somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীত আর ভালো লাগেনা :(

১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীতের সকাল - নানাবাড়ী

শীতকাল টা ছোট্টবেলা থেকেই আমার কাছে ভাল লাগা একটি কাল। যদিও সারারাত কাঁথা মুড়ি দিয়ে একটু শীত শীত আমেজে ঘুমানোর পর সমস্ত চেতনা নিয়ে জেগে ওঠা তারপর কনকনে ঠান্ডার মুখোমুখি হওয়াটা সত্যিই কঠিন একটা বিষয় ছিল। তারপরও আলস্যকে পরাভূত করে যদি একবার উঠে পড়া যায় সুযোগ হয় নতুন একটা ভোর দেখার। শীতের ভোর। সাররাত কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকার পর প্রকৃতির আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে ওঠার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়।

আমি বেড়ে উঠেছি ছোট ছিমছাম একটি পাহাড়ী শহরে। মাঝে মাঝেই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে যেতাম। আমাদের বাসার ঠিক পিছনেই ছিল কর্ণফুলী হ্রদ আর তার পাশ ধরে চলে যাওয়া উচু পাহাড় শ্রেনী। পাতা ঝরে যাওয়া নেঢ়া সেগুন গাছ গুলো সেখানে কেমন হতভম্বের মতো দাড়িয়ে থাকতো। আর তাদের মাথার উপর বিশাল মেঘের মতো ঝুলে থাকতো শুভ্র কুয়াশার দল। চারদিকটা কেমন অস্বাভাকিক নিরব। একটু গা ছমছমে। পাহাড়ী শহরের ভোর এমনই হয়।

শীতকালে বার্ষীক পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত। তখন মাঝে মাঝে গ্রামে যেতাম। গ্রাম বলতে নানা বাড়ী। নোয়াখালীর প্রত্যন্ত একটি গ্রাম (এখন নয়)। সেখানে শীতটা আবার অন্যরকম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে গাছ থেকে টিনের চালে কুয়াশা ঝরে পড়ার শব্দটা অদ্ভুত একটা ভালো লাগার আবেশ তৈরি করতো। ভোর বেলায় পাশের মক্তোব থেকে সুর করে আরবী পড়ার শব্দ ভেসে আসতো। তারপর উঠে পড়তাম। গ্রামের ছেলে বুড়োর দল শীত তাড়ানোর আয়োজনে ব্যস্ত। খের (শুকিয়ে যাওয়া ধানের শীষ আর কান্ড) জড়ো করে আগুন ধরানো হতো, তারপর সবাই চারপাশে গোল হয়ে বসে জম্পেস আড্ডা। নানাবাড়ীর সামনে আর পিছনে যতদুর চোখ য়ায় ধানি জমি। নবান্নের আমেজ ততদিনে শেষ। তাই সারা মাঠ ধু ধু করতো । অবশ্য কৃষকরা আবার নতুন করে চারা লাগানোর পরিকল্পনায় হালের গরু আর লাঙ্গল নিয়ে ব্যস্ত। শীতকে তারা খুব একটা পাত্তা দিতনা। গ্রামের শীতের আরেকটি মজার ব্যপার হলো নতুন চালের গুড়োর পিঠা আর খেজুরের রসের পায়েস। খাওয়ার চেয়ে অবশ্য এর আয়োজনটাই ভাল লাগতো আমার কাছে।

এখনও মাঝে মাঝে নানার বাড়ীতে যাওয়া হয়। সেই ধু ধু প্রান্তর আর নেই। চোখের দৃষ্টি ভীষনভাবে ধাক্কা খায় চারদিকে। বেঙের ছাতার মত নতুন বাড়ীঘর তৈরি হচ্ছে। খুব কষ্ট হয়।

এখন কর্মসুত্রে সিলেটে থাকি। কয়দিন আগে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। ভীষন শৈত প্রবাহ বইছিল দেশজুড়ে। রাস্তার পাশের একটা খোলা জাযগায় দেখলাম একজন বৃদ্ধ শুয়ে আছেন। বাংলাদেশে এটা খুব স্বাধারন একটা দৃশ্য। তারপরও কেন যেন বুকটা ধ্বক করে উঠলো। ভালোভাবে তাকালাম। বৃদ্ধটির অপলক দৃষ্টি শীতল আকাশের দিকে নিবদ্ধ। বুঝলাম উনি সম্ভবত কিছুক্ষন আগেই মারা গেছেন। এতো খারাপ লাগলো...

এই শীতে আরেকটি নতুন উপলোদ্ধি হলো। আমার শরীর টাও মানে হয় শীত উপোযুগী নয় । কয়েকদিন থেকেই খেয়াল করছিলাম রাতের বেলা বুক থেকে শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে :| ডাক্তার দেখালাম। বললেন এ্যজমা হয়ে গেছে! দু দুটি ইনহেলার, এন্টিবায়োটিক আরো কি সব ওষুধ সহ পাক্কা একমাসের কোর্স। এখন তাই এইসব নিয়েই ব্যস্ত আছি।

শীতের এই বাজে ব্যপারগুলো আমার জানা ছিল না আমার। তাই এখন আর শীত ভালো লাগেনা :((

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৫৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×