somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বাস

১৩ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাকে নিয়ে ট্যাক্সি এসে থামল এক উঁচু দালানের সামনে। ‘আপনি, প্লিজ, মিটারটা বন্ধ করবেন না! আমি এক মিনিটের জন্য এই অফিসে যাব আর আসব। তারপর আমাকে আরেক জায়গায় যেতে হবে।’
ট্যাক্সিচালক কপাল কোঁচকাল। স্পষ্টতই অসন্তুষ্ট সে।
‘নাকি ভাড়াটা দিয়ে যাবেন?’ সে প্রস্তাব দিল।
‘আরে না, আমাকে অন্য জায়গায় যেতে হবে তো,’ বললাম আমি, ‘নাকি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না? ভাবছেন, আমি পালিয়ে যাব?’
‘আমি কিছুই ভাবছি না,’ ট্যাক্সিচালক বলল, ‘যাত্রী তো নানান কিসিমের হয়, কেউ পালিয়ে যায়, কেউ যায় না...’
‘ওহ্, তার মানে আপনি ভাবছেন, আমি পালিয়ে যেতে পারি, তাই তো? ঠিক আছে, আমানত হিসেবে আমি আমার হ্যাটটা রেখে যাচ্ছি।’
‘আরে ধুর!’ আহত বোধ করল ট্যাক্সিচালক, ‘আপনার হ্যাট নিয়ে আমি কী করব? আমি আপনাকে বিশ্বাস করি... আপনি বরং আপনার ব্রিফকেসটা রেখে আপনার কাজে যান।’
‘ওহ্, এই ব্যাপার!’ আমার রাগ ধরে গেল, ‘ঠিক আছে, ব্রিফকেসটা রাখছি বটে, তবে আপনার গাড়ির নম্বরটাও লিখে নিচ্ছি।’
‘আশ্চর্য! আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না?’ কপাল কুঁচকে বলল ট্যাক্সিচালক, ‘ভাবছেন, আমি চলে যাব?’
‘আমি কিছুই ভাবছি না,’ আমি বললাম, ‘ট্যাক্সিচালক তো নানান কিসিমের হয়, কেউ হ্যাট পরতে পছন্দ করে, কেউ পছন্দ করে ব্রিফকেস...’
‘ওহ্, এই ব্যাপার!’ বলল ট্যাক্সিচালক, ‘ঠিক আছে, লিখে নিন গাড়ির নম্বর: এমটি ৪০-২০। তবে তার আগে আপনার ব্রিফকেসের ভেতরে কী আছে, দেখান।’
‘কেন?’
‘যাতে পরে কোনো অভিযোগ না থাকে।’
‘এই দেখুন,’ ক্ষুব্ধস্বরে বললাম আমি, ‘কিছু কাগজপত্র, কয়েকটা বই আর ইলেকট্রিক শেভিং রেজর।’
‘রেজরটা কাজ করে, নাকি নষ্ট?’
‘নষ্ট হবে কেন? শুধু এখন কাজ করছে না।’
‘এখন মানে? চেক করে দেখার কোনো খায়েস আমার নেই।’
‘বলা তো যায় না,’ বিদ্রূপের হাসি হেসে বললাম, ‘আপনি এখন আনশেভ্ড। মুখ ফোলাফোলা, চোখ বর্ণহীন, বাঁ গালে আঁচিল...’
‘চেহারার বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে নিচ্ছেন?’ কর্কশভাবে বলল ট্যাক্সিচালক, ‘দেখুন, দেখুন। আপনাকে চিনতে আমার ভুল হবে না। আলুর মতো নাক, চোখ গোলাকার, কান দুটো দুই ধরনের...’
‘শুরু যখন হলোই,’ আমার রাগ উঠল চরমে, ‘তখন চলুন, সবকিছু অফিশিয়াল করে ফেলি। এই নিন আমার ডকুমেন্টগুলো: পাসপোর্ট, পাস, বিয়ের সার্টিফিকেট। নিন! এবং নিশ্চিত হোন, একজন সৎ মানুষের সঙ্গে আপনার ডিলিং হচ্ছে। এখন আপনার ডকুমেন্টগুলো দিন।’
‘এই নিন,’ বলল সে, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্রেড ইউনিয়নের আইডি কার্ড...’
‘জন্মস্থানের সার্টিফিকেট নিশ্চয়ই নেই?’ বললাম আমি।
‘না,’ সে বলল, ‘তবে প্রয়োজন হলে আমাকে খুঁজে বের করা কঠিন হবে না। প্রয়োজনে অবশ্য আপনার নাগালও পাওয়া যাবে।’
আমরা পরস্পরের দিকে তাকালাম রাগী চোখে।
‘শুনুন,’ একসময় আমি বললাম, ‘আপনার লজ্জা করছে না?’
‘আর আপনার?’
‘আমার লজ্জা হচ্ছে আমাদের দুজনের জন্য।’ আমি জানালাম।
‘আমারও,’ চোখ নামিয়ে বলল সে, ‘আপনার ডকুমেন্টগুলো নিয়ে যান।’
‘আপনিও নিন আপনারগুলো...’
‘ব্রিফকেসটাও নিয়ে যান...’
‘ধন্যবাদ,’ বললাম আমি, ‘আপনার গাড়ির নম্বরটাও ভুলে যাব।’
‘ঠিক।’ বলল সে।
আমরা পিঠ চাপড়ে দিলাম পরস্পরের।
‘কীভাবে যে আপনার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করেছিলাম!’ বিস্ময় প্রকাশ করলাম আমি, ‘সুদর্শন চেহারা আপনার, ধূসর চোখ, গালে তিল।’
‘আপনার চেহারাও তো চমৎকার,’ বলল সে, ‘বড় বড় চোখ, পরিষ্কার কান...’
‘আমি যাব আর আসব।’ বললাম তাকে।
‘অবশ্যই,’ বলল সে, ‘আমি আপনাকে মিস করব...’
আমরা কোমল হাসি উপহার দিলাম পরস্পরকে। আমি ট্যাক্সি থেকে বের হলাম।
অফিসে ঢোকার মুখে আবিষ্কার করলাম, পাসটা নেই আমার সঙ্গে!
‘শালা!’ ভাবলাম আমি, ‘আমাকে বিশ্বাস করেনি বলেই পাসটা রেখে দিয়েছে নিজের কাছে। ব্যাপার না! যাবে কোথায় সে! সাবধানতার খাতিরে তার গাড়ির পেছনের চাকা ফুটো করে দিয়েছি না!’

রস+আলো সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:১৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×