খুলনার পথে: শহুরে চিঠি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
যোগাযোগটা এখন সহজ স্বাভাবিক গতিময় হলেও কেমন যেন প্রাণহীন। মাঝে মাঝেই অসহ্য রকমের ছন্দপতন। এ জন্যই মাঝে মাঝে ঘাস ফড়িং কে বড্ড ঈর্ষা হয়। আমি প্রায়ই ওদের ওড়াওড়ি দেখি। কী সুন্দর প্রাণবন্ত, ছন্দময়! কিন্তু মজার ব্যাপার হলো কখনো একঘেয়ে লাগে না। প্রকৃতির যেমন, তেমনি প্রত্যেকটা শহরেরও আলাদা আলাদা পরিচয় আছে। চাই সেটা ভালো হোক বা মন্দ; সূর্যাস্তের শহর, বেলাভূমির শহর, শিল্পের শহর, সুরের শহর, গানের শহর, জুতার শহর, ঘড়ির শহর, মসজিদের শহর, মন্দিরের শহর, মিনারের শহর, গম্বুজের শহর, কেল্লার শহর, গির্জার শহর, প্যাগোডার শহর, কান্নার শহর, আনন্দের শহর, চোরের শহর, সাধুর শহর, আলোর শহর, অন্ধকারের শহর- আরো কত কী! বড় শহরগুলো মূলতঃ উন্নত, আধুনিক। ইট, কংক্রীট, ইস্পাত, কাঁচ-দেয়াল। তার পেঁচানো ল্যাম্পপোস্ট, নিয়ন আলোর আঁধারি। আর ঢাকা শহর? আর সব বাদ দিয়ে যদি শুধু রাস্তার কথা বলি তাহলে একের পর এক চোখে ভাসে- রাজপথ, ছোট বড় লেইন, অলি-গলি; কানাগলি, চিপা গলি, ভুতের গলি, ভাঙ্গা ব্রীজ, কাঠের ব্রীজ, লোহার পুল, ফকিরের পুল, বাঁশের পুল, ঘুপচি, মাইনকা চিপা, ঢাকনি খোলা ম্যানহোল, বর্ষায় গলা-বুক-কোমর-মাজা বা হাঁটুপানি অথবা কমপক্ষে কাদাভরা ফুটপাথ, ফুটপাথে অবৈধ ব্যবসা আর ততোধিক অবৈধ গলাবাজি, চাপাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, চাঁন্দাবাজি, ধান্দাবাজি, ফেরেববাজি; হাইওয়েতে বাসের জন্য লম্বা লম্বা সাপের লেজে পা দিয়ে ঘর্মাক্ত কলেবরে দাঁড়িয়ে থাকা অধৈর্য্য মানুষ। আর তাদের দিকে কুতকুতে-পর্যবেক্ষনী, সুযোগসন্ধানী, ধূর্ত-শকুনে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকা ফিকিরে বাটপার, পকেটমার, ঘুমপাড়ানি ঠেক আর ঠগের দল। ঘাম আর পোড়া ফুয়েলের বিষাক্ত কটু গন্ধে-ঠাসা বিরতিহীন লোকাল বাস! একবার উঠেছ কি মরেছ; বিরতিহীন ঠেলা, গুতা, ধাক্কা, উষ্ঠা, ঠোকনা, খোঁচা, চাপ, ঘষা, গায়ে অস্বস্তিকর নোংরা স্পর্শ আর বিবেক বুদ্ধিহীন অশ্লীল চাহনির জ্বালা ধরানো অনুভূতির দহন, মাঝে মধ্যে ততোধিক অসহ্য কেলানো হাসির সাথে দাঁতের ফাঁকে ভদ্রতার খোলস মোড়া মুখস্থ সমাচার, "স্যরি আপা", তার সাথে ফাউ হিসেবে ক্রমাগত খিস্তি খেউর তো বাতাসে ভাসছেই, কায়দা মত যার একটা কানে ঢুকলেই-ব্যস, 'যেন কানেরও ভিতরও দিয়া মরমে পঁসিবে গো'। বলাই বাহুল্য, এই স-ব কিছুর সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়তই আমাদের নিজেদেরকে বদলে নিতে হয়। অ্যাডজাস্ট করতে হয়। একথা অস্বীকার করার জো নেই যে, যে তুমি তাৎপর্যপূর্ণ ৬টি বছর আগে যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা শহরে এসেছিলে, এই ঈদে সেই তুমি চোখ ভরে সেই একই স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারনি। স্বপ্ন বদলেছে; বদলেছে দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়! আমরাও মানুষ! আমরাও বেঁচে থাকলে বদলাই, কারণে-অকারণে বদলাই। ভাঙা ভাঙা কয়েকটা লাইন মনে পড়ছে-
এই শহর মানেই আমরা একটা জনসমুদ্র---
তারপর্-হঠাৎ মনে হয়;
এরই মাঝে নকশা, শাদা আলোর শাদা শঙ্খচিল-
সত্যিই তোমাকে আমার হিংসে হয়। আহা! এই শহরের চাপে ক্লিষ্ট হয়েও তোমার মন কতই না প্রাণবন্ত, তন্বী! তুমি কথার সূতোয় বুনতে পার তোমার জীবনের স্বপ্ন, গাথা।
তুমি বৃষ্টি দেখেছ, বৃষ্টির ছবি এঁকেছ------
তুমি রোদে পুড়ে ঘুরে ঘুরে অনেক কেঁদেছ------
তোমার আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি------
শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।
ওগো সে কারণেই বুঝি সবকিছু ছাপিয়ে হাজারো কষ্টের ভীড় ঠেলে শহুরে কাঠখোট্টা ফেরিওয়ালার ইনকর্পোরেটেড ঝুড়ি-ঝাঁপি কাঁধ খসিয়ে নিজের চির চেনা নীড়ে ফেরার আনন্দ এতটা আবেগময়, কাব্যিক, স্বপ্নিল, বর্নিল, এতটা অনাবিল আনন্দময়!
ভাগ্যিস তোমার আম্মু সামু'তে ঢুকতে জানেন না। না হলে শেখ হাসিনা তো শুধু দিন বদল করে দেখিয়েছেন, এবারে উনার সৌজন্যে হয়তো বৃন্দাবন, গয়া, কাশি, চাঁদ-তারা ইত্যাদিও দেখার সৌভাগ্য হয়ে যেতে পারত!
থাক্!
চাপা পাপ-
ঢাকা থাক,
কেউ তাহা খুল'না!
যাক্!
পরিতাপ-
ভেসে যাক;
কারো কানে তুলো না!
পাক্!
সুখস্স্মৃতি-
ভাষা পাক।
কেউ যেন ভুলো না।।
পরসমাচার এই যে, বাবুসোনাটকে ঈদের শুভেচ্ছা দিও। বাবুসোনাটার ছবি পাঠাবে। তোমার ভাইভার রেজাল্টটা কিন্তু জানা হলো না। ডাকযোগে মিষ্টি পাঠিয়ে দিও কিন্তু। খবর খারাপ হলে কিল ঘুষি পাঠাতে হবে না। আর বুঝতেই পারছ, তোমার পোস্টগুলো আমার মোট্টেও পছন্দ হয়নি!!
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক
আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।
“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য
ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার
(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭
ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।
এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন