somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোধবোধ (চতুর্থ পর্ব)

৩০ শে মার্চ, ২০১১ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম, ২য় ও ৩য় পর্বের জন্য নিচে ক্লিক করুন
Click This Link
১২শ দৃশ্য (একটি প্রাইভেট হাসপাতাল)
(ডাক্তারের চেম্বার। ডাক্তার বড় একটা টেবিলের পেছনে রিভলভিং চেয়ারে বসে আছেন। খোরশেদ তার মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে আছে।)

ডাক্তার : (খোরশেদের দিকে সামান্য ঝুঁকে) কি বললেন আপনি?
খোরশেদ : আমি আমার একটা কিডনী বিক্রি করতে চাই।
ডাক্তার : আপনি আপনার কিডনী বিক্রি করবেন?
খোরশেদ : জ্বি।
ডাক্তার : দেখুন খোরশেদ সাহেব, কিডনী কাচা বাজারের সবজি না যে চাইলেই আপনি বিক্রি করে দেবেন।
খোরশেদ : কেন? আপনাদের এখানে কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয় না?
ডাক্তার : হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে এ ধরণের রোগী আমাদের এখানে নেই। আপনি আপনার ঠিকানা কিংবা ফোন নাম্বার দিয়ে যান। রোগী পেলে আমি আপনাকে জানাব। আপনার ব্লাডগ্রুপ জানা আছে?
খোরশেদ : না।
ডাক্তার : আমাদের ল্যাবে টেস্ট করিয়ে ব্লাডগ্রুপ জেনে নিন।
খোরশেদ : টেস্ট করাতে টাকা লাগবে?
ডাক্তার : হ্যাঁ। দু'শ টাকা লাগবে।
খোরশেদ : আমার পকেটে একটা পয়সাও নেই।
ডাক্তার : তাহলে একটা কাজ করতে পারেন, আপনি আমাদের ব্লাড ব্যাংকে এক ব্যাগ রক্ত ডোনেট করুন, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ জেনে নিতে পারবেন।
খোরশেদ : ঠিক আছে।


১২শ দৃশ্য
(খোরশেদ উদ্দেশ্যহীন ভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে)


১৩শ দৃশ্য (খোরশেদদের মেস)
(এক সপ্তাহ পর। সকাল। খোরশেদের ঘর। খোরশেদ শার্ট গায়ে দিচ্ছে। এল মনির।)

মনির : খোরশেদ, যাচ্ছ কোথায়?
খোরশেদ : এইতো.... মনির ভাই..... একজনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
মনির : চাকরি বাকরি পাওয়ার কোন আশা আছে?
খোরশেদ : জ্বি..... মনির ভাই .... চেষ্টা করছি।
মনির : তোমাকে দেখে আমি আশ্চর্য হই খোরশেদ। তোমার কি একটুও লজ্জা নেই? এই যে চাকরি বাকরি টিউশনি সব কিছু খুইয়ে অন্যের ঘাড়ে বসে খাচ্ছ- এই খাবারগুলো খেতে তোমার গলায় বাঁধে না? তোমার শরীরে মানুষের চামড়া না গন্ডারের চামড়া?
(তপন এল। তার হাতে মোবাইল)
তপন : (মোবাইল এগিয়ে দিয়ে খোরশেদকে) খোরশেদ তোমার ফোন।
খোরশেদ : (মোবাইল কানে ঠেকিয়ে) হ্যালো... জ্বি বলছি..... জ্বি? পাওয়া গেছে?.... জ্বি, আমি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আসছি।
(খোরশেদ তপনকে মোবাইল ফেরত দিল)
মনির : কে ফোন করেছিল?
খোরশেদ : এ...ই, পরিচিত একজন।
মনির : কি যেন পাওয়া গেছে বললে? কি পাওয়া গেছে?
খোরশেদ : (কঠিন স্বরে) এত কিছু জেনে আপনার লাভ কি?
মনির : (স্তম্ভিত, বিস্মিত) আমার লাভ কি মানে? আমি জানতে পারি না?
খোরশেদ : না পারেন না। অন্যের ব্যাপারে নাক গলানো আপনার একটা বদ অভ্যাস। অভ্যাস চেঞ্জ করুন।
(খোরশেদ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মনির ও তপন তার যাওয়ার পথে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।)

১৪শ দৃশ্য (হাসপাতাল)
(ডাক্তার তার চেয়ারে বসে আছেন। এল খোরশেদ।)

