লেখক: সমীর কুমার দে (ইত্তেফাক অন লাইন নিউজ)
মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক অবৈধ প্যাকেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৯২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৪ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই টাকা এক মাসের মধ্যে গ্রহককে ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আজ বৃহস্পতিবার বাংলালিংককে এই নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিটিআরসি। একই সঙ্গে তাদের আরো ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করেছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ বাংলালিংককে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে ইত্তেফাককে বলেন, চিঠিতে তাদের বলা হয়েছে, এক মাসের মধ্যে এই টাকা গ্রাহককে ফেরত দিতে হবে। তবে এ বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য থাকলে তা বিটিআরসিকে জানাতেও বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিটিআরসি তাদের বলেছে, পোস্ট পেইড গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া টাকা মাস শেষে বিলের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে। একই সঙ্গে প্রিপেইড গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ‘আই টপ আপ’-এর মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জরিমানার টাকাও বিটিআরসিকে দিতে হবে।
বাংলালিংকের কর্পোরেট বিভাগের পরিচালক জাকিউল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, চিঠিটি এখনও তিনি দেখননি। তবে তিনি এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলালিংক গ্রাহকের সঙ্গে কোন প্রতারণা করেনি। বরং গ্রাহককে সুবিধা দেয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তারপরও এ বিষয়ে তাদের কোন ভুল হয়ে থাকলে তারা বিটিআরসির সঙ্গে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করবেন। বিষয়টি যেন বিটিআরসি সহানুভুতির দৃষ্টিতে দেখে সে অনুরোধ করেন তিনি।
সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের শেষ দিকে বাংলালিংক একটি প্যাকেজ দেয়। যেখানে দিনে চার টাকা দিলে ৬৫ পয়সা মিনিটে কথা বলা যাবে। বিটিআরসি এ বিষয়ে পরে বাংলালিংকের কাছে জানতে চায়। তারা জানিয়েছে, প্রতিদিন চার টাকা হারে ৯২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৪ টাকা নেয়া হয়েছে। প্যাকেজটিতে বিটিআরসি’র অনুমোদন ছিল না বলেও বলা হচ্ছে। বিটিআরসি গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া এই অর্থের পুরোটাই আইটপ আপ হিসেবে ফেরত দিতে বলেছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, শুরু থেকেই মোবাইল ফোন অপারেটররা নানা কায়দা-কানুন করে গ্রাহক ঠকাচ্ছে। সম্প্রতি বিটিআরসিকে পাশকাটিয়ে তারা অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু টু-জি লাইসেন্স নবায়ন এবং মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় ব্যস্ত থাকায় এসব বিষয়ে এতোদিন তারা খুব একটা মনোযোগ দিতে পারেননি। কিন্তু এখন আর অপারেটররা ছাড় পাবে না। এখন নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠায় জিরো টলারেন্সে যেতে চাইছে বিটিআরসি।
জানা গেছে, অপারেটররা যাতে আইনের রকম ফাঁকফোকর গলিয়ে কোনো অন্যায় না করতে পারে তার জন্যে ট্যারিফ নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিটিআরসি দেখেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অপারেটরা গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি ঠকায়। অনেক সময় টাকা শেষ না হলেও মাস শেষ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে অব্যবহূত টাকা কেটে নেয়া হয়। ট্যারিফ নীতিমালা নিয়ে কাজ করছেন এমন এক কর্মকর্তা বলছেন, মোবাইলে কথা বলার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে গ্রাহকদের প্লেনের টিকিট, ফ্ল্যাট, কম দামে বড় হোটেলে থাকা, ডিসকাউন্টে কেনাকাটাসহ নানা প্রলভন দেয়া হচ্ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সকল শর্ত পূরণ করেও গ্রাহক বিজ্ঞাপনে ঘোষিত পুরস্কার বা সকল সুবিধা পান না।