somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাই ফাই: সারপ্রাইজ!!!

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"উফ! কেন যে এই কাজ হাতে নিলাম?" বিরক্তির সাথে বিড় বিড় করতে লাগলেন মাহবুব সাহেব। "টানা তিন বছর ধরে গবেষনা করে কোন লাভ হল না। মানুষের আ চরন যে এত অদ্ভুত, এর ম্যাথমেটিক্যাল মডেল গুলো আজ এক রকম রেজাল্ট দেখায়, তো কাল অন্য রকম।" মনে মনে ঠিক করে ফেললেন তিনি। "এইবার কাজ না করলে, চাকরিটাই ছেড়ে দেব। রোবট থাকবে রোবটের মত এদের আবার সারপ্রাইজ অনুভূতি দেয়ার দরকার কি? পাবলিকের সব আজগুবী আপদার।" আরেকটি ব্যর্থ সিমুলেশনের পর চরম বিরক্ত রোবট আচরন বিশেষজ্ঞ ডঃ মাহবুব। "টানা দুইবছর লাগল শুধু এইটা বুঝতে যে স্ট্যাটিক্স এলগরিদম দিয়ে কাজ হবে না। কি পন্ডশ্রম! সারপ্রাইজ জিনিসটা কি বুঝতেই রবোট বিজ্ঞানী থেকে মনোবিজ্ঞানী হতে হয়েছে, তাতেও যদি কাজের কাজ কিছু হত। শেষ ভরসা নিজের তৈরী র্যা ন্ডম প্রবেবিলিস্টিক সারপ্রাইজ এলগরিদমটা। থিউরিটিক্যালি এটা কাজ করার কথা, তবুও মানুষের অনুভূতি বলে কথা। চান্স ফিফটি ফিফটি।

*****

গৃস্হলী কাজের রোবট আলু আর পটল সব সময় ভয়ে থাকে তাদের মনিব কখন কোন প্রোগ্রাম কপোট্রনে লোড করে দেয়। ভয়ের ব্যাপারটা আগে ছিল না, সবই তাদের বিজ্ঞ মনিবের কাজ।
"আলু,পটল কই তোরা এই দিকে আয়", হোমল্যাব থেকে ডাক দিলেন মাহবুব সাহেব।

আলুঃ কিরে পটল মহামান্য মনিব মাহবুব ডাকছে, যা।
পটলঃ কেন,আমি যাব কেন! তোকেও বুঝি ডাকে নাই?
আলুঃ আমার তো ভয় করে।
পটলঃ তোর কপোট্রনে ভয়ের যে এলগরিদম আমারটাতেও তা!
আমারও ভয় করে না বুঝি?
আলুঃ ইস! আমার যদি ভয়ে হিসু করার প্রোগ্রামটা থাকত, এতক্ষনে হিসু করে দিতাম।
পটলঃ শুধু কি প্রোগ্রাম থাকলে হবে? সাথে হার্ডওয়্যারও লাগবেনা বুঝি?
আলুঃ তোর রসিকতা করার প্রোগ্রামে নিশ্চত সমস্যা আছে পটল। রসিকতার মধ্যে বাগ ধরতে নাই, সেটও জানিস না গাধাঁ।

"কই আলু পটল,এতক্ষন লাগে আসতে?" ধমক দিয়ে বললেন মাহবুব সাহেব। খুব ভয়ে ভয়ে মাহবুবের হোমল্যাবে ঢুকল রোবট আলু আর রোবট পটল।
"দেখি তোদের কপোট্রনটা বের কর" । আলু পটল নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করল। তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই মাহবুব সাহেব হাইবারনেট করে দিলেন আলু,পটল কে।

*****

প্রোগ্রাম লোড শেষ! রোবট দুইটাকে এক্টিভ করল,মাহবুব। এবার পর্যবেক্ষন করার পালা। কিন্তু রেজাল্ট যে কখন দেখাবে! সারপ্রাইজ অনুভূতি বলে কথা। দেখা যাক কি হয়। যা, তোদের কাজে যা। আলু পটলকে বলল মাহবুব।

কতকাল যে কেটে গেছে এর মধ্যে! কত হাজার মাইক্রোসেকেন্ড। তারকি কোন হিসাব আছে? ধীরে ধীরে প্রোগ্রাম রিস্টোর হতে থাকে আলুর। আলুর মনে পড়ে যায় সব কিছু "তার নাম আলু, একটু মোটা টাইপের রোবট বলে এই নাম দিয়েছে তার মনিব মহামান্য মাহাবুব। আর পাশে যাকে দেখা যাচ্ছে সে হচ্ছে পটল। পটলের চেহেরার মুমূর্ষ ভাব। কি হয়েছে তার? ভাবল আলু। এর মধ্যে পটলের কৌতুহলের প্রোগ্রাম সম্ভবত চালু হয়ে গেছে, কারন সে প্রশ্ন করে বসল মহামান্য মনিব মাহাবুবকে "মনিব কি প্রোগ্রাম লোড করেছেন?" মাহাবুব সাহেব বললেন, সময় হলেই বুঝতে পারবি এখন এইখান থেকে ভাগ।

এর পর কেটে গেল অনেক দিন। সারপ্রাইজ এলগরিদমটা যে মোটামুটি ফ্লপ খেয়ে গেছে তা প্রায় নিশ্চিত। তবুও মাঝে মাঝে মাহাবুব সাহেব কপোট্রনের ভেরিয়েবল গুলোর অবস্থা দেখতেন, কোন ভেরিয়েবল কত ভ্যালু নিল। আচর্য্য সব ভেরিয়েবলই উল্টা পাল্টা মান দেখায়। মাহাবুব সাহেব আশা ছেড়ে দিলেন। গোল্লায় যাক সারপ্রাইজ।

*****

আগামীকাল মনিব মাহবুবের জম্মদিন। পটল, আলু কপোট্রনের মধ্যে কেমন যেন এক অনুভূতি হতে থাকে। কপোট্রনের লক্ষ্ কানেকশনে ভোল্টেজের অদ্ভুত ঢেউ টের পায় তারা। অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে মহামান্য মনিব মাহাবুবকে চমকে দেয়ার জন্য। পটল এই অনুভুতির কথা আলুকে জানাতেই, আলুর ফটোসেলের চোখ উজ্জল হয়ে উঠে। অবশ্যই এমনকিছু করতে হবে, যাতে মহামাণ্য মনিব চমকে যায়! বলল আলু।
পটল বলল কাল ভিন্ন ধরনের রান্নাবান্না হবে, আলু তুই রেসেপি বের কর আন্তঃজাল থেকে।
আইডিয়া খারাপ না, ভিন্ন স্বাদের রান্নাই করা হবে! বলল আলু।
"তবে তাই হোক!" বলল পটল।

*****

পুরো দিন বাইরে বাইরেই কাটল মাহবুবের। রাতের খাবার পরিবেশন করার জন্য ব্যস্ততা দেখা গেল আলু, পটলের। আলু পটলকে একটু পরে খাব বলে বিছানায় শুয়ে পড়লেন মাহাবুব সাহেব।

কিছুক্ষন পর আলু,পটল মাহবুবের রুমে এসে দেখে উনি ঘুমিয়ে পড়ছেন। কি আর করা এখন ঘুম থেকে তো ডেকে তুলা যাবে না, মাহামান্য মনিব ঘুম থেকে ডাকার প্রোগ্রামটা কপোট্রন থেকে সরিয়ে ফেলেছেন। তবুও অদ্ভুত কোন প্রোগ্রাম যেন নির্দেশ দিচ্ছে বার বার "চমকে দাও! চমকে দাও!" মাহবুবের বেডের সামনে দাঁড়িয়ে রইল আলু আর পটল।

হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গে মাহবুবে। কি ব্যাপার আলু পটল এইখানে দাড়াঁয় আছিস কেন? বললেন মাহাবুব সাহেব।
"না, মানে খাবার দেয়ার পর আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন, তাই" বলল পটল "কোথায় যেন মিলছে না। রোবট গুলো তো এই ধরনের আচরন করার কথা তো না" ভাবল মাহবুব। আচ্ছা তোরা যা, আমি আসছি। বললেন মাহবুব সাহেব।

*****

আদো ঘুম নিয়ে মাহবুব খাবার টেবিলে বসল। খাবারের রেসিপি আগে থেকে ঠিক করে দেয়া। আজ সোমবার। সামুদ্রিক মাছের সাথে ভেজিটেবল থাকর কথা। হটাৎ টেবিলের খাবারের দিকে খেয়াল করে চমকে উঠে মাহবুব! এগুলো রান্নাকরতে বলছে কে?
রোবট আলু,রোবট পটল চুপ। কারন এরই মধ্যে ভয়ের প্রোগ্রামটা চালু হয়ে গেছে!
মাহবুব আবার প্রশ্ন করতেই রোবট আলু পটল এক সাথে জবাব দিল "সারপ্রাইজ! হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ…হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ" রোবট কন্ঠে বার্থ ডে সং গাইতে থাকে আলু পটল
মাহবুব তো উত্তজিত হয়ে লাফিয়ে উঠল "সারপ্রাইজ!!!"
এতদিন পর তোদের মানুষ করতে পারলাম বলে মাহবুব সাহেব আনন্দে ঘুষি বসিয়ে দিলেন পটলের কপোট্রনে!এক ঘুষিতে পটল ইহ জগতের মায়া ত্যাগ করে। আর আলু ভয়ে মনিব মাহবুবের দিকে নিস্প্রভ চোখে পিট পিট করে তাকাতে থাকে।

পরিশিষ্ট

রোবট আলু জীবনে আর সারপ্রাইজের অনুভুতি প্রকাশ করেনি। কারন সারপ্রাইজের প্রোগ্রামটাতে ঢুকলেই ভয়ের প্রোগ্রামটা চালু হয়ে যায়!

---------------------------------------------------------------
Bug = In computer technology, a bug is a coding error in a computer program

©আজম
অন্যান্য সাই ফাই
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:৪৭
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×