দেশটির নাম আজব দেশ। বড় বিচিত্র একটি দেশ। আয়তনে ছোট কিন্তু জনসংখ্যা বিশাল। পৃথিবীর বুকে দরিদ্রতম দেশ হিসেবে পরিচিত। দরিদ্র হলেও আজব দেশের এক গৌরবোজ্জল ইতিহাস আছে। আজ থেকে বিয়াল্লিশ হাজার বছর আগে এই দেশ ফাঁকিস্তান নামের একটি দেশের অংশ ছিল। এই দেশের জনগণের উপর ফাঁকিস্তানিরা নানা রকম জুলুম, নির্যাতন চালাত। আজব দেশের জনগণ এক সময় এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাাঁড়ায়। দীর্ঘ নয় মাস তারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে। লাখ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আজব দেশ বিশ্বের বুকে স্বাধীন দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাাঁড়ায়। আজব দেশের জনগণ দেশকে সুন্দর স্বপ্নময় করে গড়ে তোলার কাজে নেমে পড়ে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেটা আর হয়ে উঠেনা। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে এ দেশ ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে। একের পর এক অগণতান্ত্রিক ও সৈরাচারী সরকার দেশের ক্ষমতা দখল করে শাসন করতে থাকে। এক সময় আজব দেশের জনগণ আবারও ফুঁসে উঠে; তাদের আন্দোলনের তোড়ে সৈরাচারী সরকারের পতন হয়। ছি!এন.পি ও আমড়ামীলীগ নামে দেশে দুটি শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক দল মাথা তুলে দাঁড়ায়। দেশে স্বতস্ফুর্ত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ছি!এন.পি জয়লাভ করে। দীর্ঘ দিন পর দেশের ক্ষমতা আবার গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ন্যাস্ত হয়। দেশে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ছি!এন.পি'র চেয়ারপার্সন 'বেগম খাল দিয়া যা'। প্রধান বিরোধী দল হয় আমড়ামীলীগ। বিরোধীদলীয় নেত্রী হন 'সে এক বাঁচি-না'। আজব দেশের জনগণ আবার সুখের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বোকা জনগণ আবার ধোকা খায়। তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। তারা বুঝতে পারে রাজনীতিবিদদের কাছে তাদের মূল্য শুধু ভোটের সময়; ভোট শেষ হয়ে গেলে তারা কাঠের পুতুল ছাড়া আর কিছুই না।
আবারও দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়, আবারও ঘাত-প্রতিঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে দেশ। দুই দল ছি!এন.পি. ও আমড়ামীলীগের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতার হাত বদল হয়, কিন্তু তার জন্য দিতে হয় চরম মূল্য। ক্ষমতার হাত বদলের সময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠে। ক্ষমতাসীনরা গদি আঁকড়ে বসে থাকার জন্য নানা টালবাহানা শুরু করে, বিরেধী দল তাদের টেনে হিঁচড়ে নামাতে চায়। দুই দলের ক্ষমতার দড়ি নিয়ে টানাটনিতে আজব দেশের অসহায় জনগণ চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যায়।
এমনই এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বিশ হাজার তের সালে। তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল আমড়ামীলীগের নেতৃত্বে চৌদ্দ শ দলীয় সরকার। নির্বাচনের সময় সরকার নির্বাচন নিয়ে ছলছাতুরি শুরু করে। গো-পোষহীন নেত্রী 'খাল দিয়া যা' এর নেতৃত্বে বিরোধী দল আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনে নেতা-নেত্রীদের কিছু না হলেও অনেক সাধারণ মানুষ হতাহত হয়। এমন পরিস্থিতিতে একদিন প্রধানমন্তী 'সে এক বাঁচি-না' বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েন, 'আন্দোলন করতে হলে রাস্তায় নামেন, আমরাও দেখিয়ে দেব আন্দোলন কাকে বলে!'
বিরোধীদলীয় নেত্রী 'খাল দিয়া যা' চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। একদিন গভীর রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে সবার অগোচরে রাজধানীর এক রাস্তায় তারা মুখোমুখি হন। বেশ কিছুক্ষণ তারা একান্তে সময় কাটান। এক সময় সবাই এ খবর জেনে যায়। ঐ রাস্তায় ছুটে আসে শত শত সাংবাদিক। হাজার হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠে, সবার হতের ক্যামেরা সচল হয়ে উঠে। আজব দেশের কোটি কোটি জনতা বুকে আশা নিয়ে ব্যাকুল চোখে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু একি! প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী দুজনই রাস্তার দুই ধারে বসে হাঁপাচ্ছেন, তাদের চেহারায় একই সাথে ক্রোধ ও যন্ত্রণার ছাপ! তারা একে অপরের দিকে জিঘাংসা নিয়ে তাকিয়ে আছেন। দুজনেরই মাথা ভরা চুল ছিল কিন্তু এখন সেখানে হাতে গোনা ক'খানা চুল দেখা যাচ্ছে। ক্যামেরা দুই নেত্রীর হাতে জুম হয়, দেখা যায় দুজনেরই মুঠো ভরা কাাঁচা পাকা চুল; প্রবল আক্রোশে তারা মুঠো চেপে ধরে আছেন।
আজব দেশের জনগণ হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তবে তারা এই ভেবে আশ্বস্ত হয়, এখন হয়ত দুই নেত্রী লজ্জিত হয়ে আপস করবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। পরদিন সকালে পুলিশ বিরোধীদলীয় নেতা কর্মিদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করে, আর বিরোধী দল লাগাতার পাঁচ দিনের হরতাল অবরোধের ডাক দেয়।
আজব দেশের জনগণ দু:খ, দুর্দশায় জীবন কাটাতে থাকে।