somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত ডায়েরি অথবা ছিন্ন ছিন্ন প্রলাপ

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাইলেই এ গল্পের সমাপ্তি বা শুরু কোনও গল্পের নিয়মে আমি বলে যেতে পারবো না। তবে কেউ তার স্মৃতি হাতড়ে যেসব কথা লিখে গিয়েছে তারই অংশবিশেষ চাইলে আমরা পড়তে পারি, নিজের মতো করে ধরে নিতে পারি কারো প্রতিবিম্ব কিংবা খেয়ালি কোনও মননের চিত্র। এ গল্প নিছক একটা সাদামাটা গল্প, হয়তো গল্পের পেছনের একটা গল্প।

১।

" প্রিয় ডায়েরি,
আজ খুব একটা বাজে স্বপ্ন দেখলাম। আমার অপছন্দের বিষয়গুলোই স্বপ্নে কেন যেন ঘুরে ফিরে আসে, যা আমার কাছে অশুভ ইঙ্গিত বলেই মনে হয় কিংবা আমাকে আমৃত্যু তাড়া করেই যাবে এমন।

আজ স্বপ্নে দেখলাম মনি আমাকে ফোন করেছে। বারবার বলছে - আপনি আপনার মা'কে বলেন আমাদের টাকা শোধ করে দিতে। না হলে আমরা কিন্তু ভীষণ রেগে যাবো। আর আপনার মা কেন আমার মা'কে ফোন করে? একদম নিষেধ করবেন কিন্তু। আমিও ভীষণ ফুঁসে উঠি, বলি - আমার মা' তো তোমার মায়ের নাম্বারই জানে না। এখানে বাজে কথা বলতে এসো না। তুমি জানো না আমার মা আর বাবা দুজনেই মরে গেছে?

কিছুক্ষণ পরেই আবার স্বপ্নে দেখলাম আমি আপাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। আপা আর দুলাভাই আমাকে বকাবকি করে তাদের বাসা থেকে বের করে দিলো। আমার কাছে টাকা ছিলো না, কীভাবে বাসায় ফিরবো সে টেনশনে রাস্তায় আমি খুব ঘামছিলাম।

ডাক্তার বলেছিল যখন কোনও স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাবে, আমাকে সাথে সাথে লিখে রাখতে। আজকে স্বপ্ন দুইটা মনে আছে বলেই লিখে রাখলাম। আসলে আমি মনিদের খুব ঘৃণা করি। তাই ওরা আমার স্বপ্নে বারবার আসুক চাই না। আমাকে রক্ষা করো প্লিজ এসব বাজে মানুষদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা থেকে।

বিদায়।"

২।

জানো ডায়েরি,

আমার আজকাল সকালে ঘুম থেকে একেবারেই উঠতে ইচ্ছে করে না। রাত্রি জাগরণের কারণে যে এমন হচ্ছে তাও না। সকালের ঘুমটা বরাবরই আমার প্রিয়। কবে যে এমন দিন আসবে সংসার মেইন্টেইনের জন্য আমাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবে না। আশা করি শীঘ্রই আমার সে দিন আসবে।

আজকাল আমার দুঃস্বপ্নের মাত্রা ভীষণ বেড়েছে। ডাক্তারের কথা মতো সন্ধ্যে বেলাতেই স্লিপিং পিল খেয়ে নেই কিন্তু সে ঘুম যদি ভোরের স্বপ্নে আসে, কষ্ট তো লাগবারই কথা, নাকি ?

তিন দিন ধরে আমার বাঁ ভ্রু খালি লাফাচ্ছে। কী জানি কী হয়। ভয় লাগে যদি কোনও বিপদ আসে। আমি আবার আজকাল এসবেও বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। হাহাহহাহা এরই নাম আবার আধুনিকতা তবে !!!
আজ তাহলে বিদায় বন্ধু ! "

৩।

ডায়েরি তোমার একটা নাম দেয়া দরকার, কি বলো ? তবে তোমার কোনও নাম নেই বলে এ নিয়ে দুঃখ করো না, আমাদের এই পৃথিবীতে নামহীন অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই যেমন ধরো আমি, তুমি কী বলতে পারবে আমার নাম কি ? যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি আমার নাম না বলছি ততক্ষণ আমিও তোমার মতোই নামহীন একজন আর তোমার, আমার দুজনের স্ট্যাটাস এখন পর্যন্ত এক।

