সকাল থেকেই মনটা বেশ ভালো ছিল। কারণ, আজ কার্জন স্যারের ক্রিমিনলোজি ক্লাশে প্রেজেন্টেশন ছিল। প্রজেন্টেশন ভাল করতে পারি বা না পারি, সবার মধ্যেই এক ধরণের আনন্দ বিরাজ করছিল। আজ প্রথম দিনে ১ থেকে ৪০ রোল পর্যন্ত সবার প্রেজেন্টেশন ছিল। সকাল ৮টায় শুরু হল, শেষ হল সোয়া দশটার দিকে। আমাদের স্যার ক্লাশে বসেই তাৎক্ষণিক মার্ক দিয়ে দেন। ফুরফুরে মনে ক্লাশ থেকে বের হয়েছি। কেননা, আমার প্রত্যাশার অতিরিক্ত মার্ক আমি পেয়েছি। তাও আবার এমন একজনের কাছ থেকে পেলাম যিনি আমার উপর একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনায় বিরক্ত ছিলেন; এখনো আছেন কি-না জানিনা।
যাই হোক, ক্লাশ থেকে বের হয়ে সামনে যেতেই আমাদের একটি বান্ধবী নিশা হঠাৎ দৌড় দিল। আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। ও দৌড়াচ্ছে কেন! দেখলাম নিশা দৌড়ে গিয়ে নুসরাতকে ধরল। নুসরাত অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। একটি মোটামুটি ছোট-খাটো জটলার সৃষ্টি হল। আজাদকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে রে। আজাদ বলল নুসরাতের বাবা মারা গেছেন। এই মাত্র তার ভাই খবর নিয়ে এসেছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল!
ওর পুরো নাম নুসরাত জাহান ফেরদৌসী। সবসময় হাসিখুশি একটি মেয়ে। মিশুক প্রকৃতির। সদালপী। তার মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকে। কিন্তু আমরা এখন আর হাসিমাখা মুখটা দেখতে পারব না। আমরা তার কাছে গেলাম। কিন্তু কি বলব, কি করা উচিৎ-তা বুঝতে পারছিলাম না। নির্ঝরকে দেখলাম শান্তনার বাক্য শুনাচ্ছে। কিন্তু নুসরাত নির্বিকার। নির্ঝর আর নিশু নুসরাতকে নিয়ে সিএনজিতে করে ফার্মগেট চলে গেল। ওখান থেকে আজই কক্সবাজার যাবে। ওদের বাড়ি কক্সবাজারে। সেখানেই ওর বাবা শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে সকলকে কাঁদিয়ে এক অজানা-অচেনা স্থানে চলে গেলেন। জানি না তিনি সেখানে কেমন করে দিন কাটাবেন!
বাবার আত্মার শান্তি কামনা করে একটি ব্যানার লিখতে দিলাম আমরা। সকলের মন খুবই খারাপ। নিশা, মনির ওদের চোখে পানি। জানিনা কী এক অজানা কারণে আমার চোখেও পানি চলে আসল। আমরা স্যারকে বলে পরবর্তী ক্লাশটা ক্যানসিল করি। নুসরাতের বাসায় সবার যাবার ইচ্ছা থাকলেও যাওয়ার উপায় নেই।
আমি বাসায় চলে এলাম। মনটা বিমর্ষ! ভাবতেই পারছিনা একজন মানুষ মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে চলে গেলেন। নুসরাতের আনন্দ শেষ হয়ে গেল! জানিনা ওর মুখে আবার কবে হাসি দেখতে পাব! মানুষের জীবনে সবচেয়ে কঠিন শোকসংবাদ খুব সম্ভবত বাবা-মা আর সন্তানের মৃত্যু। সেই কঠিন শোকসংবাদটাই নুসরাতকে শুনতে হল খুব তাড়াতাড়ি। ভাল লাগছে না! আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা!
নুসরাতের বাবার অনাকাঙ্খিত প্রয়াণে আমরা সবাই শোকাহত। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:১৬