- কল্পনার আবেগগুলোও কখনো কখনো গল্পের চরিত্রকে বদলে দেয় বাস্তবতায়। আবেগমাখা সন্ধ্যেটা কখনো কখনো ধূমায়িত চায়ের কাপের দরদ নিয়ে কেটে যায় চোখের পলকেই। বৃষ্টির জলতরঙ্গের ঝুমঝুম নৃত্য দোলা দিয়ে যায় আবেগী দাম্পত্যকে। হুম, এই আবেগগুলো কিন্তু ঠুনকো নয় মোটেও।
- বাহ, কবি সাহেব, বাহ। ভালোই তো লিখেছেন, তা কবে দিচ্ছেন আমার হাতে? বইমেলা তো প্রায় চলেই এলো।
- লেখনীপিয়াসী তরুণ সত্ত্বার প্রাণমন জাগ্রত করবার অভিপ্রায়ে আমার এই লেখনী, তাদের আবেগ যেন ছূটন্ত চড়ুই পাখির চঞ্চলতায় ভরপুর আকৃতির ন্যায়। কার আছে সাধ্য তাকে মুঠোয় বন্দী করার!!
- তা লেখার নাম কি দিলেন? "আবেগ"?
- ওতসব ভাববার অবকাশ হয়ে উঠেনি এখনো। গল্পের পংকক্তিগুলোকে ধীরে ধীরে জীবন্ত করার লক্ষ্যে নাওয়া খাওয়া ভুলে সময় কাটছে আমার। আবেগকে প্রশ্রয় দিয়ে যদিও এতদূর হেটে আসা কিন্তু ক্ষণিকের মোহে পড়ে নিজস্ব সত্ত্বাকে বিকিয়ে দেওয়ার আগ্রহ জাগে না!!
- এ্যা, কি বলেন? মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তো সব। যাক গিয়ে, আমি তাহলে পরশুদিন আসি। আপনার লেখাটা নিয়ে প্রুভ রিডিং করতে দিতে হবে। এরপর প্রেস, তারপর পাবলিসিটি, সবশেষে বইমেলায় উঠানো। বাব্বা, কম কাজ না একেবারে!! কবি সাহেব আপনি বরং একটু জলদি করেন, অন্যবারের তুলনায় এবার দেরীটা একটু বেশিই হয়েছে। কিন্তু আপনার লেখা ছাড়া বইমেলা!! উফ, ভাবাই যায় না। তবে উঠি তাহলে আজকে, খোদা হাফেজ।
- যান্ত্রব জীবনে এটা যে লেখনী নয় বরং বাস্তবতাতেই আবেগকে পুজি করে বেচে আছি, সেটা লেখনী বিক্রি করে পেট চালানো কাউকে বুঝানো আমার কম্য নয়। আমি তাই কিছু বলিওনি। আমার লেখনীকে প্রশংসায় ভাসানো মানবসকলকে আমি দেখি, ভাবি তারা এই কারণেই মুগ্ধ কারণ এগুলো তাদের বোধগম্য হয়নি। সহজে হাতে আসা বস্তুর প্রতি মুগ্ধতা আসে না, আসে মায়া।
তবু নিজের সত্ত্বাকে জলাঞ্জলী দিয়েও আমাকে ক্ষুধার কথা ভাবতে হয়। তাই তো যেগুলো শুধুই আমার মনের কথা, সেগুলোও কাগজের পয়সার দরের লোভে আমাকে বেচতে হয় খোলা বাজারে। তোমরা হয়তো সেগুলোকে বই বলো, আমার লেখনী দেখে বাহবা করো কিন্তু কখনো কখনো মনের অব্যক্ত কথাগুলোর জন্য বাহবা পাবার অভিপ্রায় থাকে না, মনে হয় যেন, সেগুলো অধিকার রাখে শুধুই মনের মাঝেই লুকিয়ে থাকবার....
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:০৬