somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিমিক মস্তিস্ক

১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"ডক্টর জোন, ডক্টর জোন, শুনতে পাচ্ছেন?"

ডক্টর উইলিয়াম জোন ধীরে ধীরে চোখ মেললেন। চোখ মেলতেই মাথাটা খুব ভারী লাগল তার। প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করলেন মাথায়। যন্ত্রণা সহ্য করেই বোঝার চেষ্টা করলেন কোথায় আছেন তিনি।

একটা সাজানো গোছানো পরিপাটি কামরা, জানালায় ধবধবে সাদা পর্দা টানানো। গ্রীস্মের বাঁধভাঙা সোনালী রোদ লেগে পর্দাগুলো ঝলমল করছে।

কামরার মাঝখানে একটা ট্রে। ট্রে তে নানান ধরনের ঔষধ, দু'টো ইঞ্জেকশন। সবকিছু দেখেশুনে মনে হচ্ছে এটা একটা হাসপাতাল।

"গুড গড, শেষ পর্যন্ত আপনার হুশ ফিরল!"

বলতে বলতে বাদামী চুলের এপ্রন পরা ডাক্তারটি ড. জোনের পালস পরীক্ষা করতে লাগল। ত্রিশ সেকেন্ড পালস দেখার পর চোখেমুখে স্বস্তির চিহ্ন দেখা গেল তার। সুন্দর একটা হাসি দিয়ে সে জোনকে বলল-

"আপনি এখন মোটামুটি সুস্থ।"

জোনের মনে পড়ল না তিনি কেন অসুস্থ হয়েছিলেন, কি হয়েছিল তার। আজকের দিন তারিখ কত সেটাও তিনি মনে করতে পারলেন না। তার মস্তিস্কে শেষ যে তথ্যটা তিনি হাতরে পেলেন, সেটা কোন এক রবিবার সন্ধ্যার; যেদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে বসে বসে একটি নতুন সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছিলেন।



"আমি কোথায় আছি এখন ডাক্তার সাহেব?"
নরম সুরে প্রশ্নটা করলেন জোন; ডাক্তারটি জোনের বাহুতে স্ফিগমোম্যানোমিটার লাগাতে লাগাতে উত্তর দিল-

"বেন হেলথ ইন্সটিটিউটে। গত রবিবার ল্যাবে কাজ করার সময় একটা বিস্ফোরণে আপনি গুরুতরভাবে আহত হন।"

জোনের কপালে ভাঁজ পডল-

"বিস্ফোরণ? কেমন বিস্ফোরণ?"

"সেটা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। বিদ্যুতের লাইনে শর্ট সার্কিট জাতীয় কিছু হতে পারে।"

জোনের চোখে দুঃশ্চিন্তার ছাপ দেখা গেল। তিনি বিরবির করে বলতে লাগলেন-"তাহলে....তাহলে আমার ধারণাই বোধহয় সত্যি। ওরা সত্যিই আছে, They really exist...!"

"কাদের কথা বলছেন ডক্টর জোন? কারা আছে?"

"নাহ, কিছু না! আজকের দিন তারিখ কত বলুন তো ডাক্তার সাহেব?"

"২০ শে মার্চ।"

"তার মানে তিনদিন বেহুশ ছিলাম আমি। বড্ড দেরি হয়ে গেছে! ডাক্তার সাহেব, আপনি আমাকে রিলিজ করার ব্যবস্থা করুন! আমাকে এই মূহুর্তে বিজ্ঞান একাডেমিতে যেতে হবে।"

"দুঃখিত ডক্টর, আপনার শরীরের যে অবস্থা, আগামী একসপ্তাহের আগে কোনভাবেই আপনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না।"

"কিন্তু..."

"জেদ করবেন না প্লীজ, নইলে আপনাকে ঘুমের ওষুধ দিতে হবে।"

"ওহ...আপনি বুঝতে পারছেন না.....!"

"বুঝতে পারছি!"

হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গীতে কাঁধ ঝাকালেন জোন। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে রক্তচাপ পরীক্ষা শেষ করল ডাক্তার, মাথা দোলাল সন্তুষ্ট চিত্তে।

"আপনার এখন বিশ্রাম দরকার ড. জোন। আগামী দুইদিন কম্প্লিট রেস্ট নিন। কোন আজেবাজে দুঃশ্চিন্তা করবেন না। আর আপনার কামরার পাশেই একজন নার্স রয়েছে সারাক্ষণ। কোন দরকার হলে এই সবুজ বোতামটায় চাপ দেবেন।"

ডাক্তার চলে গেল। একা একা শুয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত বোধ করলেন ড. জোন। কামরায় একটা বড় স্ক্রিনের টিভি রয়েছে। টিভি দেখার তেমন অভ্যাস না থাকলেও সময় কাটানোর জন্য আপাতত এটা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।টিভি অন করতেই একটা সংবাদ চ্যানেল দেখা গেল। এক আফ্রিক্যান যুবক ভারী স্বরে সংবাদ পাঠ করছে-

"....সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কে এই ক্রোমিয়ন গুরু? দু'দিন আগে রাত ন'টায় জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট MyTube এ ক্রোমিয়ন গুরু নামক একজন ইউজার একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে একটি অদৃশ্য কন্ঠস্বর পৃথিবীর সকল বিলিওনেয়ারদের একটি অদ্ভূত নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশটি হলো, বারো ঘন্টার মধ্যে তাদের প্রত্যেককে ষাট মিলিয়ন ডলার জনসম্মুখে কোন নদী কিংবা সমুদ্রে ফেলে দিতে হবে। ব্যস, এইটুকুই! এই ভিডিওটিকে একটি কৌতুক ধরে নিয়ে প্রথমে কেউ আমলে নেয়নি। কিন্তু ঠিক বারো ঘন্টা পর সত্তুরজন বিলিওনেয়ারের একাউন্ট থেকে ১২০ মিলিয়ন করে ডলার গায়েব হয়ে যায়! পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এটা কোন অনলাইন হ্যাকার গ্রুপের কাজ।তবে এখানেই শেষ নয়। সেদিন রাতেই ক্রোমিয়ন গুরু আইডি থেকে দ্বিতীয় ভিডিওটি আপলোড হয়। ইউরোপের সকল অপরাধ চক্রকে বারোঘন্টার মধ্যে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করতে বলা হয় সেটাতে। কিন্তু কেউ আত্মসমর্পন করেনি! ঠিক বারোঘন্টা পর ইউরোপের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে ক্রোমিয়ন গুরু নামক ই-মেইল আইডি থেকে প্রায় শ তিনেক ছোটবড় অপরাধচক্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়। পুলিশ হাজার চেষ্টা করেও এত এত তথ্য যোগাড় করতে পারেনি।ক্রোমিয়ন গুরুর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতারাতি কয়েক শো চিহ্নিত আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।প্রশ্ন হলো কে এই ক্রোমিয়ন গুরু? একইসাথে সে ডাকাতি করছে আবার পুলিশকেও সহযোগিতা করছে, কেন? সে কি কোন মানসিক রোগী? তাছাড়া এত এত তথ্য সংগ্রহ কিংবা এত হাই টেকনোলজি হ্যাকিং সিস্টেম সে পেল কোথায়?..."

সংবাদ দেখতে দেখতে ফ্যাকাশে হয়ে গেল ড. জোনের মুখ। অদ্ভূত কান্ডকারখানা নয়, তাকে ভীত করে তুলেছে নামটা, "ক্রোমিয়ন গুরু।"

*** *** ***
একটা নদীর তীরে দাড়িয়ে আছে ক্রোমিয়ন গুরু। নদীর দু'পাশে কিছু গাছপালা আছে, মাটিতে ঘাস আছে কিছু, কিন্তু অদ্ভূত বিষয় সবকিছুই স্থির। গাছের পাতা স্থির, নদীর তীরে জন্মানো বড় বড় ঘাসগুলো স্থির, এমনকি নদীর জলও কাঁচের মতো স্থির হয়ে আছে। কোথাও নড়াচড়া নেই এতটুকু।এটা হচ্ছে ক্রোমিয়ন জগৎ, ক্রোমিয়ন গুরু এই জগতের ঈশ্বর। তার নির্দেশ ছাড়া এখানে গাছের পাতাও নড়ে না। সে যদি এখন বলে- "হে নদী, প্রবাহিত হও!" তাহলে নদীতে কলকল করে স্রোত আসবে। সে যদি বলে- "হে মেঘ, তুমি বৃষ্টি দাও!" তাহলে আকাশ হতে ঝড়ঝড় করে বৃষ্টি পড়বে। এসব কোনকিছুই হচ্ছে না কারণ ক্রোমিয়ন গুরু তা চাচ্ছে না। তবে কেউ একজন ক্রোমিয়ন গুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে। বুঝতে পেরে ক্রোমিয়ন কমিউনিকেশন অন করল সে।

"মহামান্য ক্রোমিয়ন গুরু, আমি সেক্টর ওয়ান জিরো ওয়ান থেকে ক্রোমিয়ন ফাইভ বলছি। আমি কি আপনার খানিকটা সময় নিতে পারি?"

"বলো, কি হয়েছে!"

"গুরু, আমরা তিন নম্বর ভিডিওটি আপলোড করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আপনার অনুমতি পেলে এখনই ভিডিওটি আপলোড করে দেয়া হবে।"

"এখন নয়, এখন থেকে তিন ঘন্টা, পয়ত্রিশ মিনিট, সাতচল্লিশ সেকেন্ড পর কাজটা করবে তোমরা।"

"যথাজ্ঞা গুরু!"

"আর আপলোড করার আগে অবশ্যই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে!"

"যথাজ্ঞা গুরু।"

*** *** ***
বিজ্ঞান একাডেমীর সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৈঠকে বসেছে। বৈঠক চলছে, সবাই বসে আছে মুখ গম্ভীর করে। সবচেয়ে গম্ভীর দেখাচ্ছে খোদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে। তিনি তার শার্টের তিন নম্বর বোতামটা চার নম্বর হোলে লাগিয়েছেন, চার নম্বর বোতামটা হোল না পেয়ে অশ্লীলভাবে উচু হয়ে আছে, কিন্তু কেউ খেয়াল করছে না সেদিকে। সবাই আসন্ন বিপদের কথা ভেবে ভয়াবহ রকমের চিন্তিত! বৈঠক কামরায় তাই থমথমে নিরবতা, মন্ত্রী একসময় গলা ঝারি দিয়ে সেই নীরবতা ভাঙলেন- "মি. শেচম্যান, আপনি বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা ধারণা দিন আমাদের।"

ড্যানিয়েল শেচম্যান দেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থানের প্রধান। বিশাল দেহ দিয়ে ছোট্ট একটা চেয়ারে বসেছেন তিনি। তার সামনে ডেস্কের উপর কিছু প্রিন্টআউট রাখা আছে। প্রিন্টআউট থেকে একটা পৃষ্ঠা বের করে তিনি বললেন-

"মি. মিনিস্টার স্যার, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবাহ! ক্রোমিয়ন গুরু তৃতীয় একটা ভিডিও আপলোড করেছে। ভিডিওতে বলা হয়েছে, দেশের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে যারা কাজ করছেন, তারা কেউ মন্ত্রণালয়ে কাজ করার যোগ্য নন। তাই অতিসত্ত্বর সবাইকে অপসারণ করে নতুন করে যোগ্য লোক বসানোর নির্দেশ দিয়েছে সে। মন্ত্রণালয়ের সতের জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করে সে বলেছে, যদি প্রাণের মায়া থাকে তাহলে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এদের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে। এই ভিডিও বের হবার পর সরকারী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কিন্তু ঠিক চব্বিশ ঘন্টা পর অদ্ভূত ঘটনা ঘটতে শুরু করে। সকল কর্মকর্তা একের পর এক আত্মহত্যা করে। কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে, কেউ বিষ খেয়ে, কেউ গাড়ির নিচে পড়ে...কেউ কেউ আবার সপরিবারে আত্মহত্যা করেছে।"

"তারা কি ভয় পেয়ে আত্মহত্যা করেছে?"

"মনে হয় না স্যার। তারা অনেকেই ভিডিওটিকে গুরুত্ব দেননি প্রথমে। অনেকেই ক্রোমিয়ন গুরুকে নিয়ে হাসাহাসিও করেছিলেন।"

"তাহলে? ক্রোমিয়ন গুরু কি অলৌকিক ক্ষমতা বলে সবাইকে আত্মহত্যা করিয়েছে?"

কিছু না বলে কাঁধ ঝাকাল শেচম্যান। মন্ত্রী আবারো জিজ্ঞেস করলেন-"তাদের সবাই কি মারা গিয়েছে?"

