somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুঁজে ফিরি তারে.........

১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার চারপাশ সবুজ ছিলো। সবুজের অভায়রণ্যে নিজেকেও সবুজ মনে হতো। সবুজ শীতল বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতাম। প্রশ্রয় পেতাম স্নিগ্ধ ছায়াতে। চপল মায়াবি হরিনের পিছনে ছুটতে ছুটতে নিজেও দুরন্ত হয়ে উঠেছিলাম। ভোরের আলোতে উষ্ণ ওম আর বিকালের মায়াময় আলোতে প্রাণভরে বেঁচে থাকার উপকরন পেতাম। শুয়োপোকার মাঝে খুঁজে পেতাম ভবিষ্যতের প্রজাপতি। তাদের রঙ্গিন ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে বেড়ানো উপভোগ করতাম নিজের মত করে। ডানা ভাঙ্গা শালিক দেখলে মোচড় দিয়ে উঠত বুকের বামপাশটাতে। শুশ্রুষা না পারলেও মমতা ছিলো তাদের প্রতি। রাত্রির জোৎস্না প্লাবিত আলোয় সুখময় ছিলো জোনাকির রূপকথা সৃষ্টিকারি মিটিমিটি আলো, সুরময় ছিলো ঝিঁঝিঁর অনবরত সঙ্গীনির আহ্ববান। মুক্ত ছিলো বিহঙ্গ, মুক্ত ছিলাম আমি। শুধু ভয় ছিলো অচেনা কীটগুলোর প্রতি। এই অস্বাভাবিক ভয় কিংবা লোভ আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো সবসময় আলোকিত থাকা অংশটিতে। যেখানে আমি দূর থেকে দেখতাম আনন্দের সব উপকরন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সবসময়। তাই বিলম্ব হয়নি সিদ্ধান্ত নিতে। একদিন খুব ভোরে এই পাখ-পাখালি ভরা সবুজ অরণ্যকে বিদায় জানিয়েছিলাম, বিদায় জানিয়েছিলাম পায়ের নিচে পরম মমতায় আগলে রাখা সবুজ ঘাসকে। বিদায় জানিয়েছিলাম সুঘ্রানে মাতিয়ে রাখা শিউলি, বকুল, হাস্নাহেনাকে। বিদায় জানিয়েছিলাম তারস্বরে উচ্চারিত সুরের পাখি কোকিল শ্যামাকে। ভয় লাগানো কিংবা মায়া লাগানো সুরের পাখি ডাহুককেও জানিয়েছিলাম বিদায়। পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম আলোকময় অংশে যেখানে রাত হয়না, তাই ভীতসঞ্চারকারি জন্তুর হাত থেকে বাঁচার আশায়।

সবুজ যেখানে শেষ হয়েছিলো সেখানে আমাকে রেখে আসতে হয়েছিলো সবুজের সোদা গন্ধ, কারন সেটা আলোকিত অংশে বিবেচিত হয় দুর্গন্ধ। আমি আলোকিত অংশের মনোযাতনার কারন হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম না, তাই মুক্ত করে দিয়েছিলাম সবুজে বুনন পোষাকটিকে। একটু একটু করে পরিষ্কার করেছিলাম কাদা-মাটি জলকে। নিজেকে সাজিয়েছিলাম আলোকিত অংশে পাওয়া অপুর্ব মোহনীয় সব সুগন্ধযুক্ত বস্তু দিয়ে। সাজিয়েছিলাম নাম না জানা আরামদায়ক মসৃন কাপড়ে। সবুজে বেড়ে উঠা হৃদয় বদলে নিয়েছিলাম কনক্রিটে তৈরী টেকশয় কারুকার্যময় হৃদয়। যার দেয়ালে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হলেও মায়া সৃষ্টি হতোনা। বদলে নিয়েছিলাম শ্লথ গতির পায়ের বদলে দুরন্ত চাকাওয়ালা ইঞ্জিন, যা অনায়াসে টেক্কা দিতে পারে যেকোনো চপল হরিনকে। যদিও তার দরকার ছিলোনা কারন এখানকার হরিনেরা চপল হলেও স্থির থাকতেই বেশি ভালোবাসত। প্রতিদিন আমি তাদেরকে একই ভঙ্গিমায় দেখেও মুগ্ধ ছিলাম। এখানেও গাছ ছিলো কোনো এক সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে, সেখানে যেয়ে মাঝে মাঝে বিবর্ন পাতাতে বাতাসের আন্দোলিত করে যাওয়াটাকেও অতিরিক্ত মনে হতো। সকাল কিংবা বিকালের আলো পাওয়া হতোনা ব্যস্ততার কারনে, দুপুরের তেজদীপ্ত আলো মনে করিয়ে দিত জীবনকে সাজানোর অনেক বাকি। তাই শেষ করো যত পারো তোমার কাজ, স্থির থেকোনা। ভাবুলতা এখানে বিলাসিতা। সন্ধ্যার স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোকমালা জোনাকিদের মনে করিয়ে দিলেও তাদের থেকে বেশি আলোকিত ভেবে শান্তি বিরাজ করতো শঙ্কাযুক্ত মনে। এখানের প্রজাপতিদের বাড়তি উপদ্রব মনে হতো তারচেয়ে বরং শুয়োপোকাদের অনেক ভালো মনে হতো যা সৃষ্টি করতে পারতো কোমল সুতা।

তবে আমি ফেরার পথ খুঁজি নাই তা নয়, তবে খুঁজে পাওয়ার জন্য সবুজের গন্ধ জানতে হয়। তা আমার নসরান্ধ্র ভুলে গিয়েছিলো অনেক আগেই। পথ খুঁজে, ফেরার জন্য সবুজের প্রবেশ পথে দেখাতে হয় সবুজ হৃদয় তা আমি খুইয়ে ছিলাম আলোকিত অংশে প্রবেশের সাথে সাথে। এখন আমি মনে মনে খুঁজে ফিরি আমার হারিয়ে যাওয়া হৃদয়, শরীরের সোদামাটির গন্ধ কিংবা স্বপ্ন দেখি সবুজের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৪১
৫০টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×