somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাইম ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেসরকারি মালিকানাধীন প্রাইম ব্যাংকের রাজধানীর দিলকুশা ইসলামী ব্যাংকিং শাখা থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়েছে। ব্যাংকিং সফটওয়্যারে প্রবেশ শাখার কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি করে কামরুল আহমদ ফেরদৌস নামে এক শাখার কর্মকর্তা এ জালিয়াতি করেছেন। এ ঘটনার সম্পূর্ণ দায় স্বীকার করে সমুদয় টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে প্রাইম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মোহাম্মদ ইয়াছিন আলী বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নিজস্ব তদন্তে ধরা পড়েছে। আমি তখন অডিট বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম। এ ঘটনায় যেসব গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা খোয়া গেছে তাদের প্রত্যেককে সমপরিমাণ টাকা দেয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে ব্যাংকের। ব্যাংকের মুনাফা থেকে ওই টাকা দেয়া হয়েছে। এখন ওই টাকার বিপরীতে প্রভিশন করে সমন্বয় করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সমুদয় দায় এক কর্মকর্তা স্বীকার করলেও এর জন্য আরও কিছু কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব অবহেলার জন্য দায়ী। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাংকের চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

যেভাবে শুরু : কামরুল আহমদ ফৌরদৌস ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এর ১৪ দিন পর তিনি ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং দিলকুশা শাখায় কাজ শুরু করেন। ওই সময় থেকে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১০ বছরের বেশি সময় তিনি ওই শাখায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এ শাখার রিটেইল ক্রেডিট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে ইনভেস্টমেন্ট প্রসেসিং, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ প্রস্তুতকরণ, বিতরণ, মনিটরিং, শাখার ক্রেডিট বিভাগের আইটি ম্যানেজমেন্টসহ রিটেইল ইনভেস্টমেন্টের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতেন। নিয়ম অনুযায়ী তাকে ব্যাংকের আইটি সিস্টেমে প্রবেশের জন্য ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। এটি ব্যবহার করে তিনি কাজ করতেন। এ রকম শাখার অন্য কর্মকর্তাদেরও আলাদা আলাদা ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। তারাও প্রত্যেকে নিজেদেরটা ব্যবহার করে কাজ করতেন।

প্রচলিত আছে, বিশ্বাসের কারণেই ব্যাংকিং ব্যবস্থা টিকে আছে। এ রকম বিশ্বাসের কারণে এবং কাজের ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে এক কর্মকর্তা অন্য কর্মকর্তাকে নিজের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিতেন কাজের স্বার্থে। এটি সব ব্যাংকেই দেয়া হয়। যে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে কাজ করা হবে তা ওই কর্মকর্তার নামেই অন্তর্ভুক্ত হবে। এক্ষেত্রে কোনো জাল-জালিয়াতি হলেও তা সংশ্লিষ্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডধারীর নামে রেকর্ড হবে।

ওই শাখার কর্মকর্তারাও বিশ্বাসের ভিত্তিতে এবং কাজের প্রয়োজনে একে অপরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কাজ করতেন। এ সুযোগে দায় স্বীকারকারী কামরুল আহমদ ফেরদৌস অন্যের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ভুয়া একাউন্ট খুলে বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা ওই সব একাউন্টে স্থানান্তর করে নিজে আত্মসাৎ করেন।

যেভাবে ধরা পড়ল : ২০১২ সালের ২২ মার্চ প্রধান কার্যালয়ের অডিট বিভাগের এক আকস্মিক পরিদর্শনে এই জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। তখন অডিট বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডিএমডি ইয়াছিন আলী। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করার কারণে টাকার প্রবাহ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতেন।
ওই সময়ের বেশ আগে থেকে দেখা যায়, ওই শাখায় নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। সাধারণত বড় অংকের বা আমানতের মেয়াদ পূর্তি হলে শাখা থেকে টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু ওই শাখার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ ধরনের কিছুই হয়নি। তার পরও টাকার চাহিদা কমছে না। এর সূত্র ধরেই শাখায় পরিদর্শন চালানো হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। ওই সময়ে এ ঘটনার কথা শাখার অন্য কর্মকর্তারাও আঁচ করতে পারেননি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, যে প্রক্রিয়ায় এ জালিয়াতি ধরা পড়েছে, একই প্রক্রিয়ায় সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা ধরা সম্ভব ছিল যদি দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সতর্ক থাকতেন।

