somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Living-being Psychology ৮.০

১০ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১....
চোর মাথা নিচু করে আছে, তার বিচার হচ্ছে। সবাই তারা বিরোধী, সে এখনো কথা বলার ফুরসত পায়নি। এই চোর মোটামুটি শক্ত ধরনের, এখনো কাঁদেনি। সকলে চোর হিসেবে তার ভবিষ্যৎ দেখে ফেলেছে। আমি ঘরে ঢুকতেই চোর আমার কাছে চলে এলো। অপরাধ গুরুতর, সে ছাদ বাগানের সকল আম চুরি করে কি করেছে কেউ বলতে পারছে না। সেও কথা বলছে না। তার শিক্ষক হিসেবে, শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব আমার উপরে পরল।
" আমি বাবাকে বলেছি আম কিনে দিতে, বাবাতো দিল না। আমি গাছের আম তাদের দিয়ে দিয়েছি। আর সব দিই নাই। মাত্র ৫ টা আম নিয়েছি। আমরাতো আম কিনতে পারি, ওরাতো পারে না।"
"ওরা কারা?"
" স্কুলের সামনে দুইটা বাচ্চা বসে থাকে। রাস্তায় ভ্যানের আমগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে! ওদের ৫ টা আম দিলে কি হয়? আমার কাছে টাকা নাই, তাই চুরি করে দিয়েছি। মা কখনো ওদের আম দিতে রাজি হত না।"
ও কাট্য যুক্তি! চোর হিসেবে শাস্তি পাবার কথা থাকলেও ভালো মানুষ হিসেবে তাকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলাম।
কারও চেহারা দেখে মনে হল না, তারা আমার সাথে একমত! আমার কি? আমি চোরটাকে পিথাগোরাসের উপপাদ্য বোঝানো শুরু করলাম।

২....
প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করতে বের হই। একঘন্টার মত হাঁটি। গান শুনি, কানে ইয়ারফুন গোজা থাকে আর পিছনে আসে একটা কুকুর। তবে কুকুর আমার ভালো লাগে না, আমি ইট মেরে তাড়িয়ে দিই।ছোটবেলায় একবার চৌদ্দটা ইনজেকশন নেয়া লেগেছিল তো। এরপর কুকুরটা আর পেছনে আসে না।

সেদিন হাঁটাহাঁটি করছিলাম, যথারীতি কানে ইয়ারফুন গোজা ছিল। লোক দুইটা আমাকে ডেকেছে,আমি টের পাইনি। তারা পুলিশের লোক, আমার উপর চড়াও হলেন। কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন নিয়ে নিলেন, কুৎসিত দুইটা গালি দিলেন। কুকুরটা দূর থেকে দেখছিল।
"কলার ছাড়ুন ভালোভাবে কথা বলুন, আমার বাসা সামনের গলিতেই।"
"তুই কইলেই অইব? কাইল এইহানে ছিনতাই অইছে, তুই করছস।"
আমার কলার ধরে লোকটা ঝাঁকি দিতেই কি মনে করে কুকুরটা তাদের উপরে দিকে ঘেউঘেউ শুরু করলো, কামড়ে দিতে দৌড়ে এল।
লোক দুইটা ভয়েই দূরে চলে গেল। এবার আমি কথা বলার সময় পেলাম। বললাম, আমি সদ্য ল' পাস করেছি। এবার বার রিটেন পাস করেছি, উকিল হব। প্রতিদিনই রাতেই কমিউনিটির রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করি।
তারা বিশ্বাস করলেন না, আমার সাথে আসতে চাইলেন। কিন্তু আমার কাছাকাছি আসতেই পারলেন না, কুকুরটা তেড়ে এল। অগত্যা একজন বললো, "উনি এখানকারই হবেন। নইলে রাস্তার কুত্তায় চিনতো না।"
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,"আপনে বাসায় যান, রাইতে বাইর হবেন না। দ্যাশের অবস্থা ভালা না।"
তারা চলে যেতেই আমি কুকুরটাকে ইট মেরে তাড়িয়ে দিলাম। কুকুর আমার একদম ভালো লাগে না।

৩....
ফোন টিপে টিপে ঢাকা ডি.সি অফিসের দো'তালা থেকে নামছিলাম। মেজাজ খারাপ, সারাদিন এ.ডি.সি(রাজস্ব) স্যারের ২০৭ নম্বর রুমের সামনে বসে থাকলাম। কোন কাজ তো হলই না, সারাদিন নষ্ট, সাথে ৫০০ টাকাও পিয়নকে দেয়া লাগলো। অবশ্য এই পিয়নটা শুয়োরের বাচ্চা না, টাকা নিয়ে কাজ করে।

গেট দিয়ে বের হয়ে সিড়িতে নামতেই হুমড়ি খেয়ে পরে গেলাম। কালো প্যান্ট ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়িয়ে পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে বললাম, "চোখে দেখতে পাস না, ব্যাটা!"
"আপনেই তো আমার উপ্রে পইড়া গেলেন, স্যার। আমিতো খাড়াইয়া রইছি।"
পিচ্চিটার হাতের সব ব্যাজ মাটিয়ে ছড়িয়ে গেছে। বৃত্তাকার ব্যাজের মাঝখানে মুজিবের ছবি, দুই টুকরা রিবনে লিখা "১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস"! মনে হচ্ছে, মাটিতে ছড়িয়ে আছে একঝাঁক মুজিব!

আমি সবগুলো কুড়িয়ে পিচ্চিটার হাতের ঝুড়িতে তুলে দিলাম। তাড়াহুড়ো করে গেট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম, তখন সে বললো," স্যার, একটা ব্যাজ কিনেন।"
"এগুলা কিনে কি হবে, এগুলা কেউ পরে নাকি?"
" একটা মানুষের পরিবারের সবাইরে মাইরা ফালাইছে, হেগর লেইগ্যা কষ্ট পাওয়ার জইন্য একটা কিনেন।"
অকাট্য যুক্তি।
"আচ্ছা, তিনটা দে। কত?"
"আপনে ১৫০ টেকা দেন।"

"তুই ১০০ টাকার বেশি একটাও পাবি না।"
আমি গেটে দিয়ে বের হতে হতে শুনলাম ছেলেটা বলছে,"এই উকিলের ইনকাম ভালা না।!"

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:০১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×