গত ১৮ই এপ্রিল ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে সংঘটিত একটি ভাইরাল ঘটনা নিয়ে কিছু বলার (আদতে লেখা নিয়ে) জন্য আসলাম । বিএসএমএমইউ এর একজন সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র মহিলা ডাক্তার, একজন দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট এবং কর্তব্যরত কিছু পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে বাগবিতণ্ডা এবং কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আদতে বাংলাদেশের মানুষ দুইটি ভাগে তথা দুইটি পক্ষে ভাগ হয়ে গিয়েছে । একদল সমর্থন করছেন সেই সিনিয়র ডাক্তার মহিলার বলা কথাগুলোকে এবং আরেকদল ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ঠিক সমর্থন নয় বরং বিরোধিতা করছেন সেই সিনিয়র ডাক্তার মহিলার বলা কথাগুলোকে ।
আমি কোন পক্ষে, সেটা বলার আগে একটা বিখ্যাত উক্তি দিতে চাই । ধর্মযাজক ডেসমন্ড টুটু এর মতে, "যেকোন অন্যায়ের পরিস্থিতিতে আপনি যদি নিরপেক্ষ থাকেন তবে আপনি নিপীড়কের পক্ষ নিয়েছেন" । তাই টুটু সাহেবের কথার সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমি নিরপেক্ষ থাকতে চাচ্ছি না কিন্তু এখানে "নিপীড়ক" কে, এই বিষয়টা নির্ধারণ করা খুব জরুরী ।
গত কয়েক বছরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলে পরিচিত পুলিশের ভাবমূর্তি দেশের বেশিরভাগ জনগণের কাছে তেমন পজিটিভ নয় । তাছাড়া বিভিন্ন সংবাদে আসা নিউজগুলো যেখানে একজন সাধারণ পুলিশ কর্মকর্তা যেখানে রাস্ট্রের মালিক "জনগণ"কে স্যার বলে ডাকার কথা, সেখানে তারাই জনগণের মুখ থেকে "স্যার" ডাক না শুনে অস্থির হয়ে পড়ছেন, নিউজগুলো পড়লে যে কেউই শিউরে উঠতে বাধ্য ।
এতসব কাহিনীতে না যেয়ে যদি বাস্তব একটি উদাহারন দেওয়া যাক । মাত্র একদিন আগেই অর্থাৎ ১৭ই এপ্রিল, একজন ডাক্তারের পরিচয় পাওয়ার পরও শুধুমাত্র মুভমেন্ট পাস না থাকার অজুহাতে ১০০০ টাকা জরিমানা করে, যেখানে এই মুভমেন্ট পাস নামক সিদ্ধান্তের বাইরেই রাখাটা উচিত ছিল এই ডাক্তার সম্প্রদায়কে । আর আজকে অর্থাৎ ১৯ই এপ্রিল ফেনীতে ঘটে যাওয়া একজন সাধারণ জনগণকে রিকশা থেকে শার্টের কলার ধরে নামিয়ে এলোপাতারি চড় থাপ্পড় মারার বিষয়টা তো আছেই । এরকম হাজারটা উদাহারণ দেওয়া যাবে ।
এবার আসি ডাক্তারী পেশার কথায় । করোনা মহামারীর সময় ডাক্তারদের অবদান কোনভাবেই অস্বীকার করার জো নেই । কিন্তু নানান সময় দেশের আনাচে কানাচে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ রোগীকে অহেতুক হয়রানি করার যে অভিযোগ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আসে, তার জন্য শুধু একটা কথাই বলতে চাই, "যা রটে, তার কিছু হলেও ঘটে" । সামান্য ব্যাথা নিয়ে গেলে যারা এই টেস্ট, ঐ টেস্ট ইত্যাদি ধানাই পানাই করে মানুষের পকেট কাটে, একটু কান পাতলেই তাদেরকে দেওয়া "কসাই" উপাধিটা তাই শুনতে পাওয়াই যাই ।
মজার বিষয় হচ্ছে, ইদানিং বাংলাদেশের সকল পেশাগুলো তে সকল পেশাজীবীদের আবেগ কেমন যেন বিকেন্দ্রীকরণ হয়ে গেছে । একজন পুলিশ কিংবা একজন ডাক্তার কিংবা একজন ব্যাংকার বাংলাদেশের যে প্রান্তেই ছোটখাট অন্যায় করুক কিংবা ভুক্তভোগী হন না কেন, একই পেশার সকলেই বিনা বাক্য ব্যয়ে তাকে সমর্থন করার জন্য এক পায়ে খাড়া হয়ে যান । তাদের জানার ইচ্ছাও থাকে না, আসলে তার পেশার ঐ ব্যক্তি আসলে অন্যায় করেছে নাকি ভুক্তভোগী হয়েছে । সকলের চোখে সে তখন শুধুই "ভুক্তভোগী" ।
ফেসবুক ঘাটলেই দেখতে পাচ্ছি, অনেকেই ঐ সিনিয়র মহিলা ডাক্তারের ঔদ্ধত্য আচরণে যারপরনাই অতীব বিরক্ত হয়েছেন । সেই সময় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আর কর্তব্যরত পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলা তার বিখ্যাত উক্তি, "তুই ডাক্তারিতে চান্স পাস নাই তাই তুই পুলিশ আর আমি চান্স পাইছি তাই আমি ডাক্তার", বেশ আলোচিত হয়েছে । একজন সিনিয়র ডাক্তারের এমন আচরণ দেখে জুনিয়র ডাক্তারদের কি অবস্থা, সেই আশংকা প্রকাশ করেছেন । অথচ আমার মতে, সাংবাদিক যখন ভিডিও শুরু করেছেন, তখন আমরা শুধু ঐ মহিলার আচরণটুকুই দেখেছি, তার সাথে কি রকম ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেখেনি । তাই মুদ্রার শুধু এক পিঠ দেখে, সম্পূর্ণ মুদ্রা নিয়ে মন্তব্য করতে আমি রাজি না ।
তিনি মন্ত্রীকে ফোন না দিলে কিংবা তার ক্ষমতা না দেখালে হয়তো তার অবস্থা খারাপ হতো, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায় । তার মত ক্ষমতাশীল ব্যক্তির সাথে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতেই বুঝা যায় সাধারণ জনগণ এ দেশে কতটা অসহায় । গাড়িতে বিএসএমএমইউ এর লোগো দেখেও যে শিক্ষিত শ্রেণী বুঝে না তিনি আসলে কে বা কোন উদ্দেশ্যে তিনি এই সময় বাইরে বের হয়েছেন, তাদের জন্য মহিলার করা ব্যবহারে তেমন কোন ভুল দেখতে পাইনি আমি । তবে ঐ মহিলা, ম্যাজিস্ট্রেট আর পুলিশ তিনজনের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে ঘটনার অন্যরকম একটি মোড় দেওয়ার চেষ্টা হাস্যকর লেগেছে । মহিলা অবশ্য এতটা রাফ আচরণ না করলেও পারতেন কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, পিছুতে পিছুতে দেয়াল পিঠ ঠেকে গেলে যে কোন প্রাণীই হিংস্র হয়ে উঠে, এ আর নতুন কি