somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোশারফ হোসেন ০০৭
বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার রক্তাক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের ঘুরে দাঁড়ানো #:-S :-&

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ১৯ই ফেব্রুয়ারী, শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে নিকটস্থ এলাকা "গেরুয়া"-র বাসিন্দারা একজোট হয়ে, এমনকি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মাগরিবের নামাজের পর জাবি ছাত্রদের যাকে যেখানে পেয়েছে, তাদের উপর সদলবলে আক্রমণ করে এবং ফলাফল? আরেক রক্তাক্ত ঘটনা ।





ঘটনার নেপথ্যে আসলে কি ছিল ?

এলাকাবাসী এবং দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস পত্রিকা ও আরও কয়েকটি মিডিয়ার বরাত থেকে জানা যায় যে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর আঘাত যেমন ছিল ক্ষমতার দাপট দেখানো, এই ক্ষেত্রে ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো । স্থানীয়রা বরং ক্ষমতার দাপট দেখানো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কতিপয় ছাত্র কর্তৃক স্থানীয় এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও চাঁদা (প্রায় ২ লক্ষ টাকা) দাবীর ফলশ্রুতিতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তিকে উদ্ধারপূর্বক ছাত্রলীগ, সাধারণ ছাত্র সকলের উপর নির্বিচারে এই আক্রমণ চালায় বলে জানা যায় ।



তবে জাবি ছাত্রদের ও কয়েকটি মিডিয়ার বরাত থেকে জানা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরে জাবি ছাত্র ও স্থানীয় কতিপয় যুবকদের মাঝে ক্রিকেট খেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে । এলাকাবাসী ১৯ই ফেব্রুয়ারী প্রায় সারারাত ধরে জাবি ছাত্রদের উপর তাণ্ডব চালায় ।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মজার ব্যাপার হচ্ছে, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মত ১৯ই ফেব্রুয়ারীর এ ঘটনাতেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নিস্ক্রিয় ভূমিকাই পালন করছে । বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান তো মিডিয়ায় বলেই দেন "বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা কোন শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব প্রশাসন নেবে না" । এ থেকেই বুঝা যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত মুখোশের আড়ালে একটি ধ্বজভঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যারা সরকারী হুকুম আহকাম লেহন করা ছাড়া নিজ পরিচয়ে মোটেও উদ্ভাসিত নয় ।



করোনাকালীন পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার দরুন সেখানকার আবাসিক হলগুলোও বন্ধ । তাই বর্তমান সময়ে ছাত্রদের উপর যে কোন প্রতিহিংসামূলক আচরণে ছাত্রদের একজোট হয়ে প্রতিবাদ করতে না পারার সুযোগ খুঁজেই স্থানীয়রা নিজেদের দাপট, এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর শক্তি খাটিয়ে দেখানোর সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছেন বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা । এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে অচিরেই আমরা মেধাশূন্য একটি জাতি হিসেবে ব্যকফুটেই চলে যেতে থাকবো ।



কিন্তু বিধাতা হয়তো অন্য কিছুই লিখে রেখেছেন । মূলত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর আবারও একই রকম ঘটনা ঘটা দেশের অন্যতম বৃহত্তর বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের চোখ খুলে দেয় । তারা অবশেষে বুঝতে পারে যে, শিক্ষার্থীদের আপন যদি কেউ থেকে থাকে সেটা আসলে শিক্ষার্থীরাই আর তাদের অভিভাবকরাই । অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা, সরকার সকলেই বিপদের আঁচ টের পেলেই লেজ গুটিয়ে পালায় । তাই শিক্ষার্থীরা ঠিক পরেরদিন অর্থাৎ ২০শে ফেব্রুয়ারী ক্যাম্পাসে যে যেখান থেকে পারে এসে জড়ো হতে থাকে । তারা একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকাই মূলত তাদের সামগরিক সমস্যার কারণ । কেননা আবাসিক হলগুলো খুলা থাকলে আশেপাশে যারা ক্যাম্পাসের বাইরে মেসগুলোতে অবস্থান করছে, তারা ক্যাম্পাসের ভিতরেই এই আবাসিক হলগুলোতেই অবস্থান করতো । কে না জানে, এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কেই দেশের একমাত্র সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়ে থাকে ।




অবশেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২০শে ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার মধ্যে আল্টিমেটাম দেওয়া হবে যাতে তারা সকল আবাসিক হলগুলোর তালা খুলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবারও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় । এই স্মারকলিপি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রশাসনকে জানালে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাফ জানিয়ে দেয়, যেহেতু সরকারী সিদ্ধান্তক্রমে আবাসিক হলগুলো বন্ধ করা হয়েছে, এই সরকারী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো খুলা সম্ভব নয় । শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে সকাল ১০টার আল্টিমেটাম সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বর্ধিত করে । কিন্তু তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন সাড়া না দেওয়ায়, এরপর শিক্ষার্থীরা করে ফেলে যুগান্তকারী একটি কর্ম । ঠিক ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, প্রয়াশন যেহেতু তাদের আল্টিমেটামে কান দেয়নি, এর জন্য প্রশাসনকে উচিত জবাব দেওয়া হবে । ফলশ্রুতিতে এক এক করে ভাঙ্গা হতে থাকে আবাসিক হলগুলোর তালা । উন্মুক্ত হতে থাকে শিক্ষার্থীদের অভয়ারণ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো । তালা ভাঙ্গার আনন্দের উচ্ছ্বাস যেন বাধ ভাঙ্গা হয়ে পড়ে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য ।




ঠিক ২১ শে ফেব্রুয়ারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হুশিয়ারি করে পরবর্তী দন অর্থাৎ ২২শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে সকল শিক্ষার্থী আবাসিক হলগুলো খালি করে না দিলে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে । এই নাকি প্রশাসন ছাত্রদের অভিভাবক !!!! একজন অভিভাবক তার সন্তানকে শাসন করে নিজে থেকে, পুলিশে ধরিয়ে দেয় না ।



জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আদেশে হলগুলো আবারও খালি করে দেবে কিনা তা এখনও জানা যায় না কিন্তু তাদের এই কার্যক্রম বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে । প্রথমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এরপর দেশের সর্ববৃহৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় - দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র । "ভাঙো ভাঙো হলের তালা ভাঙো" এই ধরনের স্লোগানে মুখ্রিত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ।




এখন এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ও সরকারী নীতি-নির্ধারকরা কিভাবে দেখছে, সেটা সত্যিই ভাবার বিষয় । তবে কোন ভাবেই এই আন্দোলন সরকার বিরোধী আন্দোলন নয় । করোনা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার পক্ষে, তাদের কিছু প্রশ্ন করতে চাই ।

এই যে গতকাল অর্থাৎ ২১শে ফেব্রুয়ারী শহিদ মিনারে ভিড় ঠেলেও ফুল দেওয়া যাচ্ছিল না, সেখানে করোনা ছিল না ? নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, যেখানে পর্যটকের ভিড়ে আবাসিক হোটেল পর্যন্ত না পাওয়ায় সৈকতের বেঞ্চে ঘুমিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে, সেখানে করোনা নেই? আশা করি এই দুইটি প্রশ্নের উত্তর কেউ সন্তোষজনকভাবে দিতে পারলে সে বা তারা এই ছাত্রদের মনের অবস্থাও সামান্য হলেও বুঝতে পারবে ।


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:২৩
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×