মিলত না তখন ওরা যেন আরও মজা পেয়ে ডাকা শুরু করত আবার হুট করে ডাকা বন্ধ করে দিত। তখন ওদের খোঁজ পেতে আমরা ডাকতে শুরু করতাম, সঙ্গীর আশায় ও আবার ডাকত। নিস্তব্ধ দুপুরে ওদের ডাকে প্রকৃতি যেন নিজ থেকেই হেসে উঠত বসন্ত আগমনী বার্তায়। আর তা উপলব্ধি করতাম। সেই উপলব্ধি টা যেন হারিয়ে গেছে। কাঠঠোকরা একটা কোকিলের আওয়াজ শোনার কিছুদিনের মাঝেই হাজির হত। কোন এক নতুন ডালে সারাদিন ঠক ঠক করে নিরলশ ঠুকরে যেত। কয়েকদিনের মাথায় দুটো এসে সংসার পাতত। গাছ দুটোত নেই, ওরা কি নতুন বাসা খুঁজে পেয়েছে?? যাহ কি ভাবছি, প্রায় দশ বছর পর দুপুরে আজ চেয়ে আছি এই জানালা দিয়ে। ওরা কি বেঁচে আছে এতদিনে?
দশ বছর? এত তারাতারি? কেমন যেন মনে হচ্ছে। গালে হাত দিলাম। খোচা খোচা দাঁড়ি, পেছনে থাকা বই এর আলমারিতে মুখটী দেখতে চাইলাম, কেমন যেন যৌবনের ছাপ আছে। দশ বছর আগে এমন ছিল না, দরজা জানালা বন্ধ করে লুকিয়ে অল্প কয়টি দাঁড়ি গোফ শেভ করতাম। আচ্ছা তখন কি এমন যৌবনের কথা ভাবতাম? যখন আমার কথা সবাই শুনবে, আমার কথার মূল্যায়ন করবে, ওবাজারের বড় সেলুনে গিয়ে চুলের অন্য ছাট দেব তখন কেউ মানা করবে না, ফুল হাতা শার্ট এর হাতা ভাজ করে রাখব নির্দিধায়, শার্টে এর বোতাম খুলে রাখব উপরের দুটো, সিগারেত ও থাকতে পারে ঠোঁটে...... হ্যাঁ এইত সে সময়।
শার্টের দুটো বোতাম কেন সবগুলো বোতাম খুলে ঘুরলেও কেউ কিছু বলে না। কালো চশমা এখন চোখেও থাকে বুকেও থাকে হ্যা এইত সেই সময় যা আরাধ্য ছিল। তাহলে কেন এত আক্ষেপ হচ্ছে এ নিশ্চুপ দুপুরে? আকাশের মেঘ গুলো যেন আগের মত নেই। আগে কথা বলা যেত ওদের সাথে এখন কেমন যেন ওরা পর পর ভাবতে শুরু করেছে। একি এ দশ বছরের অভিমান? এতদিন আমার উপরে ত একই আকাশ ছিল যদিও অন্যখানে। তারপরও এ জানালা দিয়ে দেখা একটুরো আকাশ যেন ছিল শুধুই আমার। আমিও যেন সেই আকাশ আর আকাশে ভেঁসে বেরানো মেঘের ছিলাম। ছিলাম বলছি কেন? এখনও ত আছি।
মেঘ গুলো যেন ভেংচি কেটে উড়ে গেল। অভিমান এ নিশ্চিত অভিমান। কি করে এ অভিমান ভাঙ্গাতে হয়?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০৪