somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যাটেলাইট নিয়ে এত কান্নাকাটি কিসের?

২৪ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যাটেলাইট নিয়ে এত এলার্জি কেন?

বাংলাদেশ ছিল ৫৭ তম স্যাটেলাইট অউনিং দেশ।
সম্প্রতি (গত মাসে) পাশের ছোট দেশ নেপালও স্যাটেলাইট পাঠিয়ে ৫৮ তম হয়েছে।
সেখানে সবাই সন্তুষ্ট। এই স্যাটেলাইট নিয়ে কোন কান্নাকাটি হয়নি, টু শব্দও হয়নি।
বেশ আগে থেকেই পাকিদের ৩ টি স্যাটেলাইট। কারো কোন বিকার নেই।
১৯৭৬ থেকে ইন্দোনেশীয়ার নিজস্য স্যাটেলাইট। ৩০ টার উপর। বর্তমানে চালু ১৯টি। এবছর ফেব্রুয়ারীতে স্পেসএক্সের মাধ্যমে উৎক্ষেপিত PSN স্যাটেলাইট যার সবগুলো ট্রান্সপন্ডার শুধু ইন্টারনেট সেবাদানের জন্য।
ভারতে কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র। টয়লেট নেই, মাঠে ঘাটে হাগে। এর পরও তাদের ৮০টার উপরে স্যাটেলাইট। চাঁদেও নভোযান পাঠিয়েছিল, আরো পাঠাবে।
সেখানে কোথাও কেউ স্যাটেলাইট নিয়ে কান্নাকাটি করে না।
বাংলাদেশে একটা নিয়ে এত কান্না কেন?


৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশটি ভাত খাওয়ার পয়শা না থাকলেও বেতবুনিয়া ও তালিবাবাদ ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র তৈরি করার ব্যাবস্থা করে, ৭৫এ চালু। সেই যুগে Intelsat-1 স্যাটেলাইট ভাড়া করে দেশটিতে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের সুচনা।

এই সামু ব্লগেই একবছরে শত শত স্যাটেলাইট বিরোধী পোষ্ট/কমেন্ট দেখা গেছে। বিদেশে থাকা এক পিএইচডি ব্লগার স্যাটেলাইট নিয়ে বিশাল টাকা লস ফিরিস্তি .. এখনো কেন টাকা আয় হচ্ছে না তা নিয়ে বিশাল বিশাল ফর্দ হাজির করেছেন।
ওনার ধারনা এই স্যাটেলাইট শুধু টাকা বানানোর মেশিন হিসেবে আকাশে ছাড়া হয়েছে।

ওনার পোষ্টে কমেন্ট করতে পারিনি। এই গুনধর পিএইচডি ওনার রগকাটার ছবি দিয়ে গুজব ছড়ানোর সময় উনি নির্বিঘে গুজব ছড়ানোর জন্য আমার কমেন্ট মুছে আমাকে কমেন্ট ব্যান করেছিলেন। যদিও আমি কখনো কমেন্টে বাজে কথা লিখি না, গালি তো দুরের কথা। এরপরও এখনো আমি তাহার পোষ্টে কমেন্ট ব্যান।

বিশ্বের কোথাও সরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক প্রফিট করার জন্য করা হয় না। সেটা বিমান বাংলাদেশ, বিআরটিসি বাস, বাংলাদেশ রেলওয়ে, মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্স বা নিউইয়র্ক সাবওয়ে।


আজ টিভিতে দেখলাম এক (কু) বুদ্ধিজীবি বলছেন, ধান চাষ কৃষকদের জন্য বিশাল ক্ষতি। ধানচাষ বন্ধ রাখাই উচিত। সঞ্চালক গোলাম মুর্তজা অবস্য বাধা দিয়েছেন।

৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় এ ধরনের কুশিক্ষিত কুদ্ধিজীবি ালপাকনা পিএইচডিরা থাকলে মুক্তিযুদ্ধ শুরুই সম্ভব হত না

