somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তার চোখে দেখি নীল আকাশ

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।

মীরাকে প্রথম দেখেছিলাম ঢাকা ক্লাবের বারে।সামনে একটা শূন্য গ্লাস নিয়ে বসে ছিলো । হয়তো এর আগেও মীরা এখানে এসেছে কিন্তু আমার চোখে পড়ে নি। মীরার পোশাকটা ছিলো অদ্ভুত। ঢাউস একটা কোট গায়ে চাপানো ছিলো ওর। তখন শীতকাল হলেও ঢাকা শহরে ঢাউস কোট পড়ার মত শীত পড়তে দেখি নি কখনো। তাছাড়া ক্লাবের ভেতরেও ছিল আরামদায়ক উষ্ণতা।


মীরার গায়ের রঙটা আপাতদৃষ্টিতে ফর্সা দেখালেও ওকে কিছুদিন পর আমার ফ্যাকাশে মনে হয়েছিলো , যখন ওকে প্রতিদিনই দেখতাম একটা শূন্য গ্লাস সামনে নিয়ে বসে থাকতে। ওর সামনে রাখা গ্লাসে কোনরকম পানীয় কেন থাকত না তা এক রহস্য বটে। কিন্তু সেটা জানতে চাওয়ার মত পরিচয় তখনো মীরার সাথে আমার তৈরি হয় নি। হয়তো ও আমাকে খেয়াল করেই দেখেনি এমনও হতে পারে। আর সেরকম সম্ভাবনাই বেশী। কারন ওকে আমার ভীষণ অমনোযোগী মনে হতো ওর আশেপাশের পরিবেশ নিয়ে। নিজের ভেতরেই বুঁদ থাকতে পছন্দ করত।

আমি আগে শুধুমাত্র শুক্র- শনি এই দুইদিন ক্লাবে গেলেও মীরাকে দেখার পর থেকে নিয়মিত সেখানে যেতে শুরু করলাম অফিস ছুটির পর। আসলে মীরাকে নিয়ে সত্যিকারের কৌতূহল কাজ করেছিলো সেদিন থেকে। যেদিন রবিবার সন্ধ্যায় বার ওপেন করার পর তখনো লোকজনের আনাগোনা তেমনভাবে শুরু হয় নি, সে সময়টার কথা বলছি আমি। মীরাকে দেখলাম ওর সেই ঢাউস কোটের ভেতর থেকে ছোট একটা মাম পানির বোতলের সাইজ কাঁচের বোতল বের করলো । পরে ভালোমত খেয়াল করতে দেখি ওটা আসলে একটা থার্মোফ্লাক্স। তারপর শুনি ও খুব নিচু স্বরে কাউকে অনুরোধ করছে ফ্লাক্সের ভেতরের দুধটুকু খেয়ে নিতে। আমাকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখেই ও ওর কোটটা গায়ের সাথে একটু টেনেটুনে বসলেও কেমন যেন চাপা স্বরে কাউকে ধমকাতে শুরু করলো যে ফ্লাক্সের দুধটুকু খেতে চাচ্ছিলো না তাকে। ওকে নীরবে অনুসরন করছিলাম বলে ও একটু আমার দিক থেকে ঘুরে আড়াল হয়ে বসলো যাতে আসল ঘটনা আমি না দেখতে পারি।


একদিন আমি ক্লাবে ঢোকার মুখে মীরার সাথে প্রায় মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলাম। তখন কাছ থেকে দেখেছিলাম ওর চোখগুলো ঘন নীল। ওর চোখের পাতার কাঁপন ছিলো বেশ দ্রুত।তবে আমার ধারণা ওর চোখের পাতায় সারাক্ষণ একটা তিরতিরে কাঁপন লেগে থাকে। ওর ত্বকটা ছিলো অদ্ভুত রকমের ফ্যাকাশে আগেই বলেছিলাম। ওর চিবুকের নীল রগগুলোও সেই ফ্যাকাশে রঙের কারণে দেখা যেত যা ওর থুতনির দিকে এসে অস্পষ্ট হয়ে মিলিয়ে গিয়েছিলো । সেদিন ক্লাব থেকে বেরিয়ে যাবার সময় ওর ভঙ্গিতে কেমন ব্যস্ততা ছিলো । তবে মীরা সেদিন চলে যাবার পর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই গুলো খেতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো কেমন মিইয়ে আছে কড়কড়ে করে ভাজা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই গুলো ।

২।

বস্তুত আমার তেমন কোনো বন্ধু- বান্ধব ছিলো না। মীরাকে দেখার পর থেকে ওকে অজান্তেই অনুসরণ করা আমার একটা রুটিন বিশেষ হয়ে গিয়েছিলো । তাই সন্ধ্যেটা আগের মত আর ম্যাড়ম্যাড়ে লাগতো না। তবে মীরার ঘন নীল চোখজোড়া দেখলে আমার মা নিশ্চয়ই বলতো - ' এই চোখ মানুষের হতেই পারে না। নির্ঘাত কোন ডাইনি বা জ্বিন- পরী মানুষের ছদ্মবেশ ধরে লোকালয়ে মিশে আছে আমাদেরই সাথে।' মা মীরার কথা বা ওর ঘন নীল চোখের কথা জানলে হয়তো আমার ক্লাবে আসাই বন্ধ করে দিতো । তবে মা'র এখন জানার কোনো সুযোগ নেই আর এটাই বড় স্বস্তির ব্যাপার।

ক্লাস ফোরে যখন পড়ি, আমার ক্লাসমেট নীলার সাথে একদিন ছুটির সময় গেট দিয়ে আমাকে বের হতে দেখে মা কেমন থমকে গিয়েছিলো ।নীলা সবে আমাদের স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছিলো । বাসায় ফেরার পথে সেদিন মা আমার সাথে সারা রাস্তায় কোনো কথা বলে নি। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে গুড নাইট বলে যাবার সময় কঠিন মুখে জানিয়েছিলো নীলার সাথে আমি যেন আর খেলা না করি।কারন ওর চোখ গুলো পাথরের। ও জ্বিন-পরীর বাচ্চা না হয়ে যায়ই না।

নীলা আমাকে একটা কাগজে একটা ছবি এঁকে দিয়েছিল যেখানে একটা পরী উড়ে যাচ্ছিলো যার হাতের মুঠোয় বন্দি ছিলো একটা ছোট ছেলের হাত। মা ঐ ছবিটা আমার স্কুলের ডায়েরির মাঝে ভাঁজ করা অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে আবিষ্কার করেছিলো নীলা আমাকে নিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে পরীর দেশে। তার কয়েকদিন পরেই মা আমাকে অন্য নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। আর সেই বয়সেই আমি প্রথম আমার এক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলি মায়ের জন্য।

