somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খইয়াছরায় ক্যাম্পিং – 3 ½ Time @ Khoiyachora Water Falls

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খইয়াছরায় ক্যাম্পিং –

খইয়াছরায় প্রথম যাই ভ্রমন বাংলাদেশ গ্রুপ এর সাথে , যদিও ট্যুর টা অনেক অ্যাডভেনচারাস ও আনন্দময় ছিল কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ফ্ল্যাশ ফ্লাড এর কারনে ঝর্না অবধি পৌঁছতে পারি নি । অনেক ঝুকি নিয়ে ও ঝর্নার কাছাকাছি যেয়ে ফিরে আসতে হয় । ঐ দিনই ঠিক করি আবার আসব খইয়াছরায় । যথারীতি এক সপ্তাহ পরে আবার আসলাম । এবার আগের চেয়ে বেশি বৃষ্টি , স্থানীয়রা অনুরুধ করলো সামনে না যাওয়ার জন্য। বাধ্য হয়ে আবার ফিরে আসলাম ।
রমজানের ঈদ এর ছুটিতে কুমিল্লা ছিলাম , প্ল্যান ছিল ঈদ এর একদিন পর যাব খইয়াছরায় , ঢাকা থেকে তাবু সহ ক্যাম্পিং করার সব সরঞ্জাম নিয়ে কুমিল্লা হাজির, সব ঠিকঠাক , কিন্তু আবারো কপাল খারাপ । না এবার বৃষ্টি না , ফুটবল খেলতে যেয়ে পায়ে ব্যাথা পেলাম , এমন ব্যাথা যে ২/৩ জনে কাঁধে করে বাড়ি নিতে হল। পরবর্তী এক মাস হাঁটতে কষ্ট হয়েছে। যথারীতি আবারও কান্সেল হল খইয়াছরা অভিযান ।
২১ শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে বীচ ক্লিনিং ফেস্টিভ্যাল এ যোগ দিতে কক্সবাজার যাবার প্ল্যান করলাম। ১৯ তারিখ রাতের টিকেট ও কাটা ছিল । ১৯ তারিখ হরতাল ও ছিল । হঠাৎ রাসেল কে বললাম চলো খইয়াছরা যাই । রাসেল ও রাজি হয়ে গেল । হাসানের ঢাকায় জরুরী কাজ থাকায় যেতে পারলো না । হরতাল এর মধ্যেই রওয়ানা হলাম কুমিল্লা । একটা সি এন জি ঠিক করে চলে গেলাম কমলাপুর । এখান থেকেই কুমিল্লার এ সি বাস গুলো ছাড়ে । কমলাপুর নেমে পকেটে হাত দিয়ে দেখি ওয়ালেট আছে ঠিকই কিন্তু টাকা সহ আমার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড আর সিটি ব্যাংক এর কার্ড যে ফোল্ডার এ রাখা তা নেই (পরবর্তীতে আর পাওয়া যায় নাই, নিশ্চয় সি এন জি বা রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলো) । ওয়ালেট এ টাকা আছে মাত্র ৬০০/৭০০ । আপাকে ফোন করলাম টাকা পাঠানোর জন্য । ভাগ্নে এসে ৫০০০ টাকা দিয়ে গেল। কিন্তু হরতাল এর কারনে কোনও বাস ছাড়ছিল না । একটু পর বি আর টি সির এক লোক বলল ৪ টায় বাস ছাড়বে । অন্য কোনও বাস না থাকায় বি আর টি সির বাসেই উঠে বসলাম । আমাদের অনুমান কে ভুল প্রমান করে ৪ টা বাজেই গাড়ি ছাড়ল । ৭ টার মধ্যেই কুমিল্লা পৌঁছে গেলাম ।
ঢাকা থেকে ফোনে কথা বলেই ঠিক হল, জসিম মামা , রায়হান , সবুজ , ঘুমটি (শাহাদাত ) যাবে আমাদের সাথে । রাতে পুকুরের ঘাটে বসে সবাই ট্যুর প্ল্যান করছিলাম , সেখানে উপস্থিত মুকুল বলল সে ও যেতে চায়। আমার ২ টা তাবুতে ৭ জন থাকা যায়, তাই মুকুল কে ও সাথে নিতে রাজি হলাম। ঠিক হল, ভোর ৬ টায় রওয়ানা হব ।
