১...
: তো তুমি তাকে বিয়ে করতে চাও?
: হ্যা, চাই তো।
: ও এত নোংরা, নিজের ঘরটাও নোংরা করে রাখে।আঙুল দিয়ে নাকের ময়লা খোঁচায়।
: ইয়াক! তাই নাকি? তাহলে তো....…
: আরও আছে! ঘুমে নাক ডাকে! ঘরররর...ঘরররর....(নিহান অভিনয় করে দেখালো) শব্দে তুমি ঘুমাতে পারবে না।
: ও মাই গড!
: তোমাকে ভালো মানুষ মনে হচ্ছে তাই বলছি, ও কিন্তু চোরও, আমার টাকা চুরি করে নেয়। ডাহা মিথ্যে কথা বলে। এগুলা যে আমি বলেছি কাউকে বলো না কিন্তু!
: না না না,,, এমন চুন্নিকে তো আর বিয়ে করা যায় না!
: হ্যা, ভেবে দেখ। তোমার সব টাকা চুরি করে নিবে।তোমার ভালো চাই দেখেই বলছি।
: আচ্ছা, আচ্ছা!
২...
চারপাশে খুশির আমেজ।।খাবার টেবিলে একগাদা খাবার দেয়া আছে, কারও সেদিকে খেয়াল নেই। সবাই গল্প করছে। কেবল নিহান ভালো নেই, ওর কিছুতেই ভালো লাগছে না! ও ছেলেটাকে আবার দূরে টেনে নিয়ে গেল।
: কি হল তোমার? আমার কথা বিশ্বাস করছো না? আরও গোপন কথা বলি, ওর তো কিছুদিন আগেই ব্রেকআপ হয়েছে! ঐ ছেলেটাকে ভুলতে পারছে না দেখেই বাসা থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। দেখছ না, কেমন তাড়াহুড়ো করছে।
: তাই নাকি? ছেলেটার নাম কি? তুমি চেন নাকি?
: আরে তুমিতো জানই না! আর ছেলেটার নাম দিয়ে কি হবে? পুরানো কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তুমি বিয়ে ভেঙে দাও।
: তা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা, ভেঙে দিব। তুমি কে বলতো?
: আমি কে তা জেনে কি করবে? তোমার ভালো চাই দেখেই বলছি। আর এই এত রান্না এগুলা সে তো করেনি, ওর আম্মু-চাচী করেছে। এখন বলছে ও রান্না করেছে। মিথ্যুক একটা! ও কিছুই পারে না!
: তুমিতো দেখা যাচ্ছে তাকে একদম পছন্দ কর না।
: পছন্দ করার কি আছে, ও কত কালো! তুমি ওকে বিয়ে করো না। ও সব খেয়ে ফেলবে, তোমার জন্য খাবার কিছুই থাকবে না। আর ও এত অসহ্য! তুমিতো কিছুই জানো না!
: আচ্ছা, এটা কেমন হয়? আমি ওকে এখান থেকে নিয়ে গেলাম আর তোমার ওকে সহ্য করতে হল না, ও তোমার খাবার চুরি করতে পারবে না। এটাতো তোমার জন্যই ভালো, তাই না!
ছেলেটি ছোট্ট নিহানকে আদর করে দিল। কিন্তু নিহান দমে যাবার পাত্র নয়। সে আবার কথা বলতে শুরু করলো।
: কিন্তু ওকে বিয়ে করলে তোমাদের বেবিও কালো হবে। তুমি জানো? টিভিতে দেখ না?
: কিন্তু আমিতো ওকে ভালোবাসি!
নিহান আর কথা না বাড়িয়ে হনহন করে চলে গেল।
৩...
বাড়িতে বিচার বসেছে, নিহানের বিচার। নিহান মাঝখানে আর ওর চারপাশে বাবা সারোয়ার জাহান, জ্যাঠা সাত্তার খান, আর মা, জ্যাঠীসহ বাড়ির সবাই। সবার মাঝে ছোট নিহানকে আরও ছোট দেখাচ্ছে! নিহানকে এ অবস্থা থেকে কেবল ভাইয়া বাঁচাতে পারে, কিন্তু ভাইয়া এখনো পৌঁছাতে পারেনি। বিপদে ভাইয়াকে পাওয়া যায় না, এটা একটা সমস্যা!
"তুমি এটা কেন করলে? কথা বল নিহান!”
সবার চোখে একই প্রশ্ন, সবাই উত্তরের জন্য নিহানের দিকেই তাকিয়ে আছে।
নিহান বুঝে গেছে সবাই সবকিছু জেনে গেছে! ও কোন উত্তর দিচ্ছে না, পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝেতে কাটাকুটি খেলছে। সারোয়ার জাহান বেশ রেগে গেলেন, চিৎকার চেচামেচি শুরু করলেন।
এত ছোট একটা মেয়ে নিজের বোনের নামে বানিয়ে বানিয়ে এত বাজে কথা কেন বলবে? কেউ ভেবে পায় না!
সাত্তার খান হুঙ্কার দিলেন, কেন এসব বলেছ নিহান? নিহান কথা বলছে না, ফুপিয়ে কাঁদছে।
তখন হাসান ঘরে ঢুকলো, বললো," আরে ছেলেপক্ষ চলে গেছে নাকি? আমি জ্যামে পরে ঠিক সময়ে আসতে পারলাম না। তা তোমরা কেমন দেখলে......"
কথা শেষ করার আগেই নিহান দৌড়ে এসে ভাইয়াকে জড়িয়ে শব্দ কাঁদতে শুরু করলো।
"কি হয়েছে? আমার বেবি কাঁদছে কেন? আমাকে বল বেবি, কি হয়েছে?"
হাসান নিহানকে নিয়ে বাইরে চলে এল। পুরো কাঠালীপাড়া ঘুমিয়ে গেছে, পুবের রাস্তাটাও ফাঁকা। হাসান নিহানের হাত ধরে হাঁটছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার, জোনাকি-চোখগেল পাখির ডাক ছাড়া টু শব্দটিও নেই। নিহান ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছে।
: বেবি! কি.......
: না ভাইয়া, আমি চাইনা আপুর বিয়ে হোক। আমিওতো আপুকে ভালোবাসি, আপু আমাদের সাথেই থাকবে। অন্য কোথাও যাবে না, আমি আপুর বিয়ে দিতে চাই না। কক্ষনও না, কক্ষনও না!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:০৯