*যদি আমার বাবা একজন ঘুষখোর হয় তবে আমি কি তাকে সংশোধন করতে চাইব নাকি সমাজের চোখে বাবাকে এক মহৎ মানুষ হিসেবে তুলে ধরতে চাইব?
*যদি আমার বন্ধু এক মাদকাসক্ত কবি হয় তবে আমি কি তাকে মাদক ত্যাক করার অনুরোধ করব নাকি ফেসবুকে তার লেখা কবিতা প্রচার করা শুরু করব?
*যদি আমার দাদা এক কুখ্যাত রাজাকার হয় তবে আমি কি তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলব নাকি ইতিহাস পালটে দিতে সচেষ্ট হব?
*যদি আমার ভার্সিটির ভাইটি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হয় তবে আমি কি তাকে শুধরে দিব নাকি মিডিয়ার কাছে তাকে রক্তদানকারী মেধাবী ছাত্র হিসেবে উপস্থাপন করব?
এই প্রশ্নগুলির উত্তরে যদি শেষের অপশনটি আমি বেছে নিই তাহলে আমার নিশ্চয়ই কোন মানসিক সমস্যা আছে। সমস্যাটি হলো- আমি আমার নিজের ত্রুটিকে ইগনোর করি, তা লুকিয়ে রাখতে চাই। আর লুকিয়ে রাখতে রাখতে তা একসময় বিশাল ত্রুটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাধি হলে যেমন তা লুকিয়ে রাখতে নেই, তেমনি নিজের ভুল বা ক্রাইমকে অস্বীকার করারও কিছু নেই।
ঢাবিতে RAG দেয়ার কিছু গ্রুপ আছে। এদের কাজ হলো সুযোগ পেলেই কারো উপর মানসিক বা শারিরিক প্রভাব খাটানো। RAG দেয়ার মধ্যমে এরা নিজেদের ভিতরে লুকিয়ে থাকা পশুটাকে একটু জাগিয়ে তুলে শান্তি খুজে পায়। এদের সম্পর্কে সবাই জানে, নতুন করে আমাকে কিছু না লিখলেও চলবে। আমি চাচ্ছি এইসব গ্রুপকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা করতে। সন্ত্রাসীরা যেমন নিজেদের পাওয়ারকে ব্যবহার করে অন্যের ক্ষতি করে তেমনি এই র্যা।গ দেয়ার গ্রুপগুলিও রাজনৈতিক বা ভিন্ন কোন পাওয়ার কাজে লাগিয়ে অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
অথচ এই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলিকে আমরা প্রতিহত না করে তাদের কার্যকলাপকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বীরত্ত্বের কাজ হিসেবে বলে থাকি। এদের খারাপ কাজকে খারাপ বলতে আমাদের জাত যায়। নিজে ঢাবির ছাত্র হয়ে কিভাবে আরেক ঢাবির ছাত্রের কুকীর্তি জনসম্মুখে স্বীকার করে নিব তা ভেবেই পাই না। বেশি মাত্রার একতাবোধ আবার আমাদের অন্ধ করে দিলো নাতো?
বহিরাগত কারো আচরনে ক্ষুব্ধ হলে তা কি যথাযথ কতৃপক্ষকে জানানো উচিত না? এখন কতৃপক্ষ ব্যর্থ হলে আমাদের উচিত আন্দোলন করে কতৃপক্ষের উপর চাপ দেয়া যাতে তারা এমন কোন ব্যবস্থা (সিসি ক্যামেরা, সিকুউরিটি গার্ড বা যেকোন কিছু একটা) নিতে বাধ্য হয় যা দ্বারা বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রন করা যাবে।
কতৃপক্ষ কার্যকর না তাই বলে আমি নিজেই আগাছা পরিস্কার করতে নেমে যাব! ব্যাপারটা এমন যে- ‘নাচ-গান করা হারাম, আমি চাই এসব বন্ধ হউক। তাই নিজেই নেমে পরলাম নাচ গান করা মানুষদের পিটানি দিতে’। এটা কি সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড নয়?
এখন সবাই যদি ক্যাম্পাসের আগাছা পরিস্কার করতে নেমে পিটানি শুরু করে আর এমন ঘটনা একটা, দুইটা, তিনটা করে শত-শত ঘটতে থাকে তখন কেমন এক আরাজক পরিবেশ তৈরি হবে একটু ভেবে দেখা দরকার।
লং-টার্ম চিন্তা করলে আমাদের Systematic Formal Way তে এগুতে হবে। মাইর-ধইর করে, র্যা গ দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া কোন সমাধান আনতে পারবে না। বরং আগাছা পরিস্কার করতে গিয়ে নিজেরাই আবর্জনায় পরিনিত হতে পারি।
রিজওয়ানুল মিথুন
ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
10/11/2014