পরদিন সকালে সবাই সময় মত উপস্থিত , শুধুমাত্র রায়হান নেই । ফোন করতেই ঘুম জড়িত কণ্ঠে বলল যেতে পারবে না, বিজনেস এর জরুরী কাজ আছে । সবুজ উপস্থিত হল লাল টকটকে চোখ নিয়ে । চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে । সে ও যেতে পারবে না । ৭ জন থেকে হয়ে গেলাম ৫ জন। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি । এমন সময় সবুজ বলল , ভাই আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আমার ব্যাগ গুছানো আছে, যা হয় হবে আমিও যাব । সবাই খুশি হয়ে অপেক্ষা করতে রাজি হলাম। সবুজ এক দৌড়ে বাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে চলে আসলো ।
কুমিল্লা বিশ্বরোড এসে নাস্তা করে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠলাম । মিরসরাই পার হয়ে বরতাকিয়া বাজারে নামলাম প্রায় সারে ১১ টা বাজে। মাঝে একবার বাসের চাকা পাঙ্কচার হওয়ায় একটু দেরি হল । বরতাকিয়া বাজার পার হয়ে গেলে আর খাবারের হোটেল বা দোকান পাট পাওয়া যাবে না । তাই আমরা খাবার খেয়ে ও প্রয়োজনীয় রসদ পাতি কিনে রওনা হলাম ঝর্নার উদ্দেশে । বাজারের লোকজন জানালো ২/৩ দিন আগেই নাকি এক ট্যুরিস্ট মারা গেছে ঝর্না থেকে পড়ে । সবাই একটু ভয় পেলে গেল, আমি আসস্থ করলাম , আমরা সাবধানে থাকব ।
বাজার থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে রেললাইন পার হয়ে গ্রাম্য পথ ধরে অবশেষে পৌঁছলাম ঝিরিপথ এ । এখান থেকে ঝিরি ধরে হাঁটতে হবে অথবা পাহাড়ি পথ ও আছে । প্রচণ্ড গরমে ঝিরির ঠাণ্ডা পানিতে পায়ের সাথে সাথে শরীর ও জুড়িয়ে যাচ্ছিল । সবাই ঝিরি পথেই হাঁটতে চাইল । ঝিরি ধরে হাটা একটু কষ্টকর , পানির বিপরীতমুখী স্রোত আর পাথর বোল্ডার এর কারনে আমাদের হাটার গতি বেশ কম ছিল। আগের ২ বারের তুলনায় পানি বেশ কম তবে পিচ্ছিল পথ । অবশেষে প্রায় ২ টার দিকে আমরা শেষ একটা বাক ঘুরতেই দেখা পেলাম পরম কাঙ্ক্ষিত খইয়াছরা ঝর্নার প্রথম স্টেপ । অসাধারন সুন্দর ঝর্না । ছবিতে বা ভাষায় বর্ণনা করার মত না।
বেশ কিছুক্ষণ ঝর্নার পানিতে দাপাদাপি ও ফটোসেশন এর পড়ে প্রায় খাড়া পথ বেয়ে উঠে গেলাম ২য় স্তরের ৩ তা স্টেপ এ। এটা আরও সুন্দর । তবে পানি কম থাকায় পুরো সৌন্দয ফুটে উঠেনি । কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে তার উপরের স্টেপ এ উঠার জন্য পাহাড় বেয়ে উঠা শুরু করলাম । আর সেটা ছিল ভুল পথ । প্রায় ৮০ ডিগ্রি খাড়া পথ , বেশ পিচ্ছিল ও জোঁক এর আস্তানা । সাথে থাকা চাপাতি দিয়ে ঝোপ ঝাড় কেটে গাছের ডাল লতা পাতা বেয়ে উপরে উঠে চললাম । দলের কেউ-ই অভিজ্ঞ ত্রাভেলার না, ৬ জনের মধ্যে আমি আর রাসেল ছাড়া সবাই নতুন । ৩ জন তো জীবনে এই প্রথম ঝর্না দেখল ,এতো উচু পাহাড়ে উঠাও প্রথম । তবুও সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠে চললাম । অসংখ্য জোঁকের কামড় খেয়ে পাহাড়ের উপড়ে উঠে দেখলাম আমরা ঝর্নার উপড়ে না অন্য একটা পাহাড়ে চলে এসেছি । চারদিকে ঘন ঝোপ ঝাড় । ডেড এন্ড । কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার নিচে নামা শুরু করলাম । খাড়া পথ বেয়ে নামা বেশ বিপদজনক , আর বেশ পিচ্ছিল পথ । শরীরের ব্যাল্যান্স রাখা বেশ কষ্টকর । একবার স্লিপ কাটলে সোজা ৩০০/৪০০ ফিট নিচে পড়তে হবে । বেশ কয়েকবার স্লিপ কেটে শেষ পর্যন্ত