এই কবিতাটি '৭১-এ এক বীর মুক্তিযোদ্ধার লেখা। এটি তৎকালিন জয়বাংলা পতিকোয় প্রকাশিত হয়েছিলো। এই কবি ও মুক্তিযোদ্ধার নাম অনু ইসলাম। তার সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানি না বলে লিখতে পারলাম না। তবে কবিতাটি পড়ে আমার নিজেকে ওই ক্রুর বাস্তবতায় আবিস্কার করেছিলাম। মনে হয়েছিলো একাত্তরের একটি বাস্তব চিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছি অসহয়ের মতো। আশা করছি আপনারাও প্রবল অনুভবে তুলে নেবেন যুদ্ধরত এক বীর যোদ্ধার অনুভূতির কাব্য।
নিচে কবিতাটি তুলে দিলাম.....
আমি
অনু ইসলাম
আমি হাঁটছি
গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে
পোড়া বারুদ আর বিস্ফোরনের
পিচ্ছিল পথ দিয়ে।
হাঁটছি একমুঠো জীবনকে
সাথে নিয়ে লাশের মিছিলের
আগে আগে।
দু'পকেটে বারুদ নিয়ে
আমি হাঁটছি
সাতদিন
সাতরাত।
আমার চারপাশে বারুদের গন্ধ!
আমার দু'চোখে বারুদ!
আমার নিশ্বাসেও বারুদ জ্বলে।
এইতো সেদিন আমার বৃষ্টি ভেজা ভাঙা জানালায়
রজনীগন্ধার সৌরভ ছড়িয়ে থাকতো
অথবা:
শুকে দ্যাখো
আমার দু'হাতের তালুতে
তোমার চুলের মাদকতা
আজো আমাকে নেশা ধরায়
ঐ দ্যাখো আমার
চোখের মুকুরে
কার ধর্ষিত মুখ
দ্যাখা যায়!
একি!
নগ্ন হাটুতে মুখ থুবড়ে
তুমি কাঁদছো,
তুমি কাঁদছো
একমুঠো বিষের জন্য।
এখন আর কেঁদোনা।
এইতো আকাঙ্খিত হায়নার
কাছাকাছি এসে গেছি।
এখন মেসিনগানের ট্রিগারটা
লাফিয়ে ওঠবে
যেমন করে ওরা তোমার ওপরে
লাফিয়ে পড়েছিলো;
এমনি করে হেঁটে হেঁটে
তোমার কাছে ফিরে যাবো...
তারপর তোমার কোলে মাথা গুঁজে
অথবা তোমার বিষের পেয়ালায় মুখ রেখে
ফিরে যাবো
রজনীগন্ধার সৌরভ ছড়ানো
ঝলসানো বাড়ীর
ভাঙা জানালার পাশে।