স্যাটেলাইটের মত ক্রিকেট টেষ্ট স্ট্যটাস নেয়ার সময়ও কিছু নৈরাজ্যবাদিদের বাধা ছিল। ৯৭ এর পেপার খুজে পেলে দেখবেন, পত্রিকার কলাম লেখকদেরও অসন্তোষ ছিল। কিছু পাবলিকও বিদ্রুপ করছিল (কারণ স্ট্যাটাস পাওয়ার সময়টায় বাংলাদেশ একের পর এক হারছিল) খেলায় হারজিত থাকবেই, কিন্তু একটা দেশের মর্যাদা প্রাপ্তিতে বাধা দিবে কেন?
এই স্যাডিষ্টদের, কলামলেখকদের পাত্তা দিলে কেনিয়া টেষ্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যেত। আর বাংলাদেশ কেনিয়ার মত রাস্তায় রাস্তায় ভিক্কা করতো।

৯৩ সালে সাবমেরিন ফ্রীতে কেবল ইন্টারনেট কানেক্সান অফার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এই হতাসাবাদিরাই খালেদার কান ভারি করেছিল যে দেশে এত কম্পিউটার নেই, এত কম্পিউটার হবেও না। সাইফুররহমানও বলেছিল আকামের লষ্ট প্রজেক্ট। কোন দরকার নেই। দেশটাকে আইটি খাতে ১৫ বছর পিছিয়ে দিয়েছিল ওরা।

অতচ ৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশটি ভাত খাওয়ার পয়শা না থাকলেও বেতবুনিয়া ও তালিবাবাদ ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র তৈরি করে, সেই ৪৮ বছর আগে Intelsat-1 স্যাটেলাইট ভাড়া করে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের সুচনা করে।
আর এখন উদীয়মান সামর্থবান সক্ষম বাংলাদেশ কি একটি স্যাটেলাইটের মালিক হতে পারে না?

টেকনোলজি বাধা পাকি আমল থেকেই ছিল। একটা রেডিও রাখতে লাইসেন্স লাগতো, বাংলাদেশ আমলেও লাগতো। টিভি রাখতে প্রতি বছর ৫০০ টাকা লাগতো যা বর্তমান ভ্যালু ৩০০০ টাকা।
মোবাইলের দাম লাখটাকার উপর কলচার্জ ও আকাশ্চুম্বি করা হয়েছিল,এর উপর প্রতি বছর পুনরেজিষ্ট্রেশন ৩ হাজার।
টিএন্ডটি ফোনও ৩০ হাজার টাকায়ও পাওয়া মুসকিল। সবাইকে দেয়া হত না, বেশীটাকা দিয়েও না। ব্যক্তিমর্যাদা দেখে ফোন সংযোগ দেয়া হত।
মোটকথা টেকনলজি শুধু ভিআইপি ও ধনীদের। সাধারন জনগনের নাগালের বাইরে, ছুয়ে দেখারও অধিকার ছিলনা।


তারপর ১৯৯৬ সালে সরকার পরিবর্তন হলো। ক্ষমতায় এলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।

সিটিসেলের একক ব্যবসার পাশাপাশি ১৯৯৭ সালেই অনুমোদন পেল গ্রামীন ফোন এবং একটেল (বর্তমান রবি)। তৈরী হলো ব্যাবসায়িক প্রতিযোগীতা। অধিক গ্রাহক টানার প্রতিযোগীতায় হু হু করে কমতে শুরু করেছে কলরেট। সরকার ও জনগণের চাহিদার অনুপাতে প্রচুর আমদানী হতে থাকা মোবাইল ফোনের উপর ভ্যাট ট্যাক্সের বোঝা হালকা করে দিল। দ্রুত বাড়তে থাকলো মোবাইল ইউজারের সংখ্যা। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে চলে এলো মোবাইল ফোন ও কানেকশান।
সাবমেরিন কেবল যখন প্রথম যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব আসে, তখন বি এন পি সরকার তা ফিরিয়ে দেয় এই যুক্তিতে যে, এই কেবল আসলে দেশের অভ্যন্তরীণ তথ্যগুলো বাইরের দেশে পাচার হয়ে যাবে!
অথচ একটা দেশের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রযুক্তি খাতে কি কি বিস্ময়কর উন্নয়ন ঘটাতে পারে তথ্য এবং প্রযুক্তি তে তা তারা একবার ও চিন্তা করেনি!




