somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি বাকরুদ্ধ; বিদায় শ্রদ্ধেয় নীরু ভাই

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৬ সালে উচ্চ শিক্ষা নিতে ঢাকায় এসে সাংবাদিক বিপ্লব মোস্তাফিজ ভাইয়ের হাত ধরে দৈনিক যুগান্তরে ঢাকা আমার ঢাকা পেজে কন্ট্রিবিউটিং শুরু করি। ২০০৭ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে এসে পরম স্নেহের সাথে সাংবাদিকতা শিখেছিলাম প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহাবুবুল হাসান নীরু ভাইয়ের হাত ধরে। তখন আমার পদচারণা ছিল এই নগরী পেজ ও সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন "রোববার"-এ। একই বছর ইত্তেফাকের তৎকালীন প্রতিদিনের পেজ "রোজনামচা" (বর্তমান নাম "আয়োজন") তৈরির আগে কী কী করবো তা নিয়ে তাঁর ধানমন্ডির বাসায় কয়েক দফায় বৈঠক করি। নানান পরিকল্পনা শেষে পেজটি আমি, নীরু ভাই এবং অনিরুদ্ধ পাল মিলে প্রতিষ্ঠা করি। সাথে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন শ্রদ্ধেয় তারেক ভাই। এরপর তিনি হঠাৎ করে চলে যান কানাডায়। দীর্ঘদিন তাঁর সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না। আমি তাঁকে ভীষণ মিস করতাম। জানতাম আর কোনদিন তাঁর সাথে দেখা হবে না। কিন্তু তাঁকে এতো বেশি মনের গভীরে স্থান দিয়ে ছিলাম যে আল্লাহ তায়ালা আমাকে তাঁর সাথে ২০১২ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা করিয়ে দেন। ঢাকার বাংলামোটর এলাকায় তাঁর মুখোমুখি হই। দেখা মাত্রই তাঁকে জড়িয়ে ধরি খানিকটা সময়। এরপর তিনি জানালেন কয়েক দিন আগেই তিনি দেশে এসেছে আবার কানাডায় ফিরে যাবেন। তবে এবার তিনি আমার সেল নাম্বার নিয়ে গেলেন। কানাডায় ফিরে গিয়ে তিনি নিয়মিত ফোন করতেন। সামহোয়্যারইন ব্লগসহ বেশ কয়েকটি ব্লগে তাঁর নামে আইডি খুলে দিতে বললেন। আমি দিলাম। মাঝে মধ্যেই তিনি আমাকে লেখা পাঠাতেন ব্লগে পোষ্ট করার জন্য। বলতেন, আমি একদিন চলে গেলেও অনলাইনে এসব আমার এসেট হয়ে থাকবে। ২০১৩ সালে এসে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন "সময়ের কথা" নামের একটি অনলাইন পোর্টাল তৈরি করবেন। ঢাকায় থেকে এর দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাকে। এ ব্যাপারে প্ল্যান করতে তিনি আমাকে দু'এক দিন পর পরেই ফোন করতেন। ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা ফোনে কথা বলতেন। দীর্ঘদিন তাঁর সাথে ফোনে কথা বললেও তিনি কখনই বলতেন না তিনি কঠিন দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। একদিন আমাকে অনেক ব্যক্তিগত গল্প বলতে গিয়ে বলে ফেললেন তিনি একটি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে লম্বা সময় ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি আরও জানালেন, একটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে তাঁর সহধর্মিণীর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাঁর মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে। কিন্তু তাকে দেখতে না পেরে তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এভাবে বলতে গিয়ে তিনি কেঁদেই ফেললেন......। এমন অজস্র গল্প আমার জানা। তবে ২০১৩ সালের শেষের দিকে এসে তিনি আমাকে বলেছিলেন, দেশে ফিরে আসবেন। সময়ের কথা পত্রিকাটি তিনি দাড় করাবেন। ঢাকাস্থ কয়েকটি সংগঠন তাঁর এই পত্রিকাটি প্রেস ক্লাবে উদ্বোধন করবেন বলেও জানিয়ে ছিলেন।


