ছেলেদের সকল ভোগান্তির কারণ মেয়ে!আমাদের এখন থাকার কথা ছিল জান্নাতে,আর একটা মেয়ের প্ররোচনায় পরে পৃথিবীতে শাস্তি ভোগ করছি।আজব না!
এই যে আমি এখন নিথর হয়ে মাটিতে পরে আছি, মাটি আমার তাজা-উষ্ণ রক্তে ভিজে যাচ্ছে;এর কারণও একটা মেয়েই।
এইতো একটু আগেও আমি দিব্যি বেচে ছিলাম,আমার বৌয়ের সাথে ঝগড়া করছিলাম।ওহ বুঝতে পেরেছেন?মেয়েটি আমার বৌ ছিল।
ছিল বলছি, কারণ আমি একটু আগেই তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছি।আর যেহেতু সে আমার পৃথিবী ছিল,আমার বেচে থেকে কি লাভ?তাই আমিও ব্যালকনি থেকে লাফ দিয়েছি।
আমিতো কাপুরুষ তাই সারা গায়ে কেরোসিন ঠেলে,আগুন জ্বালাতে সাহস পাইনি।
ঐতো কেয়ারটেকার কালাম দৌড়ে আসছে।হারামজাদা এদিক ওদিক তাকিয়ে আমার পকেট আগে চেক করল।সে কিছুই পাবে না!হা হা হা,,আমি সব রুমে রেখেই লাফ দিয়েছি।আইনজীবীরা বলদ না,বুঝতে হবে!
কালামের চিৎকার চেঁচামেচিতে এখানে আর থাকা যাচ্ছে না,আর খুব অল্পক্ষণের মাঝেই পুলিশ এসে আরও হট্টগোল করবে।তাই আমি আমার ৭তলার ফ্ল্যাটে চলে এলাম।
মরে যাবার মধ্যে একটা আনন্দ আছে!এই যে আমি ভাবা মাত্রই ৭তলায় চলে এলাম।জীবিত থাকলে কি সম্ভব ছিল?এখন আমি চাইলেই যেখানে খুশি চলে যেতে পারবো! তাজমহল, বা পাতায়া বীচ,চীনের প্রাচীর,অথবা নীলগিরি বা সাজেক ভ্যালিতে বসে জোৎস্না দেখা সব আমার কাছে তেজপাতা!
এই যে আমার সামনে যে মেয়েটির লাশ পরে আছে,ইনিই আমার মৃত্যুর কারণ।অথচ কাল রাতেও তার সাথে আমি সঙ্গম করেছি।আমরা কেউ কি জানতাম আজ.......
দোষ কিন্তু আমার না,আমার কি দোষ?
অনেক দিন আমাদের বৈবাহিক সম্পর্কটা ঠিক ভালো চলছিল না।কিভাবে চলবে?তার কথার খোঁচায় আমি জর্জরিত হয়েছি প্রতিদিন, প্রতিবার।সমঝোতা আমরা সব বিষয়েই করতাম,এখানে কেন করতে পারিনি; জানি না?
আমাদের বিয়ে হয়েছিল অনেক আগে,আমার তারিখ মনে থাকে না!আমাদের একটা ছেলেও আছে,হুমায়ুনের হিমুর চেয়েও সুন্দর।
আমাদের বিয়ে হয়েছিল ২০১০ সালে।তাদের বাড়ি থেকে যে উপহার(আপনারা বলবেন যৌতুক) এসেছিল এগুলো আমি চাইনি।একদমই চাইনি।আমার ভালো একটা চাকুরিও ছিল।খুব ভালো চলছিল আমাদের সংসার;বাবা,মা,ভাই,বোন,সন্তান একটা সম্পূর্ণ পরিবার।
সে হঠাৎ বদলে গেল,তার আলাদা বাসা চাই,সংসার চাই।এখানে নাকি তার নিজের কিছুই নেই।হ্যা,আমি তার কথা রেখে ছিলাম।আর হ্যা খেসারত আমিই দিয়েছি, এই যে দেখতেই পাচ্ছেন!আমার সামনে পরে আছে আমার প্রিয় স্ত্রী সামিয়ার লাশ!
