somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোধবোধ (তৃতীয় পর্ব)

২৭ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব এখানে
Click This Link
৮ম দৃশ্য
(খোরশেদ আগের সেই বেঞ্চে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদবে, তারপর বেঞ্চে শুয়ে পড়বে। একটা মোটর সাইকেল রাস্তা দিয়ে চলে যেতে দেখবে। কিছু দূর গিয়ে সেটা আবার ফিরে আসবে। দুই আরোহী মোটর সাইকেল থেকে নেমে খোরশেদের দিকে এগিয়ে আসবে। একজন বেঁটে, অন্যজন লম্বা)

বেঁটে ; ভাই সাহেব ভাল আছেন?
খোরশেদ : (উঠে বসে) আপনাদেরতো ঠিক চিনলাম না?
বেঁটে : (পকেট থেকে একটা চাকু বের করে) চেনার কোন দরকার নেই। আপনার কাছে টাকা আছে? টাকা?
খোরশেদ ; (চাকুটার দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে) টা-টা-টাকা, ন্-না নেই।
বেঁটে : নেই? সত্যি বলছেন?
খোরশেদ : স-স সত্যি বলছি।
বেঁটে : (লম্বাকে) গুড্ডু হাত লাগা।
(লম্বা খোরশেদের শরীর তল্ল¬াশী করল। দুই হাজার টাকা ও মোবাইল বের করে আনল)
লম্বা : মোবাইল আর দুই হাজার টাকা সবুজ ভাই। একটা কলমও আছে, নেব?
বেঁটে : কলমের দরকার নাই। শালা মিথ্যা কথা কেন বলল, সেজন্য একটা চড় লাগা।
লম্বা : দাঁড়ান। আগে শালার শার্টটা খুলে নিই। নীল শার্ট আমার গায়ে খুব ভাল ফিট করবে।
বেঁটে : তাহলে জুতোটাও নিয়ে নে। পুরনো হলেও বেশ টেকসই মনে হচ্ছে। আমার জুতো আবার দু'দিন পর পর ছিড়ে যায়।
লম্বা : (খোরশেদকে) জুতো আর শার্ট খুলে ফেল তো চাঁদু।
(খোরশেদ জুতো খুলে এক জায়গা রাখল। শার্ট খুলে লম্বার হাতে দিল)
লম্বা : (শার্ট বেঁটের হাতে দিয়ে) এটা ধরেন।
(লম্বা খোরশেদের গালে প্রচন্ড একটা চড় বসিয়ে দেয়। খোরশেদ ছিটকে পড়ে। লম্বা জুতো জোড়া তুলে নেয়। দুজনেই চলে যায়। খোরশেদ ঘাসের উপর পড়ে থাকে। সে বাম গালে হাত বুলাতে থাকে, চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।)

৯ম দৃশ্য (খোরশেদের মেস)
(সন্ধ্যা। খোরশেদ তার ঘরে ঢুকবে। মনির বিছানায় বসে পত্রিকা পড়ছে।)