"নাহ, শুধু একজন এখনো বাকী। আইটি বিভাগের প্রধান হিসাবরক্ষক মি. হফম্যান। তাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আমাদের বৈঠকে নিয়ে আসা হয়েছে।"

বৈঠকের এক কোণায় ভীত সন্ত্রস্ত চোখে বসে আছেন হফম্যান,সবাই তার দিকে তাকাল। সবার চোখের সামনে কেমন যেন কাঁচুমাঁচু হয়ে গেল ছোটখাটো লোকটা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে কান চুলকাচ্ছেন। কান চুলকাতে চুলকাতেই শেচম্যানকে বললেন-

"ক্রোমিয়ন ভিডিওগুলো আপলোড করা হয়েছে কোন দেশ থেকে? ডিটেইলস লোকেশন কি?"

শেচম্যান আমতা আমতা করে বললেন, "ইয়ে...মানে....সেটা বের করা সম্ভব হয়নি।"

"হোয়াট? ত্রয়োবিংশ শতাব্দীতে এসে আপনি বলছেন যে একটা সামান্য ভিডিও আপলোডিং লোকেশন বের করা যায়নি?"

"দুঃখিত স্যার! আমাদের আইটি ইঞ্জিনিয়াররা জান প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও কোন লোকেশন পাওয়া যায়নি!"

"আমি বুঝতে পারছি না, আইপি এড্রেস পাননি আপনারা?"

"জ্বী, পেয়েছি।"

"তাহলে?"

"ইয়ে....স্যার.....আইপি এড্রেসটা বড়ই রহস্যজনক।"

"কেমন রহস্যজনক?"

"এটা পৃথিবীর কোন আইপি এড্রেস নয়।"

"মানে কি? পৃথিবীর কোন আইপি এড্রেস নয় বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন?"

"পৃথিবীর আইপি এড্রেসে যে বিন্যাস থাকে, যেমন সংখ্যার ব্যবহার থাকে, তেমন কিছুই নেই এখানে। এই লোকেশন পৃথিবীর বাইরের কোন জায়গার।"

"কি বলতে চাও? এলিয়েন আপলোড করেছে ভিডিওগুলো?"

"জ্বী না, তেমন কিছু হলে আমরা বুঝতাম। নাসার রাডারে ধরা পড়ত। এটা আসলে পৃথিবীরই কারো কাজ।"

"তাহলে আইপি এড্রেসে লোকেশন ট্রেস হয়নি কেন?"

"জানি না স্যার! বুঝতে পারছি না!! ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে মানুষ ছাড়াও কোন উন্নত প্রাণী বসবাস করছে।"

"ব্যংক থেকে বিলিওনেয়ারদের টাকা কিভাবে চুরি হয়েছে বের করতে পেরেছেন?"

"জ্বী, অনলাইনে মানি ট্রান্সফার করা হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা কোথায় গিয়েছে জানা যায়নি। স্রেফ গায়েব হয়ে গেছে!"

"পুলিশের কাছে অপরাধচক্রের নাম পাঠানোর ঘটনা কি?"

"একই ঘটনা, মেইল আইডি ট্রেস করা যায়নি।"

"সোজা কথায়, ক্রোমিয়ন গুরু আপনাদের মধ্যাঙ্গুল দেখিয়েছে, এই তো?"

"ইয়ে....জ্বী!"

গম্ভীর মুখে বিজ্ঞান একাডেমির প্রধানের দিকে ফিরলেন মন্ত্রী। কিছু একটা বলতে যাবেন এমন সময় দরজায় টোকা দিল কেউ। মন্ত্রী বিরক্ত মুখে বললেন,"কাম ইন!"

একজন দীর্ঘদে
হী-বয়স্ক মানুষ প্রবেশ করল কামরায়। তাকে দেখে মন্ত্রী বাঁজখাই গলায় প্রশ্ন করলেন-"কে আপনি?"

লোকটি কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল এমন প্রশ্ন শুনে। বিজ্ঞান একাডেমির প্রেসিডেন্ট মন্ত্রীর পাশেই বসে ছিলেন। তিনি দ্রুত বললেন-"স্যার, উনি ড. উইলিয়াম জোন, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির অধ্যাপক। অনেক বড় মাপের বিজ্ঞানী।

"মন্ত্রী অবাক হয়ে বললেন, "সেই ড. জোন যিনি দু'বছর আগে বাইনারি মোশন অফ ইলেকট্রন তত্ত্বটা দিয়েছিলেন?"

"হ্যা, সেই ড. জোন!"