থ্যাংকস গড পরের বার ক্ষমতায় এসে আওয়ামীলীগ সরকার সে সুযোগ হাতছাড়া হতে দেননি!
আজকে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের ন্যায় আমরাও এই সেবা পাচ্ছি!
আজকে আপনারা যারা টুজি থ্রিজি নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেন, এই যতটুকু আছে যতটুকু অবদান সেটুকু ও আওয়ামীলীগ সরকারের!
তাই বলা যায়, এইসব কৃতিত্ব শেখ হাসিনার।
সরকারের কাজ জনগণকে হাতে হাতে মোবাইল ফোন রিলিফ দেয়া নয়।
হাসিনা সরকারের কাজ লোভি বেনিয়াদের একচেটিয়া মুনাফা বন্ধ করে জনগণের জন্য প্রযুক্তি ও পণ্যকে সহজলভ্য করে দেয়া।
শেখ হাসিনা সেই কাজটি খুব ভালভাবে করেছিলেন। তাই, “হাতে মোবাইল পৌছে দিয়েছি” কিংবা “এই মোবাইল ফোন কে দিয়েছে?” কিংবা “মোবাইল ফোন সহজলভ্য করেছি” --- যেভাবেই বলুক না কেন, এই দাবীটা একমাত্র শেখ হাসিনার মুখেই মানায়।


একসময় তারা " ডিজিটাল " শব্দ টাকে প্রহসন হাসি ঠাট্টা হিসেবেই ব্যবহার করতো! এখন অবস্য সব হাসি ভোতা হয়ে গেছে।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাম্বা গ্রুপের কর্ণধার 'তারেক পলাতক' ভিডিও কনফারেন্স করে, টাকা উৎপাদন মেশিন তথা নমিনেশন দেয়, প্রার্থী বাছাই করে!
আর নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে বাচ্চাদের হাতে প্লাকার্ড তুলে দেয় "ডিজিটাল বাংলাদেশ চাইনা, নিরাপদ সড়ক চাই"



তাদের আমলে শুধু টেকনলজি না। বিদ্যুৎ সংযোগও দরিদ্র সাধারন জনগনের নাগালের বাইরে রাখার প্রবনতা ছিল।
খালেদাও বিএনপি নেতারা টাকা বাচাতে কৃপন .. ভিতু স্বভাবের,
সাইফুর রহমান বলতো সব লষ্ট প্রজেক্ট। প্রচুর টাকা ব্যায়। গ্যাস নেই, চৌদ্য পুরুষেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এই টাকা উঠে আসবে না। এত বিদ্যুতের দরকারটা কি?
বিএনপি যখন ২০০৬ এ ক্ষমতা ছাড়ে তখন সম্ভবত মাত্র ৩২০০ মেগাওয়াট ছিল দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা। ১ মেগাওয়াটও বাড়াতে পারেনি। পরের দু বছর তত্তাবধায়ক সময়ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয় নি।
উদিয়মান দেশটিতে এত সামান্য বিদ্যুৎ। ৫+২ = ৭ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হল না। ভাব যায়।

২০০৮ এ নবনির্বাচিত সরকার অনেক বাধা অনেক উচ্চমুল্যে সত্তেও বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুতকেন্দ্র তৈরি করে, প্রয়জনে ভাড়ায় আনা হয় বেশীমুল্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ গুন বৃদ্ধি করেছে, এতে আপাত সরকারের বিপুল অর্থ নষ্ট হয়েছে।
কিন্তু জনগন দেশজ শিল্প, বৃহৎ শিল্প, রপ্তানী, ফ্রীল্যান্সিং, অনলাইন মার্কেটিং, বেশীরভাগ ফ্যাক্টরি আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স করন, কৃষি উৎপাদন, মৎস উৎপাদন, গো-ছাগ মাংশ উৎপাদন, সবক্ষেত্রেই বহুগুন বৃদ্ধি করে তার শতগুন প্রতিদান দিয়েছে।

মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়।
গো-ছাগ উৎপাদন সংখায় ও মাংশ উৎপাদনে ২য়
শাক-সবজি উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ।
চাল উৎপাদনেও বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে

খালেদাও বিএনপি নেতারা টাকা বাচাতে কৃপন .. ভিতু স্বভাবের,
সাইফুর রহমান বলতো সব লষ্ট প্রজেক্ট। প্রচুর টাকা ব্যায়। চৌদ্য পুরুষেও এই টাকা উঠে আসবে না। এত বিদ্যুতের দরকারটা কি?

আদমজি বেচে দাও। চালু থাকলেও লস, বন্ধ রাখলেও লস
অর্থনীতিবিদরা বলেছিল বন্ধ না করলেও চলে, খরচ কমিয়ে লাভলস সমান সমান রাখেন, কিছু লস হলেও সমস্যা নেই।
পরে আর্থিক সক্ষমতা হলে রিনোভেশন করে এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্বম আধুনিক জুটমিল করা যায়।
এছাড়া বন্ধ করলে অনেক সমস্যা, এই কারখানা প্রডাক্ট, অন্যান্য সরকারি বেসরকারি মিল কানেক্টেড। বন্ধ করলে টোটাল সেক্টর বিপুল ক্ষতি হবে।
ভেতরে হাজার হাজার শ্রমিক, পরবার সহ লাখখানেক। ৩টি হাইস্কুল, ৬ সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ছাত্ররা কোথায় যাবে? এতগুলো গৃহহীন সমাজে এত বড় চাপ।
কিন্তু সাইফুরের নির্বিকার উক্তি - "আমি কিছু বুঝিনা, লষ্ট প্রজেক্ট। বন্ধ হবে"।

বিম্পি আমলে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ছিল বিদ্যুতের সুবিধা বঞ্চিত একেবারে অন্ধকারে।
নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে বিশ্বব্যাঙ্কের শর্ত পিডিবি কে ভেংগে কম্পানী করা আর ভর্তুকি সম্পুর্ন বন্ধ করা। তারপর ফান্ডিং।
সাইফুর রহমান বলতো সব লষ্ট প্রজেক্ট, এত ভ্যাজাল দরকার নেই, সবতো চলছেই, এত দামদিয়া ালের বিদ্যুতের দরকারটা কি।
আমি কি লস দিমু নাকি।

আর এখন সেটা ২০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এটা সরলরৈখিক গতির উন্নয়ন নয়।
আওয়ামী লীগ সরকার বুঝিয়ে দিয়েছিলো একটা জাতীর মাথাতুলে দাঁড়ানোর জন্য সবচেয়ে বড়ো নিয়ন্ত্রক হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিশাল লস হবে, কিন্তু এনার্জি নিশ্চয়তা পেলে পেলে বাকি ইন্ডাষ্ট্রিয়ালাইজেশন, ইনভেষ্ট এমনিতেই আসবে। কর্মসংস্থান বাড়বে, রপ্তানী বাড়বে। আপাত লস হলেও পরোক্ষ লাভ শতগুন হবে।


১৯৯২ সালে বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবল সংযুক্ত হতে পারতো বাংলাদেশ অথচ বিএনপি সরকার বললো,
ফালতু ঝামেলা।
দেশে এত কম্পিউটার আছে নাকি?
দেশের নাকি তথ্য পাচার হয়ে যাবে! তথ্যপ্রযুক্তিতে এভাবেই দেশ ১৫ বছর পিছিয়ে যায়। যখন অন্যান্য দেশ এগিয়ে গেছে আমরা তখন ১৫ বছর নেট বিহীন বা শেষ দিকে খুব অল্প কিছু ডায়ালআপ এ ছিলাম। অথচ ১২ বছর পর সেই সংযোগ নিতে বাংলাদেশকে পরে শত শত কোটি টাকা খরচ করতে হয়।


