somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডগকুইন

২৯ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটা একটু একেবেঁকে সেলফি তোলে, ওর শরীরের উপরের আর মাঝের অংশ একটু উঁচু থাকে।ওর নাম দেয়া উচিত ছিল, সেলফি কুইন।তা না করে ওর নাম দিয়েছে ডগকুইন।নিশ্চয় বিশেষ কোন কারণ আছে,আমি জানি না।

রাস্তায় কিছু মেয়ে হেটে যাবে, তাদের দেখে সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলবে।কিছু বলার সাহস নেই, যদি রেগে হইচই শুরু করে তবে খবর খারাপ আছে।আবার কিছু মেয়ে যায়, তাদের দেখেই সবাই বাজে মন্তব্য ছুড়ে দেয়,হাসাহাসি করে, শিস বাজায়।এই দুই শ্রেণির মাঝে পার্থক্য হল, একজন অতি রূপবতী; আরেকজন রূপবতী নয় কিন্তু অযথাই চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে তাকে আরও বিচ্ছিরি লাগছে,কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই।

ডগকুইন প্রথম শ্রেণির, সে রাস্তা দিয়ে হেটে যায়।সবাই মাছের মত অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।তার নাম জিজ্ঞেস করার সাহসও কারো নেই।তার যে পোশাক, এসব পোশাক সিনেমা নাটকে দেখা যায়।
যে কারণেই হোক সে মাজার চৌরাস্তা থেকে বাসা পর্যন্ত হেটেই আসে। মেয়েটা পোশাকের রঙের সাথে ম্যাচিং করে সানগ্লাস, জুতা পরে;এখনো তাকে একই ড্রেস বারবার পরতে দেখা যায়নি।আর যাইহোক মেয়েটাকে কিপটে অপবাদ দেয়া যায় না।

প্রতিদিন সকালে আর সন্ধ্যায় মুসার দোকানে সদ্য বয়সঃসন্ধি পার করা ছেলেদের আড্ডা বসে।ডগকুইন চলে যাবার পরই আড্ডা ভেঙে যায়।সে এদের দিকে তাকিয়েছে বলে শোনা যায়নি, কখনো হাসতে দেখা যায় সেটাও মোবাইলে অন্য কারো সাথে।এই যে মেয়েটা কুকুরদের খাওয়ায়, এখানে অনেক ছেলে আছে তাদের পরিবারে প্রতিবেলা খাবার সামর্থ্য নেই।তবুও এই ছেলের দলের স্বস্তি নেই, যদি অসাধারণ কিছু ঘটে যায়!

তবে প্রতিদিন সকালে একটা দারুণ দৃশ্য চোখে পরে।একটা আধুনিক ড্রেস পরা মেয়েকে ঘিরে আছে একদল নেড়ি কুকুর, মেয়েটা তাদের খাবার দিচ্ছে।কোন তাড়াহুড়ো নেই, সে দাত ব্রাশ করছে আর রুটি,বিস্কুট ছিটিয়ে দিচ্ছে।সকালে তার পরনে থাকে হাফপ্যান্ট আর টি-শার্ট। গত ছয় মাসে এই রুটিন লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে হয় না।সন্ধ্যায় অবশ্য ডগকুইনের পা ঢাকা থাকে, পরনে থাকে জিন্স আর টপ, কাধে থাকে একটা ব্যাগ।মাঝে মাঝে ব্যগ থাকেও না। কিন্তু সাথে কুকুরের খাবার ঠিকই থাকে, কুকুরগুলো থাকে ঘিরে ধরে।
খাবারের লোভ, তার ফরশা পা দেখার লোভ বা তার শরীরের ঘ্রাণ নেয়ার লোভ; যে কারণেই হোক কুকুরের দল আর ছেলের দল তার পথ চেয়ে বসে থাকে।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, মেয়েটার নাম কেন ডগকুইন! আমি এসব কিভাবে জানি? আমার বাসার জানালা থেকে তার চলার পথের পুরোটা দেখা যায়।এইযে ডগকুইন নচ্ছার ছেলেদের তুচ্ছ করে হেটে যায়, কুকুরদের দুবেলা খাওয়ায়, আমি সবই দেখতে পাই। আমাদের এই রাস্তায় নেড়ি কুকুরের দল ছেলের দলের সাথে সমানুপাতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে।