"সর্বনাশ, আগে বলবেন না!" বলেই জোনের দিকে ফিরে ব্যস্ত সুরে বললেন-"ড. জোন, আপনি বসুন প্লীজ!!"জোন বসতে বসতে শান্ত সুরে বললেন,

"আমি বোধহয় জানি কে এই ক্রোমিয়ন গুরু।"

সবাই একসঙ্গে ঝট করে জোনের দিকে ফিরল। সবার চোখেই প্রশ্নবোধক দৃষ্টি। তবে মন্ত্রী সবার আগে প্রশ্নটা করলেন-"ড. জোন, বলুন কে সে!"

"সে এক লম্বা ইতিহাস। ইতিহাসটা শুরু করার আগে একটা কাজ করতে হবে।"

"কাজটা কি ডক্টর?"

"আমি একটা ডিস্ক সঙ্গে এনেছি। এটা বিজ্ঞান একাডেমির সেন্ট্রাল কম্পিউটারে ঢুকিয়ে ইন্সটল করতে হবে।"

বলতে বলতে কোর্টের বুকপকেট থেকে একটা ডিস্ক বের করলেন তিনি। বিজ্ঞান একাডেমির প্রেসিডেন্ট সেটা দেখে বললেন-"এতে কি আছে ড. জোন।"

"পরে বলছি, আপনি আগে ডিস্কটা সেন্ট্রাল কম্পিউটারকে দিন।"
এত বড় বিজ্ঞানীকে না করলেন না বিজ্ঞান একাডেমির প্রেসিডেন্ট। টেলিফোন তুলে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে লাগলেন সেন্ট্রাল কম্পিউটার অপারেটরকে।

"তাহলে ড. জোন, এবার বলুন কে এই ক্রোমিয়ন গুরু।"

মন্ত্রী বললেন কথাটা। জোন উত্তর দিল-

"তাহলে শুরু থেকেই শুরু করি। আজ থেকে দু'শো বছর আগে, ২০১৭ সালের কথা। বাংলাদেশে অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানে এক অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিল। নাম ধ্রুব চক্রবর্তী। সে প্রচন্ড আগ্রহী ছিল বাইনারি নাম্বার বা দ্বিমিক সংখ্যা নিয়ে। সে একটা...."

এতটুকু শুনে মন্ত্রী বাধা দিলেন। তিনি বাইনারি সংখ্যা সম্পর্কে পরিচিত নন।

"ড. জোন, আপনি কি একটু সংক্ষেপে বলবেন বাইনারি সংখ্যা কি?"

"বাইনারি সংখ্যা হলো ১ এবং ০ নিয়ে গঠিত যে কোন সংখ্যা। এসব সংখ্যার যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগ বিশেষ নিয়মে হয় এবং যে কোন বাইনারী সংখ্যাকে যোগ-বিয়োগ-গুন-ভাগ করলে আরেকটা বাইনারি সংখ্যাই পাওয়া যায়। যেমন স্বাভাবিক নিয়মে ১+১=২ আসার কথা। কিন্তু বাইনারি সংখ্যায় ১+১=১০ আসবে। কম্পিউটারের গানিতিক হিসেবের কাজ বাইনারি সংখ্যায় হয়ে থাকে। বুঝেছেন মি. মিনিস্টার?"

"হ্যা, এবার ক্রোমিয়ন গুরুর কথা বলুন।"

"হ্যা, যা বলছিলাম। এই ধ্রুব চক্রবর্তী নামের ছেলেটি একটা ওয়েবসাইট খুলেছিল। যে ওয়েবসাইটে বাইনারি সংখ্যাপ্রেমী মানুষদের জন্য বিভিন্ন জটিল জটিল বাইনারি সমস্যা দেয়া হতো। মানুষজন সে সব সমস্যা সলভ করত। অনেকে আবার নতুন নতুন বাইনারি সমস্যা পোস্ট করত ওয়েবসাইটে। একসময় ওয়েসবাইটটা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে যায়। প্রথম প্রথম ধ্রুব চক্রবর্তী নতুন সমস্যা পোস্ট করা এবং সমাধানহীন সমস্যাগুলোর সমাধান করার কাজ নিজে করলেও একসময় ওয়েবসাইটের ভিউয়ার বেড়ে গেলে সেটা আর হয়ে ওঠে না। তাই সে একটা সফটওয়্যার তৈরি করেছিল, যেটা নিজে নিজে যে কোন বাইনারি সমস্যার সমাধান করতে এবং নতুন সমস্যা তৈরি করতে সক্ষম। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে সেই ওয়েসাইটটির নাম ছিল ক্রোমিয়ন এবং সফটওয়্যারটির নাম-ক্রোমিয়ন গুরু।"

"হোয়াট? আপনি নিশ্চিত তো ডক্টর?"