ডাক্তার : আসুন খোরশেদ সাহেব, বসুন।(খোরশেদ ডাক্তারের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসল) রোগী পাওয়া গেছে।
খোরশেদ : জানি। সেটা আপনি আগেও ফোনে বলেছেন।
ডাক্তার : শিল্পপতি কামরুল হাসানকে চেনেন?
খোরশেদ : নাম শুনেছি।
ডাক্তার : রোগী তার বাবা। সিরিয়াস অবস্থা। আটচল্লি¬শ ঘণ্টার মধ্যে কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। আপনি আরেকবার ভেবে দেখুন। কিডনী সত্যিই বিক্রি করবেন?
খোরশেদ : (ডাক্তারের দিকে সামান্য ঝুঁকে) আমাকে দেখে আপনার কি মনে হয়? আমি গাঞ্জা খেয়ে এখানে এসেছি? আমার মুখ থেকে কি গাঞ্জার গন্ধ বেরুচ্ছে?
ডাক্তার : (একটু অবাক হয়ে খোরশেদের দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে) ঠিক আছে, আপনি যা ভাল বুঝেন।
খোরশেদ : লেনদেনের ব্যাপারে কার সাথে কথা বলব?
ডাক্তার : কামরুল সাহেবের সাথে কথা বলবেন। আমি তাকে খবর দিয়েছি, এখুনি চলে আসবেন।
(ডাক্তার সাহেবের কথা শেষ হতে না হতেই কামরুল হাসান ঢুকলেন))
ডাক্তার : এইতো তিনি এসে গেছেন। (কামরুল হাসানকে) আসুন মিঃ হাসান। বসুন। (খোরশেদকে দেখিয়ে) ইনি মিঃ আলম। তার কথাই আপনাকে বলেছিলাম।
কামরুল হাসান : এই ছেলে! (খোরশেদকে) তুমিই কিডনী বিক্রি করবে?
খোরশেদ : (মাথা নেড়ে) জ্বি।
কামরুল হাসান : তুমি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছ?
খোরশেদ : জ্বি।
কামরুল হাসান : (খোরশেদের কাঁধে হাত রেখে) ইয়াং ম্যান, তোমার বয়স কম, সামনে সারাটা জীবন পড়ে আছে। কিডনী বিক্রি করলে তোমার সে জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে সেটা ভেবে দেখছ? আমি জানি কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট না করলে আমার বাবাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। কিন্তু তার পরও ...
খোরশেদ : (কামরুল হাসানের দিকে তর্জনি তাক কঠিন স্বরে করে) দেখুন মিস্টার হাসান, আমি শখ করে কোর্মা পোলাও খাওয়ার জন্য কিডনী বিক্রি করতে আসিনি- এসেছি দায়ে ঠেকে। তাছাড়া এটা একটা বাজার, এখানে আপনি ক্রেতা, আমি বিক্রেতা। আপনার পকেটে টাকা আছে, আমার পেটে কিডনী আছে- টাকা দেবেন, কিডনী নেবেন। এত কথা বলছেন কেন?
কামরুল হাসান : (মাথা ঝাকিয়ে গম্ভীর স্বরে) ঠিক আছে। তোমার ডিমান্ড কত?
খোরশেদ : দু'লক্ষ টাকা।
কামরুল হাসান : (ছোট্র একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে ডাক্তারকে) ডাক্তার সাহেব কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্টের ব্যবস্থা করুন।

১৫শ দৃশ্য (খোরশেদের মেস)
(বিকেল। খোরশেদের ঘর। তপন বিছানায় বসে পত্রিকা পড়ছে। এল
মনির। তার হাতে একটা চামড়ার ব্যাগ। সে ব্যাগটা টেবিলের উপর রাখল)

মনির : (শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে) তপন, খোরশেদের কোন খবর পেলে।
তপন : (পত্রিকা বিছানার এক পাশে রেখে) না মনির ভাই। কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়েছি; কোন খবর পাইনি।
মনির : আমি জানি পাবে না। আমি তোমাকে প্রথম দিনই বলেছিলাম, হারামজাদা দেশের বাড়ি পালিয়ে গেছে। ওখানে খোঁজ নিয়ে দেখ- ঠিকই পাবে।
তপন : আমার মনে হয় না মনির ভাই। তার মাল পত্র সব এখানে। এগুলো রেখে হঠাৎ করে বাড়ি চলে যাবে কেন?
মনির : তোমার মাথায় দেখছি এক ছটাকও ঘিলু নেই। মালপত্র বলতে তুমি কি বুঝাচ্ছ? কয়েকটা শার্ট প্যান্ট, এক জুড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল, কয়েকটা বই, একটা লেদারের ব্যাগ- এগুলোকে? বাজারে এগুলোর দাম তিন চারশ টাকার বেশি হবে? তার কাছে আমাদের পাওনা কয়েক হাজার টাকা সেটা ভুলে গেছ?
তপন : খোরশেদ এরকম একটা কাজ করবে আমি বিশ্বাস করিনা।
মনির : তুমি না করলেও আমি করি। ঐ হারামজাদা একটা চোর, আমাদের টাকা মেরে ভেগেছে। আমি একে সহজে ছাড়ব না।
(মনির আলনা থেকে নতুন একটা শার্ট নিয়ে বেরিয়ে গেল। তপন একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে পত্রিকা পড়ার মনোযোগ দিল।)


১৬শ দৃশ্য (হাসপাতালের গেট)
(খোরশেদ দুর্বল পায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসছে।)


১৭শ দৃশ্য (সেলুন) (খোরশেদ শেভ করছে ; চুল কাটছে)


১৮শ দৃশ্য (কাপড়ের দোকান) (খোরশেদ স্যুট, প্যান্ট কিনছে)


১৯শ দৃশ্য (জুতোর দোকান) (খোরশেদ জুতো কিনছে)


২০শ দৃশ্য (চশমার দোকানা) (খোরশেদ চশমা কিনছে)

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:২৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×