কেউ কথা রাখেনি, চল্লিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক পাড়াতো আপু মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনাতে গিয়ে বলেছিলো
পরের ডিসম্বরে অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত ডিসেম্বর আর বিজয় দিবস এসে চলে গেল, কিন্তু সেই আপুনি আর এলো না
সাতাশ বছর প্রতীক্ষায় আছি ।
ছোট কাকা একদিন মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল, বড় হও সোনার ছেলে
তোমাকে আমি শহীদ মিনার দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে প্রতিদিন বিজয়ের কথা বলে প্রতিবিপ্লবীরা খেলা করে !
ছোট কাকা, আমি আর কত বড় হবো ? আমার মাথা এই ঘরের ছাদ
ফুঁরে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় শহীদ মিনার দেখাবে ?
একটাও সঠিক ইতিহাস জানতে পারিনি কখনো
যুদ্ধাপরাধীর ধোয়া তুলে বিরোধী দলের লোকেরা
জালিমের মত আয়োজন করেছে যুদ্ধাপরাধীর বিচার উৎসব
অবিরল রঙ্গের ধারার মধ্যে 'অথর্ব রাজনীতিবিদরা' সেই উৎসবের আমেজে কতরকম আমোদে হেসেছে !
কিছুই করতে পারিনি কোনদিন!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন তুইও...
বাবা এখন বৃদ্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই শহীদ মিনার, সেই বিজয় দিবস, সেই ভ্রান্ত উৎসব
আমাকেও বাঁচতে দেবে না বোধ হয় !
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে অবন্তী বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম শহীদ মিনার দেখবে !
ভালবাসার জন্য আমি ইতিহাসের পর ইতিহাস পড়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের মত ছুটেছি পথের পর পথ
নীলখেতের রাস্তা তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮ টা ইতিহাসের বই
তবু কথা রাখেনি অবন্তী, এখনও সে একজন অবলা নারী!
পথে পথে যেমন স্বীকার হয় নারীরা ইভটিজিংয়ের !
কেউ কথা রাখেনি, চল্লিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনা !
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'কেউ কথা রাখেনি' অবলম্বনে রচিত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