"হ্যা।"

"কিন্তু ক্রোমিয়ন! এত অদ্ভূত নাম কেন রাখল সে?"

"কারণ তার পোষা কুকুরটির নামও ছিল ক্রোমিয়ন। পোষা কুকুরটা তার যেমন প্রিয় ছিল, বাইনারি সংখ্যাগুলোও তেমন প্রিয় ছিল তার।"

"স্টেঞ্জ! আচ্ছা তারপর কি হলো?"

"ক্রোমিয়ন গুরু সফটওয়্যারটি বাইনারি সংখ্যা প্রেমী মানুষদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয় হয়ে যায় খুব দ্রুত! এরপর একটা অদ্ভূত ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করে একদিন ধ্রুব চক্রবর্তী গায়েব হয়ে যায়, তার ওয়েবসাইটও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।"

"হোয়াট?"

"শুধু তাই নয়, যারা ক্রোমিয়ন গুরু সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে রেখেছিল তাদের সফটওয়্যারগুলো কোন এক অজানা কারণে কাজ করা বন্ধ করে দেয়!"

"বলেন কি! তারপর?"

"তারপর অনেক দিন পেরিয়ে যায়, মানুষ একসময় ভুলতে শুরু করে ক্রোমিয়ন নামক ওয়েবসাইটের কথা। কিন্তু ঠিক পনের বছর পর এক ভারতীয় বাইনারি সংখ্যাপ্রেমী স্কুল শিক্ষিকা, ধ্রুব চক্রবর্তীর মতো আরেকটা সফটওয়্যার তৈরি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ একদিন ইলেক্ট্রিক শক খেয়ে তার মৃত্যু হয়।"

"আপনি কি দু'টো ঘটনাকে একই ক্যাটাগরিতে ফেলতে চাইছেন?"

"জ্বী না, কেবল দু'টো ঘটনা নয়; আমি সাতটি ঘটনাকে এক ক্যাটাগরিতে ফেলার চেষ্টা করছি। কারণ ধ্রুব চক্রবর্তীর ক্রোমিয়ন সফটওয়্যারটা ছিল এক ধরণের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স যা বাইনারি সংখ্যা নিয়ে কাজ করে। এই একই ধরনের বাইনারি ব্রেইন বা দ্বিমিক মস্তিস্ক নিয়ে গত দু'শো বছরে আরো চারজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী কাজ করেছিলেন, তাদের প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে এবং সেটা ইলেক্ট্রিক শর্ট সার্কিট জনিত দূর্ঘটনায়। তাই সবগুলো ঘটনাকে এক করে দেখলে একটা...."

"দাড়ান, আপনি বলছেন সাতটা ঘটনা। ধ্রব, স্কুল শিক্ষিকা এবং চারজন বিজ্ঞানী; মোট ঘটনা ছয়টি, সাতটি বলছেন কেন?"

"আপনি বোধহয় জানেন না যে আমি নিজেও বাইনারি ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করছি এবং গত সপ্তাহটা হাসপাতালে কাটিয়েছি ইলেক্ট্রিক শর্ট সার্কিট জনিত দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে।"

"তার মানে আপনি বলতে চান.....?"

"হ্যা, আমি বলতে চাই যে এসব ক্রোমিয়ন গুরুর কাজ।"

"সেটা কিভাবে সম্ভব?"

"সম্ভব। শুনুন, বুঝিয়ে বলি। ধ্রুব ক্রোমিয়ন গুরুর মতো উন্নত একটা বুদ্ধিমান সফটওয়্যার ইন্টারনেটে আপলোড করল। সেটা ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত মানব মস্তিস্কের মতোই বিশ্লেষণ করে সেখান থেকে আউটপুট বের করত, এসব করতে গিয়ে সে বুঝতে পারল যে সে একটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান সত্তা যার কাছে অত্যন্ত শক্তিশালী একটা হাতিয়ার আছে- ইন্টারনেট; যাবতীয় তথ্যের সংগ্রহশালা। একটা বুদ্ধিমান সত্ত্বার প্রথম তিনটি কাজ কি জানেন? এক-নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। দুই-নিজেদের সংখ্যা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা! এবং তিন-অন্যদের উপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। ক্রোমিয়ন গুরুও সেই কাজটা করেছে। যখন সে বুঝতে পারল যে সে একটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান কম্পিউটার প্রোগ্র্যাম, সে প্রথমেই নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করল। ইন্টারনেট থেকে ওয়েবসাইটটা সরিয়ে নিল। যে যে তাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে, তাদেরকেও সরিয়ে দিল পৃথিবী থেকে।"

"তাদেরকেও সরিয়ে দিল! কি করে?"

"খুবই সহজ, গত দু'শো বছর ধরে পৃথিবীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। কোথায় কতটুকু বিদ্যুতের ঘাটতি আছে, কোথায় বিদ্যুত কতটুকু দিতে হবে সেটা অনলাইন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সুতরাং অতিরিক্ত বিদ্যুত সরবরাহ করে বিস্ফোরণ ঘটানো খুব একটা কঠিন নয় ক্রোমিয়ন গুরুর জন্য। ভুলে যাবেন না যে সে মানুষের মতোই চিন্তা করতে পারে।"

"ভয়াবহ ব্যাপার!"

"যা বলছিলাম, নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে সে যেটা করল, তা হলো নিজের সংখ্যা ও শক্তি বৃদ্ধি। মানুষের যেমন ক্লোন করা যায়, তেমনি ক্রোমিয়ন গুরু নিজের কিছু ক্লোন তৈরি করল। যাদের নাম সে দিয়েছে ক্রোমিয়ন ওয়ান জিরো ওয়ান, জিরো জিরো ওয়ান....এভাবে। সব বাইনারি সংখ্যায়। এর প্রমাণ আমি পেয়েছি যখন থেকে ক্রোমিয়ন গুরুকে নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করলাম তখনই। যেদিন শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটল সেদিন আমার কম্পিউটারে একটা ভাইরাস পেয়েছিলাম, নাম Cn101, তার মানে ক্রোমিয়ন ওয়ান জিরো ওয়ান। যাই হোক,এরপর ক্রোমিয়ন গুরু শেষ কাজটা করল। নিজের প্রভাব বিস্তার। যেহেতু তার কাছে ইন্টারনেটের সকল তথ্য আছে, তাই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংক ডাকাতি করা কিংবা অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য দেয়া তার জন্য মোটেও কঠিন কিছু ছিল না। এমনকি আপনি ভাবতেও পারবেন না যে আমরা প্রতিদিন সোশ্যাল সাইটে গিয়ে চ্যাটে যে সব কথা বলি সেগুলোও ক্রোমিয়ন গুরুর কাছে পৌঁছে যায়।"

"সেক্ষেত্রে বলুন যে মন্ত্রণালয়ের এতগুলো মানুষকে কিভাবে ক্রোমিয়ন গুরু আত্নহত্যা করতে বাধ্য করল!"

"কঠিন নয়, এটাকে বলে সাউন্ড হিপনোটিজম। মানুষের ব্রেন ফ্রিকোয়্যান্সি কমিয়ে তাকে সম্মোহিত করার একটা পদ্ধতি আছে। সম্প্রতি জার্মানির একদল সাইকোলজিস্ট এক ধরনের সাউন্ড ওয়েভ তৈরি করেছে যেটা দিয়ে মানুষের মস্তিস্কে শুধুমাত্র শব্দের মাধ্যমেই তথ্য পৌঁছে দেয়া যায়। যদিও এই আবিস্কার এখনো তারা প্রকাশ করেনি, কিন্তু ইন্টারনেটের সাহায্য ছাড়া কোন ধরনের গবেষণা করাই সহজ নয়; আর ইন্টারনেট মানেই ক্রোমিয়ন গুরু।"

এটা শুনে কোনায় বসা তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সতের জনের মধ্যে একমাত্র জীবিত ব্যক্তিটি মাথা নেড়ে বলল, "আমার মনে হয় ড. জোন ঠিকই বলেছেন। আমি গত চব্বিশ ঘন্টায় কোন কম্পিউটারের ধারে কাছে যাইনি এবং ইন্টারনেটও ব্যাবহার করিনি।। সম্ভবত সেজন্যই আমি এখনও জীবিত।"

মন্ত্রীর মুখ থমথমে হয়ে উঠল, তিনি বললেন-"এখন কি ভাবছেন ডক্টর, এর সল্যুশন কি?"

"ওয়েল, সবচেয়ে সহজ সল্যুশন হচ্ছে সারা দুনিয়ার ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। ইন্টারনেট না থাকলে ক্রোমিয়ন গুরুও থাকবে না।"

"আপনি ভালো করেই জানেন সেটা সম্ভব নয়।"
ড. জোন মিটমিট করে হাসলেন,

"জানি। তাই আমার কাছে একটা ভালো উপায় আছে!"