আজ সারাদিন ঘুম ঘুম পেয়েছে। বড় একটা কাজের ডীল করতে বেরিয়েছিলাম। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক এখন, বাংলা হয়তো আশ্বিনের শুরু। গরমটাও পড়েছে ভীষণ, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। ইলেক্ট্রিসিটি যাওয়া মাত্র চিড়বিড়ে ধরণের একটা গরম শুরু হয়ে যায় সাড়া শরীরী জুড়ে।
অনেক দিন হয়েছে গরমের জন্য আরাম করে ঘুমোতে পারি না। সামনের গরমেই একটা এয়ার কুলার কিনে ফেলবো। টাকা জমানো দরকার। হাতে টাকা এলেই আঙুলের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কী যে করি?
বলো তো কী করি এখন ?

৪।
বললি না তো তোকে কী বলে ডাকবো ? আমার তো ডাকার মানুষ নাই। উড়ে গেছে।

প্রিয় নামহীন কেউ,

হাতে টাকাপয়সা না থাকলেই বোধহয় বিপদ -আপদ আর্থিক বিপর্যয়গুলো হুড়মুড়িয়ে আসে। এই যেমন ধরো একজনকে কিছু টাকা লোন দিবো ভেবেছিলাম কিন্তু আজকেই আমার মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেলো সমুদ্রে।কয়দিনের জন্য এসেছিলাম একটু বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে। এজন্য আজকেই মোবাইলটা পানিতে পড়তে হবে? কর্পোরেট জগত থেকে তো পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম কয়েকদিনের জন্য। পকেটের টাকা ফুরিয়ে গেছে।

উদাস উদাস লাগছে খুব।

৫।

আজকের সকালটা আমার কাছে খুব স্পেশাল বুঝলে নামহীন ডায়েরি ?

যদিও স্পেশাল হবার বা ভাবার মতন তেমন বিশাল কিছু ঘটে যায়নি আমার নিস্তরঙ্গ জীবনে। আজ ঘুম ভাঙতেই দেখি বৃষ্টি হচ্ছে। তুমুল বৃষ্টি। মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো। কিছু কিছু সকাল থাকে না, এমনিই ভালো লাগে, অকারনেই? পাখির মতো উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করে। মনের ভেতরের লুকোনো যা সব বিগত অভিমান, অবরুদ্ধ আবেগ সবই যেন বাঁধন ছিঁড়ে আজ বেরিয়ে পড়তে চাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যাদেরকে ঘৃণা করতাম মনে প্রাণে, আজ তাদেরকেও ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছে করছে। বাপ্পি, ইরফান, সজল, মৃধা সব দোস্তোদের কথা খুব মনে পড়ছে। যাহ্‌ আজ তোদেরকেও মাফ করে দিলাম। শুধু তোরা জানতে পাবি না এটাই আফসোস।

আমার বিছানাটা জানালার পাশেই। বৃষ্টির ছাঁট জানালার ফাঁক গলে কী করে যে আমায় ভিজিয়ে গেলো একটু একটু করে তাইই ভেবে ভেবে হয়রান হচ্ছি। নিজের ভারশুন্য, লুকিয়ে থাকা আনন্দময় এক সত্ত্বাকে ভোরের এই স্নিগ্ধতায় আবিষ্কার করে কেমন এক বিশেষ ভালো লাগায় আপ্লুত হচ্ছি। ইচ্ছে করছে জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখি আজীবন। ততদিন কী বেঁচে থাকবো ? ভয় লাগে ভীষণ।

৬।

বারে বারে বিশ্বাস করা যার স্বভাব, সে যতই আরেকজনের কাছে বা বাইরের মানুষের কাছে কিল চড় খাক না কেন, তার স্বভাব বদলাবে না। আমি আমার কথাই বলছি। এই আমি এখনো মানুষকে বিশ্বাস করি, প্রতারিত হই। জানি না মানুষ কেন এমন? দীপন ঠিকই বলতো, দোস্তো, তুই মানুষ কে নিয়ে এতো সরল ভাবনা কেন ভাবিস এই যুগে এসে বল তো ? রাগ বা বিস্ময় বা হতাশা থেকেই হয়তো এসব কথা ও বলতো।

গতকাল বিশাল একটা অঙ্কের টাকা কোনও দলিল দস্তাবেজ না করে আরেকজনের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। বারবার একই ভুল আমাকে দিয়ে কেন হয় জানি না। আমি কেন মানুষকে বিশ্বাস করি ? নিজের কাছেই নিজে লজ্জায় নুয়ে যাচ্ছিলাম। আমি জানি মানুষ এতো খারাপ না কিন্তু আমার সাথেই কেন যেন ঘুরেফিরে খারাপ টা ঘটে। খারাপ মানুষের বোধোদয় হোক। আমি জানি জীবন অনেক সুন্দর, বেঁচে থাকা সুন্দর। হতাশায় মরে যাওয়া আমার চাওয়া নয়।

প্রিয় ডায়েরি তুমি ভালো থেকো। আমার অনুপস্থিতে দুশ্চিন্তা করো না।

৭।

সুপ্রিয় ...