অন্যকোন ছেলে হলে মেয়েটার ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দিত, সারাদেশ একজন কুকুরপ্রেমী দেখতো। আমি কাজটা করছি না, আমার স্মার্টফোন নেই।বাকি ছেলেরা করছে না, তারা মেয়েটাকে বিরক্ত করতে চাচ্ছ না।বিরক্ত করলেই পটানোর তালিকায় পিছিয়ে যাবে।আমি কুকুর আর ছেলের দল দুটোকেই চোখে চোখে রাখি।আর ছেলের দলের সব কথা মনযোগ দিয়ে শুনি, ওরা যে সব কথা আমার বারান্দার নিচে দাঁড়িয়েই বলে!

কয়েকদিন পর ছেলের দলে যোগ দিল এক সাহসী ছেলে, নাম অন্তর। ছেলেটা ডগকুইনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো। কুইন মোটেই পাত্তা দিল না।উপেক্ষিত হবার কষ্টে, অতি ভালোবাসায় বা অতি কুৎসিত তাড়নায় যাইহোক, অন্তর বাকি ছেলেদের নিয়ে একটা প্ল্যান করল।সে প্ল্যান আপনাদের না জানলেও চলবে, কারণ তা বাস্তবায়ন হবার কোন কারণ নেই।আমাদের এই পথ কখনো ফাঁকা থাকে না।আর অতি কুৎসিত প্ল্যান!

ওদের প্ল্যান বাস্তবায়ন হয়ে গেল, ইদের পর যেদিন আকাশ কাপিয়ে বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন।ডগকুইন ভিজতে ভিজতে ফিরছিল।এই ঝুম বৃষ্টিতে সবাই তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরতে চায়, ওর তাড়া নেই।কেমন আয়েশী ভঙ্গিতে ভিজছে,হাতে কুকুরদের খাবার দেখা যাচ্ছে।আকাশে চাঁদ নেই, কিন্ত ওর বুকের দিকে জ্বলছে। ইদানীং কিছু জামা বের হয়েছে, সারা জামায় কোন নকশা নেই কিন্তু বুকের দিকে আয়না লাগানো!
ছেলের দল ওকে দেখেই আর্ধেক তৈরি বিল্ডিংয়ে চলে গেল।ইদে মুসা বাড়ি চলে গেছে, এই বিল্ডিংয়ের শ্রমিকরাও ছুটিতে।কুকুরের দল বিল্ডিংয়ের নিচে তাদের রানীর জন্য অপেক্ষা করছে। একদল কুকুর অপেক্ষা করছে খাবারের জন্য, অন্যদল সত্যিকারের কুকুরও অপেক্ষা করছে খাবারের জন্য!

তাদের প্ল্যান আমি জানি, প্ল্যানে কোন ঘাপলা নেই।ওরা ৭জনের একটা গ্রুপ।একজন মুখে কাপড় চেপে ধরবে, দুজন পা, দুজন ধরবে হাত, একজন শক্তকরে ওর কোমড় চেপে ধরবে।বাকি কাজ করবে অন্তর। অন্তর আগে, বাকিরা একেএকে কাজ করবে।আহ!দারুণ প্ল্যান।

ডগকুইন মুসার দোকানের মোড়ে এসে দাড়ালো। আশেপাশে কোন জনমানব নেই।সে কুকুরগুলোকে বিল্ডিংয়ের নিচে দেখেই ওখানে ঢুকে গেল।তারপর থেকে আমি আর কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না।তবে শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কুকুরগুলোর খাবার খাওয়ার আওয়াজ আর মানুষের গোঙানির আওয়াজ!

