somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিটি ওয়ান হোস্টেলের দিনগুলো

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকবার মনে হয়েছে সিটিওয়ান হোস্টেলে থাকবার সময় গুলো নিয়ে কিছু লিখি। আমার ঢাকাইয়া জীবন কিভাবে শুরু হল, সেটা নিয়ে কিছু অংক কষে দেখি। দেখাযাক কেমন হিসেব মেলাতে পারি।

এইচ এস সি পরীক্ষার পরপরই ঢাকায় ভর্তি কোচিং এর উদ্দেশ্য আসি। কেমন একটা ফুরতি ফুরতি ভাব। একদম নিরামিষ পাবনা শহর থেকে ঢাকায় এসে আমাদের সবার মধ্যেই বেশ ভাব চলে এল। নেই বাবা-মা এর শাসন।সে এক অদ্ভুত স্বাধীনতা। ঠিক করেছিলাম মুক্ত বিহঙ্গের মত ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখব।এতদিনের নাটক-ছিনেমার ঢাকাই জ়ীবনটা খুব কাছ থেকে দেখব।আমার খুব সৌভাগ্য যে,সেই সুযোগটা আমি পেয়েছিলাম।

আমি, শোভন আর জোবায়ের তিনজন এক সাথে সিটিওয়ান হোস্টেলে উঠেছিলাম। পাঁচতলায় ছোট্ট একটা রুম। একটা দক্ষিনা জানালা ছিল রুমে।জানালা দিয়ে তাকালেই ঢাকা শহরের অনেক দুর পর্যন্ত দেখা যেত। ছোট্ট একটা চেয়ার, ছোট্ট একটা টেবিল, ঘুমানোর জন্য একটা নরবড়ে চৌকি, এই ছিল একজনের টোটাল আসবারপত্র।
প্রথম যেদিন হোস্টেলে আসি সেইদিনের কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। মনিপুরিপাড়ার এই হোস্টেল খুজতে গিয়ে আমরা একবার জিয়াউদ্যানে যাই, আবার বিজয়সরনী হয়ে ফার্মগেট যাই। আবার ঘুরেফিরে খামারবাড়ি, মানে আমাদের হোস্টেলটা কেন্দ্রে রেখে আমরা শুধু ঘুরছি আর ঘুরছি। পথচেনা না থাকলে যে ঢাকাশহরে বায়ান্নবাজার-তিপ্পান্নগলি অবস্থা দাঁড়ায় সেটা প্রথমদিনেই বুঝে গেলাম।

ঢাকাশহর আসা উপলক্ষে আমাকে যে সব উপদেশবানী দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল এইরকম, “বাইরে কোথাও পানি খাওয়া যাবেনা, ঘরে সব সময় পানি ফুটিয়ে খেতে হবে”, “ ছিনতাইকারি পকেট-মার থেকে সাবধান, মানিব্যাগ কখনো প্যান্টের পিছনের পকেটে রাখা যাবেনা”, “কোচিং এর বাইরে বেশী ঘোরা-ঘুরি করার দরকার নেই”, “ঢাকা শহরের মেয়েরা খুবই দুষ্টুপ্রকৃতির, এদের থেকে সাবধান”
তবে সবচেয়ে মজার উপদেশবানী ছিল, “বকন হইতে সাবধান”। বকন=বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালি। মানে এই তিন জেলার লোকজোন হইতে সাবধান। ঢাকায় আসার কিছু দিনের মধ্যেই এইবকন এর তাৎপর্য বুঝতে পারলাম। বকনাগিরি বনাম পাগলামি ভালই জমেছিল। যাই হোক সেইসব গল্প ধীরে ধীরে বলব।
আমাদের হোস্টেলের ম্যানেজারটা ছিল একটা বকন। তাই প্রথম দিনেই সাবধান হয়ে গেলাম। বলা যেতে পারে এই পাবলিককে অবজারভ করা শুরু করে দিলাম। হোস্টেলে একজন বাবুর্চি ছিল, বয়স ৩০-৩২ হবে, বেশছোট-খাট একজন মানুষ। তার নামটা এখন আর মনে নেই। তবে তার সাথে আমরা তিনজন বেশ খাতির জমিয়ে ফেলেছিলাম। সামনা-সামনি তাকে আমরা মামা বলে ডাকতাম, আড়ালে আবডালে শোভন একে রাম ছাগল বলে ডাকত।

মামা দুই বেলা রান্নার পর আমাদেরকে বাটিতে তরকারি দিয়ে যেত। তো মাঝে মাঝেই আমাদের তিনজনের কপালে মুরগীর গলা পড়ে যেত। কিযে মেজাজ খারাপ হত মুরগীর গলা ভাগে পড়লে। একেতো বিচ্ছিরি রান্না ,তার উপরে ওরস্টপার্ট। অতিষ্ঠ হয়ে আমরা মামাকে নানাভাবে পাম দিতে লাগলাম। বলা যায় শোভনই পটানোর আসল ভূমিকা পালন করল।মামাকে কদিন কথায় কথায় বললাম, মামা আমাদের রুমে আর কোন দিন যেন মুরগীর গলা ভাগে না পড়ে। দেখলাম মামা বেশ রাজী হয়ে গেল। তার পর থেকে আমাদের রুমে তরকারির ভাল টুকরা গুলোই পড়ত। বিনিময়ে তার গায়ের বিচ্ছিরি দূর্গন্ধ মোকাবেলা করে আমরা তিনজন তার সাথে রসের আলাপ জমিয়ে দিতাম। সেই রসের আলাপের কথা ভাবলে আজও আমার গা ঘিনঘিন করে ওঠে।
একদিন সকালে দেখি হোস্টেলে আরও দুইটা ছেলে উঠছে।মালামাল উঠা-নামা হচ্ছে।একজন ছিল বেশ মোটা-সোটা লাল টকটকে ফর্সা, দেখলেই মনে হত যে রসে টইটুম্বর। শোভন একে দেখেই নাম দিয়ে দিলো তরমুজ।আসলেই একদম পারফেক্ট নামক করন। পরিচয়ের শুরুতেই যখন জানলাম এরা নোয়াখালি থেকে আগত, তখনই আবার মনে পড়ল, বকন হইতে সাবধান। সুতরাং সাবধান হয়ে গেলাম।

