
গনতান্ত্রিক দল হিসেবে যে কোন দলের সমালোচনা করার চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করাটা কনেক কঠিন। এর কারন হল এদলের কর্মী সমর্থকরা এখনও সমালোচনা হজম করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠেনি। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা হল অনেকটা ইরাক যুদ্ধ নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের মত- হয় তুমি আমার পক্ষের লোক না হয় আমার বিপক্ষের লোক। এর মাঝখানেও যে একটা গ্রুপ আছে তা তারা সম্পূর্ন ইগনর করছে।
"বার্ড’স আই ভিউ" নামে ইংলিশে একটা টার্ম আছে। মানে হল, এমন একটা সম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সম্পূর্ন ব্যাপারটা অবলোকন করা মনে হবে আপনি আকাশ থেকে নিচের সম্পূর্ন দৃশ্যটা দেখতে পাচ্ছেন। অর্থাৎ নিজেকে ঘটনার বাহিরে রেখে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে যে কোন ঘটনার বিচার করা।
আর এই "বার্ড’স আই ভিউ" বা এ দৃষ্টিভঙ্গির খুব অভাব আছে এই দলের লোকদের মাঝে। তারা সবসময় তার পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত ও প্রতারিত হয়ে থাকে। নেতার কথাকে যুক্তি তর্কের উর্ধ্বে মনে করে।
যখন ড. জাফর ইকবাল এদের সমালোচনা করে কোন আর্টিকেল লিখেন তখন তাকে এমন নগ্নভাবে আক্রমণ করে যে সেটা আর পড়ার বস্তু থাকেনা। আবার আজ যদি সেই জাফর ইকবালই তাদের কোন কাজ ভালো লাগার কারনে তার পক্ষে কোন কলাম লিখেন তাহলে তার পক্ষে তারা এমন বাড়াবাড়ি রকমের সাফাই গাইবে, মনে হবে জাফর ইকবাল স্যার জামাত করা শুরু করেছেন!
এর ভালো উদাহরণ হতে পারেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং গোলাম মাওলা রণি।
আমার মতে এর কারন হল, দলটি তার দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিটা কর্মীদের মাঝে পুস করে। অনেকটা পীরের মুরিদের মত দলীয় মুরিদ বানায়। যারা হয় বুদ্ধি ও যুক্তি প্রতিবন্ধি ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী হল বনসাই! বয়স হয়েছে কিন্তু সে তুলনায় বুদ্ধি ও শরীর কোন দিক থেকেই বাড়েনি। সেই ১৯৭০ সালের সাধারন নির্বাচনে ন্যশনাল এ্যাসেম্বলীতে পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসন না পেলেও ৬% ভোট পেয়েছিল এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫১ প্রার্থী দিয়েছিল দলটি। প্রাদেশিক নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে একটি আসনও জিতে নেয়।এত দীর্ঘ রাজনীতির পরও তাদের সে পার্সেন্টেজ খুব একটা বাড়েনি বরং ক্ষেত্র বিশেষে কমেছে।
আজ আসলে আলোচনা করতে চাই তাদের ভবিষ্যত নিয়ে।
“শীর্ষ নেতাদের ফাসিঁর পর রাজনৈতিক ময়দানে জামাতের নীতি ও সিদ্ধান্ত কি হবে? এবং তরুণ নেতৃত্ব কি ভাবে এটি মোকাবেলা করবেন?” - বর্তমান সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।কারণ জামাত তাদের ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ে যতটা না ভাবছে তার চেয়ে অনেক বেশী ভাবছে অন্যদল গুলো।
জামাত একটি দলীয় ক্যাডার ভিত্তিক দল হওয়ার কারণে কখনই হারিয়ে যাবেনা। রাষ্ট্রীয় ভাবে নিষিদ্ধ হলেও তাদের কার্যক্রম মোটেই থামবেনা। কিন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হল-শীর্ষনেতাদের ফাসিঁর পর তাদের রাজনৈতিক ভাবনাতে কার্যত কোন পরিবর্তণ ঘটবে কি? বিচারের পর একাত্তর ইস্যুতে তাদের অবস্থান কি হবে?
