somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিওনের আত্নকথন

০৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




নতুন শহরে এসেছি দুবছর হল। এখানে স্থাবরের সাথে এক ক্ষণস্থায়ী বন্ধনে আবদ্ধ , যাযাবর পথিক গুলোর সাথে অভিনব সম্পর্কের সূত্রপাত । পুরনো শহরের অলি-গলির স্মৃতিগুলো আর যন্ত্রনা দিতে পারে না , সবকিছু এখানে নতুন , প্রতি শীতের শেষে যেমন দুঃখ ভরা স্মৃতি নিয়ে পুরনো পাতা ঝরে গিয়ে বসন্তে
নতুনের অভিপ্রায়ে হাতছানি দেয় ,তেমনি নতুন শহরের ধুলি থেকে শুরু করে প্রতিটি গলি আমাকেও জীবনের সায়াহ্নে নতুন বসন্তের আগমন ধ্বনি শোনায় , যৌবনে বার্ধক্যপ্রাপ্ত আমাকে জীবনের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় , আমি নিথর-নিষ্ঠুরতায় মৌন মুগ্ধ হয়ে পরে থাকি শ্লথের ন্যায়।


আগের মত নিথর সামাজিকতার দায় থেকে মুক্ত ,এই অবাধ স্বাধীনতা আমাকে উচ্ছসিত করে ,
আমি সমুদ্রের ফেনার মত ভেসে যাই তীরের দিকে , মাঝে মাঝে আশে-পাশের দোকানিদের
জিজ্ঞাসু চোখে পরিচয়ের হাতছানি দেখে টুক করে চলে যাই , মাঝে মাঝে তাদের উদ্দেশ্যে
আবেগহীন সম্ভাষণ ছুড়ে দেই , তাদের ভাবাবেগে ভাসতে দেখে ভাল লাগা বয়ে যায় প্রতিটি নিউরনের এক্সনে।



বাসার অদূরেই এক দম্পতির গ্রোসারিস শপ , কারনে-অকারনে , কখন-সখন চাগিয়ে উঠা ধুম্রপানের তীব্র আকাঙ্খা মেটাতে গিয়ে হাজির হই। কিঞ্চিৎ দ্রব্যের সাথে তাদের অপরিমিয় আবেগ ভাল লাগে ,
অদ্ভুত অধিকারে তারা দাবি করে বসে আমায় ক্রেতা হিসেবে । এই অপরিচিত শহরে এই কিঞ্চিৎ মায়ার বাধন বেশ মুগ্ধকর । দুদিন অনুপস্থিতি , কৈফিয়েত দাবি করে বসে , খোজ নেয় সুস্থতার । হঠাত হঠাত খুনসুটিতে মেতে উঠে নিজেদের মাঝে, মনে করিয়ে দেয় আমায় প্রিয় মানুষের স্মৃতিতে ঘেরা সুদূর অতীত।
খুনসুটি থামিয়ে আমার দিকে মনোনিবেশ করে স্ত্রী টি , জানতে চায় আমার অতীত , আমি বিষণ্ণতা ঢাকার অভিপ্রায়ে চোখ দুটো ছানাবড় করে তুলি , অতীত যেন আরো বেশি বিষণ্ণতা নিয়ে ধরা দেয় আমার চোখে , হঠাত করে পুরুষটি ব্যাস্ত হয়ে পরে পরিষ্কার তাকগুলো ঝাড়পোছে , আর স্ত্রীটি অনাবশ্যক ব্যস্ততায় চায়ের কাপে সিডরের ঘূর্ণি তোলে , তাড়াহুড়োয় ছিলকে পড়ে কয়েক ফোটা , সাটিনের কোমল ত্বকে লালিমা দেখা যায় , আমি শঙ্কিত হয়ে উঠি ।



পথে পথে হাঁটতে হাঁটতে স্মৃতিকাতরতায় ভুগি , অদ্ভুত যন্ত্রনা জানান দেয় , নিমেষে হাত চলে যায় কাধে , ক্ষত শুকিয়ে গেছে প্রায় সামান্য দাগ তার অস্তিত্ব সদম্ভে জানান দেয় । হৃদয়ে ক্ষত এখন দগদগে ।
জীবনে প্রথম মৃত্যুর সাথে পরিচয় বছর পনের আগে , হঠাত করেই এক সকালে স্বর্গের জন্য পাড়ি দেয় ।
তারপর যাকে ঘিরে জীবন আবর্তিত হয়েছে সেই মাও ছেড়ে চলে গেছে বছর দশেক , তাকে একা ফেলে
এই পৃথিবীর বুকে । পরিচিত মানুশগুলোকে অর্থের লোলুপতায় হিংস্র হয়ে ঊঠতে দেখেছি , পারস্পরিক অসুস্থ কামনায় একে অন্যকে ঘায়েল করতে দেখেছি ।
অস্থির মরুর পিপাষার্ত জীবনে দু দন্ড শান্তির পরশে শিক্ত করেছিল লিটো , বিওনের লিটো , কিংবা লিটোর বিওন সুদীর্ঘ পাচটি বছর একে অপরের পরিপুরক ছিলাম । হঠাত করেই একদিন লিটো আমাকে ছেড়ে চলে গেল , আমাকে হতাশার আঁধারে রেখে , আলোর সন্ধান পেতে তার নতুন প্রিয়ের সাথে ।


কষ্ট ভীষণ কষ্ট । আশ্রয় নিয়েছিলাম কলমের কালিতে , আমার সব দুঃখ ভাষা হয়ে অস্থিরতায় ভাসিয়ে নিয়ে যেত আমার পাঠকদের । অল্পদিনেই খ্যাতির আল্পস এ চড়ে ছিলাম , অবাধ্য কাগুজে নোটগুলোকে কোকে
রুপান্তিত করে মেতেছিলাম অন্য মাদকতায় , এক রঙ্গিনভুবনের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হয়ে উঠলাম । বাস্তবতার সাথে আমার বস্তুচিন্তা এবং চিন্তাজগত ও শুন্য হয়ে গেল , এক অপার্থিব শুন্যতা আমায় ঘিরে বলয় তৈরি করল । আহ! কোকেইন , রংধনুর সাত রঙের দেখা পেয়েছিলাম এক সাথে । হাতে কলমের চেয়ে সস্তা ভদকায় মজে গেলাম । যাদের এত সাধনা করেছি , তারাই আমাকে ছেড়ে যেতে কার্পণ্য করেনি । আর অনাদরের লেখা গুলো ও চলে গেল , হাজার পৃষ্ঠা আর লাখো কলমের আর্তনাদে ক্ষান্ত দিলাম ।



এ শহরে কেউ আমায় চেনে না , করুনাভরা দৃষ্টিগুলো আমায় আজ আর বিদ্ধ করেনা । ব্যর্থতার দায়ভার আজ আর কারো সাথে ভাগাভাগি করতে হয় না । আবার নতুনের স্বপ্ন নিয়ে আমি এ শহরের সকলের মাঝে হারিয়ে যাব , সবার সাথে উৎসবে মেতে উঠব , আমার আবেগকে পুনরায় ভাষায় রুপান্তিত করব ।
ওহ বলা হয় নি আমিই বিওন ,এ আমারই আত্নকথন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:৪১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×