তরমুজ এর সাথী কে তাল মিলেয়ে হরমুজ নাম দিলে মন্দ হয় না। একদিন তরমুজ আর হরমুজের মারা মারি লেগে গেল।কারনটা আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। তবে দেখলাম তরমুজকে রুম এরবাইরে রেখে হরমুজ রুমে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তরমুজ দরজা খুলতে বলছে কিন্তু হরমুজ কিছুতেই তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। তরমুজ তার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের রুমে আসল বিচার চাইতে। আমারাও তরমুজকে আরও লাল করে দিলাম নানান পরামর্শ দিয়ে।ফলাফল হরমুজ আর তরমুজের বিচ্ছেদ।
হোস্টেলে একজন জনৈক ভাল ছেলে ছিল। ছেলেটার নাম ছিল অরবিন্দ। আমি বুঝতাম না একজন মানুষ একটানা তার বিছানায় বসে পড়ছে তো পড়ছেই, এইটা কিভাবে সম্ভব? ওই যে সকালে শুরু করেছে মাঝখানে খাবার ছোট্ট বিরতি তারপর আবার শুরু। একদিন তার রুম ঘন্টাখানেক অবস্থান করে তার একটানা পড়ার রহস্য উন্মোচন করলাম। আমি জানতামই না যে আমাদের হোস্টেলের পাশেই একটা ছাত্রী হোস্টেল আছে। আর একমাত্র অরবিন্দের বেড থেকেই ছাত্রী হোস্টেলের ভিউ বেশ ভালমত দেখা যেত।ইহা আমি কি আবিষ্কার করিলাম? এখনতো মনে হয় আমার পড়ার টেবিলের সামনে ছাত্রী হোস্টেল থাকলে ওই পড়ার টেবিলেই আমি বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম।

মেডিক্যাল কোচিং হিসেবে প্রাইমেটে আমরা তিনজন ভর্তি হলাম। প্রথমদিন সেখানে গিয়েই টের পেলাম আমার দ্বারা অন্তত বায়োলজি সম্ভব না। আমার হার্ডডিস্ক এর ধারন ক্ষমতা যে খুবই নিম্নমানের সেটা ঢাকায় না আসলে জানাই হত না। আমার মেডিক্যাল কোচিং এর সমাপ্তি এভাবেই হয়েছিল। আর ভুলেও কোনদিন ওদিকে যাই নি। তবে আফসোস লাগত এই ভেবে যে মেডিক্যাল কোচিং এর এইসব লালপরী, নীলপরীদের আর দেখতে পারবনা!
ওমেকা-তে ভর্তি হলাম ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য।

সেই দিনগুলোর কথা আজ মনে পড়লে নস্টালজিক হয়ে যাই।এতদিনের গল্প-নাটকের ফার্মগেট আজ আমার সার্বক্ষনিক বিচরন ক্ষেত্র।মানষের কোলাহল, ফার্মগেটের জায়ান্ট স্ক্রিন, ছন্দ-আনন্দ ছিনেমা হল, ওভারব্রীজ, সব কিছু মিলিয়ে আমার কেন যেন খুব ভাল লাগত। এত মানুষের ভীড়ে নিজেকে নতুন করে চিনতে শুরু করলাম। আমার জীবনদর্শন যেন এতদিন অপুর্ণ ছিল। জীবনের এতটা সময় বয়ে গেছে অথচ এমনটা কখনই অনুভব করিনি। বুঝতে পারছিলাম জীবনের এক অদ্ভুত মুহুর্ত পার করছি। মানুষ হিসেবে আমি সত্যিই কেমন তা যেন হঠাৎ বুঝতে শুরু করলাম।
আমরা তিনজন বিকাল বেলা মাঝে মাঝে জিয়াউদ্যনে বসে আড্ডা দিতাম। আড্ডার মূল বিষয় থাকত, আজকে নারী এবং আমাদের ভবিষ্যত। শোভন তখন একটা মোবাইল প্রেম সবে মাত্র শুরু করেছে। পরবর্তি পদক্ষেপ কি হতে পারে সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে চলত চুলচেরা বিশ্লেষন। রাতের রঙ্গিন আলো ছাপিয়ে আমাদের আড্ডা জমে উঠত। সেই আড্ডা আজ বড় মিস করি।

প্রথম সিগারেটঃ
একবার অনেক রাত্রে আমি আর জোবায়ের ঘুরতে বের হলাম। ব্রীজের ঢালে বসে সেদিন মনে একটা ভাব চলে এল। জোবায়ের পাম দিল, আমিও রাজি হয়ে গেলাম। দুজন দুটা বেন্সন হাতে নিলাম। দিলাম দুটান। প্রথম প্রথম কেমন জানি লাগতে লাগল। ধোয়া ভেতরে নেয়ার সিস্টেম বুঝতে পারছিলাম না। ধোয়া মুখের মধ্যে নিয়েই ছেড়ে দিচ্ছিলাম। সিগারেট খাচ্ছি এইটাই মেইন ব্যাপার ভেতরে নেয়াটা মেইন ব্যাপার না।

>>আজ এই পর্যন্ত লিখে হাপিয়ে উঠলাম। পরে কোন একদিন বাকিটা লিখব।
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×