মীরার ঘন নীল চোখ অনেকদিন পর আমাকে নীলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলো ।

৩।

আরেকদিন সন্ধ্যায় মীরাকে দেখলাম নিচু হয়ে টেবিলের পাশে কি যেন খুঁজছে। পুরো বারের মাঝে যে কয়টা টেবিল আর পর্দার আড়াল ছিলো সব জায়গায় কি যেন ও খুঁজছে। অনেকক্ষণ ধরে ওর এভাবে খোঁজাখুঁজি দেখে বললাম –
- কিছু হারিয়েছে নাকি?
- হু , হারিয়েছে।

কি হারিয়েছে জানতে চাইলে কেমন দ্বিধান্বিত হলেও বললো - আমার বিড়ালটা খুঁজছি।

মীরার সাথে অদ্ভুত অদ্ভুত সব ব্যাপার জড়ানো থাকবে এটাই যেন স্বাভাবিক ছিলো । মীরার বয়স কত হতে পারে তা অনুমান করার চেষ্টা বৃথা জেনেও ধরে নেই ওর বয়স চব্বিশ কিংবা পঁচিশ হতে পারে। এ যাবত ওকে পনিটেল করেই চুল বাঁধতে দেখেছি। তবে আজকে ওর পড়নে সেই কোটটা ছিলো না যেটাতে ওর মত আরো দুজন মীরা অনায়াসেই ঢুকতে পারতো ।

বাইরে গেলে বিশেষত ক্লাবের বারে কেউ বিড়াল কোটের ভিতর ভরে নিয়ে আসতে পারে তা অবিশ্বাস্য হলেও মীরার ক্ষেত্রে কেন যেন আমার স্বাভাবিকই মনে হতো ওর পোশাক-আশাক, জুতো , হাতের মোটা ব্যাঙ্গেলস , গোল বড় বড় এয়ার রিং আর নিজের মনে কিছু কিছু ব্যাপার ভেবে মুখ টিপে টিপে ওর হাসি দেখে। ও চোখে কাজল দিতো না। এরকম নীল চোখে কাজল মানায় কি না কে জানে!

- আজকে ছাড়া পেয়ে ঠিক আবার কোথাও হারিয়ে গেছে। কোটটা পড়ি নি তো তাই !

মীরার কথা শুনে বুঝতে পারলাম বিড়ালটার কথা বলছে। বলেই ও হতাশ হয়ে বসে পড়লো আমার টেবিলের সামনে। যদিও ওর এই হতাশ ভঙ্গী খুব অল্প সময়ের জন্যই ছিলো । আমি দেখছিলাম ওর হাতের লম্বা আঙ্গুলগুলো। ওর ফ্যাকাশে হাতের আঙুলে নখে লাগানো ছিল কালো কিংবা গাঢ় চকলেট রঙের কোনো নেইলপলিশ।

বিড়ালটা যদি আর খুঁজে না পাওয়া যায় কি হবে জানতে চাইলে ও বললো –
সমস্যা নেই। আগেও হারিয়েছিলো কয়েকবার। অ্যালেনপো’র বিড়াল তো। একটু রহস্যময়ই হয়।

অ্যালেনপো’র বিড়াল ওর কাছে কীভাবে এসেছিলো তা জানতে চাইলে হয়তো আরও এমন কোনো গল্প শুনতে হতে পারে আর আমার বিস্মিত চোখ দেখে যদি ও ভেবে বসে আমি এসব বিশ্বাস করছি না , তাই আমি চুপ করে থাকি। কিছু বলি না।

বিড়ালটা শুধু দুধ খেতেই পছন্দ করতো । হালকা গরম দুধ ওর পছন্দ। ওর এই কথা শুনে এবারো আমি কিছু বলি না। অপেক্ষা করি ওর পরবর্তী কাজ দেখার জন্য।

ওর কাঁধে ঝোলানো চামড়ার ব্যাগ থেকে একটা ছোট কালো রঙের নোটবুক বের করে দেখলাম ও কলম খুঁজছে ব্যাগ হাতড়ে। আমি কলম এগিয়ে দিতেই ও বললো -

- ভালই হয়েছে। কিরীটা হারিয়ে গেছে। এত এত কাজ জমে ছিলো । ওর জন্য কিছুই করা হচ্ছিলো না।

বুঝলাম ওর বিড়ালটার নাম কিরীটা। কিন্তু যে মেয়ে সন্ধ্যার পর অনেকটা সময় এখানে কাটায়, কোত্থেকে ও আসে, বিড়ালের জন্যও যে কারো এত এত কাজ জমে যেতে পারে আমি অবশ্য তার কিছুই জানতে চাই না। তবে ওর কাজ-কর্ম, ওর অঙ্গ-ভঙ্গীমা কিংবা ওর ভাবনার যে অংশটা আমার অজানা ছিলো তা কেন যেন না জেনেই আমার ভাল লাগতো । যান্ত্রিকতার ভিড়ে একরাশ নির্মল ছোঁয়া যেন মীরা।

ও কাগজে বড় বড় করে লিখলো –

“তোমার দ্রোহের পুষ্পরেণু
উড়িয়ে দাও
ছড়িয়ে দাও।

এই ঘর, চারদেয়াল
নিক্বণ ধ্বনি
সবই অপার শূন্যতা ।”


লিফলেট বিলি করতে হবে। কাগজে এই কথাগুলো ছাপিয়ে দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দিতে হবে। কোথায় ছাপাখানা আছে জানো তুমি ?

মীরার কথা শুনে আমি ছাপাখানার ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করি মাথা নাড়িয়ে। দেয়ালে কাগজ সাঁটালে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে ওকে জানালে ও বলে- রাতে রাতে কাজ সেরে ফেলবো । পুলিশরা তখন ঘুমায়। সমস্যা হবে না । বলে ও আবার মুখ টিপে একটু হাসলো ।

মীরা ঠিক কত কপি লিফলেট ছাপাবে কে জানে। নীলক্ষেতে গেলে হয়ত জানা যেতে পারে ওকে বলতেই ও ঝটপট ওর নোটবুকটা ব্যাগে ভরে উঠে দাঁড়ালো । ওর পিছু পিছু আমিও বের হয়ে আসি ক্লাব থেকে। দেখলাম গেটের কাছেই রাখা ওর মোটর সাইকেলে চড়ে বসেছে হেলমেট মাথায় লাগিয়ে।

- রাতের বেলায় বাইরে ঘোরাঘুরি করো না। বাসায় চলে যাও। পদে পদে কিন্তু বিপদ ঘুরছে।

যে মেয়ে আমাকে রাতের সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে সাবধান বাণী দেয় অথচ নিজে রাতের রাজপথে দেয়ালিকা সাটাবে বলে নীলক্ষেত ছুটছে প্রেসের সন্ধানে – সে মেয়েকে জানার জন্য একটা আকর্ষণ ভেতরে ভেতরে যে কারোই কাজ করবে।

