বর্তমান দুনিয়ায় একমাত্র মুসলমানদের কাছেই সম্পূর্ণ অবিকৃত ও অপরিবর্তিত বই আছে যার নাম কুরআন । কুরআনের যে শব্দ আল্লাহর নবীর প্রতি নাজিল হয়েছিল, আজ পর্যন্ত অবিকল তা-ই আছে। কুরআন শরীফ মানুষের ওপর এজন্য নাজিল হয়েছিল যে, তারা এটা পড়বে, বুঝবে, তদনুযায়ী কাজ করবে ।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, যতদিন মানবজাতি সরাসরি কুরআনের হেদায়াত অনুযায়ী চলেছে, ততদিন এটা তাদেরকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ নেতা বানিয়ে রেখেছে ,তখন তারা পৃথিবীর অনেক বিশাল স্থানে খুব দ্রুত তাদের দৃস্টিভঙ্গি ছড়াতে সক্ষম হয়েছিল ।
কিন্তু আজকাল তারা কুরআন দ্বারা জ্বিন-ভুত তাড়ান ছাড়া আর কোনো কাজই করছে না। এর আয়াত লিখে তারা গলায় বাঁধে, তা লিখে ও গুলে পানি খায়, আর শুধু পূণ্য সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে না বুঝে পাঠ করে, তারা আজ এর কাছে সহজ পথ কেমন হবে তা জানতে চায় না। তাদের কাজ-কর্ম কিরূপ হওয়া উচিত, তাদের চরিত্র কিরূপ হওয়া দরকার, তারা এ দুনিয়ায় কিরূপে জীবন যাপন করবে, লেন-দেন কিভাবে করবে, কোন্ নিয়ম অনুসারে তারা মানুয়ের সাথে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা করবে,অন্যের প্রতি ও তাদের নিজেদের প্রতি তাদের কর্তব্য কি ? কিসে তাদের সম্মান ও সফলতা হবে, কোন্ কাজে ধন-দৌলত লাভ হবে, তাদের ব্যর্থতা এবং ক্ষতিই বা কিসে হতে পারে-কুরআনের নিকট এ সমস্ত প্রশ্নের জবাব খোজা মুসলমানরা এখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছে।
লোকেরা যে রকমের এবং যে পরিমানের মঙ্গল এক কাছে চাবে, কুরআন তাই এবং ততটুকুই দান করবে। জ্বিন-ভূত তাড়ান, সর্দি-কাশির চিকিৎসা, মামলা-মোকদ্দমায় জয়লাভ, চাকুরী লাভ আর এ ধরনের সব ছোট ছোট জিনিস যদি তারা এর কাছে চায়, তবে তাই সে পাবে । মানুষ আজ মহাসমুদ্রের কাছে হতে মাত্র দু’ফোটা পানি নিচ্ছে, অথচ সমুদ্র তাদেরকে বড় নদী দান করতে পারে।
যদি কোনো ব্যক্তি যদি ডাক্তারের কাছ থেকে পেসক্রিপশন এনে কাপড়ে জড়িয়ে গলায়, হাতে বা কোমরে বেঁধে রাখে, কিংবা পানিতে ধুয়ে তা পান করে তাহলে তাকে দেখে আমাদের হাসি পাবে এবং তাকে সবাই আহম্মক ভাববে ।
কিন্তু সবচেয়ে বড় ডাক্তার আমাদের রোগের চিকিৎসা ও মনের নিরাময় করার উদ্দেশ্যে যে অতুলনীয় পেসক্রিপশন লিখে দিয়েছেন, সেই পেসক্রিপশনের সাথে দিন-রাত আমাদের চোখের সামনেই ওই একই ধরনের ব্যবহার হচ্ছে । অথচ সেই জন্য কারো এতটুকু হাসির উদ্রেক হয় না। একথা কেউই ভেবে দেখেন না যে, পেসক্রিপশন গলায় বাঁধার বা ধুয়ে খাবার জিনিস নয়, এর বিধান অনুযায়ী ওষুধ বানিয়ে ব্যবহার করার জন্যই তা লিখিত হয়েছে।
তারপরে আরো একটি ব্যাপার আছে যদি কোন রোগী একটি মেডিকেলের বই নিয়ে পড়তে শুরু করে আর মনে করে যে, এই বইটি না বুঝে মন্ত্রের মত পড়লে সব রোগ আপনা আপনি দূর হয়ে যাবে। তবে আমরা তাকে পাগলা গারদে পাঠানোর সিদ্দান্ত নিবো , তাই নয়কি ? আল্লাহ তাআলা আমাদের মন ও দৈহিক চিকিৎসার জন্য যে মহান বই পাঠিয়েছেন, তার সাথে আমাদের ব্যবহার ঠিক একই রকম হচ্ছে বলেই এখন চোখে পড়ছে কি ?
এটা কি বাস্তবিকই আশ্চর্যের ব্যাপার নয়?এসব কথা আমি হাসি-তামাশার জন্য বলছি না।আমরা যদি একথা চিন্তা করে দেখি তবে আমাদের অন্তরই বলে দেবে যে, দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় অবিচার হচ্ছে আল্লাহর এ মহান কিতাবের প্রতি। আর এ অবিচার শুধু তারাই করছে, যারা এ কিতাবের প্রতি ঈমান রাখে বলে দাবী করে এবং এর জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত বলে প্রচার করে।
সব কথার মূল কথা হলো কুরআন কোন মন্ত্রের বই নয় যে এটি শুধু না বুঝেই ঝারফুকের কাজে ব্যাবহার করতে হবে আসলে এটি একটি জীবন বিধান যা আমাদেরকে মাথা উচু করে বাচতে ও চলতে শিখায় । সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে নিয়মিত অর্থসহ কুরআন বুঝে পড়ার শক্তি দান করুন ।
একটি কুরয়ানের বাণী দিয়ে শেষ করছিঃ হে নবী! তোমার প্রতি কুরআন এ জন্য নাযিল করিনি যে, এটা সত্ত্বেও তুমি হতভাগ্য হয়ে থাকবে।” (সূরা ত্ব-হা: ১-২)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:১০