somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত যুদ্ধ

০১ লা জুলাই, ২০০৮ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল ব্লগ পড়তে আসলে অনেক সময়ই মনটা খারাপ হয়ে যায়। ইতিহাস নিয়ে জামাতীয় প্রচারনাগুলো কেউ সামনে নিয়ে আসে, কারো কাছে তাহের রাজাকারকে "নিরপরাধ জাতীয় নেতা" মনে হয়, জেলে তার কষ্ট হচ্ছে এই চিন্তায় বুক ফেটে যায়, কারো কাছে বঙ্গবন্ধু আর রবার্ট মুগাবেকে একদরের নেতা মনে হয়।এদের সংখ্যা দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে।এদের কারোরই ৭১ এ রাজাকার থাকার কথা নয়, কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরও এই রাজাকারী চিন্তাগুলো এদের চিন্তায় কিভাবে ঢুকে ভেবে অবাক হই,মনটা খারাপ হয়ে যায়।

আমরা মুক্তিযুদ্ধকে একটি সমাপ্ত ক্রিয়া হিসেবেই প্রথম থেকে ধরে নিয়েছি, একটি অসমাপ্ত প্রক্রিয়া হিসেবে নয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী যুদ্ধগুলোর সম্পর্কে সচেতন থাকিনি, সদা সতর্ক থাকিনি মোটেও। আমরা খুবই আত্মতৃপ্ত ছিলাম। আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা থেকে শুরু করে পরিবারের ভেতরে নেয়া সিদ্ধান্ত গুলি হয় খুবই স্বল্পমেয়াদী, সেই ‘দিন আনি দিন খাই’-এর দর্শন অনুযায়ী। সব চেয়ে বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল, কি ছিল এর চালিকা শক্তি, কি ছিল এর অঙ্গীকার-এসব বিষয়ে আমাদের কোন পরিষ্কার ধারণা নেই। মুক্তিযুদ্ধের এই এতকাল পর আমরা অনেক কিছুই ভুলতে বসেছি। হয়তো একদিন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাই ভুলে যাব। এখনই বিজয় দিবস একটি আনুষ্ঠানিকতা। সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ, যেখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ দর্শকের আসনে বসে থাকেন একাত্তরে পাকিস্তানী নর ঘাতকদের প্রত্যক্ষ কিছু সহযোগীও,বক্তৃতা-আলোচনা, সংবাদপত্রের ক্রোড়পত্র প্রকাশ, কারাগারে, এতিম খানায় উন্নত খাদ্য পরিবেশন আর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর বাণী প্রদান। বিদ্যুৎ থাকলে রাতে নানান দালানে আলোকসজ্জা এইসব। এই আনুষ্ঠানিকতার নিচে অনেককিছু চাপা পড়ে যায়- যেমন যুদ্ধটি কেন হয়েছিল, কার বিরুদ্ধে হয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধ যেসব অন্য যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে, যেসব বিষয়ের কথা

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছিল মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের প্রধান কারণ, তারপর সেই সিদ্ধান্তকে আমরা যে কাজে লাগিয়েছি, সেখানেও আমাদের মূল শক্তি ছিল ঐক্য। কিন্তু এই ঐক্য আমরা ধরে রাখতে পারিনি। এবং ধরে রাখতে পারিনি বলেই আমাদের অন্য যুদ্ধগুলো শুরু করা হয়নি। একেবারেই যে হয়নি, তা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু শুরু হয়েছে ওই ‘হাফ-মেজার’ হিসেবে। আমরা এসব যুদ্ধে কখনো ঝাঁপিয়ে পড়িনি। এসব যুদ্ধের কোনো কৌশল বা পরিকল্পনা ছকও আমাদের ছিল না। আমরা বাইরের শত্রুদের বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ার পর অবধারিতভাবে আমাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গেছে- চিনতে এবং মোকাবেলা করতে পারিনি। ভেতরের শত্রুদেরও সহ্য করেছি, তাদের জায়গা ছেড়ে দিয়েছি।
যে কোন জাতির জন্য মুক্তিযুদ্ধ একটি অন্তহীন অর্জন-প্রক্রিয়ার সূত্রপাত করে। মুক্তিযুদ্ধ কোন একবারে শেষ হয়ে যাওয়া বিষয় নয়। একটি ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে এর একটি পর্যায় শেষ হলেও আরো অনেক যুদ্ধ বাকি রয়ে যায়। কালক্রমে সেসব যুদ্ধেও ওই জাতিকে নামতে হয়, জয়ী হতে হয়। যদি সেসব যুদ্ধে জয় না আসে, তা হলে জাতির হাতে তার ভবিষ্যৎটি আর ধরা দেয় না, তাকে শুধু অতীত নিয়েই থাকতে হয়।১৯৭১ এ পাকিস্তানের দাসত্বে আস্থা স্থাপনকারী কিছু মানুষ ছাড়া আর সকল বাঙ্গালি এক লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু আজকে যা দেখি, তাতে মনে হয় আর হয়তো বাংলাদেশীদের সংঘবদ্ধ হওয়া হবেনা।এই প্রজন্মের কিছু লোক হয়ত অতীতচারী হয়ে বাচব, পরের প্রজন্মে হয়ত "যেহেতু রাজাকারদের বিচার হয়নি তাই তারা নিরপরাধ" এই ধারনার অনুসারীর সংখাই বাড়তে থাকবে।
এর কি কোন প্রতিকার আদৌ হবে?আমরা কি এই অসমাপ্ত যুদ্ধ শেষ করতে পারব?
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×