মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে বিদেশী আইনজীবীরা বাংলাদেশের কোর্টে মামলা লড়তে পারছেন না এবং তাদের সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। ভিন দেশি এই আইনজীবীদের মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লড়তে দেয়া হলে কি হত তা নিয়ে এমত-সেমত- সহমত অনেক কিছুই থাকতে পারে।আসুন জেনে নেই কেন বা কিভাবে অথবা কি কারণে মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা লড়া থেকে ভিন দেশি আইনজীবীরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন???
সংবিধান কি বলে???
অন্যান্য আইন কি বলছে তা দেখার আগে আমরা আমাদের সংবিধান কি বলছে তা একটু যেনে নিব? আসুন দেখি বাংলাদেশের সংবিধান কি বলছে বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে।
সংবিধান বলছে;
অনুচ্ছেদ ৩১ এর শেষ অংশ-
“আইন অনুযায়ী ব্যতীত” এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে”
অনুচ্ছেদ ৩২
“আইনানুযায়ী ব্যতীত” জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হইতে কোণও ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।”
অনুচ্ছেদ ৩৩(১)
“গ্রেফতারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেফতারের কারন জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ-সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।”
সংবিধানের এই অংস গুলো পরে সহসাই মনে হতে পারে ‘মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের’ ক্ষেত্রে বিদেশী আইনজীবীরা নিজামি, মুজাহিদদের পক্ষে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না এবং সরকার বেআইনি ভাবে মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ভিন দেশি আইনজীবীদের আসতে দিচ্ছে না।
এক্ষেত্রে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে আইনজীবী বলিতে আমরা কি বুঝি? সংবিধানে সব কিছু লেখা থাকে না। যেহেতু মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফৌজদারি অপরাধের বিচার হচ্ছে সেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধি আইনজীবীর সংজ্ঞা নিরূপণ করার দাবি রাখে। কিন্তু তাতে কোথাও আইনজীবীর সংজ্ঞা নেই। আমাদের দেওয়ানি কার্যবিধির ২(১৫) ধারা মতে উকিল (আইনজীবী) বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যিনি অপরের পক্ষে আদালতে হাজির হওয়ার ও যুক্তিতর্ক পেশ করার অধিকারী। বাংলাদেশে আইনজীবীদের একমাত্র বৈধ অভিভাবক হল বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। যা বার কাউন্সিল আদেশ’ ১৯৭২ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই সংস্থাটি ই নির্ধারণ করে দেয় কিভাবে একজন আইনজীবী হবেন এবং আইনজীবীর অধিকার কি??? বার কাউন্সিল আদেশ’ ১৯৭২ এর ২(১) মতে “আইনজীবী হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি এই আদেশের আইন মতে নিবন্ধিত।”
উক্ত আইনের ২৭ অনুচ্ছেদ মতে আইনজীবী হইতে হইলে নিন্ম লিখিত যোগ্যতা থাকতে হবেঃ
১) বাংলাদেশের নাগরিক হইতে হবে,
২) কমপক্ষে ২১ বছর বয়স,
৩) বাংলাদেশের যে কোন(স্বীকৃত) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বা ২৬ মার্চ ১৯৭১ এর পূর্বে পাকিস্তানের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি বা ১৯৪৭ এর পূর্বে ভারত আইন মতে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি অথবা বাংলাদেশ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক বা তার সমতুল্য আইনি ডিগ্রি যা বার কাউন্সিল দ্বারা স্বীকৃত।
৪) বার কাউন্সিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং
৫) বার কাউন্সিল নির্ধারিত ফি প্রদান করে অন্যান্য সকল প্রণিধান মেনে চলতে হবে।
উপরোক্ত আইনি আলোচনা বা উদ্ধৃতি থেকে এটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে ভিন দেশি আইনজীবীরা বাংলাদেশে আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না বা মামলা পরিচালনার যোগ্য নন শুধু বাংলাদেশী নাগরিক না হওয়ার কারনেই অন্যান্য কারন না হয় বাদ ই দিলাম। এটা শুধু বাংলাদেশেই না অন্যান্য দেশও এমন আইনের নজির আছে। যেমন- ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ অন্যান্য অনেক দেশ। অতএব আমাদের দেশে বিদেশি কোন আইনজীবী কোন ভাবেই কোন ব্যক্তির হয়ে কাজ করতে পারেন না। যে কেউ চাইলেই বাংলাদেশের কোর্টে নিয়ম আর নীতি ব্যতিরেকে প্র্যাকটিস করবার আলাদা সুযোগ পায় না। যদি তা পেতে হয় তবে সঠিক নিয়ম কানুন মেনেই তা করতে হবে। হোক সে মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন আদালত।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:০৪