কেমন করুণ আর মায়াবী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! এই চোখে কত নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছি, তার ইয়ত্তা নেই!সেগুলো এখন অতীত।
আমরা নতুন বাসায় উঠলাম।নতুন বাসা মানে কি?এর অর্থ তারাই বুঝবে যারা নতুন আলাদা সংসার শুরু করে!বাবা-মার সাথে থাকলে বোঝার সুযোগ কই?
আমরাও সমস্যাগুলো হাড়েহাড়ে টের পেলাম!আমার একার চাকরির টাকায় পেড়ে ঊঠছিলাম না,তাই বাবা-মাকে টাকা দেয়া বন্ধ করেদিলাম।আমার মা,যে গার্মেন্টসে চাকুরি করে আমার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার টাকা দিয়েছে,একটা শব্দও করেনি।
অথচ সামিয়ার চাহিদা বেড়েই গেল,এটা কর,ঐটা কর।বাবাকে এটা দাও,মাকে ঐটা দাও।আমার বাবা-মার কথা আমি ভুলেই গেলাম।বন্ধুরা আমাকে বৌ পাগল আখ্যা দিল,আমিও মেনেই নিলাম!
সে চাকুরী করবে,আমার নিষেধ সে মানবে কেন?এখন শাবাবকে দেখার জন্যও তো লোক চাই।সমাধান,ছেলেকে তার মা-বাবার কাছে রেখে যাওয়া।অথচ আমার বাবা-মার বাসা খুব কাছে ছিল।তাদের কাছে রেখে যাওয়া যাবে না,কারণ তারা অশিক্ষিত!
আমিও তার কথায় একমত,তাইতো! আমার মূর্খ বাবা-মা আমাদের দুই ভাইবোনকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়িয়ে আনতে পারলেও নাতিকে নিশ্চিতভাবে মানুষ করতে পারবে না, কারণ তারা মূর্খ।
সচেতন পাঠক বলবে,তুমি মিয়া বৌকে কন্ট্রোল করতে পার না।আমিও তাদের সাথে একমত! তাইতো মেরে ফেললাম, এবার আর কেউ রেলগাড়ির মত কথার তুবড়ি ছোটাবে না!
আমি যতবার শাবাবকে শ্বশুর বাড়ি থেকে আনতে যেতাম,তাদের কথাগুলা এক রকম ছিল।
:বাবা,ভিতরে আসো।
:না, মা/বাবা।
:তোমার প্রমোশন হয়েছে?
:না!
:বেতন বেড়েছে?
:না!
:আহারে! আমার মেয়েটা কষ্ট করতে করতে শ্যাষ!
:...........
আমার ছেলেটা আমার জেরক্স কপি ছিল,শুধু গায়ের রঙটা উজ্জ্বল! খুব ভালোবাসতো আমায়।তার জন্য একটু খারাপ লাগছে আরকি!ছেলেটা ৪ বছরেই বাবা-মার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হল।
আমি বেচে থাকতে পারতাম।কিন্তু পুলিশ আমার জীবন অতিষ্ট করে ফেলতো!এক সময় শাবাব জেনেই যেত,আমি তার মায়ের খুনি!তার চেয়ে..........
সেদিন আমায় খুব অপমান করেছিল।হ্যা,সামিয়াই।পার্টিতে সবার সামনে বলল,আমার প্রমোশন হচ্ছে না।অথচ মেয়ে হয়েও তার দুইবার প্রমোশন হয়ে গেছে!
তার কথা ঠিক।সে আমার চেয়ে ৪০ হাজার বেশি বেতন পেত।তাই বলে সবাইকে বলে বেড়াতে হবে?এখন,এখন কাকে বলে বেড়াবে?দিয়েছি দুনিয়া ছাড়া করে....
আজ সমঝোতা করার প্ল্যান সামিয়াই করছিল।আমাকে জানাওনি!