অনেকবার বারান্দার এদিক ওদিক থেকে দেখার চেষ্টা করলাম, দেখা যাচ্ছে না।তবে আগের মতই শব্দ শোনা যাচ্ছে, মানুষের গোঙানির শব্দ।তারপর এক দুই মুহুর্ত করে কয়েক ঘন্টা চলে গেল, ভেতর থেকে কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল না।আমি বেশ অস্বস্তি বোধ করছি, তবে বাইরে গিয়ে দেখার সুযোগ নেই।কারণ বাড়িওয়ালা ১১টার পরেই গেটে বিশাল তালা লাগিয়ে দেয়। আর ঝুম বৃষ্টির সাথে এখন ঝড়ও শুরু হয়েছে।

পরদিন সকালে ঐ বিল্ডিংয়ে পুলিশ এল, সাথে এল কুকুর মারার জন্য উত্তরখান ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন। তারা বেশ কয়েকটা কুকুরকে সাড়াশি দিয়ে ধরে নিয়ে গেল।আমি কিন্তু তাদের ধারে কাছেও যাইনি, এসব জিনিস দূর থেকে দেখেই আনন্দ!আর ডগকুইনের খারাপ কিছু হলে এলাকায় রা..রা পরে যাবে, শুনতে পাবই!তবে কুকুরগুলোর জন্য খারাপ লাগছে, একটা অনলাইন পত্রিকায় পড়েছিলাম ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন নাকি কুকুর মেরে রেস্টুরেন্ট আর বেকারিতে বিক্রি করে দেয়।নিশ্চয়ই তাদের দিয়ে হটডগ বা কাচ্চিবিরিয়ানি রান্না করা হবে?

যাইহোক ডগকুইনকে কিন্তু পরদিন সকালে, সন্ধ্যায় দেখা গেল না।কোন খবরও পাওয়া গেল না।এলাকায় এ ঘটনা নিয়ে আলোচনাই নেই।মুসার চায়ের দোকান দুদিন ধরে আগের মতই চলছে, শুধু রাস্তায় কুকুরগুলো নেই আর নেই ছেলেদের আড্ডা।ছেলেদের আড্ডা থাকার কথাও না, ডগকুইনকে ইদানীং দেখা যাচ্ছে না।

আমি বেশ উদ্বেগে সময় পার করছিলাম।একদিন ওদের বাসার আশেপাশেও ঘুরে এলাম।চারপাশে উচু দেয়াল, কিছুই দেখা গেল না।প্রায় সাতদিন পরে ডগকুইনের দেখা পাওয়া গেল। সন্ধ্যায়, আগের মতই জিন্স টপ পরা।ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে একটা নেড়ি কুকুর। ও কুকুরটির গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তবে মুসার দোকানে বা রাস্তায় এখন আর কুকুরের আড্ডা বসছে না।ডগকুইন আছে, ওরা নেই!কি হয়েছে ওদের? সেদিন রাতেই বা কি হয়েছিল? ডগকুইনকে জিজ্ঞেস করা যায়,ও আমাদের বাসার নিচেই আছে।কুকুরটাকে আদর করছে, কুকুরটা কুইকুই করে আদর খাচ্ছে।

আমি নিচে তাকাতেই ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।কি তীক্ষ্ণ চোখের চাহনি!আমিই চোখ নামিয়ে নিলাম। আমি কিছু বলার আগেই সে বললো,"সেদিন সব দেখেও আপনি নিচে এলেন না কেন?আপনার সাহসতো এই নেড়ি কুত্তাটার চেয়েও কম।সকাল বিকেল আমার থেকে একটা করে বিস্কুট খেয়ে যাবেন,কেমন।"
আমি এই প্রথম ডগকুইনের মুখ দেখলাম।খোলা চুল, পরনে নীল জিন্স আর গোলাপি টপ।দেবী দুর্গা যদি জিন্স-টপ পরতেন, তাকে এই মেয়েটার মতই লাগতো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×