আসলে আমি ছিলাম কারাগারে বন্দী একজন রাজপুত্র। মীরার মোটর সাইকেল দেখে আমার শৃঙ্খলিত দিনের কথা মনে পড়ে গেলো ।

মীরা আমার কাছে একটা স্বাধীনতার প্রতীকের মত ছিলো । ও যাবার সময় আমার নীল জেল পেনটা নিয়ে গিয়েছিলো । হয়ত মনের ভুলেই ব্যাগে ঢুকিয়েছিলো । প্রিমিও গাড়ির আরামদায়ক সিটে মাথা ঠেকিয়ে মনে হচ্ছিলো মীরার মত আমারও একটা মোটর সাইকেল থাকলে মন্দ হতো না।

৪।

দিনের বেলা মীরা ওর সময়টা ঠিক কি কি কাজে ব্যয় করে ওকে জিজ্ঞেস না করলেও বুঝতাম ওর মাথা দিনের বেশীরভাগ সময়টায় ব্যস্ত থাকতো নানান চিন্তায় যা সে প্রকাশ করতো তার কাজের মাধ্যমে। মাঝখানে ওকে দেখি নি কিছুদিন।

সেদিন অফিস থেকে বেরিয়ে যানজটে আটকে পড়ে ক্লাবে পৌঁছলাম দেরীতেই। তখন ঘড়িতে সময় প্রায় রাত সাড়ে আটটা। ধরেই নিয়েছিলাম আজও হয়ত মীরার দেখা পাবো না। নির্ধারিত টেবিলের সামনে যেতেই ওকে দেখলাম কেমন শুকনো মুখে বসে আছে।

হয়ত ও নিজ থেকেই বলবে চলমান কোনো ঘটনা কিংবা কোথাও কিছু ঘটেছিলো কিনা এর মাঝে যা ছিলো ওর বিগত কয়েকদিনের অনুপস্থিতির কারণ। তাই আমি চুপ করেই থাকি। আসলে পত্রিকায় যে নিউজগুলো চোখে পড়তো কিংবা টিভিতে কোনো প্রতিবেদন দেখতাম ঠিক একই ঘটনা মীরার চোখ দিয়ে দেখলে যেন আরও বেশী কিছু খুঁজে পাওয়া যেতো । এ যেন অনেকটা ঘটনার মাঝেও আরেক সুপ্ত কোনো ঘটনা খুঁজে পাওয়ার মত ব্যাপার ছিলো আমার কাছে।

ওকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো ভীষণ। জিজ্ঞেস করি - তুমি কি অসুস্থ ছিলে ? ক’দিন দেখি নি যে তোমায় !

- ফুলবাড়ি সীমান্তে গিয়েছিলাম গত পরশুদিন ঝুলন্ত বাংলাদেশকে দেখতে। আজ সকালেই ফিরলাম।বলে ও নীরব হয়ে গেলো আবার। অন্যদিনের চেয়ে ও যেন আজকে বেশী চুপচাপ ছিলো এমনই মনে হচ্ছিলো আমার। খেয়াল করলাম একটু পর পর ও জিভ দিয়ে ওর শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট আর্দ্র করে নিচ্ছিলো ।

ঝুলন্ত বাংলাদেশ দেখতে ওকে ফুলবাড়ি যেতে হয়েছে শুনে বুঝলাম নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে যা স্পর্শকাতর।

- আকাশটা গতকাল সন্ধ্যার পর গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে ছিলো , বুঝলে ! এমনকি একটা নক্ষত্রও ছিলো না। ভীষণ ঠাণ্ডা সে জায়গাটা – এটুকু বলে মীরা খুকখুক করে একটু কাশে। পকেট থেকে টিস্যু বের করে দেখলাম নাকও মুছে নিলো ।

- কোন জায়গাটা অনেক ঠাণ্ডা ? গরম কাপড় ছিলো না তোমার সাথে ?

- উফ গলাটা একেবারে শুকিয়ে গেছে আমার ! কিন্তু আজ যে আমার পানি পান করা বারণ।

মীরাকে জিজ্ঞেস করে করে ফুলবাড়ি সীমান্ত, ওর পানি পানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসব তথ্য বের করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অফিস থেকে ফেরার কারণে আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম। হালকা খাবারের অর্ডার দেবার জন্য উঠতে চাইলে মীরা জানায় ওর জন্য যেন না দেই।

আমি আবারো অপেক্ষা করি মীরা আরও কিছু বলে কিনা শোনার জন্য। যান্ত্রিকতার এই সমাজে মীরা ছিলো আমার কাছে একটা প্রতিবাদের নাম। যদিও আমি ছোটবেলা থেকে শৃঙ্খলিত জীবনযাপন করেছি বলেই চলে এসেছিলাম এক অসুস্থ সিস্টেম এর মাঝে , যেখানে মানবিক আবেগ বা মুল্যবোধ যাই- ই বলি না কেন তাকে গন্য করা হত চরিত্রের দুর্বলতা হিসেবে। সে সিস্টেম থেকে বের হবার পথগুলো ছিলো রুদ্ধ কিংবা তা ছিলো আমার অজানা।

মীরার মত হতে ইচ্ছে করে ভীষণ। কিন্তু তথাকথিত সিস্টেম থেকে বের হতে পারি না বলে বুকের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাসের এক জোড়া বিষাদপাখি উড়িয়ে দেই।

মীরার গায়ের লাল-নীল পাঞ্জাবীটা দেখালাম আজ কেমন দোমড়ানো , কুঁচকে থাকা অবস্থায়। হয়তো গত রাতের পরনের পোশাকটাও সে বদলায় নি কিংবা ভুলে গেছে বদলে নিতে ।

- আজকের দিনে ফেলানিকে মেরে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছিলো । ও চার ঘণ্টা ঝুলে থেকে পানি পানি করে , পানি না পেয়ে ও মরে গিয়েছিলো ।আমি কেমন করে পানি পান করি বলো ! আমার গলা যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে !

ফেলানি তো মারা গেছে। তবুও ও ঠিক কি কারণে ফুলবাড়ি গেলো বুঝতে পারি না আমি। তবে ওর কয়েকদিনের অনুপস্থিতির কারণ, ওর অসুস্থতা এবং বিষাদগ্রস্ততা , ফেলানির জন্য তার আজকের অনশনের সব কারণ আমার কাছে এতক্ষণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর বুঝতে পেরে বাইরের ঝলমলে ঢাকা শহর, বারের আলোকসজ্জা এই মুহূর্তে আমার কাছে কেমন অন্ধকার গুহার মত মনে হচ্ছিলো । ক্ষিধেটাও মরে গেলো হঠাৎ করেই।

- ছবি আঁকতে পারো ? – মীরা জিজ্ঞেস করে আমাকে।

আমি মাথা নাড়িয়ে না জানালেও মীরা মুহূর্তেই আবার আগের মত চঞ্চল হয়ে ওঠে। বলে-

- শোনো, পুরো ক্যানভাসটা হবে কচি সবুজ রঙের। মাঝখানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। আর রক্ত রঙে লেখা থাকবে

“ মুমূর্ষু স্বপ্নদের বাঁচতে দাও !
স্বপ্ন বাঁচবে , মানুষ বাঁচবে !
চল জীবনের গান গাই তবে … … … “


মীরার এই ব্যাপারটাই আমার ভালো লাগে সবচেয়ে বেশি। ও ভীষণ আশাবাদী জীবনের ব্যাপারে যেখানে আমার চোখে মৃত শালিক স্থির হয়ে থাকে অহর্নিশি।

আজ আমি তাহলে যাই। ক্যানভাসটা বানাতে হবে। দেখি চারুকলার সামনে কাউকে পাই কি না বলতে বলতে মীরা উঠে দাঁড়ায়।

- ক্যানভাস আঁকানো শেষ হলে এটা নিয়ে কোথায় যাবে ? ও উত্তর না দিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেলো যেখানে ওর মোটর সাইকেল রাখা।
এত রাতে কে ওর জন্য চারুকলায় বসে থাকবে ক্যানভাসে রঙ মাখাতে আর শ্লোগান লিখে দিতে কে জানে!

মীরা হয়তো ডুবে আছে ওর লাল- সবুজ প্রত্যাশার অথৈ জলে যেখানে ওর স্বপ্ন আছে !

৫।

টানা দশ দিন পর মীরাকে বারে আবার দেখলাম। চোখের নিচের কালি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো । কালো একটা শর্ট পাঞ্জাবী আর জিন্স পরনে ছিল ওর। বরাবরের মতই শূন্য একটা গ্লাস ওর সামনে ছিলো । একদিন ওকে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে শূন্য গ্লাসের রহস্য কি।

- কি সব খবর ভালো তো ?
- হুম, ভালো । শুধু … … … নাহ। থাক, কিছু না।
- নীলক্ষেতে গিয়েছিলে পোস্টার ছাপাতে ?

প্লেট থেকে বাদাম তুলে চিবুচ্ছিলো মীরা। বলে -

দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছি তো । কিন্তু কিছু কিছু পোস্টার কে যেন খামচে তুলে নিয়েছে।

দেয়াল থেকে পোস্টার খামচানো যায় নাকি জানতাম না। ওকে বলি- একলা এতগুলো পোস্টার লাগালে কি করে ?
- কি আজব , একলা একলা লাগাবো কেন !
- তাহলে ?

ও অবশ্য আমার উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করে না। কথার মাঝখানে থেমে যাওয়া , কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর না দেয়া , চুপ করে থাকাটাই ছিলো ওর স্বভাব।তাই ধরে নেই হয়তো কোনো একদিন নিজ থেকেই আবার বলতে শুরু করবে।ওর কথা কোন জায়গা থেকে শুরু আর কোথায় গিয়ে হঠাৎ থেমে যাবে বোঝা বড় মুশকিল।

- ক’দিন ধরেই ঘুম হচ্ছে না বুঝলে ? আমার মনে হচ্ছে পুরো ঢাকাবাসী … বলে থেমে গেল ও। আসলে কেউই ঘুমোতে পারছে না ক’দিন ধরে। জানুয়ারি মাস কিনা।বলতে বলতে হাই তোলে মীরা।

ওর ঘুম না হওয়াটাই চোখের নিচে কালি পড়ার কারণ বুঝতে পারি আমি। ওর ঘুম না হবার সাথে ঢাকাবাসীর ঘুম না হবার এবং জানুয়ারি মাসের সম্পর্ক কি তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই অবশ্য।কারণ ওর অদ্ভুত চিন্তার সাথে আমার ভাবনার অনেক ব্যবধান হবে এটা আমি জানতাম।

- রোজ রাত বারটার পর মিরপুরের বধ্যভূমি থেকে অনেক শ্লোগান ভেসে আসে। শব্দে আমি ঘুমোতে পারি না। বলে হাই তুলতে তুলতে ওর মাথাটা টেবিলে ঠেকায় ।

আমি মীরার পরবর্তী বাক্য শোনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ধারণা করে নেই মীরার বাড়ি মিরপুর কিংবা এর আশেপাশের কোথাও হবে। অবশ্য ও সেখানে বা মিরপুরের আশেপাশে না থাকলেও অবাক হবো না।কারণ ওর ইন্দ্রিয়শক্তির প্রসারতা এবং গভীরতা নিয়ে ততদিনে আমার ধারণা হয়ে গিয়েছিলো ।

স্বাধীনতার এত বছর পার হবার পরেও বধ্যভূমি থেকে শ্লোগান ভেসে আসতে পারে এবং মীরার কান যে সে শ্লোগান এড়িয়ে যেতে পারে না , আমি ওর রাত জাগা মলিন মুখ দেখে বিশ্বাস করেছিলাম। যদিও আমার গড়ে ওঠা বোধ , বিশ্বাস আর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মীরার অনেক তফাত ছিল কিন্তু ওর কোনকিছুর উপর গভীরভাবে বিশ্বাসের মায়াবী নীল হাতছানিকে আমি উপেক্ষা করতে পারতাম না।

- কিসের শ্লোগান , শুনি নি তো আমি !
- দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘুমাও নাকি , বলে মীরা।

মীরা না জেনে বললেও কথাটা মিথ্যে ছিলো না। দরজা-জানালা ভালমত আটকেই আমি ঘুমাতাম হালকা নীল রঙের একটা ঘুমবাতি জ্বেলে। চার বছর বয়স থেকেই সাহসী হবার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলো আমার মা ,যাকে সবসময় আমার কারারক্ষী মনে হত আমার রাজপ্রাসাদের।গাঢ় অন্ধকারে ভয় পেতাম বলে অনেক অনুনয় করে একটা নীল ঘুমবাতি পেয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত। একা একা সেই বয়সে বিছানায় ঘুমানোকে আমার মা সাহসিকতার ব্যাপার মনে করতো কোন দৃষ্টিকোণ থেকে তা আজও আমার কাছে দুর্বোধ্য।

- ফুলের তোরণ কোথায় বানায় জানো ? জানতে চায় মীরা।
- শাহবাগের দিকে খোঁজ নিতে পারো । কেন কী করবে ?
- ৩১ তারিখে ভোরে ওগুলো পৌঁছে দিতে না পারলে খুব মন খারাপ করবে তারা। হাতে একেবারেই সময় নেই , বুঝলে ?