এতকিছুর পরেও একটা কথা সত্যই ছিল।সে আমাকে খুব ভালোবাসতো। রাতে বিছানায় আমার দিকে যে কামুক চোখে তাকাতো,তা যে কোন ছেলের ঘুম হারাম করতে যথেষ্ট। আমি কিন্তু মোটেই উত্তজিত হইনি।
কি যে বলেন,আমাকে মাইণ্ডগেমে জিততে হবে তো।বাস্তবে আমি যাইহই!
আজ এইতো অল্প কিছুক্ষণ আগে আমরা একসাথে ফিরছিলাম।
:আজকে শাবাবকে আনতে হবে না।
:কেন?
:আজ আমরা আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলবো। আজ সময়টা শুধুই আমাদের দুজনের!
:তারমানে প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছ আজ যুদ্ধ করবে।তোমার মনে হয় না,যুদ্ধটা একতরফা হবে।তোমার প্রস্তুতি আছে,আমার নেই!
:আজে বাজে কথা বল না।
:......
মেয়েদের সাথে সমঝোতা এমটা যুদ্ধ।আর এখানে সব ছেলেরা নিধিরাম সরদার। তারা মেয়েদের কথা নামক সুচের খোঁচা সহ্য করবে,কিছুই বলবে না,বা বলতে পারবে না।
রুমে ঠুকতেই শুরু হয়ে গেল সামিয়ার কথার রেলগাড়ি।
:তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো!
:আমি যাচ্ছি না,তুমি সরিয়ে দিচ্ছো।
:আআআমি...
:হ্যা তুমি,আমার কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়েছ।আমার পরিবার,আমার নিজেকে, আমার থেকে তোমাকে....
:তুমি একটা সাইকো, তুমি বুঝতে পারবো?
:বোঝার সময় কই,সারাক্ষণ তোমার চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত!
:আমি নিজে চাকরি করি,তোমার কাছে আমি কখনো কিছু চেয়েছি?
:হ্যা,সেটাই।তুমিতো আমার চেয়ে বড় চাকরি কর।আমার কাছে কিছু চাইবে কেন?
:তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো!
:তুমি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছ আজ ঝগড়া করবে।
:শোন মেয়েদের খোরপোশ ছাড়াও বেচে থাকার জন্য অনেক কিছু দরকার।
:শারীরিক চাহিদার কথা বলছো? শেষ কবে তুমি নিজে থেকে আমার কাছে এসেছিলে,তোমার মনে পরে?(এটা মিথ্যে কথা,আমায় জিততে হবে তাই বলেছি)
:তুমি একটা উন্মাদ। অযোগ্য, সাইকো। নিজের অযোগ্যতা ঢেকে রাখার জন্য আমার সাথে যা ইচ্ছে হয় বল,কর!
:হ্যা,আমি তাই।অযোগ্য, ছোটলোক!
:তুমি সব সময় নিজেকে ভিকটিম দেখিয়ে মজা পাও।
:..........
:তোমার প্রমোশন হচ্ছে না,ভালো বেতন পাচ্ছো না।এর জন্য তুমি আমার প্রতি হিংসা কেন কর?
:তুমি সব সময় আমাকে ছোট দেখিয়ে মজা পাও।
:তুমিতো ছোটই, অযোগ্যও।আমার মা জোর না করলে, আমি কোন দিন তোমায় বিয়ে করতাম না!
:হ্যা,এখন আমাকে ভালো লাগবে কেন?এখন তোমার চোখ উপরে ঊঠে গেছে!তোমার বস....
:তুমি চুপ কর।তুমি নিজেই নিজেকে নিয়ে কনফিউজড। চাকরি ছেড়ে দিচ্ছ না কেন?কারণ তুমি জানো, তুমি নতুন চাকরি পাবে না!bloody loser!Zealous pig!
:.......
আমি সত্যিই হেরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমিতো হারতে শিখিনি।
বাকি কাজটা কত সহজে করে ফেললাম! বাটার নাইফ যে এত ভালো কাজ করে জানতাম না।এই চাকু দিয়ে একটা পেয়াজ কাটা যায় না,অথচ কত সহজেই আমি সামিয়ার গলাটাই দু'ভাগ করে দিলাম।
জেতা কত সহজ,তাই না!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:০৬