সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে হাইকোর্টে সুয়োমোটোর প্রেক্ষিতে দুদক হাইকোর্টে সমস্ত নথি পত্র নিয়ে হাজির হয়।
আজ রোববার। ১৪ আগস্ট ২০২২
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক আদালতে বিএফআইইউর প্রতিবেদন জমা দেন।
দুদক আইনজীবিগন আদালতে দেখাতে সক্ষম হয় যে তারা সুইস ব্যাংক গুলোতে বিভিন্ন বাংলাদেশীদের জমাকৃত অর্থ সম্পর্কে জানতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে এবং জবাবে সুইস কর্তৃপক্ষ এর প্রেক্ষিতে কোনো তথ্য দেয় নাই। একজনের তথ্য দিলেও আংশিক, কন্ডিশনাল।
এই বিষয়ে তারা আদালতে সব চিঠি-পত্র, ইমেইল ইত্যাদি হাজির করে।
অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ বিদেশি এফআইইউদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে, বিশ্বব্যাপী এসব তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো ইএসডব্লিউ (এগন্ট সিকিউর ওয়েব)।
বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে মানি লন্ডারিং আইন প্রণয়ন হয় যার নাম "মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০২ "।
কিন্তু পার্লামেন্টে উত্থাপিত হয় নি। পরবর্তীতে, ২০০৯ এ আওয়ামীলীগ সরকার বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও অধ্যাদেশ রহিত করে "মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২" নামে নতুন একটি আইন পাশ হয়। এটি পশ্চিমা বিশ্বের আইনের সাথে সংগতি রেখে ২৮টি সম্পৃক্ত অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১২ তেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সুইজারল্যান্ডের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে সমঝোতা চুক্তি করার জন্য চিঠি দেয়। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তিতে বাংলাদেশ বিএফআইইউ ও এগমন্ট গ্রুপের সদস্যপদ পায়৷
এগমন্ট গ্রুপ হলো পৃথিবীর সব দেশের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটগুলোর একটি জোট৷ যেই ফোরাম মানি লন্ডারিং অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ইনটেলিজেন্স নিয়ে কাজ করে৷ সেই হিসেবে বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট ভাবে বিশ্বের কারো একাউন্ট তথ্য চাইলে যে কোন ব্যাঙ্ক দিতে বাধ্য।
কয়েক বছর আগে হংকং এর একটি ব্যাঙ্ক থেকে গ্রেফতারকৃত এক ব্যাক্তির একাউন্ট ডিটেইল স্টেট্মেন্ট মামলার এভিডেন্স বাংলাদেশে এনে দন্ড দেয়া সম্ভব হয়েছিল। এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে চোরাই টাকা ফেরত আনার উদাহরণও আছে৷
২০১৩ সালের জুলাইতে বাংলাদেশ ইএসডব্লিউর সদস্য হওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রপার চ্যানেলে সুইস ব্যাঙ্কে তথ্য চাওয়া হয়।
ইএসডব্লিউর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়, কিন্তু ২০১৪ সালে একজন ছাড়া আর কোন তথ্য দেয়া হয় নি।
আদালত বলেন, ‘তাঁর (রাষ্ট্রদূত) বক্তব্যে দেশে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আপনাদের (রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক) বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিভ্রান্তি দূর হবে। অর্থ জমাকারীদের বিষয়ে আপনারা তথ্য চেয়েছেন। তারা দিচ্ছে না। দিলেও শর্ত সাপেক্ষে। আপনারা তথ্য চেয়েছেন ও পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন, পরিষ্কার করেছেন। মানুষ মূল্যায়ন করবে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ (১৪-৮-২২) এসব কথা বলেন। আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সুইস রাষ্ট্রদূত কেন মিথ্যে বললেন এবং এই দেশের কিছু লোক কেন 'ওই' বিদেশী সাদা প্রানীটার তিন নাম্বার সন্তানের কথা মত লাফালো?
আপডেট - ২৮ আগস্ট ২২
অবশেষে সুইস দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে স্বীকার করেছে যে সুইস ব্যাংকের তথ্য চাওয়া নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সেদিনের বক্তব্য ভুল ছিল।
সুত্র - বাংলা ট্রিবিউন। আগস্ট ২৭, ২০২২
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৩১