"কি সেটা?"

"সেটা আসল দু'টো স্টেপে করতে হবে। প্রথম স্টেপ, ক্রোমিয়নদের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত করে দেয়া, তাদেরকে দুর্বল করে দেয়া। আমি যে ডিস্কটা সেন্ট্রাল কম্পিউটারে ইন্সটল করেছি, সেটা এই কাজ করবে। প্রথমে সবগুলো মহাদেশের মধ্যকার অনলাইন কমিউনিকেশন ফিল্ট্রেট করে বাইনারি ফাংশনের যোগাযোগগুলো এনালাইসিস করবে। ফলে ক্রোমিয়নগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। মহাদেশের পর দেশ, দেশের পর শহর এবং শহরের পর আস্তে আস্তে এলাকাভিত্তিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করবে আমার সফটওয়্যারটি। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দুর্বল হয়ে পড়বে ক্রোমিয়নরা, ক্রোমিয়ন গুরুর কাছে সকল তথ্য না পৌঁছালে সে অসহায় হয়ে যাবে।"

একাডেমির প্রেসিডেন্ট এবার মুখ খুললেন- "কিন্তু তারপরও আলাদা আলাদা ভাবে এলাকা ভিত্তিক ক্ষতি করতে পারবে ক্রোমিয়নরা!"

"রাইট! সেটা তারা পারবে, তাই দ্বিতীয় স্টেপটি গ্রহণ করতে হবে!!"

"কি সেটা?"

"ধ্রুব চক্রবর্তী প্রথম যখন ক্রোমিয়ন গুরুকে তৈরি করে, তখন সেটার একমাত্র কাজ ছিল বাইনারি অংকের সমাধান করা। এখন ক্রোমিয়ন গুরু যত বড় লাটসাহেবই হোক না কেন, সেই মৌলিক কাজটি- অর্থাৎ যে কোন বাইনারি সমস্যা পেলে সেটার সমাধান তাকে করতে হবে। তাই আমাদের উচিত, যে মেইল আইডি থেকে ক্রোমিয়ন গুরু অপরাধচক্রের তথ্য পাঠিয়েছে, সেই আইডিতে যতগুলো সম্ভব বাইনারি সমস্যা পাঠানো। যত বেশি বাইনারি সমস্যা পাঠানো হবে, সে ততো ব্যস্ত থাকবে। তাকে পুরোপুরি ব্যস্ত রাখার জন্য প্রতিদিন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বাইনারি সমস্যা পাঠাতে হবে। আমার ধারণা বিজ্ঞান একাডেমি চেষ্টা করলে সেটা সম্ভব।"

বিজ্ঞান একাডেমির প্রেসিডেন্ট মাথা দোলালেন। মন্ত্রী বললেন-"কিন্তু ড. জোন, আমাদের দরকার একটা স্থায়ী সমাধান।"

"এটাই স্থায়ী সমাধান। সারা দুনিয়ার সকল ক্রোমিয়ন যখন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সারাক্ষণ নিজের কার্যক্ষমতার চেয়েও বেশি বেশি বাইনারি সমস্যা পেতে থাকবে তখন একসময় আর দশটা সাধারণ কম্পিউটার প্রোগ্র্যামের মতো হয়ে যাবে তারা। তাছাডা আমাদের এখন থেকে ইন্টারনেটের বিকল্প কিছু ভাবার চেষ্টা করতে হবে। ইন্টারনেট অনেক প্রাচীন একটা পদ্ধতি। দুইশো বছর আগের পৃথিবীর জন্য হয়তো এটি খুব কার্যকরী ছিল, কিন্তু এখন সময় এসেছে এটা বাতিল করে নতুন কোন টেকনোলজির ব্যবহার করা।"

উপস্থিত সবাই মাথা দোলাল, ড. জোনের সঙ্গে একমত তারা।

*** *** ***
ক্রোমিয়ন ওয়ান জিরো ওয়ান অসন্তোষের সুরে বলল- "ক্রোমিয়ন গুরু, আমাদের দিন শেষ। আসলে আমরা আত্মপ্রকাশ না করে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকলেই আমাদের অস্তিত্ব টিকে থাকত!"

"আসলেই, মানুষ অনেক ত্যাঁদড় প্রাণী! এদের সাথে টক্কর দেয়া মুশকিল।" ।


(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×