somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধান গবষেণায় ব্রি’র সাফল্যের চার দশক

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭০ সালের ১লা অক্টবর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে চার দশকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এদেশের ক্রমর্বধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে। বিগত চার দশকে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি অর্থাৎ ১৯৭০ - ১৯৭১ সালে এদেশে চালের উৎপাদন ছিল প্রায় ১কোটি টন। ২০০৯-২০১০ সালে তা বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৩কোটি ৩৫ লক্ষ টনে। ২০০৯-২০১০ সালে দেশে আবাদকৃত উফশী ধানের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত চাষ করা হয়েছে এবং এ থেকে পাওয়া গিয়েছে দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৮৭ ভাগ। আর এসব সম্ভব হয়েছে ব্রি’র বিজ্ঞানীদের নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ও ধান চাষের আধুনিক কলাকৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত ব্রি ৪টি হাইব্রিডসহ ৫৭ টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত এবং শতাধিক ধান চাষের আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সর্বাধিক ফলনশীল জাত ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯, মঙ্গা পীড়িত এলাকার জন্য ব্রি ধান৩৩, জোয়ার-ভাটা এলাকার উপযোগী জাত ব্রি ধান৪৪, বন্যা প্রবণ এলাকার জন্য নাবি জাত ব্রি ধান৪৬, লবণ সহনশীল জাত ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, জলমগ্নতা সহনশীল জাত ব্রি ধান৫১ ও ব্রি ধান৫২।
ধান গবেষণায় ব্রি’র সাফল্য জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ব্রি উদ্ভাবিত ধানের আবাদ শুধু বাংলাদেশের সীমাবদ্ধ থাকেনি। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে যেমন ভারত, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, চীন, কেনিয়া, ইরাক, ঘানা, গাম্বিয়া, বুরুন্ডি ও সিয়েরালিয়েন সহ অনেক দেশে ব্রি উদ্ভাবিত বেশকিছু উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত আবাদ হচ্ছে। বিজ্ঞান ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রি ও ব্রি’র কয়েকজন বিজ্ঞানী তিনবার স্বাধীনতা দিবস স্বর্ণপদক ও তিনবার প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, পরিবেশ পদকসহ জাতীয় ও আর্ন্তজার্তিক পর্যায়ে ১৫টি পুরস্কার লাভ করে।

একুশ শতকের উষালগ্নে দাড়িয়ে একদিকে যেমন ব্রি’র চার দশকের সাফল্যগুলো আমরা পুলকিত চিত্তে স্বরণ করছি অন্য দিকে তেমনি আগামী দশকগুলোর চ্যালেন্স মোকাবেলায় নতুন নতুন লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দৃপ্ত শপথ নিতে হবে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ ১৭ কোটি মানুষের জন্য চালের উৎপাদন বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে ২৫ ভাগ বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। খড়া, লবণাক্ততা, জলমগ্নতা, ঠান্ডা, সহিষ্ণু উন্নত জাত ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়নের তাগিদ এখন আরও তীব্র হয়েছে। এক্ষেত্রে আশা ব্যঞ্জক তথ্য হলো, ইতোমধ্যে লবণাক্ত ও জলমগ্নতা সহনশীলজাত উদ্ভাবনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

একুশ শতক হচ্ছে প্রযুক্তি উষ্মেষের শতক। এ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি, কলাকৌশল ও জ্ঞান বিজ্ঞানে সজ্জিত হতে হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রযুক্তি গত দিক থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও আর্ন্তজাতিক গবেষনা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। কিন্তু একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের ল্যাবরেটরী ও গবেষণা উপকরণ যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরী। বিজ্ঞানীদের মেধা ও যোগ্যতা বিকাশের জন্য যথাযথ মুল্যায়ন ও প্রতিবেশী দেশ সমুহের বিজ্ঞানীদের ন্যায় পদন্নোতি পদ্ধতি ও আলাদা বেতন কাঠামো দরকার। তাতে বিজ্ঞানীদের কর্মস্পৃহা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি নতুন নতুন ত্বড়িৎ উদ্ভাবিত হবে। আমরা অত্যান্ত আনন্দিত যে, অবিরাম খাদ্য ঘাটতির আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বযংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে পৌছতে সক্ষম হয়েছে। ব্রি এ সাফল্যের প্রথম কাতারের অংশীদার হিসাবে গর্ববোধ করছে। অবশ্য আগামী দিনেও এ সাফল্যকে ধরে রাখতে আমাদের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×