মনির : (পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে) কি ব্যাপার? তোমার একি অবস্থা? কি হয়েছে?
খোরশেদ : কিছু না মনির ভাই।
মনির : কিছু না মানে? পায়ে জুতো নেই, গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি- আর বলছ কিছু না? (খোরশেদ চুপ) কথা বলছ না কেন? বিক্রি করে দিয়েছ না কি? (খোরশেদ চুপ) ও বুঝেছি। তা প্যান্টটা বাকী রেখেছ কেন? ওটাও বিক্রি করে দিতে।
খোরশেদ : (শীতল কণ্ঠে) আমি কিছুই বিক্রি করিনি।
মনির : (টিটকিরির সুরে) তাহলে কি হয়েছে? ছিনতাই?
খোরশেদ : হ্যাঁ।
মনির : কি? ছিনতাই হয়েছে?
(তপন আসবে)
তপন : (অবাক কণ্ঠে) কি ব্যাপার খোরশেদ? তোমার এ অবস্থা কেন? কি হয়েছে?
মনির : খোরশেদ আজ ছিনতাইকারীর হাতে পড়েছিল, ছিনতাইকারীরা দয়াপরবশত ওর প্যান্টটা রেখে বাকী সব কিছু নিয়ে গেছে।
তপন : (খোরশেদকে) সত্যি ছিনতাই হয়েছে?
খোরশেদ : (মাথা নেড়ে) হ্যাঁ। টিউশনির টাকা, মোবাইল, সব কিছু নিয়ে গেছে।
মনির : ছিনতাইকারীরা হয়তো বুঝতে পেরেছিল তুমি অপদার্থ, নইলে তোমাকেও নিয়ে যেত।
তপন : (মনিরকে) মনির ভাই আপনি এর সাথে এরকম ব্যবহার করছেন কেন?
মনির : কি রকম ব্যবহার করব? মিষ্টি মিষ্টি কথা বলব? আমার সাড়ে চার হাজার টাকা হজম করে বসে আছে- দেয়ার নাম গন্ধ নেই। আজ সকালেই বলেছি মোবাইলটা আমাকে দিয়ে দাও, আমি সাড়ে চার হাজার টাকার দাবী ছেড়ে দেব- দেয়নি। এখন কি হল? ছিনতাই হয়ে গেল। এর সাথে আমি কিভাবে ভাল ব্যবহার করব?
তপন : (খোরশেদকে) অফিসে বেতন কবে দেবে কিছু বলেছে?
খোরশেদ : অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। আজ গিয়ে দেখি সেখানে তালা ঝুলছে।
মনির : (বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে নেমে উত্তেজিত কণ্ঠে) কি বললে? অফিস বন্ধ হয়ে গেছে? তার মানে চাকরিটাও নেই? ভাল, খুব ভাল। এখন তাহলে কি করবে? একটা থালা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়। ভিক্ষে করলে ভাল রোজগার করতে পারবে।
(খোরশেদ হত বিহ্বল দৃষ্টিতে মনিরের দিকে তাকিয়ে থাকবে।)
তপন : খোরশেদ সারাদিন খেয়ছ কিছু? (খোরশেদ না সূচক মাথা নাড়বে) যাও হাত মুখ ধুয়ে এস, বাইরে থেকে কিছু খেয়ে আসি।
মনির : (অবজ্ঞার সুরে) হ্যাঁ হ্যাঁ যাও, খাইয়ে নিয়ে এস। আগে টেম্পরারিলি আমাদের ঘাড়ে বসে খেত, এখন থেকে পার্মানেন্টলি খাবে। যাও, শুভ উদ্বোধনটা করে এস।

১০ম দৃশ্য (রেস্টুরেন্ট)
(খোরশেদ আর তপন বসে খাচ্ছে।)

তপন : একদিনে তোমার উপর এতগুলো দুর্যোগ নেমে এল- এটাতো গল্পকেও হার মানায়। আসলে তোমার কপালটাই খারাপ। এখন কি করবে ভেবছ কিছু?
খোরশেদ : না ভাবিনি। চোখের সামনে এখন শুধু অন্ধকার দেখছি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে শহরে এসেছিলাম। আমার পঙ্গু বাবা বুক ভরা আশা নিয়ে তার প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে পাওয়া পঞ্চাশ হাজার টাকার সবগুলোই তুলে দিয়েছিলেন আমার হাতে। আমার উপর তার অগাধ বিশ্বাস ছিল- তার ধারণা ছিল আমি ব্যবসা করে উন্নতি করতে পারব, সংসারের অভাব দূর করতে পারব, একমাত্র বোনকে ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিতে পারব। কিন্তু আমি তার সে বিশ্বাস রাখতে পারিনি। বাবা এখনও জানেন আমি এখানে মোটামুটি ভাল একটা ব্যবসা করছি। অফিসের বেতন, টিউশনির টাকা থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠাতাম। এখন সব শেষ হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে যাব সে মুখ আমার নেই। বাবাকে গিয়ে কি জবাব দেব? আমাকে এ অবস্থায় দেখলে বাবা মারা যাবেন।
(খোরশেদের চোখে পানি এসে আসবে। সে হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছবে।)
তপন : খোরশেদ দুঃখ করোনা। ইনশাআল্লাহ, তোমার একটা ব্যবস্থা হবে। আমিতো আছি; অমি তোমার জন্য সাধ্যমত করব।

১১শ দৃশ্য (খোরশেদের মেস)
(গভীর রাত। খোরশেদের ঘর। ঘরের ভেতর অল্প আলোর একটা বাতি জ্বলছে। খোরশেদ বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ ধরে এপাশ ওপাশ করছে। এক সময় সে স্থির হবে। চিৎ হয়ে শুয়ে এক দৃষ্টে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তার চেহারায় থাকবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞের ছাপ)

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:২৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×