somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাপ্তি জানা নেই

২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ - হামিম কামাল ( এটা লেখা শুরু করেছিলাম ২/১০/১২ এ। অনেকদিন ঝিমুচ্ছিলো ড্রাফ্‌ট এ এবং ভুলেই গিয়েছিলাম শেষ করা হয়নি এই লেখাটা। লেখাটা তোর জন্য ছিল হামিম। আমি তোর মতো এত ভালো লিখিয়ে না বরং তোর লেখার অনেক ভক্ত। শুভ হোক তোদের আগামীর পথ চলাও।)

অলস দুপুরগুলোতে টিকটিক করে কলিংবেল বেজে উঠলেই মনে হয় হৃদপিণ্ডটাও কেমন যেন ভেতরে ভেতরে সাথে একটু দুলে উঠে। গতমাসে পাঁচটা সিভি পোস্ট করলাম। এর মাঝে তিনটা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আর দুইটা অনলাইনে। গতবছর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরপরই বিডিজবস ডট কমে একটা আইডি রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। তারপর থেকেই শুরু হলো কখনো অনলাইনে কিংবা কখনো কুরিয়ারে সিভি পাঠানো। ফ্রেশদের ব্যাপারে কেন যে চাকরিদাতাদের এতো অনীহা কে জানে! চাকরি সোনার হরিণ হলেও অজান্তেই কখন যে নিজের ভেতরে জয়েনিং লেটার পাওয়ার স্বপ্নও বুনতে শুরু করেছিলাম নির্দিষ্ট করে এখন আর দিন তারিখ মনে পড়ে না। বাস্তবকেও ঘোর মনে হয়। এ বছর শেষ হতে আর মাত্র দু’ মাস বাকী। সাথে আমার বেকার জীবনেও আরেকটি বছরের হিসাব বাড়বে ।

যদিও প্রতিটা ইন্টারভিউ ভালো হয় চমক সৃষ্টি করা রেজাল্টের কারনে কিন্তু ইন্টারভিউ শেষে ব্যর্থতার গোপন শ্বাসভারী হয় ধীরে ধীরে । কারণ নির্দিষ্ট একটা তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষার পর উচ্চ আইকিউ সম্পন্ন এই আমি কিন্তু ঠিকই বুঝে ফেলি দ্বিতীয়বার আমাকে আর ইন্টারভিউ বোর্ডে ডাকা হবে না। ধ্যাত এই পোড়ার দেশে মগজ বেচে কি আর হবে! মহুয়াকে প্রায়ই এটা বলে ক্ষেপাই যে ওর বাবা আমাদের বিয়ের সময় যৌতুক না দিলে মহুয়াকে বিয়েই করবো না । আর এ কথা শুনলে অবধারিতভাবে মহুয়ার কিল , থাপ্পড় আমার পিঠে দুমাদুম পড়তে থাকে। মহুয়া আমার সহপাঠিনী এবং জীবনের একজন বিশেষ মানুষ হিসাবে ভেতরটাও দখল করে নিয়েছে। ওর হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকুরী পেয়ে যাওয়াটা অতটা জরুরী ছিলো না ধনবান পিতার কন্যা হিসাবে যতটা দরকার ছিলো এবং আছে আমার । মহুয়া তাই বেশ ভালো একটা জব করলেও আমার জন্য ও মরমে মরে থাকে এবং আমার চাকরী না পাবার দায়ভারকে নিজের বলেই মনে করে যেখানে ও নিজেও জানে জীবিকার পথ অতটা মসৃণ নয়।

এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমে কেমন যেন চোখটা বুজে আসতে চাইছে। যদিও এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ নেই তবে আমাদের পাঁচ তলার এই ভাড়া বাসাটায় আলো – হাওয়ার কমতিও নেই।মহল্লার শেষ প্রান্তে আমাদের বাসা বলে পেছন দিকটা কোলাহল মুক্তই থাকে। অন্ধগলির বাসা যাকে বলে। রান্নাঘরেও কিছু কাজ পড়ে আছে ওগুলো করা দরকার বুঝতে পারলেও নিদারুন আলস্যে শরীর এই মুহূর্তে ছেয়ে আছে। আরাম চাইছে যেন দেহ অথচ সারাদিন ক্লান্ত হবার মতো কাজ না করলেও যে কতখানি গ্লানিতে আচ্ছন্ন থাকি তা বিছানায় পিঠ ঠেকানো মাত্রই টের পাই। মা সকালে কলেজে যাবার আগে বলে গিয়েছিলো পেঁয়াজ কেটে রাখতে , মাংস ডিপ ফ্রীজ থেকে বের করে নামিয়ে রাখতে যাতে বরফটা কেটে যায় আর যদি পারি ডালটাও যেন রেঁধে ফেলি। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যা খাচ্ছি তার অনেক কিছুই এখন রান্না করতে শিখে গেছি। বেকারত্ব আমাকে সময়ের প্রয়োজনে রন্ধনবিদ্যায়ও পারদর্শী করেছে। হাহাহা। আমার মা এই ৫২ বছর বয়সেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে শ্রম দেন সংসারে একটু আরাম দিতে আমাদেরকে। মা একটা বেসরকারি কলেজের ইংরেজি শিক্ষিকা । কলেজে ক্লাস নেয়া শেষে কয়েকজন কলিগ মিলে একটা কোচিংও চালাচ্ছে দিব্যি। খুব কষ্ট হয় এভাবে মা’ কে পরিশ্রম করতে দেখলে। এইতো কিছুদিন আগে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম। সন্ধ্যা তখনো তার রঙ ছড়ায়নি আকাশে। মা’ কে দেখলাম গলির মুখ ধরে হেঁটে হেঁটে আসছে ধীর পায়ে। দৃশ্যটা দেখে আমার বুকটা হু হু করে উঠলো মায়ের জন্য। সিগারেট শেষ না করেই তাড়াতাড়ি নীচে নামলাম। মা অবাক হলেও গেটের সামনে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু বললো না । সারাদিন ক্লাসে আর কোচিং এ লেকচার দিতে হয় বলেই বাসায় ফেরার পর তাকে আর বেশী বাক্য খরচ করতে দেখা যায় না কৌতূহল মেটাবার জন্য। চারতলা পর্যন্ত সিঁড়ি ভেঙে মা’কে বললাম – একটু দাঁড়াওতো মা । কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই মা’ কে কোলে নিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করলাম। মা’ কে বললাম –

- মাগো তোমার ছেলের উচ্চতা ৫ ফিট ১১ হলে কি হবে গায়ে তো মাংস নাই । না হলে ৫ তলা পর্যন্ত কোলে করেই আনতাম তোমাকে। দিন দিন তো শুকিয়ে আরও ছোট হয়ে যাচ্ছ। তো ছাত্র – ছাত্রীরা মান্য গন্য করে তো !

মা ‘কে কোলে নেয়ার কারনে লজ্জা পেলেও কপট রাগের যে ভঙ্গি করছে আমি নিশ্চিত আমার ছোঁয়ায় মায়ের সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে আর যে প্রশান্তি তার মনে এসেছে তা বহুদিন কোথাও পায়নি।

মায়ের কথা মনে হতেই আলসেমি গা ঝাড়া দিয়ে ফেলে রান্নাঘরের দিকে গেলাম। পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে পানিতে ভিজে রাখলে নাকি পেঁয়াজের ঝাঁজটা একটু কমে, এটা অবশ্য মা’র থিউরি। কিন্তু দেশী পেঁয়াজ কেটে আমার একটুও ভালো লাগে না , কেমন যেন ছোট ছোট। কিন্তু মা বলে দেশী পেঁয়াজ ছোট হলেও স্বাদের দিক থেকে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের চেয়ে অনেক ভালো। তরকারিতে তাড়াতাড়ি গলে যায়। একবারতো আমাকে ভার্সিটিতে না পেয়ে হঠাৎ করেই না জানিয়ে বেলা ১২ টার দিকে মহুয়া আমাদের বাসায় এসে হাজির । আমাকে রাঁধুনি হিসাবে মায়ের পাশে দেখে ওর সে কি মুখ ভেংচি। অবশ্য আমার একটু লজা লজ্জা ভাব কাজ করলেও মহুয়াকে কিছু বলি না। মহুয়ার মুখে দুষ্টুমির ছাপ থাকলেও এর সাথেও অন্য একটা আভা লেগে আছে দেখতে পাচ্ছিলাম। মেয়েরা রান্নাঘরে তাদের স্বামীকে মাঝে মাঝে সঙ্গী হিসাবে পেলে যে অখুশি হয় না তা মহুয়ার চোখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিলো তার ভবিষ্যৎ স্বামীকে নিয়ে। সেদিনের দুপুরটা মহুয়া- বাবা- মায়ের সাথে বেশ ভালোই কেটেছিলো ।

খাওয়া-দাওয়ার পর আমি আর মহুয়া বারান্দায় এসে বসেছিলাম চায়ের কাপ হাতে। ও বারান্দায় রাখা ছোট মোড়াটায় বসে কাপে চুমুক দিয়ে খুব সুখী একটা ভাব নিয়ে বললো –

- জানো জামিল , তোমাদের বাসায় এলে আমার আর নিজের বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছা করে না।

- হুম

- তোমার রুমের ফ্লোরে পেতে রাখা বিছানাটায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে

- হুম

- আরে, কি হুম হুম করছ সেই কখন থেকে । কি ব্যাপার আবার সিগারেট ধরালে কেন ?

- সমস্যা কি ? আমাকে তো আর চুমু খেতে আসছ না তুমি !

- ধ্যাত , তোমার খালি ফাজলামি কথাবার্তা । আমি গেলাম এখন বাসায়।

- চলো এগিয়ে দিয়ে আসি মোড় পর্যন্ত।

- থাক দরকার নেই। এগিয়ে দিতে গিয়ে আমার বাসার গেট পর্যন্ত না দিয়ে তুমি ফিরবে না আমি ভালোই জানি। পরে পায়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরতে হবে তোমাকে ।

রাজ্যের কথা ভাবতে ভাবতে আমার পেঁয়াজ কাঁটা , ভাত আর ডাল রান্না শেষ হলো। খুব চায়ের তৃষ্ণাও এর মাঝে হয়ে গেছে। ডাইনিং এ বাবার পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। রান্নাঘর থেকেই একটু গলাটা উঁচিয়ে বাবার কাছে জানতে চাইলাম তাকেও চা দিবো কিনা। বাবার আবার উঁচু স্বরে কথা বলা ভীষণ অপছন্দ। আর এ কারণেই হয়তো বাবা রান্নাঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো কিছু বাণী দান করতে।

- আমারতো আর তোমার মতো রাত জাগার প্র্যাকটিস করতে হয়না যে বেলায় বেলায় চা পান করতে হবে। রাত জাগার অভ্যাস বাদ দাও। পড়াশুনাটা দিনের বেলা কিংবা সন্ধ্যায় করলেও তো পারো।

- ছাত্রজীবন তো শেষ করলাম বাবা। আরো পড়তে বলো ?

- বসেই যেহেতু আছো ইংরেজিটা ভালোমতো প্র্যাকটিস করো , বুঝলে ? কাজে দিবে ভবিষ্যতে।

- ভাবছি ফ্রেঞ্চ শিখবো

- ফ্রেঞ্চ শিখবে কেনো ?

- দেখি ফ্রান্সে যাওয়া যায় কিনা । এই দেশেতো আর চাকরী জুটবে না তাই ওখানে গিয়ে কুলির কাজ করলেও অন্তত তোমাদের মান – সম্মান খোয়া যাবে না খুব একটা – বলতে বলতে বাবাকে চা এগিয়ে দিলাম।বাবা আবার শব্দ করা ছাড়া চা খেতে পারে না। আর ঘরে চা খেলে পিরিচে ঢেলে বাচ্চাদের মতো চা ঠাণ্ডা করেই খায়।

- তা ফ্রান্সে যাবে ভালো কথা। কোনো কাজই ছোট না । তবে যে দেশেই যাও না কেন আমার কাছ যদি বলো ৫০০ টাকা তাও কিন্তু পাবে না। নিজের টাকায় পারলে যাও । তোমার পড়াশুনা শেষ করানো আমার দায়িত্ব ছিল, করিয়েছি । এখন নিজের জীবিকার পথটা নিজেই খুঁজে নাও।

- আচ্ছা বাবা দেখছি কি করা যায়

- স্টুডেন্ট পড়িয়ে খুব একটা খারাপ ইনকামতো করছো না তুমি । তা জমেছে না কিছু ?

- বাবা ১০ লাখ টাকা জমাতে আরো দশ/ পনেরো বছর লাগতে পারে আমার।

- ফাজলামো করছ নাকি আমার সাথে ? মাগরিবের আজান হয়েছে । যাও নামাজে দাঁড়াও। আর সন্ধ্যে হয়ে গেলো তোমার মায়ের একটা খোঁজ নিয়ে দ্যাখো রাস্তায় আবার কোনো সমস্যা হলো কিনা ।

বাবা নামাজের প্রস্তুতি নিতে চা শেষ করে রান্নাঘর থেকে বের হলো। এই আমার বাবা – খুব নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলা একজন মানুষ। বিএডিসিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছে দীর্ঘদিন। দু’ বছর হলো অবসরপ্রাপ্ত । শুনেছি যারা রিটায়ার্ড হয়ে ঘরে থাকে তারা নাকি অল্প কথা বলতেই পারে না। কিন্তু বাবা দিন দিন স্বল্পভাষী হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন মা বাসায় থাকে না , আমি বাসাতে থাকলেও নিজের রুম আর ছাত্র পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকি বলে বাবার সাথেও তেমন একটা কথা হয় না আমার। আসলে বাবার ভেতরে এখন কেমন অনুভব রিটায়ার্ড করার পরে জানতে ইচ্ছা করে।

যাই দেখি মা’ কে একটা ফোন দিতে হবে। রাস্তায় আবার জ্যামে পড়লো কিনা কে জানে । আজকে কি যে এক অলসতায় পেয়ে বসেছে আমাকে কে জানে। বাপ্পিকে পড়াতে যাবার কথা সন্ধ্যা ৭ টায়। এবার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে। কিন্তু ইচ্ছে করছে না যেতে। টিচিং প্রোফেশনটা বড্ড বোরিং ব্যাপার। মা যে কী করে বছরের পর বছর এই কাজটা করে যাচ্ছে! আমার তো এই কয়েক বছরেই বিরক্তি ধরে গেছে। জীবন আর সংগ্রাম মিলেমিশে আজ একাকার ! হাহাহা!

মাথার নীচে দু’হাত রেখে পায়ের উপর পা রেখে খুব আয়েশি ভঙ্গীতে জীবনটাকে একটা মার্বেল বানিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলাম । আজ ছুটির দিন কিনা । হাহ হা হা … আমার প্রতিটা দিনই ছুটির দিন। বেকারত্বের র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো আমার জীবনটা এখন ভারিক্কি একটা বাংলা ডিকশনারির মত হয়ে গেছে। কত শব্দ চাও বল ? পাতার পর পাতা মুখস্থ বলে যাবো। আলসেমি দূরে ঠেলে ডায়েরি নিয়ে বসি, লিখতে থাকি

" যখন আমার সমুদ্রে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হয় তখন মহুয়াকে নিয়ে চলে যাই। এই যাওয়া সেই যাওয়া নয় । ক্যানভাসে সমুদ্রের ছবি আঁকি , রাশি রাশি ঢেউয়ের মাঝে ভেসে যেতে থাকি দুজনে। ক্যানভাসটা মাথার পাশেই রাখি অনুভবটাকে ভালমত জড়িয়ে নিতে। পাহাড়, বৃষ্টি, গ্রামে ঘোরা সব অনুভবই আমি এভাবেই নেই। খুব মজার পদ্ধতি তাই না ?

মহুয়া যখন তার কলিগদের সাথে গ্রাফিক্সের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আর আমি তখন উদাস হয়ে মনে মনে লিরিক আর সুর নিয়ে স্বপ্ন বুনি। সুর যখন বসাবো কিংবা ফাইনাল করবো ঠিক তখনই দেখি ১০ মিনিটের জন্য সময় চুরি করে তুমি দৌড়োতে দৌড়োতে আমার বাসার সিঁড়ি ভেঙে খুব ক্লান্ত হয়ে আসো আমার হতাশাগুলোর মাঝে রঙের ছোঁয়া দিতে। আমি শুধু দেখি তোমায়, দেখতেই থাকি। তুমি কি বোঝো কতটা বিষণ্ণতায় কাটে আমার প্রতিটি পদক্ষেপ ? তুমি কি জানো স্বপ্ন সাজাতে যে রঙ ভেতরে নিয়ে আসতে হয় তার ভেতর আমার কেবল এখন একটাই রঙ তৈরি হয় আর তা … সাদাকালো ।

আসলে আমি হতাশ নই । আমি আমার সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে নিচ্ছি এই জীবনে। যখন আমি ব্যস্ত হয়ে যাবো কাজ নিয়ে তখন তো আমার এই অনুভবকে আমি ধরে রাখতে পারবো না। আমি আঁকতে পারবো না, আমি গানে সুর দিতে পারবো না , শেলি কিংবা কিটস এর কবিতাও পড়া হবে না। খুব ইচ্ছে করে তোমাদের ঠোঁটে জমা নানা রঙের স্বপ্ন ছুঁয়ে নিয়ে এসে পেখম মেলতে কিন্তু আমিতো তোমাদের মত নিঃসঙ্গহীনতা জীবনের মানুষ না । তাই পারি না। তোমাদের ছোট ছোট নিঃসঙ্গ মুহূর্তের পাশে দাঁড়িয়ে তোমাদের সুখী দেখি তাতেই আমার ভাল লাগা । ক্ষেত্রবিশেষে তা লিখে রাখতে রাখতেই শেষ হয়ে আসে আমার দিনপঞ্জির পাতা।"


আমার গান , আমার ছবি আঁকা , আমার ভাল রেজাল্ট , আমার কবিতা – গল্প লিখার প্রতিভা এসব আসলে মহুয়াকে বিয়ে করার জন্য কোনও যোগ্যতার ক্যাটাগরিতেই পড়ে না । তবুও কেন যে ও আমায় এত ভালোবাসে আমাকে! আমার এখন মন আর খারাপ হয় না। শুধু রাতের পর রাত তাকিয়ে থাকি অপলক ; ভোরের হলুদ আলো দেখতে। আমার পড়াশুনার ব্যাকগ্রাউন্ড বা এই ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের কোনো জবেই আমার মন আকৃষ্ট হয় না। আমার মন পড়ে থাকে সোমেশ্বরী নদীর স্রোতে, এলকেমিস্টের দেশে, কখনো কখনো ইচ্ছে করে ধু ধু মরুভূমির যে মায়াময় সৌন্দর্য সেখানেই জীবন কাটিয়ে দেই, কবি সাহিত্যিক হয়ে যাই। কবি মানেই যে বাবরী চুল, আলুথালু বেশ, কুঁচকে থাকা মলিন পাঞ্জাবির বুকের কাছে তরকারীর ঝোল লেগে থাকা এই বর্ণনা কোনো এক সময়কার কবিদের ক্ষেত্রে হয়তো খাটতো কিন্তু আমার তো খারাপ লাগে না নিজেকে এই গেটআপে ভাবতে। বৈচিত্র্য নিজের বেশভূষায় না আনলে যদি একঘেয়েমীতে ডুবে যাই তাই মহুয়া বললো ' এক কাজ করো, গোঁফ রেখে দাও। বংশীবাদকদের গোঁফও থাকতে হয়! "

এই বংশীবাদক আমারই কেমন করে যেন একটা পত্রিকা অফিসে কাজ হয়ে গেলো। অবশ্য এটাই আমার প্রথম কোনো চাকুরীতে ঢোকা নয়। এর আগেও একটা চাকুরি হয়েছিলো পাওয়ার সাপ্লাই এন্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট এ। জয়েন করার দুই মাসের মাথায় যখন সেটা ছেড়ে দিয়েছিলাম, আমার স্বল্পভাষী বাবার চোখে লেখা দেখেছিলাম " তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না !" কিন্তু সবসময় সব কিছু দেখেও দেখতে হয় না, শুনেও শুনতে হয় না, সময়ের কষাঘাতে বুঝে নিয়েছিলাম আমি। তাই পত্রিকা অফিসের কাজে বেতনটা একটু কম হলেও আমি সেখানে জয়েন করার পর বুঝেছিলাম আমি এর অপেক্ষাতেই ছিলাম, সেই সাথে ছিলাম মহুয়াকে ঘরে আনার অপেক্ষায়, সেই সাথে এই উপলব্ধিরও অপেক্ষায় যে কাজ আমার হৃদয়ের খোরাক, আমার ভালোবাসা এবং স্বপ্নের সম্মিলন, সেখানেও চলে নীরব শোষণ যার থেকে পরিত্রাণের পথ আমার জানা নেই!

জোছনার যে জীবন তাতেও জোনাকি ওড়ে । কি অদ্ভুত সেই দৃশ্য ! তোমরা জোনাক হয়ে জ্বলে জ্বলে জোছনা মাখো শরীরে আর আমি তোমাদের পাশে গিয়ে তার একটু আবেশ নেই এতেই আমি খুশি।

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৬
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×