ডিজিটাল জালিয়াতি : শাখায় একটি বিশদ পরিদর্শন চালানো হয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কামরুল আহমদ ফেরদৌস তার চাকরিকালীন আইটি সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারতেন। এ সুযোগে তিনি অন্যের ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড পদাধিকার বলে ও বিশ্বাসের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। পরে ওইগুলো দিয়ে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া ব্যাংক হিসাব খোলেন। বিভিন্ন গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা ওই সব ভুয়া হিসাবে স্থানান্তর করতেন। পরে এগুলো আবার অন্য কোনো ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তুলে নিতেন। এভাবে তিনি প্রায় তিন শতাধিক ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকের প্রাথমিক তদন্তে ৪৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এর ভিত্তিতে কামরুল আহমদ ফেরদৌসকে প্রধান আসামি করে প্রাইম ব্যাংক ২০১২ সালের ২৯ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে।

এর আগে একই বছরের ২৩ মার্চ আসামি কামরুল আহমদ ফেরদৌস স্বেচ্ছায় ব্যাংকে সংঘটিত অনিয়ম ও অর্থ আÍসাতের বিষয় স্বীকার করে লিখিত স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। এতে তিনি বলেন, ২০০৪ সাল থেকে এ শাখায় বিভিন্ন ভুয়া হিসাব ভুয়া ব্যক্তি ও স্বাক্ষর সৃষ্টি করে যে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে তার সুবিধাভোগী তিনি নিজে। ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তিনিই এসব জালিয়াতি করেছেন। ওই সময়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড ও ইউজার আইডি তার কাছে সংরক্ষিত ছিল।

এতে তিনি আরও বলেন, ওই সব টাকা ফেরত দিতে সম্মত আছেন এবং এজন্য সময় চেয়েছেন।

ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সালে ঘটনা ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত তিনি এভাবে জালিয়াতি করেছেন। ওই সময়ে যেসব কর্মকর্তা ছুটিতে ছিলেন তখনও তার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা ঘটেছে। শাখা থেকে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড জমা দেয়ার নির্দেশের বিষয়টিও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যাংকিং লেনদেনের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একজন হিসাবে লেনদেন পরিচালনা করেন এবং অপর একজন এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। লেনদেনের পুরো প্রক্রিয়ায় এই দুজনের লেনদেনের তথ্য মিলতে হবে। শাখার সহব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপক সার্বিকভাবে এ বিষয়টি তদারকি করেন। এ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে কিভাবে টানা আট বছর এ ঘটনা ঘটল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত তদন্তেও কেন এ ঘটনা ধরা পড়েনি সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে অডিট কমিটিতে।

এত প্রভাব : অভিযুক্ত কামরুল আহমদ ফেরদৌস ছিলেন শাখার একজন ছোট পর্যায়ের কর্মকর্তা। কিন্তু তিনি যেমন ছিলেন চৌকস, তেমনি মেধাবী ও পরিশ্রমী। ফলে তিনি খুব সহজেই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রিয়ভাজন হন। যে কারণে শাখায়ও তার ভালো প্রভাব ছিল। ওই শাখায় তার ওপরে তিন স্তরের কর্মকর্তা থাকলেও বলতে গেলে তিনিই বেআইনি প্রভাব খাটিয়ে শাখাটি পরিচালনা করতেন। শাখা ব্যবস্থাপকসহ অন্য কর্মকর্তারাও তাকে দিয়ে প্রধান কার্যালয়ে নানা বিষয়ে তদ্বির করতেন। ফলে শাখায় সবাই তার সুনজরে থাকতে চাইতেন। আর বিশ্বস্ততার সুযোগেই তিনি টাকা আত্মসাৎ করার ফন্দি আঁটেন।

- See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×