নির্বোধ পাঠকের রুচির যোগান দিতে
দু-একটি ব্যতিক্রম ব্যতিত শিল্পগুণহীন দেড়-দুইশো বই লিখলেই
পত্রিকার পাতায় তার নামের আগে লেখা হয়- ‘কিংবদন্তী লেখক’।
হায়, এই আশ্চর্য কিংবদন্তীর দেশে
আমি কেন শব্দে শব্দে জীবন, জনপদ ও স্বপ্নের ছবি আঁকার জন্য জন্মেছি!
আব্দুলের বাপ কিংবা বিগতযৌবন নন্দদুলালকে বিনোদন দিতে
দুই-তিনশো সিনেমায় ধর্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করলেই
মৃত্যুবার্ষিকীতে লোকে তাকে স্মরণ ক’রে ল্যাখে- ‘কিংবদন্তী অভিনেতা’।
হায়, এই আশ্চর্য কিংবদন্তীর দেশে
আমি কেন কিংবদন্তী খুঁজতে জনপদ থেকে জনপদে ছুঁটছি!
গণহত্যাকারীর দোসর ও ধর্ষণকারী পরবর্তী জীবনে পীর
কিংবা আলেম হ’য়ে জনমনে অপবিজ্ঞান ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়ালেও
লোকে তার নামের আগে শ্রদ্ধাভরে যুক্ত করে- ‘কিংবদন্তী’।
হায়, এই আশ্চর্য কিংবদন্তীর দেশে
আমি কেন বাউল, মৃৎশিল্পী, পটচিত্রকর, পালাকারদের মধ্যে কিংবদন্তী খুঁজছি!
বখতিয়ার খিলজী, হাজী শরীয়তুল্লাহ, শেখ জালালুদ্দিন তাবরিজির মতো
সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিধ্বংসী হিংস্র কূপমণ্ডুকেরা
এই দেশে কিংবদন্তীর আসনে উপবিষ্ট।
হায়, এই আশ্চর্য কিংবদন্তীর দেশে
আমি কেন সভ্যতার নির্মাণশিল্পী কাহ্নপাদ, চণ্ডীদাস, রামমোহন, বিদ্যাসাগরকে কিংবদন্তী মেনেছি!
কোনো ভাঁড়ের ফেইজবুক পেইজে পঞ্চাশ লাখ ফলোয়ার কিংবা
ইউটিউবে দশ লাখ সাবস্ক্রাইবার থাকলেই
মগজহীন টেলিভিশন সাংবাদিকের মাইক্রোফোন এগিয়ে যায় তার মুখে কাছে
আগামী দিনে লোকে হয়ত এদের নামের পূর্বেও কিংবদন্তী শব্দটি যুক্ত করবে।
হায়, এই আশ্চর্য কিংবদন্তীর দেশে
আমি কেন বুকের মধ্যে নদী, পাহাড়, আকাশ নিয়ে বিবাগী পরিব্রাজক হ’য়ে জন্মেছি!
ঢাকা।
৩০ জানুয়ারি, ২০২৪