কারা মন খারাপ করবে জিজ্ঞেস করার আগেই মীরা বলতে থাকে নিজ থেকে এ ক’দিন মিরপুরের বধ্যভূমির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলাম। কেমন নোংরা নোংরা হয়ে আছে সেখানটা। ফুলের গন্ধ পাওয়া যায় না। ভাবছি তাদের শ্লোগানকে শ্রদ্ধা জানাতে কয়েকটা ফুলের তোরণ দিয়ে আসব।
- কাদের তোরণ দিতে চাচ্ছ ?
- জানুয়ারির ৩১ তারিখ ’৭২ এ মিরপুর স্বাধীন হয়েছিলো । তাই জানুয়ারি এলেই তাদের কাছে যাই আমি। বলে উঠে দাঁড়ায় মীরা। ওকে আজ ভীষণ অন্যমনস্ক লাগে আমার।

আমিও মীরার দেখাদেখি বাড়ি যাবার প্রস্তুতি নেই।বাড়ি তো নয় যেন কারাগর আমার। অবশ্য কারারক্ষী দেহ ত্যাগ করেছে বছরখানেক হয়েছে। যদিও আমি নিশ্চিত নই মীরা এখন ওর বাড়িতেই যাচ্ছে কিনা।

৬।

মীরাকে অনেকদিন ধরে দেখে আসছি বলেই ওর করা কাজ অন্যদের চোখে অদ্ভুত ঠেকলেও আমার কাছে স্বাভাবিক বলেই মনে হতো । ব্যাপারটা হয়ত এমন যে , আমি যা করতে পারি নি, নিয়ম আর অনুশাসনের ভেতর দিয়ে চলতে হয়েছে বলে চিন্তা-ভাবনার গণ্ডি অর্থ- বিত্তে আটকে গিয়েছিলো আর সাথে অর্জন করেছিলাম কিছু মুল্যবান সার্টিফিকেট।

আচ্ছা , আমি কি কখনো মীরার মত করে কারো কষ্ট অনুভব করতে পেরেছি কিংবা ওর মত দেখার চোখ আমার মাঝে তৈরি করতে কি পেরেছিলাম ! পারিনি বলেই হয়ত উন্মুখ হয়ে ছুটে যেতাম ক্লাবে। মীরার বাসার ঠিকানা, যোগাযোগের নাম্বার চাইলেই হয়ত মীরা বা অন্য কোনও মাধ্যম থেকে বের করা যেতো । কিন্তু সেটা করলে হয়তো একজনের ব্যক্তিগত আড়ালের অসম্মান করা হবে। অবশ্য আমি নিজেও কখনো অনুভব করিনি মীরাকে চাইলেই খুঁজে পাবার উপাদানগুলো হাতের নাগালে পেতে। তবে মুখে না বললেও ঢাকা ক্লাবের এই জায়গাটি হয়ে উঠেছিলো আমার আর মীরার বসার জায়গা। দুজনেই জানতাম এখানে এলেই দেখা হবে আমাদের।

মীরা আমাকে নিয়ে কখনো ভেবেছে কি না জানি না আমি। আর মীরার মত একজন মেয়ে আমাকে নিয়ে ভাববে সে প্রত্যাশাও করি নি। ওর মত মানুষ ব্যতিক্রম এবং দুর্লভ। তাই মীরা ছিলো আমার দেখা একমাত্র ব্যক্তি যার কাছে এলে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলা যায়, একটা সবুজ ভূখণ্ড আঁকা যায়, মুমূর্ষু স্বপ্নেরা চোখ মেলে তাকায়।

একদিন কথায় কথায় মীরা জানায় ইদানীং রাতে ও খুব ভয়ে ভয়ে থাকে। ওর চোখের দিকে তাকালে দেখতে পাই সত্যিই সেখানে আছে বিগত রাতগুলোর আতংক। বাইরে হয়তো এতক্ষণে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমেছে যা বারের উজ্জ্বল আলোতে বোঝা যাচ্ছিলো না ভেতরে বসে। আমি চেষ্টা করলাম মীরার রাত্রিকালীন ভয়কে নিয়ে সম্ভাব্য কারণগুলো খুঁজে বের করতে, যদিও জানতাম আমার জন্য তা হবে দুরূহ কাজ। আমার সাধারণ চিন্তা- ভাবনার পথের সাথে ওর চিন্তা - ভাবনার ছিলো অনেক দূরত্ব।

- প্রায় রাতেই ভূমিকম্প হয়। একেবারে রাত যখন অনেক গভীর সে সময়ে । তখন আমি দৌড়ে আমার রুম থেকে ছাদে গিয়ে দেখেছি অন্যরাও কি আমার মত টের পেলো কি না ভূমিকম্প, কারো ঘরেও কি লাইট জ্বলে উঠলো কি না। কিন্তু অবাক হয়ে দেখি কেউ টেরই পায় নি । আচ্ছা তুমি কি টের পাও ভূমিকম্প হলে?

মীরা যখনই আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করে আমি কখনো ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। ভূমিকম্প হলে যে কেউ মধ্যরাতে দৌড়ে ছাদে চলে যায় তা কখনো আমার চিন্তায় আসে নি। ছাদের প্রসঙ্গ আসাতে ওকে বলি –

- ভূমিকম্পের সময় মানুষ খোলা মাঠ বা রাস্তায় চলে যায় শুনেছি। কিন্তু … বলে আমি চুপ থাকি। হয়ত ছাদ নিয়েও ওর কোনও যুক্তি তৈরি থাকতে পারে।

- ছাদ তো খোলা জায়গায়ই। আমি তো আমাদের বাড়ির সাত তলায় যে চিলেকোঠার রুমটা আছে সেখানে থাকি।যেদিন যেদিন ভুমিকম্প হয়, হোক তা মৃদুভাবে সেদিন রাতে আমি আমার রুমে ঘুমাতে পারি না। উঠোনেই ঘুমাই। মানে শুয়ে থাকি।

- উঠোন মানে !!

- এত বিশাল একটা ছাদ কি উঠোন হতে পারে না ? দিন দিন বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা কি রকম ভূমিকম্প প্রবণ হয়ে উঠছে খেয়াল করেছো ? কোথাও মাটি নেই। কবে যে ইট- পাথরের নিচে চাপা পড়ে মরবো কে জানে! এখনো কত কাজ যে বাকি।


এসব বলতে বলতে দেখলাম ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত চেহারা আর ওর অগ্রীম অসমাপ্ত কাজের কথা চিন্তা করে ওর চোখে বিষণ্ণতা ভর করেছে। যদিও জানি ওর এই বিষণ্ণতা ক্ষণস্থায়ী। নিশ্চয়ই কিছুক্ষণের মাঝে ও আশাবাদী হয়ে উঠবে আবার নতুন কোনও চিন্তা বা স্বপ্নের বাস্তবায়ন নিয়ে।

আমার ওকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে ও চিলেকোঠায় থাকে কেন কিংবা ওর পরিবারের বাকি সদস্যরা কোথায়। মীরা কি ছোটবেলা থেকেই এমন অদ্ভুত ছিলো ! আশ্চর্য নীল চোখের এক মেয়ে মীরা।

- জানো, গতকাল ভোরে ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম!

