আমার শরীরে সাদা মানুষ ও কালো মানুষের রক্ত প্রবাহ
সাদা মানুষেরা নাক কুঁচকে কালো মানুষদের থেকে আমার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল-
‘তোমার শরীরে সাদা মানুষের রক্ত অধিক প্রকট, তুমি আমাদের পক্ষে এসো।’
কালো মানুষেরা রক্তচোখে সাদা মানুষদের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল-
‘পৃথিবীর আদিম মানব কালোদের গর্বিত রক্ত তোমার শরীরে বহমান, তুমি আমাদের পক্ষে এসো।’
সাদা-কালোর বিভেদ ভুলে আমি নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নিলাম।
আমি নিশ্চিত ক’রে একথা বলতে পারি না যে-
আমার পূর্ব-পুরুষদের কেউ-ই মানসিকভাবে নারী ছিলেন না।
আমি নিশ্চিত ক’রে একথাও বলতে পারি না যে-
আমার পূর্ব প্রজন্মের নারীদের কেউ-ই মানসিকভাবে পুরুষ ছিলেন না।
পূর্বজ হাজার হাজার প্রজন্মের মধ্যে তেমন থাকাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়
অথচ নারী ও রূপান্তরিত মানুষদের ভর্ৎসনা ক’রে কিছু পুরুষ আমাকে বলল-
‘তুমি পুরুষ, মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী, তুমি শুধু পুরুষের জয়গান করবে!’
আবার রূপান্তরিত নারীদের ভর্ৎসনা ক’রে কিছু নারী আমাকে বলল-
‘তুমি নারীগর্ভে জন্মেছ; ঊননারী নয়, তুমি শুধু নারীর জয়গান গাইবে!’
আমি নারী, পুরুষ, রূপান্তরিত মানুষ ও বৃহন্নলাদের হাতে হাত রেখে
মানুষ, পশুপাখি আর প্রকৃতির জয়গান গাইলাম।
আমি জন্মসূত্রে সনাতন সংস্কৃতির
তাই সনাতনী কেউ কেউ বলল-
‘চুরাশি লক্ষ যোনি ঘুরে, অনেক পূণ্যের ফলে, তুমি জন্মেছ হিন্দুর ঘরে
শয়নে-স্বপনে, মনে হরিনাম জপবে, আর আমাদের পক্ষে কথা বলবে।’
ইসলাম ধর্মের অনুসারী কেউ কেউ বলল-
‘তুমি যত ভালো কাজই করো না কেন, বেহেশতে যেতে পারবে না
একমাত্র সত্য ধর্মের অনুসারীরাই বেহেশতে যাবে
তুমি সত্য ধর্ম গ্রহণ ক’রে আমাদের পক্ষে কথা বলো।’
আমি তাদের আহ্বান অগ্রাহ্য ক’রে মানুষের পক্ষে কথা বললাম
মানুষের পক্ষে কথা বলতেই আমি সমাজবিচ্ছিন্ন হ’য়ে গেলাম।
ঢাকা
২৫ জানুয়ারি, ২০২৪