নিচে যাচ্ছিলাম। হইচই শুনলাম। দোতলায়। তুমুল গণ্ডগোল হচ্ছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে। ঘরের গণ্ডগোল বাইরের মানুষকে দেখাচ্ছে।
তারা কি তাদের অভ্যন্তরীণ প্রেম ভালোবাসাও মানুষকে দেখায়! প্রায়শই এমন হইচই শুনি।
দরজা খোলা। এগিয়ে গেলাম। তর্ক- বিতর্ক শেষে স্ত্রী খাটের তলে ঢুকে গেছেন। তাকে তার স্বামী টেনেও বের করতে পারছেন না।
স্ত্রী পণ করেছে। স্বামী 'সরি' না বলা পর্যন্ত বের হবেনা। স্বামী ব্যাচারাকে শায়েস্তা করতেই হবে।
কিন্তু দু' মিনিট পর খাটের নিচ থেকে "ও আল্লাগো, আমারে মাইরে ফেললো গো , আমারে বাঁচাও বলে কাঁদতে লাগলো।"
কি আজব স্বামী মেঝেতে দাঁড়িয়ে কিভাবে মেরে ফেলবে তাকে। আমরা দৌড়ে খাটের কাছে গেলাম।
খাটের নিচে নাকি শত শত তেলাপোকা। আহারে বোকা মহিলা!
স্বামীকে অনুশোচনায় ভোগাতে যেয়ে তেলাপোকার ভয়ে তার নিজের জীবনই যায় যায় অবস্থা।
তাকে বের করে আনলাম সবাই মিলে। আগে তেলাপোকা থেকে বাঁচুকতো।
মানুষ সবসময় জিততে চায় সবকিছুতেই। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না।
আমি মহামানব নই। অসাধারণতো নই। যাচ্ছিলাম বাসে গাবতলিতে।
সেদিন বসেছিলাম সংরক্ষিত মহিলা সিটে। এক মেয়ে উঠলো। উঠেই সে আমাকে কড়া ধমক দিলো- "কি ব্যাপার মহিলা সিটে কেন। উঠেন, উঠেন।"
বললাম- "আপু আমি এমনিতেই উঠতাম। রাগ করছেন কেন। ফাঁকা ছিলো তাই একটু বসছিলাম।"
আমি দাঁড়িয়ে আছি প্রায় আধাঘন্টা ব্যাপী। জ্যাম দেখে বাস হার্ড ব্রেক কষলো।
মেয়েটা আহ! বলে চিৎকার করে উঠলো। সে ঘুমাচ্ছিল বসে। সামনের সিটের সঙ্গে তার মাথা ধাক্কা লেগেছে জোরেসোরেই।
মেয়েটা কপাল চেপে ধরে প্রায় কেঁদে উঠলো।
আমি মনে মনে বলছি – প্রকৃতি খুব দুষ্টু। কখন কার উপর কিভাবে প্রতিশোধ নেয় বোঝা মুশকিল। কি খারাপ ব্যবহারই না সে আমার সাথে করেছিল ওঠার সময়।
এক দোকানে গেলাম সিগারেট কিনতে। দোকানটায় প্রায় আসি।
দাম দিতে যাবো এমন সময় দোকানী ক্ষেপে গেলো।
"টাকা খুচরা না করে সিগারেট নিলেন কেন? আগেই কইতেন আপনাকে সিগারেট দিতাম না।"
চরম আহত হলাম এমন আচরণে। এ কি ব্যবহার রে ভাই!
সে খুচরা করে দাম রাখলো বটে, কিন্তু বিরবির করে আমাকে তুলোধনা করলো।
কিছু বললাম না।
রাগতো আমারও আছে। চেপে গেলাম।
শুধু মনে মনে বললাম-
"তুই মূর্খ। তার সাথে রেগে প্রতিশোধ নিয়ে লাভ কি। এই দোকানে আর আসবোই না। লস কার হলো ? একটা কাস্টমার হারালি।"
এটাই সাইলেন্ট রিএকশান। সাইলেন্ট 'রিভেঞ্জ'।
জীবনে ধাপে ধাপে হররোজ অপমানিত হই, আমি আমরা অনেকেই। অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনি।
এসব ভাবতে ভাবতে খোলা মাঠে হাঁটছিলাম সন্ধ্যায়। একবার মনে হলো নাহ আর চুপ থাকবো না। মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করবো খারাপ লাগলে।
হঠাৎ পায়ের কাছে দেখি একটা ছোট্ট বট গাছের চারা। তার উপর পা দিতে যেয়ে থেমে গেলাম।
বসে পরলাম।
ভালো করে শিশু গাছটাকে দেখছি। এই গাছ একদিন বড় হবে। কত ঝড়ঝঞ্চা এর উপর দিয়ে যাবে।
কিন্তু যখন সে বিশালার বৃক্ষে পরিনত হবে তখন কিন্তু কেউ লাথি দিয়ে অপমান করে উপড়ে ফেলতে পারবেনা। তার নিচেই শত্রু মিত্র সবাই এসে ছায়া নেবে। আশ্রয় নেবে হাজার হাজার পাখি। তার উপর তখন অনেক কিছুই নির্ভরশীল হবে।
বড় কে হলো- আল্টিমেটলিতো সেই শিশু গাছটাই।
আমি অপেক্ষায় আছি সে বড় বটবৃক্ষ হবার। সব কিছু ভুলে যেয়ে। আসেন বৃক্ষ হই। বটবৃক্ষ।
সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৩২