মীরার বলার ভঙ্গীতে বুঝতে পারি ওর কথা শেষ হয় নি। আরও কিছু বলতে চাচ্ছে হয়তো ও আমাকে। ধরে নেই ওর ভয়ের কারণগুলোও অদ্ভুতই হবে।সারাদিন মীরার এত এত কাজ, রাতেও কাজ থাকে। কি এতো কাজ যে ও করে কারো কাছে কোনও প্রত্যাশা ছাড়াই, কে জানে! যে মেয়ে রাতেও ঠিক ভাবে ঘুমায় না আবার ভোরেও উঠে পড়ে, কি করে পারে সে এত সব ! এতো কিছু জানতে ইচ্ছে করলেও তা জানতে না চেয়ে মীরাকে বলি –

- ভয় পেয়েছিলে কেন ?

- ভোরে ঘুম ভেঙ্গেই আমি ছাদের পূর্ব দিকটায় গিয়ে দাঁড়াই। সূর্যের প্রথম রশ্মিটায় অদ্ভুত একটা নরম ছোঁয়া আছে জানো ? পবিত্র হওয়া যায় সে রশ্মিতে। তাহলে সারাদিনে কোনো পাপ – অশুভ শক্তি তোমাকে ছোঁবে না। আমাদের বাড়ির পূর্ব দিকেই একটা কবরস্থান আছে। গতকাল ভোরে দেখলাম সামনের দিকটায় একটা নতুন কবর হয়েছে আর দুইজন সাদা শাড়ি পড়া মহিলা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। অথচ এর আগের দিনও কবরটা ছিলো না। ছাদ থেকে যেটুকু দেখা যায় তাতে কবরস্থানের একটা পাশ আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। কোন কবরটার পাশে গাছ আছে, কোন কবরটা ইট- পাথরে বাঁধাই করা, কোনটায় বাঁশের বেড়া দেয়া সব। তাই ঘুম ভেঙ্গেই ধাক্কার মত খেয়েছি ভোরে সাদা শাড়ি পরিহিত মহিলা দুজনকে দেখে।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে মীরা বললো – আমি জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না। হয়তো বলবে আমি চোখে ভুল দেখছি।

মীরা বানিয়ে বানিয়ে মনগড়া কিছু বলতো না তা আমি বুঝতাম। ছেলেবেলায় আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখতাম যা বড় হবার পরেও আমার পিছু ছাড়ে নি। দেখতাম একটা কবর ভাসতে ভাসতে আমার আমার জানালার কাছে চলে এসেছে। কবরের মুখটা থাকত খোলা। তা দেখে আমি ভয় পেয়ে দৌড়োতে থাকতাম। ক্লান্ত হয়ে যখন থামতাম পিছু দেখতে, সে ছিলো আরও ভয়াবহ দৃশ্য। স্রোতের সাথে সাথে সাঁতার কেটে আমার দিকে এগিয়ে আসছে অগনিত মৃত মানুষ, যাদের চোখের কোটরে ছিল বীভৎস গর্ত । দেখে মনে হয় কেউ খুবলে তুলে নিয়েছে।

দিনের পর দিন একই স্বপ্ন। তাই আমার পায়ের কাছের জানালাটা সব সময় বন্ধ রাখতাম যেখানে রোজ রাতে এই খোলা কবরটা ভাসতে ভাসতে চলে আসতো। যদিও আমার বাসার আশেপাশে কোনো কবরস্থান ছিলো না। কিন্তু ভয়াবহ এক কবরভীতিতে আমার শৈশব – কৈশোর ছিলো আচ্ছন্ন।

আমার অন্ধকারগুলো মীরাকে বলতে ইচ্ছে করে না।এগুলো বরং অজানাই থাকুক ওর কাছে। যদিও আমার কোনো ব্যাপারেই ও জানেনি এ পর্যন্ত বা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেনি। হয়ত কাউকে যে কিছু জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হয় তাই ওর জানা নেই। এমনকি আমার নামটা পর্যন্ত ও জানেনি এখন পর্যন্ত।

তার বদলে আমি কৃতজ্ঞ হতে থাকি দিন কে দিন মীরার কাছে। খুব ধীরে ধিরেই নিজের অজান্তেই আমি মীরার সবুজ স্বপ্নগুলোতে উজ্জীবিত হয়ে উঠছিলাম , যা ছিল গণমানুষকে ঘিরে।

৭।

ব্যস্ততায় যেমন করে আমার দিন কাটছিলো কর্মক্ষেত্রে তেমনি তার পাশাপাশি নিত্য কোনো চমকপ্রদ খবর কিংবা সারাদিনের মানসিক ক্লান্তি, জড়তা কাটাতে অফিস শেষের পর মীরার ভাবনার অবগাহনে আমার আসক্তি বাড়ছিলো দিন দিন। বিশেষ করে ওর মোটর সাইকেল চালানো দেখে আমিও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম একটা মোটর সাইকেল নিজের জন্যও কিনে নিবো । যদিও কেনাটা আমার জন্য সমস্যার ছিলো না। কিন্তু একটা অভ্যাসের গণ্ডিতে আটকে বড় হয়েছিলাম বলে চেনা-জানা আরামকে ছেড়ে পা ফেলতে ছিলো আমার যত দ্বিধা। দূর থেকে মীরার পাখির মত স্বাধীন জীবন, ওর মুক্ত চেতনার সত্ত্বাকে দেখে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলাকে নিজের কাছেই একেক সময় কাপুরুষতা বলে মনে হতো ।

নানান কথায় একদিন মীরাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ও ক্লাবের বারে এসে সামনে শূন্য গ্লাস নিয়ে কেন বসে থাকে। ও শুনে হেসে ফেলেছিলো । বলেছিল- জানো না তুমি ?