হঠাৎ নীরু ভাইয়ের সাথে প্রায় ২/৩ সপ্তাহ আমার যোগাযোগ বন্ধ। অনেক বেশি অসুস্থ হলে তিনি আমাকে ফোন করতে পাড়তেন না বলে যোগাযোগ বন্ধ থাকতো। তবে হঠাৎ এক রাতে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলো। ওপাশ থেকে একজন বললেন, আমি নীরু ভাইয়ের ছোট ভাই। তাঁর কথা শুনেই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম তিনি আমাকে কোন দুঃসংবাদ দেবেন। কিন্তু না। তিনি জানালেন, নীরু ভাই কিছুক্ষণ আগে দেশে ফিরেছেন। আপনার কথা কয়েকবার বলেছে। আপনাকে দেখতে চায়। আমি তাড়াহুড়া করে স্কাটনস্থ তাঁর বোনের বাসায় ছুটে গেলাম। দেখলাম, আগের সুস্বাস্থ্যয়ের অধিকারী নীরু ভাই কেমন যেন হালকা-পাতলা গড়নের দেহে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। ইচ্ছা করছিল দেখা মাত্রই তাঁর পায়ে গিয়ে লুটে পড়ি। কিন্তু তিনি অস্বস্তি বোধ করবেন বলে এমনটা করিনি। দেশে ফিরে আসার মতো তাঁর কোন ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি মনের আত্মবিশ্বাসে দেশে চলে এসেছেন। ধীরে ধীরে আমার খোঁজ খবর নিলেন। আমি বাদে আরও ২/১ জন ছাড়া আর কাউকে তাঁর দেশে ফেরার কথা বলেননি। আমাকে সত্যকারের অনেক ভালোবাসতেন বলেই এতোবড় প্রাপ্তিতা আমার ভাগ্যে জুটলো। জানালেন, কানাডার ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছে বলে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। দেশের মাটিতেই তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ইচ্ছা। তিনি বললেন, তোমাদের থেকে আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। আমার জন্য দোয়া কর আর অন্যদেরকেও দোয়া করতে বোলো। ব্লগ-ফেসবুকেও তাঁর জন্য দোয়া চেয়ে পোষ্ট দিতে বলেছিলেন। তাঁর ছোট ভাই জানালেন, বাংলাদেশেও নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে চান। নীরু ভাই দেশে এসে ফোন ব্যবহার করতে না। কারণ ফোনে কথা বলার মতো তাঁর অবস্থা নেই। তাঁর ছোট ভাইই একমাত্র ভরসা। কিন্তু কেন যেন তাঁর ছোট ভাইকে ফোন করে কখনই পেতাম না। তিনি ফোন ধরতেন না বা অফ করে রাখতেন। আবার কখনই তিনি আমাকে ফোন ব্যাক করতেন না। একদিন রাগ করেই স্কাটনে নিজে নিজে গিয়ে দেখা করে আসলাম। এরপর আরও কয়েকবার ফোনে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাকে পাইনি। প্রায় এক মাস হল তাদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু আজ রাত ১২টার দিকে বাসায় এসে ফেসবুকে বসতেই প্রথমে দেখতে পেলাম নীরু ভাইয়ের ছবি। বুকটা কেমন যেন ধক করে উঠলো। উপরে লেখা "আমরা শোকাহত"। আমার বুঝতে বাঁকি নেই। নিচের লেখাগুলো পড়তে ইচ্ছা বা সাহস কোনটাই করছিল না। তবে পড়লাম। জানতে পারলাম আমাদের অসম্ভব শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মাহাবুবুল হাসান নীরু না ফেরার দেশে চলে গেছেন গত ৮ জানুয়ারি। রংপুরে জন্মস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। আমি নির্বাক; বাকরুদ্ধ! তিনি চলে গেলেন অথচ আমি কিছুই জানি না। ফেসবুকে নব্বইয়ের দশকে নীরু ভাইয়ের সহকর্মী ও প্রবাসী সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম নাসিম-এর পোষ্ট থেকে এ তথ্য জানতে পারলাম। কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকার পর তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে দু'এক কথা লিখে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করলাম। তাঁকে নিয়ে আমার যে কত স্মৃতি তা বলে শেষ করা যাবে না।

ব্যক্তি জীবনে তিনি পাক্ষিক ক্রীড়ালোক, সাপ্তাহিক রোববার এর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রায় ৮টি পেজের বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিটিভিসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তিনি অনেক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন এবং তাঁর নির্মিত অসংখ্য নাটক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর লেখা অর্ধশত গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই রয়েছে।

সামহোয়্যারইন ব্লগে লেখা তাঁর লেখাগুলো পড়তে http://www.somewhereinblog.net/blog/mhniru এই ঠিকানায় যেতে পারেন। তিনি সর্বশেষ এখানে অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু নিয়ে লিখেছিলেন "পর্দার শেষ নবাব, বিদায় জনাব…"। এছাড়া তাঁর সম্পাদিত সময়ের কথা পড়তে ভিজিট করতে পারেন http://somoyerkotha.com ঠিকানায়। অবশেষে প্রিয় নীরু ভাই, আপনি যেখানেই থাকেন ভালো থাকেন। সেই দোয়াই করি। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আর ভালবাসা একটুও কখনই কমবে না। বিদায় নীরু ভাই.....
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩৭
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×