১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্যাসিফিক মোটরস ও ফার-ইস্ট টেলিকমের কর্ণধার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির নেতা মোর্শেদ খান।
বিএনপির মোর্শেদ খানের মালিকানাধীন সিটিসেলের একটা মোবাইল সংযোগ নিতে প্রথম দিকে খরচ হতো তৎকালীন টাকায় এক থেকে দেড় লাখের উপরে। আইন করে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হীন একা একচেটিয়া ব্যাবসা করার সুযোগ দিয়েছিল মন্ত্রী মোর্শেদ খানকে। ফলাফল মাত্র গুটিকয়েক অতি বিত্তবান ছাড়া বাদবাকি বৃহত্তর জনসাধারণের কাছে মুঠোফোন ছিল ধরাছোয়ার বাইরে স্রেফ স্বপ্ন।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে চুটিয়ে মুঠোফোনের ব্যাবসা করেছে এই মুর্শেদ খান ও তার প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক মোটরস ও ফার - ইস্ট টেলিকম সিটিসেল। কোন প্রতিযোগীতা নেই। মুঠোফোনের ব্যাবসায় কোন প্রতিদন্ধিতা নেই। একচেটিয়া ব্যাবসা করেছে মুর্শেদ খান। ফলাফল মাত্র গুটিকয়েক বিত্তবান ছাড়া বাদবাকি বৃহত্তর জনসাধারণের কাছে মুঠোফোন ছুঁইয়ে দেখারও সুযোগ ছিলনা।

ল্যান্ডফোনও স্থায়ী ঠিকানা, ভাল সামাজিক স্টাটাস ছাড়া ৩০ হাজার টাকা বেশী দিলেও পাওয়া যেত না। ১৯৮৯ সাল থেকেই 'সেবা টেলিকম' টেলিফোন সার্ভিস কার্যক্রম চালাতে টেলুলার মোবাইল ফোন সার্ভিস দেবার জন্য আবেদন করেছিল ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের কাছে। কিন্তু যেহেতু আইন করে একচেটিয়া টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি পুরোপুরি মোর্শেদ খানের দখলে ছিল, সুতরাং তারা অনুমতি পায়নি।




তারপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এলো আওয়ামীলীগ। মোর্শেদ খানের উপর প্রতিশোধ নেয় নি, সিটিসেলকে বন্ধ করেনি। বরং সিটিসেলের PSTN থেকে CDMA আপগ্রেড করতে উৎসাহ দিয়েছে।
১৯৯৭ সালে উচ্চ প্রযুক্তির GSM প্রযুক্তির অনুমোদন দেয়া হল ইউনুসের গ্রামীণ ফোন এবং বিএনপির এক এমপি/ব্যাবসায়ী একে খানের একটেল।
সেবা টেলিকম আগেই চাচ্ছিল টেলুলার সার্ভিস। সেটা দেয়া হল। তৈরী হলো ব্যাবসায়িক প্রতিযোগীতা। এর মধ্যে আজকে যে রবি আর গ্রামীণফোন লক্ষ কোটি টাকার বিজনেস করছে, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল একদমই ফ্রি'তে, শুধুমাত্র টেলিযোগাযোগ খাতটা যেন দ্রুত বাড়ে সেজন্য! এক সময়ে নাগালের বাইরের জিনিষ, তখন মানুষের হাতে্র কাছে ৫ ধরনের অপসন।

টি এন্ড টি ল্যান্ড ফোন
সিটিসেল
গ্রামীণ ফোন
একটেল
সেবা টেলুলার





কোন দলীয় বিবেচনা কাজ করেনি। যে যোগ্য তাকেই দেয়া হয়েছে। মালিক একে খান তো বিম্পি মন্ত্রি বা এম্পি। ইউনুস বিম্পি সমর্থক। ইউনুস নিজে এক বকৃতায় বলেছিলেন গ্রামীণ ফোন লাইসেন্স পেতে কাউকে এককাপ চাও খাওয়াতে হয় নি।
অধিক গ্রাহক টানার প্রতিযোগীতায় হু হু করে কমতে শুরু করেছে কলরেট। সরকার ও জনগণের চাহিদার অনুপাতে প্রচুর আমদানী হতে থাকা মোবাইল ফোন। দ্রুত বাড়তে থাকলো মোবাইল ইউজারের সংখ্যা। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে চলে এলো মোবাইল ফোন ও কানেকশান।

১৯৯৬-৯৭ তে আরো বড় দুটি দুঃসাহিসি পদক্ষেপ নিয়েছিল হাসিনা।

তখনো কম্পিউটার সহজলভ্য ছিল না, উন্নত দেশে মাত্র উইন্ডোজ ৯৫ এসে কম্পিউটার অনেকটা ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়ে গেছে। দেশে কম্পিউটার দরকার। যা খালেদা-সাইফুর লষ্ট প্রজেক্ট বলতেন, হাসিনা সেটাকে সম্পুর্ন শুল্কমুক্ত করে দিলেন।
প্রবীন অর্থনীতিবিদরা হা হা করে উঠলেন বিশাল ক্ষতি হবে!
হাসিনা, তোফায়েল জানে কয়েকশো কোটি যা ক্ষতি যা হবে অর্থনীতি বড় হলে কর্মসংস্থান বাড়বে, পরে এরাই হাজার কোটি পরক্ষ ট্যাক্স ভ্যাট দিয়ে শতগুন পুশিয়ে দিবে।
আইডিবির চারটি বিশাল ফ্লোর হয়ে গেল বিশাল বিপনন হাট। দুটি বড় ভারতীয় ট্রেনিং সেন্টার, বুয়েট সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ ও তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল (Electrical and Electronic Engineering) সাবজেক্টগুলো জনপ্রীয় হতে থাকে।

এরপর ১৯৯৬-৯৭ তে আরো কিছু সাহসি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল
সরকারি বিটিভির সাথে আরো ৩টি বেসরকারি টেলিভিশন লাইসেন্স দেয়া হয়।

১। ইটিভি (টেরিস্টেরিয়াল)
২। চ্যানেল আই (স্যাটেলাইট)
৩। এটিএন বাংলা (স্যাটেলাইট)

আর ক্রিকেট টিম মাত্র কোয়ালিফাই হয়েছে বিশ্বকাপে। টেষ্ট স্ট্যাটাস দরকার।
সবাই বললো কি পাগল নাকি! মাত্র বিশ্বকাপে চান্স কএক বছর খেলুক।
আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নিয়মমাফিক ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ওয়ান্ডে স্ট্যাটাসও পেয়ে যায়।
তারপর ইংল্যান্ডে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ এই প্রথম বিশ্বকাপে খেলছে। প্রথম খেলাতেই তৎকালিন অনেকের সাধের পাকিস্তানকে ধরাসায়ী করে বিশ্বকাপে নবাগত শক্তি বাংলাদেশ। উৎফুল্ল বাংলাদেশ। তখনো কিছু নৈরাজ্যবাদি এদেশী বাংপাকি এই বিজয় মেনে নিতে পারেনি। মেনে নেয় নি। ভারতীয় একটি ফান পত্রীকার অনুমান ভিত্তিক খবরেরসুত্র ধরে তারা এই গৌরবময় বিজয়টিকে পাতানো বলেছিল। যদিও আইসিসি পরে শক্ত তদন্ত করে ‘কথিত ম্যাচ পাতানো দাবি’ সম্পুর্ন নাকোচ করে দিয়েছিল। কেউ জেনেশুনে নিজ দেশের গৌরব সম্মান অস্বীকার করে? এই মীরজাফরের দেশে এসবও দেখতে হয়েছিল।
(এরাই এখনো মাশরাফি-সাকিবের কারনে এই সেদিন বাংলাদেশের পরাজয় কামনা করেছিল, ধিক্কার এদের কে)

বাংলাদেশ টেষ্টমর্যাদা পাওয়ায় দেশের একটা বড় উপকার হয়েছে। এদেশে পাকিপ্রেমী কুলাঙ্গারদের দৌরাত্ত্ব প্রায় সম্পুর্ন বন্ধ হয়েছে। এইসব পাকি কুলাঙ্গারদের কুৎসিত উল্লাশে খেলার সময় টিভিরুমে বসে থাকার উপায় ছিলনা।

অতচ ব্যপক রাজনিতিক লবিং ও তৎকালিন ICC প্রেসিডেন্ট ডালমিয়াকে ম্যানেজ করে Test status নেওয়া না হলে তালিকায় এক নম্বর প্রাপ্য কেনিয়া তা পেয়ে যেত। আমরা ক্রিকেটে ২০-২৫ বছর পিছিয়ে পরতাম। কেনিয়ার মত পথে পথে ঘুরতাম। এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট ক্ষেত্র বিসিবির অবকাঠামো কত শক্ত, ক্রিকেট অর্থনীতি এখন কত বিশাল ...!! কত নতুন ক্লাব, তরুন ক্রিকেটার বেরিয়ে আসছে!

১৯৯৬-৯৭ মাত্র কয়েকটি সিদ্ধান্ত, কিন্তু ইম্প্যাক্ট কি বিশাল!

১। মোবাইল ফোন ব্যাবসা উম্মুক্ত করে লাইসেন্স।
২। কম্পিউটার ও কম্পিউটার এক্সেসরিজ সম্পুর্ন শুল্কমুক্ত করা।
৩। ৩ টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল পারমিশন।
৪। ক্রিকেটে আগাম টেষ্ট স্ট্যাটাস।

নতুন নতুন ইন্ডাষ্ট্রি, বিদেশী ইনভেষ্ট, নতুন ক্রিকেট স্পনসর, বিজ্ঞাপনি সংস্থা, সাবকন্ট্রাকটার, শিল্পি, বিজ্ঞাপন মডেল, কম্পিউটার বিক্রেতা, এক্সেসরিজ বিক্রেতা, মেকানিক, ট্রেনিং সেন্টার, ডাটা এন্ট্রি, দেশী বিদেশী সফটওয়ার নির্মাতা, কলসেন্টার, ফ্রীল্যানসার, রিচার্জ কার্ড বিক্রেতা, ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ ও মোবাইল ব্যাঙ্কিং .. ফুটপাতে চার্জার, মোবাইলের খাপ বিক্রেতা ... ১ কোটি বা আরো বেশী আকাইম্মাদের রুটিরুজি কর্মসংস্থান!
সাধারন চাকুরির কথা বাদই দিলাম।

সাইফুর খালেদা যেসব টাকার ভয়ে বা বিদেশী সাহায্য না পেয়ে যা করতে পারেনি। বলত এসবে লাভ নেই। সব লষ্ট প্রজেক্ট।
শুধু তাই না পরের টার্মে ২০০১ এ এসে গ্যাসসংকট দেখিয়ে পাইপলাইনে নির্মানাধীন বিদ্যুতকেন্ত্র গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, তুচ্ছ কারন দেখিয়ে নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে বিশাল কম্পিউটার প্রশিক্ষন ফার্ম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এজন্য জরিমানাও গুনতে হয়েছিল। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ETV

এরাই এবার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে (নেপত্থের শয়তানরা) খুদে বাচ্চাদের হাতে প্লাকার্ড তুলে দিয়েছিল -
"ডিজিটাল বাংলাদেশ চাইনা, গণতন্ত্র চাই"

গণতন্ত্র চাই বুঝলাম। কিন্তু দেশের সার্বজনিন মেকানাইজেশন, 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বাতিল চাওয়া কোন ধরনের ফাজলামি?
এখন শুরু হয়েছে স্যাটেলাইট নিয়ে দলবেধে কান্নাকাটি।
যারা সাবমেরিন কেবল, অপটিক্যাল ফাইবার, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সুলভ মুল্যে সেলফোন/ নেট কানেক্সনের মূল্য বুঝেনি, তারা এখন কিভাবে একটি কমুনিকেশন স্যাটেলাইটের মূল্য বুঝবে?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৩:০৯
১৫টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×