ঝর্নার ২য় স্টেপ এ নেমে আসলাম । সন্ধ্যা প্রায় নেমে আসছে । আর ক্যাম্পিং করার জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না । নিচের স্টেপ এ নেমেও ক্যাম্পিং করার জায়গা পেলাম না। চারদিকে ঝোপ ঝাড় পাথর , তাবু খাটানোর একটুও সমতল জায়গা নেই । সন্ধ্যার পর এখানে আটকে থাকলে বিপদে পড়ব । তাই ঝিরি পথ ধরে আবার লোকালয়ের দিকে ফিরে চললাম । কিছুক্ষণ হেঁটে লাস্ট যে বাড়িটা সেখানে পৌঁছলাম, একটু সামনে যেতেই দেখলাম পাহাড় আর ঝর্নার ফাকে একটা সমতল জায়গা। দেখেই পছন্দ হয়ে গেল । কাঁধ থেকে ব্যাগ তাবু নামিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম । এমন সময় বৃদ্ধ এক লোক কে দেখলাম হেঁটে যাচ্ছে । ডাক দিয়ে নিজেদের পরিচয় দিয়ে রাতে এখানে থাকার অনুমুতি চাইতেই উনি জানালেন শেষ বাড়িটা তারই। আমরা চাইলে তার বাড়িতেই থাকতে পারি । উনার ব্যাবহারে মুগ্ধ হয়ে জানালাম আমরা তাবুতেই থাকতে চাই । উনি বললেন উনার উঠনে তাবু খাঁটিয়ে থাকতে পারি । এবারো সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে জানালাম এখানেই থাকতে চাই । উনি বললেন কোনও অসুভিধা নেই । এখানে উনারা ছাড়া আর কেউ নেই, কোনও সমস্যা হবে না। উনাকে বললাম কাছাকাছি চা এর দোকান আছে নাকি । উনি বললেন ১০/১৫ মিনিটের হাটা পথে একটা দোকান আছে তবে তা সন্ধ্যার সময় বন্ধ হয়ে যায় ।
আমরা বেশ ক্ষুধার্ত ছিলাম । ঝিরিতে হাতমুখ ধুয়ে সাথে থাকা শুকনো খাবার খেলাম । এর মধ্যে চাচা আবার আসলেন। আমাদের শুকনো খাবার খেতে দেখে উনার বাড়িতে রাতে খাবার খেতে বললেন। আমাদের বললেন , বাবা , আমি গরিব মানুষ , তাছাড়া দোকান পাট বন্ধ হয়ে গেছে , আমার চাউল এর অভাব নেই । আপনাদের ভাত এর সাথে ডিম ভেঁজে দিব । আমার বাসায় খাবার খান । উনার আথিতেয়তায় আবার মুগ্ধ হলাম । এবং উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রান্না করতে নিষেধ করলাম । উনি অনেক অনুরধ করলেন, কিন্তু আমরা রাতের বেলা উনাদের কষ্ট দিতে চাইলাম না। কিছুক্ষণ পর উনি আমাদের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এলেন । চা খেয়ে অনেকক্ষণ উনার সাথে গল্প করলাম । সবাই বেশ টায়ার্ড ছিলাম তবুও ঘুম আসছিলো না । আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ । চারপাশে আমরা ছাড়া কেউ নেই । জসিম মামা আর আমি প্রায় রাত ২ টা পর্যন্ত গল্প করলাম । শেষে আগামীকাল আবার পরিশ্রম হবে ভেবে একটু ঘুমিয়ে নিলাম ।
সকাল ৫ টায় ঘুম ভাঙল । সবাইকে ডেকে তুললাম । হাত মুখ ধুয়ে , তাবু ব্যাগ গুছিয়ে আবার ঝর্নার দিকে চললাম । ভোর বেলা ঝর্না দেখার শখ ছিল । এবার আর মালপত্র নিয়ে হাটলাম না। চাচার বাসায় তাবু ব্যাগ সব রেখে ঝর্নার দিকে চললাম । এবার বেশ তাড়াতাড়ি পৌঁছলাম । ঘণ্টা খানেক ঝর্নায় কাঁটিয়ে ফিরে আসলাম । সীতাকুণ্ড যাবার প্ল্যান আছে তাই বেশি দেরি করলাম না। চাচার বাড়িতে ফিরে এসে বিদায় নিয়ে ফিরে চললাম বরতাকিয়া বাজারের দিকে । তারপর সীতাকুণ্ড । সে আরেক কাহিনী।

সব ছবির লিংক - Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×