প্রথম সিগারেটের প্রতি কৌতহল জাগে বাবার সিগারেট খাওয়া দেখে। সেই অনেক ছোটবেলায় এসট্রেতে ফেলে দেয়া সদ্য নেভা সিগারেটটা ঠোঁটে লাগিয়ে টান দিয়ে অনেক কেশেছি।
এরপর বিভিন্ন অকেশনে বা ফেষ্টিভালে (ঈদ, বিয়ে ইত্যাদি) সিগারেট খাওয়া হতো লুকিয়ে লুকিয়ে। খুব আয়েশ করে কিন্ত ভয়ে ভয়ে যদি কেউ দেখে ফেলে। তখন সাথে অবশ্য দুই একজন বন্ধু বান্ধব অথবা কাজিনরা থাকতো। খাওয়ার পর সে গন্ধ দুর করার জন্য কত চেষ্টা। এই খাও সেই খাও। আরো কত কি? সেই বয়সে কোন দোকান থেকে সিগারেট কেনাও ছিল পুরো রিস্ক। পুরো এলাকা ঘুরে ঘুরে বের করতাম কোন দোকানে অপরিচিত কোন দোকানী আছে কিনা। আবার চেনা কোন দোকানীর কাছ থেকে কিনলে তারা জিজ্ঞাসা করত, কে সিগারেট খাবে? তখন বলতাম, মামা খাবে বা চাচা খাবে। ইত্যাদি।
এরপর যখন ক্লাশ এইট অথবা নাইনে, তখন যদি কখনও সিগারেট খেতাম, তখন সিগারেট খাওয়ার সময় বাসা থেকে অনেক কষ্ট করে অনেক দুরে যেতাম, যেখানে কেউ আমাকে চেনে না। তারপরেও ভয় থাকতো যদি কেউ দেখে ফেলে। মনে আছে, প্রতিদিন বিকালে একটা সিগারেট খাওয়ার জন্য কতদুরেই না যেতাম।
একবার কি এককাজে যেন বাবার সাথে খালার বাসায় গিয়েছিলাম, তো আসার পথে একটা ফেরীতে পদ্মা নদী পার হতে হতো। ছোট ফেরি, বেশীক্ষণ সময় লাগতো না। যেই না ফেরি ছাড়লো ওমনি আমি বাবাকে বললাম তুমি বসো আমি একটু ঘুরে ঘুরে দেখি। নেমে গিয়ে ফেরির শেষ মাথায় দাড়িয়ে একটা সিগারেট ঠোঁটে দিয়েই এক চাচার হাত থেকে বিড়ির আগুন নিয়ে ধরাতে যাচ্ছিলাম। আর অমনি পিছন থেকে বাবা ডাক দিলেন, যাও গাড়ীতে গিয়ে বসো। আহা! কি ধরাটাই না খেয়েছিলাম। বাসায় আসার পর সে কি মার!!! আহা!
এরপর যখন কলেজে উঠলাম, তখন তো ডন্ট কেয়ার ভাব। কলেজে সারাক্ষণই সিগারেট খাই। ক্লাশ করতাম না, কোনদিন, কলেজে যেতাম আড্ডা মারার জন্য। একদিন রাস্তায় সিগারেট টেনে কেবলই ধোয়া ছেড়েছি, সামনে তাকিয়ে দেখি, আমাদের মহল্লার এক চাচা। আমাদের বাড়ীতে ভাল যাতায়াত আছে তার। আমি বাক হারা হয়ে গেলাম। ধোঁয়া ছাড়বো না চাচাকে সালাম দিবো। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি কেমন আছো? আমি উত্তরে বললাম, চাচা কিছু মনে করবেন না। তারপর আর সেই চাচার মুখোমুখি ইচ্ছা করে আর কখনও হইনি।
এরকিছুদিন পর সিগারেট টানা অবস্থায় হঠাৎ সামনে এক স্যার পড়ে গেলেন। এখন তাকে তো সালাম দিতে হবে। আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আমার ডান হাতে সিগারেট। মুখ ভর্তি ধোঁয়া। কিংকর্তব্যবিমুঢ হয়ে গেলাম। সালাম দিলাম বাম হাতে। আর স্লামুয়ালাইকুম বলার সাথে সাথে মুখ থেকে বের হয়ে আসলো একগাদা ধোয়া। পাঠক দৃশ্যটা একবার কল্পনা করে দেখেন।
এরপর গিয়েছি শ্বশুড় বাড়ী। রাতে খাওয়া দাওয়া করে একটু হাটতে বের হলাম কিন্তু আসল উদ্দেশ্য সিগারেট খেতে যাওয়া। হাটতে হাটতে একটা দোকানে গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে একটা টান দিয়ে ইউ টার্ন দিয়ে ধোয়া ছাড়তেই দেখলাম ধোয়াটা আমি আমার শ্বশুড় আব্বার মুখে উপর ছেড়েছি। পুরা ধরা। যদিও সবাই জানে যে আমি ধুমপান করি। কিন্তু সামনাসামনি। পড়বি তো পড় মালির ঘাড়েই।
এরকম জীবনে আরও ধরা খেয়েছি সিগারেট টানতে গিয়ে। অন্যদিন সেগুলো শেয়ার করবো। এখন সিগারেটে দিকে তাকিয়ে এগুলো মনে পড়লে হাসি আসে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৬