রাত প্রায় ১০ টা। দাড়িয়ে ছিলাম এক নির্জন রাস্তার পাশে। রাতের ট্রেন একটু আগেই চলে গেছে। একটি কুকুর একদল মানুষ কে সামনে রেখে ঘেউ ঘেউ করতে করতে এগিয়ে আসছে। মানুষের দলটিও এগিয়ে আসছে।
আপাত ভাবনার ভদ্রবেশী কোন পোশাক নেই কারো পড়নে। দুজন বৃদ্ধা একজন বৃদ্ধের সাথে একটি কিশোর বয়সী আধ পাগলী এক মেয়ে, পড়নে ফ্রক। মুখে দিগন্ত বিস্তৃত হাসি। কুকুর টি কে উদ্দেশ্য করে বৃদ্ধ টি কৌতুক করছে আর সেই কথাতেই সবাই হেসে কুটিকুটি। সারাদিন রোদের মাঝে ট্রেনে বা শহরের অলিগলি ঘুরে পাওয়া সল্প কিছুতে সম্বল করে তাদের অকৃত্তিম হাসি মনে করিয়ে দেয় সফলতার মানে কি?
সেই হাসি এই মৃত্যু উপত্যকায় নতুন করে বাঁচতে শেখায়, নতুন আশায় বুক বাধতে শেখায়, মানুষকে মানুষ ভাবতে শেখায়।
আমি যতদিন জানি ততদিন থেকে তারা পরের চেয়েই খায়, তা এখন বংশ পরম্পরা। ধান কাটা হচ্ছে। পরিসঙ্খ্যানের কঠিন হিসাব আপনাকে বুঝাবে উৎপাদন বেড়েছে, খাদ্যে কোন অভাব নেই আমাদের। আসলেই হয়ত। কিন্তু কৃষক কখোন সম্ভ্রান্ত কৃষক হল না, অথচ কৃষি পণ্য নিয়ে ব্যাবসা করে কিছু মানুষ পাহাড় গড়ে সম্পদের। কৃষক কৃষকই রয়ে গেলো, ভিক্ষুক ভিক্ষুকই। তারপরও তার মুখে রাজ্যের হাসি। কোথা হতে আসে এ আত্মতৃপ্তির হাসি?
সেখান থেকেই আসে যেখানে আমাদের ফিরে যেতে হয় কোন না কোন সময়। কোন এক টানে।
মানুষ মরছে, কোথাও নাস্তিক, কোথাও মুসলমান, কোথাও হিন্দু, কোথাও বৌদ্ধ কোথাও বা অন্য কোন জাতের। আসলেই কি তাই? যে মায়েদের বুক খালি হয়েছে তাদের কান্নার সুর কোন ধর্মের কথা বলে বলতে পারবেন? যে বোন ভাই হারায় তার চোখের পানিতে কোন জাতের কথা থাকে বলতে পারবেন? যে সন্তান বাবা হারায় তার বুকে যে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলে ওঠে তা নেভানোর উপায় বলতে পারবেন?
মনে হয় না। তবুও খবর হয় ছাত্র মরেছে, পুলিশ মরেছে, শিক্ষক মরেছে অথচ খবর হয় না "মানুষ" মরেছে।
তাই এখন আর খবর দেখিনা, পত্রিকার পাতাতেও চোখ বোলাই না। মানুষ দেখি। বঞ্চিত মানুষদের মুখের হাসি দেখি। হাসির মাঝে যদি এতটুকু উপহাস লুকিয়ে থাকে আমাদের জন্য তাইলে সেই অভিশাপে পুড়ে ছাড়খার হবে এ সব।
হচ্ছে বোধহয় তাই। বুঝতে পারেন কিছু? ধ্বংসের ডাক শোনা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩৬