somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনিকা ইজ টাইপিং...

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

গত দুই তিন সপ্তাহে আমি সবচেয়ে বেশি যে কথাটা বলছি সেইটা হইলো, " ধুর ভাল্লাগে না"। ভুল বললাম, ভাল্লাগে না বলছি কিন্তু ভদ্র ভাষায় বলি নাই। বিশেষ করে মনিকার লগে দুই তিন মিনিট কথা কওনের পর যখন দেখি কথা খুঁইজা পাই না কেউই তহনই বলছি " ধুর বাল ভাল্লাগে না।" প্রথম প্রথম মনিকা এই বিশেষ শব্দচয়নে কোনো বিরক্তি বা মজার কোনো প্রতিক্রয়াই দেখায় নাই। তবে ইদানিং সে বলতাছে খুব -

" কী ব্যাপার শিহাব ভাই, বাজে কথা বলেন কেন!"

তখন অপ্রস্তুত হইয়া আমি নাম না জানা কোনো গানের সুরে টান দেই হু হু লা লা কইরা। ভেতরটা তহন খচ খচ করে। আসলেই আমার ভাল্লাগে না। তবে এই ভালো না লাগাটা মনের লগে সম্পর্কিত না, দেহগত। এই যে আবারো ভুল কইলাম। মনের লগে দেহগত ব্যাপারের সামঞ্জস্য না হলে চলে নাকি! ফোনের অপর প্রান্তে মনিকা আর এই প্রান্তে আমি। কোনো কথা খুঁইজা পাই না। আগে মনিকা এত কথা কইত আমি কথা কওনের সুযোগই পাইতাম না। এর লিগা যে আমার খারাপ লাগতো তা না। আমি কথা শুনতেও ভালবাসি যেমন কইরা বলতেও ভালবাসি। একটা অস্বস্তিদায়ক অনুভূতি হইতে থাকে। তাই নীরবতা ভাইঙ্গা কইলাম -

এটা খারাপ শব্দ কে বলল? ভালো না লাগার তীব্রতা বোঝাতে একটা অতিরিক্ত শব্দ যোগ করে বললাম! এই আর কী!

- হুম

মনিকার এই হুম, ওহ, আচ্ছা এই শব্দগুলো শুনলেও আমার ইদানীং মেজাজ খারাপ হয়। এই মাইয়াটা বুঝেই না শরীরের ভাষা। নিজেরে সন্যাসী টাইপের কিছু ভাবে কি না কে জানে। চুল দাড়ি সব পাকায় ফালায়লাম আর আমি জানি বুঝি না মনিকা কীসের উপর দিয়া চলে। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা আসে, এত ভাবে এত ইংগিতে মনিকারে ইশারা দিছি, তাও কেন এই মাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে না।

গত কয়েক মাস ধইরাই মনিকারে টার্গেট করছিলাম। এমনিতে সামনাসামনি পরিচয়ের সুযোগ এখন আর কয়জনের লগে হয়। একটা গ্রুপে পরিচয়। রাইত একটা দুইটার সময়েও দেখি ম্যাসেঞ্জারে সবুজ বাত্তি জ্বলে, এর তার স্ট্যাটাসে লাইক কমেন্ট দেয়। একদিন আমার এক কবিতা পইড়া মুগ্ধ হইয়া ইনবক্সে মেসেজ দিছিল -

" অনেক সুন্দর লিখেন আপনি। কিন্তু এত বানান ভুল, চোখে লাগে। বানানের যত্ন নেবেন। আপনার কবিতায় কেমন এক সমাজবাদের ছোঁয়া পাই, ভালো লাগে পড়তে।"

মনিকা মেসেজটা দিছিল সন্ধ্যায়। আমি সীন করলেও উত্তর দিছি রাত একটার পরে। সৌভাগ্য কমু কিনা জানি না, সে আমার রিপ্লাই পাইয়া একটা হাসি মুখের ইমো দেয়াতে আমার মনে হইল আমার কলিজাটা দশ হাত লম্বা হইয়া গেলো। আমি তারে কইলাম-

- ধুর ভাই, আমার এত চ্যাট কইরা পোষায় না। এখন কি পোলাপান আছি! আপনার ফোন নাম্বার দেন। গ্যাজামু নে

- নাম্বার পেলে আবার ল্যুলামি করবেন না তো!

আমিও তার বিশ্বাস অর্জন করতে তারে বলি-

- খোদার কসম ভাই, কোনো মেয়েরে আমি এত রাতে নক করি না। সারাদিন ব্যস্ত থাকায় রিপ্লাই দিতে পারি নাই। এখন ভয়ে ভয়ে রিপ্লাই দিছি

- ভয় কেন?

- যদি লুইস ভাবেন

- হুমমম

ঐদিনের চ্যাটবক্সের হুমমম শুইন্যা গায়ে কাঁটা দিছিল সত্যিই। একটা টিনেজ টিনেজ ভাব কাজ করতাছিল। কত্তোদিন পর কোনো মেয়ের লাইগা এমন একটা ফিলিংস আইলো কী আর কমু। আমি অধীর আগ্রহে তাকাই রইছি। ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট বক্সে শো করতাছে মনিকা ইজ টাইপিং...

- ধুর মিয়া কী এত টাইপান! নাম্বার দেন। সকালে কামলা দিতে ছুটন লাগব

আমি অবশেষে মনিকার নাম্বার পাই। প্রতিউত্তরে মনিকারে লিখি -

- অপেক্ষান। কাইল বিকালে ফোন দিব। ল্যুলামি হবে

- হা হা। তাই নাকি? লেটস সী

মনিকার উত্তর কেন জানি আমার কাছে আহবানের মত লাগে! আমার মত মনিকাও একা। আমি একলা থাকি জীবিকার প্রয়োজনে, বউ, বাচ্চা থাইকা দূরে। কিন্তু তহনও জানতাম না মনিকার একাকিত্ব কেমন।

২.

আমার ভালো না লাগার রোগ দিন দিন বাড়তাছে। এইটা কী রোগ না সমস্যা? রোগ বা সমস্যা যেইটাই হোক, ভালো যে লাগতাছে না, আমি ভালো নাই এইটা তো সত্যি। আমি নিজেও আসলে বুঝতাছি না আমি এত অস্থির স্বভাবের ক্যান! এই অস্থিরতা অবশ্য ইদানীং হইছে তা না। আরো আট বছর আগে যহন আমি ফ্লোরার লগে সম্পর্কে জড়াই তহনো এক অস্থিরতা থেইকাই সম্পর্কের শুরু। আসলে ফ্লোরার লগেও আমার সম্পর্ক হওনের কথা আছিলো না। কিন্তু ঐ যে কইলাম আমি অনেক অস্থির স্বভাবের।

হুট কইরাই ঢাকার অফিস আমারে বদলী কইরা পাঠায় দিলো ঢাকার বাইরে। আমার মত ছটফটা স্বভাবের মানুষ একলা একা নতুন পরিবেশ, নতুন বাসায় আইসা কেমন হাঁপাইতে লাগলাম। নিজেরে শেকল বান্ধা পশুর মত লাগতাছিলো। অফিস থেইকাই থাকনের ব্যবস্থা কইরা দিছিলো। বাংলো টাইপ বাসার মধ্যে আমি সহ আরো পনের ষোলো জনের জন্য আলাদা আলাদা রুম। মেইন শহর থাইকা আমাগো থাকনের জায়গাটা একটু দূরেই আছিলো, কোলাহল মুক্ত। অফিসের পথ বাসা থেইকা আধাঘন্টার দূরত্ব। কিন্তু এই কোলাহল মুক্ত জায়গাই আমারে আরো অস্থির বানাইয়া তুললো। অনেকটা গলা টিপ্যা ধইরা শ্বাসরোধ করনের চেষ্টা করলে যেমন লাগে ঐরকম আর কী!

প্রথম প্রথম কয়দিন তো চরম খারাপ লাগতো রেবেকার লাইগা, বাচ্চা দুইটার লাইগা। রেবেকা আমার বউ। ওর লগে কবে প্রেমের শুরু দিন তারিখ মনে নাই। কলেজ লাইফ থাইকাই। তিন চার বছর চুটাইয়া প্রেম করনের পর ভাইগা যাইয়া বিয়াও করলাম। কিন্তু এক লগে তহনো সংসার করা হয় নাই। আমার পুলিশ অফিসার বাপের ডরে বিয়ার খবর গোপনই রাখন লাগছিল। কিন্তু যৌবন কী কোনো কিছুর বাঁধা মানে! অনার্স পাস কইরা রেবেকারে লইয়া এক সন্ধ্যায় হাজির হইয়া গেলাম আমার বাপের বাড়ি। একটু ঝক্কিঝামেলা হইলেও বাপ ঠান্ডা হইয়া গেলো, আমিও ঠান্ডা। নিজের দায়িত্ব রেবেকারে দিয়া দিলাম।


আসলে রেবেকার ব্যাপারটা আগেও যেমন অন্তরে সবার উপরে আছিলো অহনো থাকবো এক্কেবারে মরনের দিন পর্যন্ত এইটা আমি শিউর। কিন্তু কোন চিপা দিয়া কেমনে ফ্লোরাও ঢুকছিলো বুইঝা উঠতে পারছি সেইদিন, যেইদিন আমি আর ফ্লোরা সেন্টমার্টিন গিয়া দুইজন একে অপরের লগে বিলীন হইয়া গেছিলাম। আমি তো মনে করি ফ্লোরার লগে সম্পর্ক হওনের পিছনে আমার অফিস দায়ী। বদলী না করলে তো আমি রেবেকার লগেই থাকতে পারতাম। আশেপাশে কোনো নারী ভিড়তেই পারতো না। এই একাকিত্বই আমারে পরনারীতে ধাবিত করছে। কিন্তু আজব ব্যাপার হইলো ফ্লোরা থাকতো ঢাকায়। এমন না যে আমি যে শহরে বদলী হইয়া আসছি, পরিচয় ওর লগে ঐহানেই হইছিলো। কোনো শান্ত মফস্বল মফস্বল ধরণের বিষয়ই এইহানে জড়িত না। কোনো নরম বিকাল, নদীর পাড়, গোধূলির আলোতে ফ্লোরারে দেইখা চিত কাইত হইয়া গেছিলাম তাও না। থাকি এক বালের জায়গায়! না আছে নদী না আছে ঘাট। থাকার মধ্যে আছে এক ক্লাব যেইহানে ক্যারাম, টেনিস, কার্ড, ব্যাডমিন্টন এইসব খেলন যায়। আর ড্রিংক করতে হইলে নিজের ঘরে বইয়াই করন লাগে। অফিসে নিজের রেপুটেশনের কথা ভাইবা হুইস্কি, ভদকা এইসব ঢাকা থেইকাই লইয়া আহি আর নিজের রুমের চিপাই বইয়া গলায় ঢালি। এত পদে পদে বাঁধা আমারে আসলে পুরা ফ্রাস্ট্রেটেড কইরা দিতাছে।


যাই হোক ফ্লোরার লগে আমার পরিচয় টিএসসির ঐদিকে হইছিলো। ভার্সিটির বন্ধুবান্ধবের গ্রুপের লগে বহু বছর পর আড্ডাইতে গেছিলাম। ঐ আড্ডায় আরেক বান্ধবীর কাজিন হইলো ফ্লোরা, পরিচয়টা ঐখান থেইকাই। আমার নীরস সময়ের বাঁইচা থাকার রসদ হিসাবে ফ্লোরারে আস্তে আস্তে জীবনে জড়ায় ফালাইলাম। সে এক কঠিনতম গোপন সুখ; ছাড়নও যায় না আর ছাড়নের কথা ভাবনও যায় না। ফ্লোরার লগে বয়সের গ্যাপ কমপক্ষে সাত আট বছরের তো হইবই। সজীব সতেজ ধরণের এক মাইয়া। ঐ বয়সের গ্যাপ অবশ্য কোনো বিষয় আছিলো না।


আমার মনে কোনো অপরাধবোধ কাজ করতো না। একবারও মনে হইতো না আমি আমার বউরে ঠকাইতাছি। আর মনে হইবই বা কেন, উইকএন্ডে ঢাকায় বাড়ি ফিরলে আমার এক মিনিটের অবসর হইতো না। রেবেকা আমারে পুরাই দৌড়ের উপরে রাখতো। ওর ভাষায় টাঙাইল থাইকা থাইকা, ঘরের বাইরে থাইকা থাইকা আমি পুরা জংলী হইয়া গেছি। এই লিগা ঢাকায় ফিরলে ও আমারে সাফসুতরো করার কাজে লাইগা যাইতো। ঢাকা যাওনের সময় আমার এক দুই সপ্তাহের ময়লা কাপড় ব্যাগে ভইরা লইতা যাইতাম। সেইগুলি ও ক্লিন করাইয়া আমি টাঙাইল ফেরার সময় দিয়া দিতো। প্রফেশনের কারণে চুল, দাঁড়ি বড় করনের আসলে স্কোপ আছিলো না তাও রেবেকার মনে হইতো আমার নখ কাটা হয় নাই, বইসা বইসা ছুটির দুপুরে কাইটা দিতো। কোনো সন্ধ্যায় জেন্টস পার্লারে পাঠাইতো বডি ম্যাসাজ, ফেসিয়াল করাইতে। সিনেমা, শপিং, সামাজিক দাওয়াত পানি সব কইরা কইরা উইকএন্ড গুলিতেও মনে হইতো কাজের দিনগুলির চেয়ে বেশি ব্যস্ততা। আর এত ব্যস্ততায় ফ্লোরারে মিস করনের সুযোগ আছিলো না। এইটা নিয়া ফ্লোরার অভিযোগ অনুযোগ কিছুই আছিলো না। আমাগো চুক্তিটাই আছিলো এমন, কারো জন্য যাতে সংসারে ভ্যাজাল না লাগে। অবশ্য দেখতে দেখতে উইকএন্ডের দুইটা দিন কাইটা যাইতো। কোনো কোনো বার ছুটিতে ঢাকায় গেলে ফ্লোরার লগেও দেখা করতাম। সন্ধ্যার পর। কিন্তু সবসময় দেখা না করতে পারার আক্ষেপ, সুযোগ করতে না পারার অপারগতা আমরা মিটায় নিতাম বড় কোনো ছুটি ম্যানেজ কইরা। এক ধাক্কায় সিংগাপুর, নেপাল কিংবা মালয়েশয়া। সেই সময় অবশ্য রেবেকারে কইতে হইতো অফিস ট্যুরে দেশের বাইরে যাইতে হইতাছে। ইচ্ছা আছিলো ফ্লোরারে লইয়া সুইজারল্যান্ড যামু ঘুরতে। তা আর হইলো কই! কিন্তু যে কয়বছর সম্পর্ক আছিলো বড় মধুর সময় গেছিলো আমার আর ফ্লোরার। আট বছর পার করার পর ফ্লোরার লগে আমার জার্নিটা থামাইতে হইছিলো। ও বিয়া কইরা ফালাইলো। স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কে ভাটা পড়লো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছিলো ও বিয়ার পরেও আমার লগে সম্পর্ক মেন্টেইন করবো কিন্তু আমি ভুল আছিলাম। আমি আমার আট বছরের সম্পর্ক গোপন রাখতে পারছিলাম রেবেকার কাছে কোনো রকম সন্দেহের সৃষ্টি না কইরাই। কিন্তু শেষতক আইসা মনিকার কাছে ফ্লোরার কথাগুলি কইয়া দিলাম। না মনিকা কারো কাছে কইবো না জানি। জিগাইছিলাম -

- আমার এক্স গার্ল ফ্রেন্ডের ছবি দেখবেন?

- নাহ! ওটা তো আপনার গোপন সম্পর্ক। যে মানুষটাকে আট বছর গোপন রাখলেন, তাকে সেভাবেই রাখেন। ছবি দেখতে চাই না

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাইড়া কইছিলাম -

- হুমমমম। মাইয়াটারে মিস করি জানেন! ও আমার কাছে টাকা পাইবো। একবার সিংগাপুর ট্রিপে গেছিলাম। সব খরচ ও ওর ক্রেডিট কার্ড দিয়া পে করছিলো। ওরে যে টাকাটা দেয়াইই হয় নাই মাত্র মনে পড়লো। ধুরর...
এইবার ঢাকা গিয়া ওরে ফোন দিছিলাম ওর বিয়ার ছয় মাস পর। ও লাইনটাই কাইটা দিলো! খুব অবাক হইছি, হার্টও হইছি। খুব উদাস লাগে। কী করি কন তো, মনিকা? আমার এই একলা থাকা আর সহ্য হইতাছে না।

- একা কীভাবে! ভাবী তো আছেই

- ধুর আপনি কিছুই বোঝেন না। বউ আর গার্ল ফ্রেন্ড এক নাকি?

মনিকার লগে ঐ মূহুর্তে আর কথা কইতে মন চাইতাছিলো না। এত নিষ্ঠুর মানুষ কেমনে হয়, বুঝি না আমি!

৩.

মনিকার লগে আমার সম্পর্কের উন্নতি হইছে নাকি একই জায়গায় থাইম্যা আছে আমি এইটা নিয়া সুপার ডুপার কনফিউজড। যহন আমি আমার পরিবারের লগে সময় কাটাইতে উইকএন্ডে বাড়ি যাই ঐ সময় অফিসের নাম্বারের ফোন রিসিভ করা ছাড়া পারসোনাল নাম্বার সব বন্ধ রাখি। অবশ্য খোলা রাখলেও যে সমস্যা হইবো তাও না। কারণ আমার বউ আমার প্রাইভেসিরে যথেষ্ট সম্মান দেয়। সে নিজেও চাকুরীজীবী নারী। আমি যেমন সপ্তাহের দুইটা দিনের ছুটির লিগ্যা মুখাইয়া থাকি, রেবেকাও থাকে উদগ্রীব হইয়া আর পোলাপান দুইটাও। যত সমস্যা শুরু হইয়া যায় টাঙাইল ফিরলে। সকাল সাতটায় নিয়ম কইরা উঠন লাগে। এরপর বালের বোরিং অফিস, প্ল্যানিং, এসাইনমেন্ট, বিশেষ অফিশিয়াল ট্যুর এইসব। যাই থাকুক পাঁচটার মইধ্যে আমি অফিস থেইকা বাইর হইয়া যায়। অফিস গ্রাউন্ডেই ফুটবল, ভলিবল খেলি পুরা আড়াই ঘন্টা। নিজের শরীররে পুরাই ক্লান্ত বানায় ফেলি। অফিস ছুটির পর আমার কিছু করার থাকে না। আর অফিসের কলিগরা আর যাই হোক বন্ধু হইতে পারে না। ক্লান্ত বানাই যাতে তাড়াতাড়ি ডিনার সাইরা ঘুমাইতে পারি। কিন্তু বিছানায় যাইয়া রিলাক্স করতে গেলে ঘুম টুম কই পালায় কে জানে! আমার রুমে বড় বড় দুইটা জানালা আছে; একটা বিছানার সাথে মাথা বরাবর আরেকটা বারান্দার পাশ দিয়া। বারান্দাটাও বিশাল সাইজের। যেদিন যেদিন মদ খাইয়া টাল হইয়া থাকি, বারান্দাতেই রাইতটা কাইটা যায়। একদিন টাল অবস্থাতে মনিকারে ফোন দিছিলাম, রাইত তখন বারোটার কাছাকাছি। আমি তো আপাতত মনিকার লগে গল্পই করতে চাই, ওর সুখ-অসুখের গল্প শুনতে চাই। আর আমার সুখে না থাকার বর্তমান গল্পতো মনিকা জানেই। ঢাকা থেইকা ফিরলে ট্রেনে ফিরি আর বাসে ফিরি, মনিকারেই আগে মেসেজ দেই যে আমি ফিরতাছি। ফেরার সময়টা টুকটাক মেসেজ চালাচালি কইরা ভালোই কাইটা যায়। সমস্যা আবার চাগাড় দিয়া ওঠে ঘরে ফিরলে।

তো টাল অবস্থায় ফোন করলে আমি নানান কথার ফাঁকে মনিকারে জানাইতে চাই ওরে আমি মিস করছি উইকএন্ডের দুই দিন।

- হুমম পার্ট নেয়া লাগবে না। ফ্যামিলির সাথে থাকলে দ্বীন দুনিয়া আপনি ভুলে যান আমি সেটা ভালোই জানি। মোবাইল সুইচ স্টপ করে রাখেন।

- যে নাম্বার খোলা থাকে ঐটাতে ফোন দিলেই পারেন

- আপনি ভালোই জানেন আমি ফোন দিবো না আপনি আপনার নিজের বাড়িতে থাকা অবস্থায়।

- আরে চেতেন ক্যান

আমি বুঝি না আসলে মনিকা কী এইগুলি অভিমান কইরা বলে নাকি ভদ্রতা মেন্টেইন করে। যেইটাই কউক ঐ সময় ওইটাই ভাবতে ভাল্লাগে মনিকা আমারে মিস কইরা অভিমান কইরা বলতাছে এইসব। কথা আগায় নিতে আমি মনিকারে কই -

- আপনেরে নিয়া স্বপ্ন দেখছি মনিকা
- কী দেখলেন?
- আপনের লগে ইন্টিমেসি করতাছি।

মনিকার লগে সম্পর্কটা আগাইতে গেলে এইটা কওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কথাডা পুরাপুরি মিথ্যাও না। একদিন দেখছিলাম মনিকার লগে আমি খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায়। কিন্তু ঘুমটা ভাইঙ্গা গেছিলো। হালার স্বপ্নও বিট্রে করে আমার লগে। ফোনের ঐ প্রান্তে মনিকা চুপ হইয়া থাকে। নেশার ঘোরে আমি বুঝি না লাইনটা কাইটা গেলো কিনা। নিজেরে তখন অনেক একলা একলা লাগে। নির্জন রাইতটা আরো শব্দহীন হইয়া আমারে অস্থির কইরা তোলে। পুরাপুরি মনে নাই নিজেরে সামলাইতে না পাইরা আমি মনে হয় বারান্দায় শুইয়াই রাইত কাটায় দিছিলাম। কোন ফাঁকে ঘুমাইছি জানিও না। এইটুক মনে আছে ফকফকা চান্দের আলোতে আমি আরো বেশি পুড়তাছিলাম একাকিত্বের দহনে। কাব্যিক শোনাইলেও এইটাই সত্যি।

৪.

মনিকার লগে সর্ব সাকুল্যে আমার দেখাই হইছে দুইবার। প্রতিবারই একগাদা মানুষের ভীড়ে, আড্ডাবাজিতে। তাই আলাদা কইরা একান্ত কোনো আলাপ পারনের সুযোগ হয় নাই। এর মাঝে কয়েকবার হালকা পাতলা ইংগিত দিছি ঢাকা আইলে এইবার ডিইউতে যামু। দেহি মনিকা তেমন কিছু কয় নাই। শেষমেষ আমিই কইলাম -

- সামনের সপ্তাহে আসেন দেখা করি। ডিইউ ক্যাম্পাসে চলেন একটু হাঁটাহাঁটি করি। তারপর সন্ধ্যায় রিকশায় কইরা আশেপাশে চক্কর মাইরা পাঠক সমাবেশে যাওয়া যাইবো।

- হুম পাঠক সমাবেশের নতুন আউটলেটটা সুন্দরই। কিন্তু সেলসের যারা তারা একটু আনস্মার্ট। কোনো বই আছে কিনা কিংবা কোন বই কোন সাইডে রাখা কোনো ইনফরমেশনই দিতে পারে না!

- এত বড় স্পেস। সময় নিয়া দেখবেন, নিজেই খুঁইজা নেন। কাউরে জিগানের দরকার কী। আর আমি তো সাথে থাকবোইই, দিবো নে খুঁইজা

- হুমম

- কীসের হুমম? তাইলে সামনের সপ্তাহে দেখা হইতেছে, ফাইনাল তো? শাড়ি পইরা আইসেন

- কেন?

- এমনেই! দেখতাম আপনারে কেমন লাগে!

- নাহ শিহাব ভাই, ব্যস্ত থাকবো। অন্য কোনো দিন শিওর।

আমারে অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় না। মনিকার কোনো এক মন খারাপের দিনে আমারে কথা দেয় আমার লগে একটা দিন সময় দিব সকাল থেইকা সন্ধ্যা পর্যন্ত। মনিকার দৃঢ় আচরণ, সময়ে সময়ে প্রাণখোলা হাসি দেইখাই মানে শুইনাই আমি অভ্যস্ত আছিলাম। সেইদিন ওর মন খারাপের সময়ে এই প্রথম ওর আর্দ্র গলার আওয়াজ পাইলাম। আমারো ওর লিগা মন খারাপ হইছিলো। কিন্তু ও কী কোনোদিন বুঝবো বিষয়টা! না মনে হয়। আর বুঝলেও ভান ধরবো বুঝে নাই।

মনিকার লিগ্যা আমি একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করি নির্ধারিত দিনে। চাঁদপুর যাওনের কথা কইতেই মনিকা রাজী হইয়া গেলো। মন খারাপ বা মানসিকভাবে বাজে অবস্থায় না পড়লে ও আমার লগে যাইতো না আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট কনফার্ম আর এহন এইসব ভাইবা লাভ নাই। আমি দারুণ উত্তেজিত আছিলাম আমরা এক লগে ঘুরতে যামু এই চিন্তা কইরাই। অনেক খুশী আছিলাম। আমার নিজেরেই মাঝে মাঝে আজব লাগে। এই যে আমি পোলাপানগো মত এত খুশী খুশী হইয়া আছি, এইটা আমার বয়সের লগে যায় না কিন্তু। বয়স প্রায় পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু টিনেজ বয়সী উত্তেজনায় আমি কাঁপতাছি। দুই দিন আগে থেইকা আমার ঘুম হারাম হইয়া গেছে।

সকাল সাড়ে সাতটায় সদরঘাট থাইকা লঞ্চ ছাড়বো। মনিকারে সব বলা আছে আমি কই অপেক্ষা করুম। লঞ্চের নাম ধাম সব বইলা রাখছি। একটা কেবিন পর্যন্ত বুকড কইরা রাখছি। ও টেনশন করতাছিলো, শীতের দিন ছোট। সন্ধ্যার মধ্যে চাঁদপুর থেইকা ঢাকা ফিরতে পারবো কিনা। আর আমার মাথায় ঘুরতাছে সন্ধ্যা পার কইরা জানি লঞ্চ আইসা সদরঘাট ভীড়ে। সন্ধ্যার আগে দিয়া নদীর বুকের যে কুয়াশা, মনিকারে লইয়া এক লগে দেখুম। কুয়াশার গন্ধ নিশ্বাসের সাথে সাথে আমার শরীরে জড়ামু। এইরকম একটা ভালো দিন অনেক লম্বা সময় পর আমি পাইতে যাইতাছি।

বার বার ঘড়ির দিকে তাকাইতাছি। লঞ্চ ছাড়তে বেশি সময় বাকি নাই। লঞ্চের দুই তলার বারান্দায় পায়চারি করতে করতে আমার অস্থির লাগতাছে। লঞ্চে হুইসেল বাজাইতাছে আর বুকের ভিতরটায় ধুকপুকানি বাড়তাছে। মনিকারে ফোন দিতাছি কিন্তু ধরতাছে না কেন! কোনো বিপদ হইলো কিনা কে জানে! একবারের লিগ্যা হইলেও আমার মনে এই কথাডা জায়গা দিতে মন চাইতাছে না যে মনিকা আজকার প্রোগ্রামটা ক্যান্সেল করছে, ও আইবো না।

দেখতে দেখতে নির্ধারিত সময়ের পনেরো বিশ মিনিট পরেই লঞ্চ ছাইড়া দিলো। আমার আর লঞ্চ থেইকা নাম হইলো না। নিজেরে কেমন জানি স্বর্বশান্ত মনে হইতাছে। বারান্দার সাইডে একটা চেয়ারে গিয়া বইসা থাকি। এহন আর এইটা ছাড়া কিছু করার নাই। সামনে অগাধ জলরাশি। আমি চাইয়া চাইয়া দেখি। সিগারেট ঠোঁটে নিয়া কোনো অজানায় মনে হয় আমি তাকায় থাকি। হালার কিচ্ছু ভাল্লাগতাছে না। যতই মনিকা কথা দিয়া থাকুক না কেন ওর কোনো সিদ্ধান্ত বা কোনো বিষয়ে তো আমার লগে ও প্রতিশ্রুতবদ্ধ না। ওর তো জিগাইতে পারি না, আপনে কথা দিয়া রাখলেন না ক্যান!


আমার ভেতরটা কেমন খাঁ খাঁ করতাছে। এই কয়দিনের উত্তেজনায় এই ভাবটা ঘাপটি মাইরা আছিলো, এহন উঁকিঝুঁকি মারতাছে। লঞ্চ ভরা এতডি মানুষ তাও কত একলা আমি! আমি আমার বউ রেবেকারে ভালোবাসি এতে কোনো ভুল নাই। ইনফ্যাক্ট কোনো কিছুর বিনিময়েই রেবেকারে ছাড়তে পারুম না। আবার ফ্লোরার লগে মাদকময় আটটা বছর কাটাইছি এইটাও মিথ্যা না। কিন্তু ফ্লোরার অবর্তমানে আমার ভিতরের যে যন্ত্রণাটা হইতাছে, যে হোলটা হইছে এইটা পূরণ করন দরকার। জীবনের সব কয়টা জায়গায় যহন যারে ভালোবাসছি কোনোটাই মিথ্যা না। এত অদ্ভুদ এই মানুষের মন! পলানের পথ তো পাই না! সময় গড়ায় আর আমি তাকাইয়া তাকাইয়া দেখি।

হুট কইরা মোবাইলে ম্যাসেঞ্জারের নোটিফিকেশন পাই। দেখি মনিকার মেসেজ -

- হ্যালো শিহাব ভাই

আমার উত্তর দিতে মনে চায় না। তাও স্ক্রিনের দিকে তাকাইয়া থাকি। অনেকক্ষণ ধইরা তাকাইয়াই আছি মনিকার ইনবক্সের দিকে। ও কী অনন্তকাল ধইরা আমারে লেইখাই যাইবো! এহনো শো করতাছে -

মনিকা ইজ টাইপিং...

নদীর বুকে সন্ধ্যা নাইমা আইছে ততক্ষণে। সবকিছু কেমন অর্থহীন লাগে। জীবনে চার্মলেস হওনের আগেই সমস্ত শক্তি দিয়া হাতের মোবাইলটা নদীর অতলে ছুইড়া মারি!

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৪২
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×