২৯ এপ্রিল ১৯৯১ বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ ও শোকাবহ একটি দিন। 'ম্যারি এন' নামে ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশের উপকূলে। রাতের অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা।
এদিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। এ উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিঝুম দ্বীপের সব মানুষই জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিলো। পুরো দ্বীপাঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ের ছোবলে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিলো।একই সঙ্গে চট্টগ্রামের মহেষখালী, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী এবং কক্সবাজারেও হানা দিয়েছিলো ঘূর্ণিঝড়।
সরকারি হিসাবে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। শুধু মাত্র কক্সবাজার জেলায় প্রাণ হারায় অর্ধ লক্ষাধিক লোক।আর গৃহহীন হয় আরও এক কোটি লোক। সেই সাথে গৃহপালিত পশু, মত্স্য ,সহায় সম্পদসহ মাথা গুঁজার ঠাঁইটুকুও হারায় হাজার হাজার পরিবার। রাস্তাঘাট, বনজ সম্পদসহ নানা সেক্টরে ঘটে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি যা ঘূর্ণিঝড়ের পর আজ ২৩ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্তরা পুষিয়ে উঠতে পারেনি।
ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় প্রায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার বেগের বাতাস এবং ২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছাসে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল চট্রগ্রাম বিভাগের বিস্তীর্ণ উপকুলীয় এলাকা।
ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ সর্ম্পকে সেই সময় বলা হয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ১৯৯১ এর ২২ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয। বাতাসে গতিবেগের ও নিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি ২৪ এপ্রিল ০২বি ঘুর্নিঝড়ে রূপ নেয়। ঘুর্নিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওযার সঙ্গে সঙ্গে এর শক্তি আরও বাড়তে থাকে। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা প্রচণ্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ ১৬০ মাইল/ঘন্টায় পৌছায় যা একটি ক্যাটাগরী-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য।
সেই দিনের স্মৃতিতে আজো উপকূলীয় এলাকার লোকজনের মাঝে নেমে আসে স্বজন হারা বেদনার শোক।বিপর্যয়ের এত বছর পরও এসব মানুষের কাছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত ফিরে আসে বারবার।