বারবার তোকে বলেছিলাম প্রেমে পড়িস না। তোর প্রেমে পড়বার ক্ষমতা অসীম। এই ইট, পাথর, নদী, পাখি এমনকি আস্ত একজন রক্তমাংসের মানুষের প্রেমেই তুই হুটহাট পড়িস, একেবারে যাকে বলে যখন তখন।
জানিস কেউ কেউ তোদের নিয়ে বলে নারীরা নাকি ফুলের মতো। আসলে ঠিক ফুল নয়, রেণু। বাতাসে বাতাসে ওড়ে শিমুলের মতো। যখন-তখন, সময়ে-অসময়ে, কখনোবা রঙিন পাপড়ি মেলে। আমার ত্বকে বাতাসের তোড়ে কখনোবা স্পর্শ করে যায় রেণু, শিমুল, ফুল। এসবই আমার বিভ্রম। চোখ খুলে দেখি আসলে এসব কিছুই না, সামনে দাঁড়িয়ে আছে জলজ্যান্ত কোনও নারী।

এই যে শ্রাবণ দিন এখন, তুই বলিস শরৎ, কাশফুল, ঝাঁঝালো রোদ, তোর আরেকটি পরিনতিহীন প্রেমের দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং এক ফোঁটা অশ্রু। কিন্তু আমি বলি শ্রাবণ জল।

আমি এখনো বৃষ্টি হয়ে আছি বলে তুই পরিণতি লাভ করেছিস আমার স্মৃতিতে। তাই " ফিরে আসবি" এই শব্দদুটোকে আমি অভিবাদন জানাবার অপেক্ষায় থাকি।

===
মানুষ স্মৃতিতে বাঁচে। হয়তো এ গল্পের মানুষটিও কারো না কারো স্মৃতিতেই বেঁচে থাকবে আজীবন, অমলিন।

উৎসর্গ - মামুন রশিদ ভাইকে, উনি প্রায়ই আমাকে বলেন নুহা সিরিজ লেখার ফাঁকে যেন অন্য লেখালেখিও চালাই এবং ব্লগে পোস্ট দেই। অনেকদিন পর গল্প লেখার চেষ্টা করলাম ডিয়ারডায়েরির মতো করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:২০
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

= দাওয়াত বা কোন অনুষ্ঠানে খাবার গ্রহণের সময় যে কটি বিষয় আপনার বিবেচনায় রাখা দরকার =

লিখেছেন এমএলজি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:২৩



১. দ্রুত খাবার গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা কিছুটা ধীর বা প্রলম্বিত করার চেষ্টা করুন যাতে অন্য সবার বেশ আগেই আপনার খাওয়া শেষ হয়ে না যায়।

২. কোন আইটেম খুব সুস্বাদু বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। অন্য দেশে চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসের অর্ডার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২০




এবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডারের একটি অংশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের সবচেয়ে বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ভারতের উদ্বেগ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


ভালোভাবেই শেষ হলো সনাতনীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা কিন্তু দুর্গাপূজা ভালো ভাবে শেষ হওয়ায় অনেকেই বড্ড হতাশ হয়েছে; পূজা নিয়ে তারা ট্রামকার্ড খেলতে চেয়েছিল কিন্তু ট্রামকার্ড খেলার পরও সফল হতে পারেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

উফ্! কি দারুণ!! WOW!!!

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬

চোখটা সবে যেই বুঁজেছি, ডাকল হুলো 'মিঁয়াও'।
মাথায় এলো আজিব টপিক - আরি সাবাশ! WOW!!

ল্যাংটাকালে 'আমার বই'-য়ে,
আঁকল ছবি কোন আঁকিয়ে?
তালগাছেতে উলটো ঝোলে কানাবগির ছাও।
সেটাই ছিল প্রথম অবাক, প্রথম বলা - WOW!!

আরও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×