- দেশের ক্রান্তিকাল নিয়ে যারা ইতিহাস লেখেন তারা সাধারনত দুটি পক্ষ কে বিবরনে তুলে ধরেন। এক, যারা অত্যাচার করে। আর দুই, যারা অত্যাচারিত হয়। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে কখনোই এখানে পক্ষ দুইটি থাকে না, মূলত পক্ষ থাকে তিনটি। তৃতীয় পক্ষ হল যারা এই ক্রান্তি কালে চুপ থেকে ইনিয়ে বিনিয়ে এই অন্যায় অবিচারকে সমর্থন করে। তারা ভাল কিংবা খারাপ করছে কিনা সেটার থেকে বড় ব্যপার এই তৃতীয় পক্ষকে ইতিহাসে উল্লেখ রাখা জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ। এদের কথা উল্লেখ না থাকলে ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায় সবসময়।
- জোর গলায় বলা হচ্ছে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কিন্তু উন্নয়নের রঙিন পোস্টারের পিছনে চাপা পড়ে যাচ্ছে যে, বিগত ১০ বছরের কার্যকলাপে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে অন্তত ১০০ বছর। মানবিক মূল্যবোধ এখন মানুষের কাছে অলিক ব্যাপার। প্রত্যেকটা মানুষের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ঘৃণার এক বিষ বাষ্প। মতের সাথে না মিললেই তুমি ঘৃণার পাত্র। এই ঘৃণা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে নিজের দলের, নিজ মতের বিরুদ্ধে গেলে নিজের অতি পরিচিত একই গ্রামের একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলতেও বুক কাপতেছে না আমাদের। পুলিশের আঙ্গুল এখন নিমিষেই ট্রিগার চেপে ধরতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। প্রশাসন, আইন আদালত, শিক্ষক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাইকে এই স্বপক্ষ বিপক্ষ নামক ঘৃণার জালে আবদ্ধ করা হয়েছে, এমন কি বাদ যায়নি প্রাইমারী স্কুলের পিচ্চি বাচ্চারাও। যেখানে এদের সবারই থাকা উচিৎ ছিল নিরেপেক্ষ, অন্ততপক্ষে তাদের দায়িত্বে বা কর্তব্যে। এরকম দলকানা মনোভাব আগে কখনো এই পর্যায়ে ছিল না। শান্তি আর সমৃদ্ধির বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের ঠ্যালায় কার্যত দু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
- প্রখ্যাত আলোক চিত্র শিল্পী শহিদুল আলমের কথাটা খুব মনে লেগেছে, আমার তিন বেলা খাবার দেয়া হচ্ছে, আমার থাকার জন্য ভাল রুম দেয়া আছে, আমার সুরক্ষায় প্রহরীও আছে তবুও আমি যদি জেলে থাকি তাহলে ঐ মুহূর্তে আমার একমাত্র চাওয়া হবে মুক্তি, স্বাধীনতা। একটা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটা চলমান প্রক্রিয়া। যে দলই ক্ষমতায় আসুক তাদের সময় সব অবকাঠামো আগের বার ক্ষমতায় থাকা দলের থেকে বেশিই হবে এটাই স্বাভাবিক। যেমন যদি বলাহয় এই সরকারের আমলে iPhone 10 রিলিজ হইছে আগের সরকারের সময় ছিল iPhone 2। এটা একটা বিরাট উন্নয়ন। সেটা যেমন হাইস্যকর তেমন অবান্তর। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে গণতান্ত্রিক ও মানবিক উন্নয়নও আবশ্যক।
- ঘৃণার এই জালে কতটা আঁশটে পিষ্টে জড়ানো হয়েছে এবং হচ্ছে বোঝা যায় তখন, যখন দেখি যে ছাত্ররা চিৎকার করে রাজাকারের ফাঁসির দাবী করে, তারাই অতিষ্ঠ হয়ে বুকে লেখে আমি রাজাকার। যখন দেখি, বিরোধী মতের হাজার মানুষের গুম হওয়ার খবরেও মনে সামান্যতম মানবিকতা জাগে না। যখন দেখি, হাঁটুর সমান বয়সের পোলাপান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের গায়ে হাত তুলতে একটুও দ্বিধা বোধ করে না। যখন দেখি, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আরেকজনের মেরুদণ্ড হাতুড়ী দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। মানুষের মন থেকে এই বিষ বাষ্প পুরোপুরি দূর করতে হয়তো লেগে যাবে শত বছর। তবুও হাল ছাড়িনি। স্বপ্ন দেখি গোছানো একটা বাংলাদেশের, সমৃদ্ধির সাথে সাথে শান্তির বাংলাদেশ। ধৈর্য ধরার পালা। জানি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