দলের অভ্যন্তরের অনেক নেতাই মনে করছেন শীর্ষনেতাদের এ ত্যাগ তাদের জন্য ভবিষ্যতের কল্যাণ বয়ে আনবে। তারা মনে করেন একাত্তর ইস্যুতে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই, তাদের নেতাদের শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে হত্যা করা হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়াটি বিস্তর ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তারা বিচার প্রক্রিয়াটি কে কোন ভাবেই মানতে রাজী নয়। অতএব, এ অন্যায় বিচারের কারণে তারা জনগনের সহানুভুতী অর্জন করতে সমর্থ হবে।
এক্ষেত্রে তারা মিশরের ব্রাদারহুডের উদাহরণ দিয়ে থাকে এবং হয়তো এ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বর্তমান কর্মীদের উদবুদ্ধ করা যাবে, কিছু সহানুভূতীর ভোটও পাওয়া যাবে কিন্ত এতে করে কি তাদের পূর্বের দৃষ্টিভঙ্গির কোন পরিবর্তণ ঘটবে? ব্যাপক বিতর্কীত একাত্তর ইস্যুতে তাদের অবস্থানের পরিবর্তণ হবে? কারণ তাদের অধিকাংশ কর্মীই মনে করে স্বাধীনতা যুদ্ধে জামাত বা তাদের নেতারা কোন অন্যায় করেনি।
আজথেকে দশ বছর পর, পরবর্তী প্রজন্ম জানবেনা বিচার প্রক্রিয়াটি কতটা ত্রুটিপূর্ণ্ ছিল। তারা শুধু জানতে পারবে, একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের কারণে জামাতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদন্ড দিয়ে ছিল আদালত। এই ব্যাপারটি জানার পরও পরবর্তী প্রজন্ম নিজেদেরকে এ দলটি তে যুক্তহতে কতটা সাচ্ছন্দ্যবোধ করবে তা দলটির জন্য ভাবার বিষয় বলে মনেকরি।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ এই ইস্যুটিকে কি ভবিষ্যত রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখবে নাকি বিচারের পর জামাতের ব্যাপারে তাদের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটবে? এটাও একটা গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হতে পারে ভবিষ্যত জামাতে ইসলামীর জন্য।
আমার মতে, আওয়ামী লীগ ইস্যুটি থেকে সর্বচ্চ রাজনৈতিক ফায়দা আদায় করার চেষ্টা করবে। এতোদিনের পরিশ্রমের ফসল তারা ঘরে তুলবে।জাতীয় রাজনীতিতে ইস্যুটির গুরুত্ব কমলেও জামাত দমনে তারা এটি ব্যবহার করে যাবে। ভবিষ্যতে জেলা পর্যায়ের প্রবিণ নেতাদের জড়ানো হবে।
“যেহেতু জামাতে ইসলামীর নেতাদের বিচার হয়ে গেছে এবং তারা এখন দায়মুক্ত তাই তাদের সাথে এখন ঐক্য করাই যায়” - ভবিষ্যতে যদি আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে এমন বক্তব্য দিতে দেখা যায় এবং জামাতের নেতাদেরও তাদের সাথে একই মঞ্চে ভাষণদিতে দেখা যায় তাতেও অবাক হবার কিছুনেই! যদিও নিকট ভবিষ্যতে সে আশা খুব ক্ষীন! তার জন্য হয়তো আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
শীর্ষনেতাদের রায় কার্যকরের পর খুব দ্রুতই জামাতে ইসলামীর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের নিতীমালা প্রনয়ণে ও গ্রহনে অনেক বেশী কৌশুলী ও বাস্তববাদী হওয়া উচিত হবে। ধর্ম ও স্বাধীনতা ইস্যুতে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা উচিত বলে মনে করি।সাংগঠনিক প্রচারনাটা MLM কোম্পানির মত না করে মেইন ষ্ট্রিমে নিয়ে আসা উচিত। ব্রেনওয়াশ ছেড়ে পাবলিক এডভারটাইজমেন্ট দিয়ে পলিটিক্স করা উচিত।
মনে রাখতে হবে, নির্বাচনে জয়লাভ, ক্ষমতা গ্রহন ও রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য শুধু জনগনের ভোটই যথেষ্ট নয়। আপনার মতাদর্শ, রাষ্ট্রের প্রতি কমিটমেন্ট, ভবিষ্যত কল্পনা ও সর্বসমাজে গ্রহনযোগ্যতা অনেক বড় ফ্যাক্ট। এ রকম বহু ডিপেন্ডেন্ট ভেরিয়েবলের উপর নির্ভর করে রাজনৈতিক ভবিষ্যত। ভুলে যাবেন না, জামাত এখনও এমন কোন অবদান জাতীর জন্য আনতে পারেনি যাতে করে জনগন মনে করতে পারে, দলটি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হবেনা। বরং একাত্তর এটাই প্রমাণ করে যে, আপনারা বাঙ্গালী জাতীর কেউ নন।
তাই প্রতিশোধ গ্রহনের চিন্তা বাদ দিয়ে জাতির জন্য এমন কিছু করুন জাতে একাত্তরের প্রায়শ্চিত্ব হয়। জাতি আপনাদের বিশ্বাস করতে পারে, আস্থা রাখতে পারে। সেটাই হবে সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ।
অর্থাৎ বাংলাদেশকে "বার্ড’স আই ভিউ" থেকে দেখুন! আপনি কি চান সেটা না দেখে জনগন কি চায় তা দেখুন!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



