তাহাদের মধ্যে কি ভালবাসা বলিতে কিছু নাই? তাহারা কি ইহার গুরুত্ব বোঝেন না?
আগামীকাল ভালবাসা দিবস। শফিক সাহেবের কল্যাণে আমাদের দেশে এই দিবস আমদানি হয়েছে (দুর্জনেরা এর মধ্যে নতুন প্রজন্মকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র খুঁজে পেয়েছেন)। যাই হোক, আমাদের মত যারা ভালবাসা জিনিসটার সাথে প্র্যাকটিক্যালি জড়িত, তাদের কাছে এটি একটি বিশেষ উপলক্ষ নিয়ে আসে; সেই উপলক্ষটি একটু অন্য রকম ভালবাসার; অনেকের জন্য মাত্রাছাড়া ভালবাসার (আচ্ছা, ভালবাসার কি কোন মাত্রা আছে?)। তবে যাহারা ভালবাসা নামক জিনিসের স্বাদ পান নাই, তাহাদের কথা বলিতে পারিনা (আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কোন ভালবাসার কথা বলছি। এটি নিশ্চয়ই ভাই-বোন টাইপের ভালবাসা না)।
যাই হোক, সমস্যা হল অন্যখানে। কাল আমাদের ডিপার্টমেন্টে সকাল ১০টায় ক্লাশ শুরু হবে, শেষ হবে বিকেল ৪টায়। আমার ইয়ে এই কথা শুনে তো যারপরনাই হতাশ! ইহা কেমন কথা! তাহাদের (শিক্ষককুলের) মধ্যে কি ভালবাসা বলিতে কোন জিনিস নাই?
আছে কিনা আল্লাহই জানেন। তিনিই তো সবজান্তা। যে স্যার ১০টায় ক্লাশ নিবেন, তিনি বর্তমানে বিরহে আছেন। বেশ কিছুদিন আগে তার ডিভোর্স হয়েছে। বর্তমানে বিধবা অবস্থায় আছেন। বেচারার বয়স বেশি হয় নাই। এর মধ্যেই এই অবস্থা! ( সুতরাং ভালবাসা কি জিনিস, তা তিনি বুঝলেও, কাল মনে হয় রাগ করেই ক্লাশ নিবেন।
আরেক স্যার ক্লাশ নিবেন দুপুর ১২টায়। তিনি গত দুটি ক্লাশে রোল কল করেননি। তাই তিনি আগামীকাল ৩টি ক্লাশের একসাথে প্রেজেন্ট দিবেন। যার কারণে ইচ্ছা থাকলেও ক্লাশ মিস দেয়ার কোন সুযোগ নেই। স্যারের বয়স প্রায় ৬৫-৭০ হবে। তিনি নিজেই কথায় কথায় বলেন ৩২ বছরের টিচিং এক্সপারিয়েন্স! তাইতো! যেইসেই কথা! ৩২ বছর!!! তার কাছে ভালবাসা তো এখন বাসী হয়ে গেছে। সুতরাং তিনিও ভালবাসা দিবসের তাৎপর্য বুঝতে অক্ষম।
আরেকজন ম্যাডাম ক্লাশ নিবেন বিকাল ৩টায়। তিনি অবশ্য খুবই ইয়াং। সবে জয়েন করেছেন। এখনো বিয়ে করেছেন কিনা তা আমাদের কাছে পিএইচডির বিষয়! এ ব্যাপারে নানা মতবাদ চালু আছে। কেউ বলে বিয়ে করেন নি। আবার কেউ বলে একজন মেজরকে বিয়ে করেছেন। অবশ্য সবি উড়ো মতবাদ। কোন প্রমাণ হাজির করতে কেউ আজ পর্যন্ত সফল হয় নি। আবার কোনোকোনো ছাত্র এসব মতবাদের ধার ধারেননা। তারা ম্যাডামের ফিদা হয়ে বসে আছেন। ম্যাডামের ক্লাশ নিয়ে তাদের বরাবরই বিশেষ আগ্রহ। ম্যাডাম যেদিন বললেন যে আগামীকাল ক্লাশ নিবেন, আমরা তখন তাকে মনে করিয়ে দিলাম ভালবাসা দিবসের কথা। ম্যাডাম এর প্রতিত্তরে বললেন, "ঐদিন তোমাদের ভালবাসা দিবস ক্লাশের মধ্য দিয়েই শুরু হবে।" আমাদের মেজাজ গেল চরম খারাপ হয়ে। অন্যদিকে আমাদের ফিদা বন্ধুরা তো আনন্দে ডগমগ। তারা আশার আলো দেখিতে পাইতেছে!
আপনারাই বলেন কাহাতক সহ্য হয়! ঢাবির শিক্ষকদের বলা হয় জাতির বিবেক। এখন জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন আপনাদের মধ্যে কি ভালবাসা নামক বস্তুটির (নাকি বায়বীয় পদার্থ) কোন উপস্থিতি নাই?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৪৩