মতিঝিল স্কয়ার। রাত ১২ টা।
অন্ধকার হয়ে গেল ল্যাম্পপোস্টের আলো। কেমন যেন এক শুনশান নীরবতা। চারিদিকে লাখ লাখ মানুষ। বুড়া বাচ্চা জোয়ান সবাই বসে দাড়িয়ে আছে। কেউ তজবি হাতে কেউ বা মনে মনে জিকির করছে ।
কতক্ষন পর পর হেলিকপ্টারের আওয়াজ। কেমন যেন কানে তালা লেগে যায়। বুকের মধ্যে গিয়ে লাগে সেই শব্দ। মনে হচ্ছে কেউ বুলেট দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে যাচ্ছে হৃদয় টা।
কিছুক্ষন পর।
কয়েকটা হেলিকপ্টার , আর পুলিশের গাড়ির আর গুলির শব্দে জায়গাটা একটা রণক্ষেত্রে রূপ নিতে শুরু করল। প্রথমে কেউ ভাবেনি যে শুরুটা এভাবে হবে। অতর্কিত হামলায় পড়ে গেলাম সবাই। হঠাৎ গ্রেনেডের শব্দ ঝাঝরা করে দিল কান। শুরু হলে হই হুল্লোড়। চারিদিকে গুলির শব্দ আর টিয়ার সেল এর গন্ধ। গা চোখ মুখ সব জ্বলতে লাগল।
এলোপাতারি গুলির শব্দ। রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে মতিঝিলের রাজপথ। আমার পাশের ভাইটির ঘারে গুলি লেগেছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে।বাচাতে চেষ্টা করলাম তাঁকে। কিন্তু এত ভীরের মধ্যে সম্ভব হয়ে উঠল না। প্রানপণে দৌড়াতে শুরু করলাম। কতগুলো মানুষের দেহের উপর দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম হিসেব নেই। মৃত না জীবিত বোঝার উপায় নেই। শুধু দেখলাম রক্ত আর রক্ত। তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছিল। শুধু আল্লাহ কে ডাকলাম। হেলিকপ্টার গুলো উড়ছিল আঁকাশে। ওঁটাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন এক ঈগল নিরীহ মুরগীর বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বিভীষিকাময় মৃত্যুপুরী তে পরিণত হল সোনার বাংলার এই মতিঝিল।
দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি । কত মিনিট যে হয়ে গেল হিসেব ও নেই।ঘণ্টা হল কিনা । সময়ের হিসেব রেখে কি হবে। এই দুর্বল চিত্ত ও শরীরের ব্যাক্তির সামর্থ্য নেই ওই সশস্ত্র হায়নাদের সাথে লড়ার। শুধু এই হৃদয় টুকু আছে আল্লাহ কে ভালোবেসে তার কটাক্ষকারী দের শাস্তির দাবি চাওয়ার।
নিরাপদ আশ্রয় এ এসে আল্লাহর কাছে শূকরিয়া আদায় করলাম দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে। কিন্তু পরক্ষনেই চিন্তা করলাম না ঐখানে মৃত্যু হওয়াই স্রেয় ছিল।
কত শত যে জীবিত আধামৃত মানুষ এর উপর দিয়ে এসেছি হিসেব নেই। লাশের সংখ্যা যে কত হবে তার ও হিসেব নেই। হয়ত এ হিসেব আর কখন ও পাওয়া ও যাবেনা।আল্লাহ তুমি ওদের বিনা শর্তে বেহেস্ত নসিব কর ।
আমীন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



