পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি চলনে-বলনে বেশ পরিপাটি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি যখন ঘাড় দুলিয়ে আপন বক্তব্য তুলে ধরেন, তখন দেখতে সুন্দরই লাগে। তবে সম্প্রতি ট্রানজিট ইস্যুতে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার যে উদ্ভট তত্ত্ব হাজির করেছেন, তাকে আমরা সুন্দর বলতে পারছি না, তার চমত্কার বাচনভঙ্গি সত্ত্বেও। ভারতকে ট্রানজিট দিলে সে বাবদ এত বেশি আয় হবে যে, বাংলাদেশ টাকার পাহাড়ে চাপা পড়ার উপক্রম হবে—এই রসালো গল্প আমাদের বার বার শোনানো হচ্ছিল মহাজোট সরকার ও তার অনুসারী বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু দিল্লি ‘কিসের টাকা রে?...’ বলে হুঙ্কার ছাড়ার পর তাদের কথাবার্তা এলোমেলো হয়ে ‘কিছু একটা নেব’ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। এখন দীপু মনি বলছেন, কো-অপারেশন করে প্রতিদান চাইতে হয় না! আমরা এটা দিচ্ছি বলে তোমরা ওটা দাও—এমন কথা বলতে নেই। তাহলে সহযোগিতার কথা উঠলে তার আগে পারস্পরিক অথবা দ্বিপক্ষীয় শব্দের উপস্থিতি অনিবার্য হয়ে ওঠে কেন, সে ব্যাপারে তিনি খোলাসা করে কিছু বলেননি।
সরকারপক্ষের অন্যদের মতো আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাতেও এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হলে তার বিনিময়ে ভারত থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে, তার কোনো কিনারা না করেই আমরা দিল্লি গিয়ে ভারতের বাড়িয়ে দেয়া কাগজে ঘস ঘস করে দস্তখত দিয়ে এসেছি। পানি সমস্যা, সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল সংক্রান্ত সমস্যা, বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতাজনিত সমস্যা ইত্যাদি শিকেয় তুলে রেখে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে বলে দেশের গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষ মনে করেন। এ ঝুঁকির বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে বিপুল অংকের শুল্ক পাওয়া যাবে বলে এতদিন আমাদের শোনানো হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে ট্রানজিটের বিনিময়ে শুল্ক দাবি না করার যে আন্তর্জাতিক চুক্তি রয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সে খবর জানত না। বাংলাদেশ যে ব্যাপারটা জানে না, হয়তো তা জানে বলেই ট্রানজিটের ব্যাপারটা পাকা না হওয়া পর্যন্ত দিল্লি এ ব্যাপারে টু শব্দ করেনি। এখন সময় হয়েছে মনে করে তারা মুখ খুলছে।
তবে পণ্য ট্রানজিটের জন্য শুল্ক দাবি করা না গেলেও টোল বা চার্জ বা অন্য যে কোনো নামে অর্থ দাবি করা যায় এবং ট্রানজিট চুক্তি সই হওয়ার আগে বিষয়টি সংসদের অনুমোদনক্রমে পাকা করা উচিত। দীপু মনি বলছেন, ভারতের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে ফয়সালা করা হবে। দেখা যাচ্ছে, আমাদের সরকার সব ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে কথা বলে দিল্লির অনুমতি লাভের বিষয়ে যতটা আগ্রহী, তার বিপরীতে জাতীয় সংসদে এ ইস্যুতে আলোচনা করতে বললে তাদের সব আগ্রহ কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তাহলে কি এ অভিযোগই সত্য যে, সরকার এরই মধ্যে দিল্লিকে শর্তহীনভাবে অনেক কিছু বা সবকিছু দিয়ে বসে আছে? দীপু মনির কথায় যেভাবে থলের বিড়াল বাইরে উঁকি মারতে শুরু করেছে, তাতে অন্য কিছু ভাবার অবকাশ কোথায়
আরো দেখুন Click This Link
দীপু মনির উদ্ভট কো-অপারেশন থিওরি : থলের বিড়াল বেরুতে শুরু করেছে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা
বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।