কি অবাক কাণ্ড! মীরার কাজকর্ম বা ওর ভাবনার জগত নিয়ে কি আমার জানার কথা! ওর এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমি বোকা বোকা হাসিতে সপ্রতিভ হতে চেষ্টা করি।

মন্দের সংস্পর্শে থেকেও নিজের ভেতরের শুভ শক্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় – এরকমটাই বাবা সব সময় বলতো আমাকে। প্রতিমুহূর্তে বাবার এই কথাটা আমার মনে বাজতে থাকে- জানায় মীরা। পুরো জগতটাই দেখো চলমান। অথচ এই বারে আসলে এখানের উজ্জ্বল আলো, কিছু রঙিন পানীয় ছাড়া আর কিছুই এখানে চলমান নয়। চিন্তা-ভাবনারা এখানে ছুটে যায় না, আমি মনঃসংযোগ করতে পারি এখানে বসে। বাইরের জগত এখানে অনুপস্থিত। ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে ও এগুলো আমাকে জানাচ্ছে না , বরং নিজেই নিজেকে বলছে যেন! ওর বাবার সম্পর্কে জানার অদম্য ইচ্ছেকে সে মুহূর্তে চেষ্টা করি নিয়ন্ত্রণ করতে। ধরে নেই ওর বাবাও এ ক্লাবের একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন ! আচ্ছা ছিলেনই বা ভাবছি কেন ।

- মন্দ বলতে কি বোঝাচ্ছো মীরা ?
- রঙিন পানীয় , ষড়যন্ত্র ইত্যাদি !

মীরার অনেক কিছুই আমার কাছে ছোঁয়া না ছোঁয়া, ধরা অধরার মাঝে থেকে যায় !

সেদিন ওর বলা ছোট কিন্তু শক্তিশালী , প্রানবন্ত কথাটা আমার সমস্ত সন্ধ্যা, রাতকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখে। নিজের অজান্তেই আমি মীরার এই কথায় প্রভাবিত হয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তের দিকে যেতে থাকি, যা আমার ভেতরটাকে সত্যিই আলোকিত করে তুলবে।

রোজকার অনলাইন পত্রিকা কিংবা পত্রিকার হার্ড কপিতে সংবাদের যে শিরোনাম আমি দেখি তা যে শুধুমাত্র চোখ বুলিয়ে রেখে দেবার জন্যই নয়, বরং নিজের বিবেক এবং শক্তির সামর্থ্য অনুযায়ী সমাজের অনিয়ম পরিবর্তনের জন্যও তা মীরাকে দেখে বুঝতে শিখেছিলাম নতুন করে। যখন ওকে বলতাম –

- মীরা , তুমি কি পারবে একা এক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে? আর কি হবে প্রতিবাদ বা মিছিল করে!
আমার এই হতাশাজনক চিন্তার মাঝে আশার আলো ছড়াতেই যেন ও উৎসাহ নিয়ে বলে উঠতো –

- কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে, তাই না? তবে সেই মানুষটা কেন আমি হবো না ?

একেক সময় আমি অবাক হতাম যখন জানতে পারতাম ও প্রায়ই পত্রিকা বা টিভিতে দেয়া মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজন বিজ্ঞাপন দেখে হাসপাতালে ছুটে যেতো । তখন মনে পড়ে যেতো আমারও , একবার ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় কলেজে লায়ন্স ক্লাব থেকে এসেছিলো রক্তদান কর্মসূচি নিয়ে। সেদিন আমাদের ক্লাসের মাঝে একমাত্র সিমিন ছাড়া আর কেউ রক্ত দেয়নি। লজ্জায় মাথা নিচু করে চলে এসেছিলাম সেদিন।

আমার রক্তকণিকার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছিলো যে যান্ত্রিকতা বা স্বার্থপরতার বিষবাষ্প, মীরাকে দেখে তা আজ আমাকে জীবনের প্রতি, একটা সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা ফিরে পাবার প্রতি আগ্রহী করে তোলে – যেখানে এতটা দিন আমি একাই দাঁড়িয়েছিলাম। অন্ধকারটা সরে গিয়ে যেন চারপাশটাকে ফের আলোকিত করে আমার মাঝে ধীরে ধীরে মীরা যেন কোনো স্বপ্ন প্রোথিত করে দিচ্ছিলো যা আমি ভুলতে বসেছিলাম।

২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে এ ভাবনায় আহ্লাদিত হয়ে কথা প্রসঙ্গে যখন মীরাকে বলছিলাম এবার ২১ তারিখ অনেক সভা, প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সরকার এবং মিডিয়া , বিভিন্ন অরাজনৈতিক দলগুলো তখন মীরা বলে –

- ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর এলেও আমাদের যুদ্ধ কি সত্যিই শেষ হয়েছে বলে মনে করো ? রোজ কিছু না কিছু নিয়ে আমাদের তো লড়াই করতেই হচ্ছে, তাই না ? আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই আলাদা আলাদা করে একটা যুদ্ধ আছে। আর সেখানে দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে লড়াই অনেক বড় একটা লড়াই যা আজো প্রবাহমান।

আমি নিশ্চিত ’৭১ এর মত একটা লড়াই এখন যদি আবার আমাদের দেশে হয় মীরা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমার মনোভাব টের পেয়ে ও জানায়-
- ’৭১ এর লড়াইটা ছিলো আমাদের জন্য সম্মানের। বিশ্ববাসীও এখন তা জানে। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো লড়াই হলে তা হবে আভ্যন্তরীণ লড়াই, ক্ষমতা দখলের লড়াই। যা হবে লজ্জাজনক। দেখো না, বাংলাদেশের কিছু কিছু বিভাগে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের নাম শোনা যায় , যারা বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ড থেকে আলাদা হতে চায় কারন বর্তমান সরকার ব্যবস্থা দ্বারা তারা সন্তুষ্ট নয় বলে।

মীরার মত এভাবে ভাবতে না পারলেও ওর ভাবনাতে একঘেয়ে জীবনের সমাজব্যবস্থার আর্ত চিৎকার শুনতে পাই। মীরা জানায় , গতকাল ও ওর বাইক নিয়ে বের হয় নি। রাত বেশী হয়ে যাবার কারণে রিকশা না পেয়ে যখন রাতের পথ ধরেই ও বাড়ি ফিরছিলো তখন সম্ভবত শহরের সমস্ত কুকুরগুলোও ঘুমিয়ে পড়েছিলো । রাত্রির ঐ অপার্থিব নিঃসঙ্গতায় তখন ওর মনে হচ্ছিলো পৃথিবীটা মনে হয় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে আর ও ছিলো একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা ফাঁকতালে জীবিত ছিলো সেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া পৃথিবীতে। নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো এই ভেবে হয়তো ওর দ্বারাই হতে পারে নতুন পৃথিবীর সূচনা – যেখানে বেঁচে থাকার মাঝে থাকবে না কোনো গ্লানি, যার যার কাজের জন্যও থাকবে জবাবদিহিতা।


একদিন মীরাকে দেখে আমি সত্যিই অনেক চমকে উঠি। প্রতিদিনের দেখা চেনা-জানা মীরা নয় যেন ও। ভীষণ খুশি দেখাচ্ছিলো ওকে। এর আগের দিনই আমাকে বলে রেখেছিলো ও সকালে আসবে আমার সাথে দেখা করতে, জরুরী কি কাজ নাকি আছে আমার সাথে। সকাল ছয়টায় ও ক্লাবের গেটে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সবুজ-লাল শাড়ি আর চোখে গাঢ় টানা কাজল যা ওকে আগে কখনো দিতে দেখি নি কিন্তু ওকে বেশ মানিয়ে গিয়েছিলো । দিনের ঝলমলে আলোয় দেখা আজকের মীরা যেন অন্যরকম যাকে এতদিন জিন্স আর পাঞ্জাবীতেই দেখে এসেছি। কিন্তু আশেপাশে ওর মোটর সাইকেলটি দেখতে পেলাম না। বরং ওর সাথে ছিলো অসংখ্য গ্যাস বেলুন এবং বাংলাদেশের ছোট ছোট পতাকা।

আমার জিজ্ঞাসু চোখ দেখে ও বুঝতে পারলেও আমার কৌতূহল না মিটিয়ে বললো ওর সাথে আমাকে হাঁটতে। ছোট ছোট একেকটা লাল-সবুজ পতাকায় বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা আর দু’পাশে দুইটা করে গ্যাসবেলুন সুতোয় বাঁধা দেখলাম। এগুলো নিয়ে মীরার পরিকল্পনা কি হতে পারে তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেও ওর পাশাপাশি হাঁটতে থাকি । সকালের এই নির্জন রাস্তায় মীরার পাশে হাঁটতে হাঁটতে ওর চুড়ির টুং টাং আওয়াজ আমাকে একটা ভালো লাগা দিচ্ছিলো এই চুড়ির আওয়াজকে হয়তো মীরা বলবে ‘ রণসঙ্গীত’। রোজকার একঘেয়েমি অভ্যাসের তাড়নায় অফিসে যাওয়ার বদলে আজকের এই সকালটাকে অনায়াসেই আমি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় একটা সকাল বলতে পারি। যদিও জানি না বাকি সময়টা কেমন যাবে মীরার সাথে কিংবা আর কি কি বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

আমরা শহীদ মিনার চত্বর, শিখা অনির্বাণ, অপরাজেয় বাংলা, সংসদ ভবনে গিয়ে পতাকাসমেত গ্যাসবেলুন উড়িয়ে এক সময় হাজির হই জাতীয় স্মৃতিসৌধে। এরকম বেলুন ওড়াতে দেখে শেষ পর্যন্ত মীরাকে জিজ্ঞেস করি আজ বিশেষ কোনো দিন কিনা। ও বলে –

- তুমি শুধু বেলুনই দেখলে বুঝি ? আর কিছু দেখোনি এর মাঝে? বলে মীরা হাসতে থাকে মিটিমিটি। আকাশপানে ছেড়ে দেয় হাতে রাখা বেলুনের ঝাঁক।ও বলে আজ অপারেশন ফ্লাইং ফ্ল্যাগস ডে।

১৪ আগস্ট কেন ফ্লাইং ফ্ল্যাগস ডে হল আমার সত্যিই জানা নেই কিংবা বাংলাদেশে এই দিবস পালন করা হয় কিনা তাও। এদেশে তো দিবসের আর শেষ নেই , যা শুধু পালনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে দেখেছি । কাজে পরিণত হয় কমই।

আজকের এই দিনে ১৯৭১ সালে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধারা খুব মজার একটা কাজ করেছিলো যা সাহসিকতারও বটে। পাকিস্তানিরা যখন নিশ্চিত আমাদের দেশে শোভা পাবে তাদের তারকাখচিত পতাকা এবং তারা যখন ব্যস্ত ছিলো তাদের স্বাধীনতা দিবস পালনে তখন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা রাতে রাতে পতাকা বানিয়ে ১৪ তারিখ সকালে গ্যাস বেলুনের সাথে আকাশে উড়িয়ে দেয়। সেদিন বীর প্রতীক হাবিবুল আলম, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী আর তার পরিবার এই পতাকা বানাতে অনেক অবদান রেখেছিলো । এসব বলতে বলতে মীরা ’৭১ এর সেই দিনগুলোতে চলে যায় যেন।

আমি জানি না বাংলাদেশে কেউ এই দিনটির কথা মনে রেখেছে কিনা। বাইরে সূর্যছায়ার ভেলকিবাজিতে ক্রমশ রোদের তেজ বাড়তে থাকলেও আমি অনুভব করতে থাকি সমুদ্রের হিংস্র কোমল ঢেউ যেন আমার পায়ে আছড়ে পড়ছে। পাশেই তাকিয়ে দেখি মীরা উবু হয়ে যেন কি লিখছে সাদা ক্যানভাসে। ওর ব্যাগে ও মনে হয় সারা দুনিয়া নিয়ে হাঁটে। ওর পাশে একসময় যেন আমি ধীরে ধীরে মোমবাতি হয়ে যাই।প্র খর সূর্যের তাপে আমিও গলে গলে ঝরাতে থাকি মীরার ক্যানভাসে আগুন রক্ত –

“ শুনতে কি পাও অতৃপ্ত পাখির আর্তনাদ ? দেখো , কাঁদছে মেধাবী শহর, বিবস্ত্রমান বালিকা, পুরুষের পাথরসম চোখ।

ফিরিয়ে দাও গেরস্থের এক চিলতে উঠোন। ছড়াতে দাও জ্যোৎস্নার অপার্থিব আলো।”


মীরা স্বপ্ন দেখে যেখানে দিগন্ত জুড়ে আজো সূর্য ওঠে, আকাশভরা তারার মেলায় জেগে ওঠে অনির্বাণ প্রেম, যেখানে এখনো শেষ হয়ে যায় নি মনুষ্যত্ব। তবে কেন মানুষ সেখানে সুখের আশায় বুক বাঁধবে না, কেন এখনো পৃথিবী কঁকিয়ে উঠবে ব্যথায়, কেন কান পাতলে শুনতে হবে পৃথিবীর মিহি সুরে কান্না ! মীরার মত আমিও স্বপ্ন দেখি শেষ হবে প্রাচীন বঞ্চনার দিন।

মীরার সাথে সাথে আমিও এখন দেখতে থাকি আকাশে শুধুমাত্র গ্যাসবেলুনই উড়ছে না; উড়ছে শোষণ আর অসাম্য থেকে মুক্তি পাবার শেষ সংকল্পে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তিরিশ লাখ শহীদের রক্তাক্ত স্বাক্ষর। উড়ছে বাংলাদেশ।

( সমাপ্ত )

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৩৭
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×